লাঠিমন্ত্রী এবং একটি অ্যাওয়ার্ডের কান্না:
লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ১০ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৩৭:০০ সকাল
রাত তখন ৩টা। লাঠিমন্ত্রীর বিশাল সরকারী বাড়িটিতে পিনপতন নীরবতা। সকলেই গভীর ঘুমে নিমগ্ন। বাড়ির মেইন গেটের নিরাপত্তারক্ষীরাও নাক ডাকিয়ে ঘুমুচ্চেছ। খানিক্ষণ আগে ঘুমিয়েছেন লাঠিমন্ত্রী, পাশে তাঁর স্ত্রীও। কিন্তু হঠাত রুমের ভেতরে কারো কথা বলার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় তাঁর স্ত্রীর। শুনতে পান আকুতির শব্দ-’আমাকে মাফ করুন। আমাকে মুক্তি দিন। আমি আর এখানে অ্যাওয়ার্ড হিসেবে থাকতে চাইনা। লাঠিমন্ত্রীর ঘরে থাকার চেয়ে রাস্তার ডাস্টবিনে ফেলে দিলেও আমি শান্তিতে থাকতে পারবো। প্লীজ আমাকে মুক্তি দেন।”
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই আবেদন ভেসে আসছিলো লাঠিমন্ত্রীর স্ত্রীর কানে। তিনি বুঝতে পারছিলেন না- কে বলছে কথাগুলো। বিছানায় উঠে বসেন। লাইটের সুইচ অন করেন। ভালোভাবে কান পেতে শুনার চেষ্টা করেন- কে বলছে কথাগুলো? এক সময় আঁচ করতে পারেন তাঁর স্বামীকে (লাঠিমন্ত্রী) দেয়া অ্যাওয়ার্ডটিই কথা বলছে। গতকালই এই অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন সংগঠন এই এওয়ার্ডটি তাঁকে দিয়েছে। তিনি অ্যাওয়ার্ডটি নিজ হাতে নিয়ে এসে বেড রুমের শোকেসে সাজিয়ে রেখেছেন।
এই কদিন ধরে তাঁকে (লাঠিমন্ত্রী) খুব মনমরা দেখাছিলো। বিশেষ করে সাগর-রুনি হত্যা মামলার ব্যাপারে
আপত্তিকর মন্তব্য করে করজোড়ে মাফ চাওয়ার পর তাঁকে খুব বিমর্ষ দেখাচিছলো। উপরন্তুু আকস্মিকভাবে মাত্র কদিনের ব্যবধানে শতাধিক মানুষ খুনের ঘটনায়ও তিনি ছিলেন বেশ বিচলিত। তাঁর মনটা বেশ খারাপ ছিলো। কিন্তু গতকাল তাঁকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখা যায়। স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, তিনি মানবাধিকার রক্ষায় অবদানের জন্য অ্যাওয়ার্ডে ভুষিত হয়েছেন। এজন্য তাঁর মনটি আজ খুবই ভালো। এই সময়ে অ্যাওয়ার্ডটি তাঁর খুবই দরকার ছিলো। লাঠিমন্ত্রীর স্ত্রী বুঝতে পারেননা- কেন কাঁদছে অ্যাওয়ার্ডটি। কেন তাকে মুক্তি দিতে বলছে। তিনি জানতে চান কেন কাঁদছো তুমি?
এবার অ্যাওয়ার্ডটি মুখ খোলে কথা বলতে শুরু করে। বলছে-যে ব্যক্তিটি আইন শৃংখলা বহিনীনির দায়িত্বে থাকাকালে মাত্র ২/৩ দিনের ব্যবধানে একটি দেশে পুলিশ ও রাজনীতিকসহ শতাধিক সাধারণ মানুষ নির্মমভাবে নিহত হয়। সেই ব্যাক্তির মানবাধিকার রক্ষার অ্যাওয়ার্ড হতে আমার গা বিলিয়ে দিতে পারিনা। ঐ লাঠিমন্ত্রীর অ্যাওয়ার্ড হয়ে তাঁর বেডরুমের শোকেসে শোভা বর্ধন করতে চাইনা। আমার জন্য এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু নেই। আমার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্চেছ। আমাকে মাফ করুন।
লাঠিমন্ত্রীর স্ত্রী ভাবেন- কথাগুলোর তো যুক্তি আছে। অ্যাওয়ার্ডটি যা বলছে তাতো মিথ্যা নয়। বাংলাদেশে আজ মিনিটে-মিনিটে মানবাধিকার লংঘিত হচ্চেছ। যেদেশের মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই, সেই দেশের লাঠিমন্ত্রী কিভাবে মানবাধিকার রক্ষায় এওয়ার্ড পান? হোক না স্বামী। বিবেকের কাছে তো একটা দায়বদ্ধতা আছে। অনেকটা রাগে-ক্ষোভে অ্যাওয়ার্ডটি শোকেস থেকে বের করে ছুড়ে ফেলেন ডাষ্টবিনে।
সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই লাঠিমন্ত্রীর দৃষ্টি চলে যায় শোকেসের দিকে। যেখানে রাখা ছিলো তাঁর মানবাধিকার রক্ষার অ্যাওয়ার্ডটি। কিন্তু অবাক হন তিনি- শোকেসে তো অ্যাওয়ার্ডটি নেই। জানতে চান তার স্ত্রীর কাছে, অ্যাওয়ার্ডটি কোথায়। তিনি রাতের ঘটনা বর্ণনা করেন। জবাবে লাঠিমন্ত্রী বলেন, অহ তুমি তাহলে ওটা ফেলে দিয়েছো। আচ্চছা যাক, মিডিয়ায় তো কাভারেজ চলে এসেছে। ফেলে দিলে অসুবিধা নেই।
এদিকে পরদিন ডাষ্টবিন থেকে এওয়ার্ডটি কুড়িয়ে নেয় একটি ছিন্নমুল শিশু। সে অ্যাওয়ার্ডটি তার ঘরের জীর্ণ টেবিলে রাখে। দুইদিন আগেই শিশুটির পিতা তরকারী ব্যবসায়ী রমিজ আলী হরতাল চলাকালে পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে মারা গেছেন। শিশুটি লেখাপড়া জানেনা। তাই এওয়ার্ডের গায়ে কী লেখা বুঝতে পারেনা। সে তার স্কুল পড়ুয়া এক সহপাঠিকে অ্যাওয়ার্ডটি দেখায়। অ্যাওয়ার্ডের গায়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম লেখা শুনে চরম ঘৃণায় লাল হয়ে যায় তার মুখটি। সে অ্যাওয়ার্ডটি ডাষ্টবিনে ফেলে দিতে উদ্যত হয়।
এবার আচমকা কান্না শুরু করে অ্যাওয়ার্ডটি। আকুতি জানায়- আমাকে ফেলে দিওনা। আমি থাকতে চাই এই ঘরেই। কারণ এই ঘরের কর্তা ব্যাক্তিটি লাঠিমন্ত্রীর পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। এই অ্যাওয়ার্ডটি নিহত রমিজ আলীরই প্রাপ্য। আমার গা থেকে লাঠিমন্ত্রীর নামটি মুছে দেয়া হোক। নতুন করে লেখা হোক-মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলনে নিহত রমিজ আলী মরণোত্তর অ্যাওয়ার্ড।
বিষয়: রাজনীতি
১০০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন