লন্ডনে বিদু্যৎবিহীন পাঁচ ঘন্টা ও মমবাতির গল্প

লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ১২ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৭:১৮:৩০ সকাল

প্রায় এক যুগ সময়ের লন্ডনের বাসিন্দা। এই প্রথম ৫ ঘন্টা বিদু্যৎহীন থাকতে হলো নিজ ঘরে। কোনো পূর্ব নোটিশ ছাড়াই সন্ধ্যায় আকস্মিক বিদু্যৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। কিন্তু পাঁচ ঘন্টা সময়ই যে অন্ধকারে কাটাতে হবে তা ভাবতে পারিনি। কাউন্সিলে ফোন দিলে ইঞ্জিনিয়ার আসবে, আসছে বলেই পেরিয়ে গেলো এই দীর্ঘ সময়। এর ভেতরে জ্বালাতে হলো কমপক্ষে গোটা দুয়েক মমবাতি।

মমবাতি জ্বালাতে গিয়ে মনে পড়লো ছাত্র্রকালের হোস্টেল-লাইফের কিছু স্মৃতি । তখন মমবাতি আর দেয়াশালাই টেবিল ও বেডের পাশে রাখা ছিলো বাধ্যতামুলক। কারণ দিনের বেলা বিদু্যৎ থাকলেও রাতের বেলা যখন তখন লোডশেডিংয়ের যাতাকলে পড়তেই হতো। তাই প্রতিদিনই দুচারটে মমবাতি কিনে আনতে হতো।

মাসিক হোস্টেল ভাড়া, মিলচার্জসহ আনুসঙ্গিক খরচাদির জন্য বাড়ি থেকে মাসিক যে ‌'ছাত্রভাতা' বরাদ্দ থাকতো তার একটি অংশ মমবাতির নিচে খরচ হয়ে যেতো । তাই এই খরচ বাঁচাতে সহপাঠীরা মিলে মাঝে-মধ্যে মমবাতি সংগ্রহে ঝটিকা অভিযানে বের হতাম। হোষ্টেলের নিকটেই ছিলো হযরত শাহজালাল (রহHappy এর দরগাহ । ওখানে মমবাতির কোনো অভাব ছিলোনা। মাজারের চারপাশে স্তুপাকারে পড়ে থাকতো শতশত মমবাতি। বড় বড় মমবাতি । আকারে বর্তমান বাজারের বড় বড় মুলার মতো। একটি মমবাতির বাজার মূল্য পঁচিশ থেকে ত্রিশটাকা। একটি দিয়ে সারা মাস চলে যেতো।

মাজারের পাশে পড়ে থাকা এই মমবাতিগুলোর প্রতিই ছিলো আমাদের বেশি আকর্ষণ। রাতের বেলা দল বেঁধে মাজার জিয়ারত শেষে অনেকগুলো নিয়ে আসা যেতো । অনেক সময় কেউ দেখলেও কিছু বলতোনা।

মাজারের মমবাতি ব্যবহারের ব্যাপারে আমরা একজন আলিমের কাছ থেকে মাসআলাও জেনে নিয়েছিলাম । তিনি বলেছিলেন, ওগুলো ব্যবহারে কোনো গুনাহ নেই। কারণ শরীয়তে মাজারে মমবাতি জ্বালানোর কোনো বৈধতা নেই। মাজারে মমবাতি মান্নত করা হারাম। যারা মাজারে মমবাতি দেয় তারা না বুঝে দেয় । সুতরাং মাজারে অহেতুক মমবাতি জ্বালানোর চেয়ে বরং পড়ালেখার কাজে ব্যবহার করা উত্তম। ইসলামে যে এ ব্যাপারে বেশ কড়াকড়ি করা হয়েছে তা হাদীস ঘেঁটেও দেখেছিলাম। তাই এই মমবাতিগুলো আনতে ও ব্যবহার করতে কোনো সংকোচবোধ করতামনা ।

তবে আলেম পরিচয়ের অনেক ব্যক্তিকে মাজারে মমবাতি মান্নত ও জ্বালাতে মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করতে দেখেছি । তাদের প্রতি আমার একটি বিনীত প্রশ্ন:- যারা ইতোমধ্যে হজ্ব বা ওমরা পালনে সৌদিতে গেছেন, তারা নিশ্চয় মক্কায় জান্নাতুল মওয়াল্লা ও মদীনায় জান্নাতুল বাকী নামক দুটো কবরস্থান ভিজিট করেছেন। যেখানে হযরত মুহাম্মদ (সাHappy এর স্ত্রী হযরত খাদিজা (রাHappy, হযরত ওসমান (রাHappy সহ বড় বড় সাহাবাদের কবর রয়েছে, সেখানে কি কেনো মমবাতি জ্বলতে দেখেছেন? মমবাতি মান্নত করে আল্লাহর কাছ থেকে যদি কোনো কিছু অর্জন করা যেতো তাহলে মক্কা-মদীনার ঐ দুটি কবরস্থানে শাহজালাল (রHappy মাজারের চেয়ে আরো বেশি মমবাতি জ্বলতো। আর কোটি কোটি মমবাতি জ্বলতো রাসুল (সাHappy এর রওজায়। কই, সেখানে তো কোনো মমবাতি নেই?

বিষয়: বিবিধ

৯১৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

293616
১২ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৫৩
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
293658
১২ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কয়েকদিন আগে এক পরিচিতের কাছে সিডনিতে পাওয়ার বন্ধ হওয়ার গল্প শুনেছি। এবার লন্ডন!!
মাজারের সামনে মোমবাতির যত দোকান থাকে সেগুলির সব মোমবাতিই ফিরে আসে আবার দোকানে!!!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File