এর চেয়ে নিমর্ম দৃশ্য আর কি হতে পারে?
লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ০৩ মার্চ, ২০১৩, ০৯:২৩:৪৫ রাত
নাহ, দেশের কোনো মানুষই আজ শান্তিতে নেই। ভালো কিছু করতে পারছেনা তারা। সবসময়ই একটি অশান্তির মধে্য দিন কাটছে সকলের। চরম অস্থিরতা। কী হচ্ছে, কী হবে? সকলের একই প্রশ্ন-এই অস্তিতিশীলতার শেষ কোথায়?
নাহ, শুধু দেশেই নয়। প্রবাসের মানুষ আরো বেশী দুশ্চিন্তায়। দেশের বাইরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষগুলোর মন পড়ে থাকে দেশে। জন্মভূমির কিছু হলে এই মানুষগুলেই কষ্ট পায় বেশী। কারন দেশের প্রতি তাদের রয়েছে নিখাঁদ ভালোবাসা। তারা রাজনীতি করেনা। রাজনীতি নিয়ে ঘাটাঘাটিও করে না। শুধু দেশকে ভালোবাসতে জানে। জানে দেশকে উজাড় করে দিয়ে যেতে। বিনিময়ে কি চায় তারা? একটু শান্তি। দেশবাসীর শান্তি, দেশের আপামর মানুষের শান্তি। আমার দেশটি ভালো আছে-এটাই দেখতে চান তারা। কিন্তু কী দেখছেন প্রবাসীরা? যে দিকে দৃষ্টি যাচ্ছে লাশ আর লাশ। দেখছেন পুলিশের নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যার দৃশ্য। প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগেই তাদেরকে শুনতে হচ্ছে লাশের সংবাদ। কোথায় কয়টি লাশ পড়েছে? কোথায় কিভাবে নির্দয়হীনভাবে চললো পুলিশের নির্মমতা? এগুলোই এখন প্রবাসীদের জন্য প্রতি মুহুর্তের খবর।
শনিবার রাতে ঘুমুনোর আগে মনস্থ করেছিলাম সকালে উঠে আর দেশের খবর নিবোনা। কারন দেশের খবর নিলেই মন খারাফ হয়ে যায়। আর সারাদিন দেশ-দেশ, হত্যা-লাশ ঐগুলো মাথায় খিলবিল করে। কিছু করতে মন চায়না। কোনো কাজ করা যায়না। কিন্তু পারলাম না। ঘুম থেকে জেগেই আমার হাতটি চলে গেলো বেডসাইট টেবিল রাখা লেপটপে। হাতে নিয়ে অন করেই সোজা ফেইসবুকে। চোখের সামনে প্রথম যে স্ট্যাটাসটা ভেসে এলো-তা হলো বগুড়ায় সেনা মোতায়েন ঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অস্বীকৃতি। প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিলোনা। কিন্তু ভিডিও ফুটেজে ক্লিক করে সেনা সদস্যদের তৎপরতা দেখলাম। দেখলাম, তাদের অস্ত্রের মহড়া। ছবি কথা বলে। তাই স্বরাস্ট্রমন্ত্রি বললেই কি আর না বললেই কি। ছবিতে যেখানে সেনাতৎপরতা দেখা যাচ্ছে সেখানে অস্বীকার করার তো কোনো উপায় নেই।
সে যাক। সেনা মোতায়েন হতেই পারে। পরিস্থিতি খারাফ হলে সরকার
তাদের মাঠে নামাতে পারে। এটা অস্বাভাবিক নয়। স্বরাস্ট্রমন্ত্রী হয়তো প্যাস্টিজ ইসূ্যর কারেন বিষয়টি অস্বীকার করছেন। কারন জামাত-শিবির দমাতে সরকারকে একটি শহরে আর্মি নামাতে হয়েছে। এটা প্যাস্টিজের ব্যাপার বৈকি। কিন্তু যে দৃশটি আমাকে অতিশয় পীড়া দিলো তা হলো একটি লাশ বিভৎসভাবে রাস্তার মধ্যখানে পড়ে আছে। সেনারা অস্ত্র হাতে এদিক ও দিক ছোটাছুটি করছেন। লাশটি রাস্তার মধ্যখান ফেলে রাখা। আশপাশ ভেসে গেছে রক্তে। কিছুক্ষণের মধ্যে ৪/৫ জন পুলিশ সদস্যকে লাশটির দুই হাতে ধরে টেনে হেছড়ে নিয়ে যেতে দেখলাম। একটি গাড়িতে ভেতরে ছুড়ে ফেলার করুণ দৃশ্যও আমাকে দেখতে হলো।
আমি একাত্তোর দেখি। জন্ম আমার একাত্তোরের অনেক পরে। জন্মের পর জ্ঞান বাড়ার সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনেছি। আমার দুইজন চাচা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা মুক্তিযোদ্ধের গল্প শোনাতেন। আমার মা পাক হানাদার বাহিনীর পাশবিকতার চোখেদেখা ঘটনাগুলো বর্ণনা করতেন। পাক সেনার ভয়ে সারাদিন তারা কিভাবে লুকিয়ে থাকতেন বাড়ির পাশে ধানখেতে পানির মধ্যে। আর রক্তচোষা জোকগুলো কিভাবে প্রতিদিন তাদের শরীর থেকে চোষে নিতো রক্ত। কিভাবে আমার মাকে পাক সেনা গুলি করেছিলো। গুলিটি তাঁর মাথার চুল দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। এমন লোমহর্ষক ঘটনাবলীর বর্ণনা দিতেন আমার মা। এসব ঘটনা শুনে আমার কান্না পেতো। খুবই কস্ট পেতাম। ভাবতাম, একাত্তোরের আগে জন্ম হলে আমার কি হতো?
বড় হওয়ার সাথে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস পড়েছি। পাক সেনা ও তাদের দোসর রাজাকার আল-বদরদের পাশবিকতার ছবি দেখেছি। কিভাবে তারা বাংলার মানুষের উপর হ্ত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত চলচ্ছিত্রে লাশের স্তুপ দেখেছি। যেদিকে চোখ যায় শুধু লাশ আর লাশ।
স্বাধীনতা সংগ্রাম দেখিনি। সাধারণ মানুষের উপর পাক সেনাদের পৈশাচিকতা দেখিনি। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে ৪২ বছর পর সেই দৃশ্যই দেখছি। তাও আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে। তবে সেটা পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক নয়। আমাদের দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর কর্তৃক। এর চেয়ে নিমর্ম দৃশ্য আর কি হতে পারে?
ফেসবুকে। মনখারাফ নিয়ে ঘুমাই। আবার মন খারাফ দিয়ে দিন শুরু করি। এই হলো দৈনন্দিন অবস্থা। দেখতে চাইনা, তবু দেখতে হয়।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন