সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ নেই, ফেসবুকই ভরসা

লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ০৩ মার্চ, ২০১৩, ০৬:১৮:৩৯ সন্ধ্যা

দেশ নিয়ে প্রবাসীদের উদ্বেগের শেষ নেই। সম্্‌ভবতঃ মাতৃভূমি ও স্বজনদের নিয়ে বেশী ভাবাটাই এই উদ্বেগের কারণ। আর তাই বাঙালী অধুøষিত পূর্ব লন্ডনে হাঁটাচলার সময় পরিচিতজনের মুখোমুখী হলেই একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। প্রশ্নটি হচ্চেছ-দেশের খবর কী? কী হচ্চেছ, কী হবে?। সংবাদপত্রের মানুষ বলে অনেকের ধারণা আমার কাছেই সকল খবরের ভান্ডার। আর তাই দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে সবসময়ই আপডেট থাকতে হয়। কিন্তু সাংবাদিকদের কাছে খবর তো আর এমনিতে উড়ে আসে না। কোনো না কোনো সোর্স থেকে খবরটি নিয়ে যাচাই-বাচাই করে সেটা সংবাদপত্রে ছাপতে হয় বা কাউকে বলতে হয়। আর এজন্য বিভিন্ন সংবাদপত্রের অনলাইন ভার্সন ও চবিবশ ঘন্টার অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর উপরই বেশী ভরসা করতে হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে জঘন্য কুটুক্তি ও ধর্ম বিদ্বেষের প্রতিবাদে শুক্রবার দেশে আহবান করা হয় বিড়্গোভ কর্মসূচির।

৪ লড়্গাধিক মসজিদ থেকে একযোগে মিছিল বের করার ঘোষণা দেয়া হয় আগের দিন। তাই অন্যদের মতো আমারও দেশ নিয়ে উদ্বেগের কমতি ছিলোনা। কী হবে দেশে? আলেম সমাজকে কিভাবে মোকাবেলা করবে পুলিশ? দেশে কি রক্তড়্গয়ী কোনো সংঘর্ষ দেখা দেবে? এসব নিয়ে উদ্বেগের শেষ ছিলোনা। আর সেই উদ্বেগ থেকেই শুক্রবার ভোররাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। বেডসাইট টেবিলে রাখা ল্যাপটপটি অন করে সোজাসাজি বিডিনিউজ২৪·কম ব্রাউজ করি। কারন দেশের সর্বশেষ নির্ভরযোগ্য খবরটি জানতে আমরা সর্বাধিক পঠিত এই অনলাইন পোর্টালটিতে ভরসা করে থাকি। কিন্তু মুল পেইজে গিয়ে অনেকটা হতাশ হলাম। তেমন কোনো সংবাদ নেই। বাংলা সংস্ড়্গরণে সংড়্গিপ্ত সচিত্র একটি প্রতিবেদন। ছবিতে ৭/৮ জন পুলিশকে বুন্দুক তাক করে গুলি ছুড়তে দেখা যাচ্চেছ। পাশে ধোঁয়া উড়ছে। তবে সেখানে মিছিল-সমাবেশ কিংবা কোনো মানুষের উপস্থিতি নেই। মুল পেইজের ডান পাশেই শাহবাগ নিয়ে বিরাট সচিত্রসংবাদ। শিরোনাম- আন্দোলনকারীরা আবার শাহবাগে ফিরছে। তাহলে কোথায় পাবো বিস্তôারিত ও নিরপেড়্গ সংবাদটি?

ব্রাউজ করলাম দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র দৈনিক প্রথম আলোতে। কিন্তু সেখানেও হতাশ হলাম। আলেমসমাজের বিড়্গোভ সংক্রান্তô কোনো নিউজই নেই। আছে শুধু শাহবাগের একটি সংবাদ। এরপর একে একে শীর্ষস্থানীয় প্রায় সবগুলো সংবাদপত্রের অনলাইন ভার্সন দেখলাম। কিস্তু কোথাও অশাতীত সংবাদ পেলাম না। জানতাম- দৈনিক আমার দেশ কিংবা নয়াদিগন্তেôর অনলাইন ভিজিট করলে দুপড়্গের সংবাদ পেতে পারি। কিন্তু পাছে কেউ দেখলে নির্ঘাত রাজাকার বলবে ভেবে ঐদিকে ব্রাউজ করা থেকে নিরাপদ দুরত্বে থাকি। ভাবছি, তাহলে কোথায় নিরপেড়্গ সংবাদটি পাবো? দেশে কয়েকজনকে ফোন দিলাম। কিন্তু কেউই ফেন রিসিভ করছেনা। হঠাত একজন ফোন ধরে বললেন, কথা বলা যাবে না। হাসপাতালে আছি। শতশত মানুষ হাসপাতাল বেডে কাতরাচ্চেছন। আমার টেনশন আরো বেড়ে গেলো। প্রকৃত খবরটি পেতে প্রায় অস্থির হয়ে উঠলাম।

উপায়ান্তôর না দেখে স্যোসাল মিডিয়া ফেসবুকের আশ্রয় নিলাম। দেখলাম, দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে সচিত্র পোষ্টিংয়ে ফেসবুক ওয়াল ভরে গেছে। টেলিভিশনের স্ত্র্নল নিউজের মতোই মুহুর্তে মুহুর্তে আপডেট হচ্চেছ। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্তô অঞ্চল থেকে ফেসবুক ইউজাররা পোস্ট করছেন। চট্রগ্রাম আন্দরকিলস্নায় বিশাল মিছিল ও সমাবেশের ছবি দেখলাম। ঢাকা বায়তুল মোকাররম মসজিদের গেইট বন্ধ করে দিয়ে মুসলিস্নদের প্রবেশে বাধা সৃস্টি, গেইটের তালা ভেঙ্গে মুসলিস্নদের প্রবেশ, পুলিশের টিয়ারশেল ও গুলিবর্ষণ, সাংবাদিকদের উপর হামলা ইত্যাদি সচিত্রপোষ্টিং টিভি স্ত্র্নলের মতোই ভেসে আসছে। সবকিছুই এখানে আছে। গোটা দেশের চিত্র ফুটে উঠছে। আমি দেখতে থাকলাম। সেকেন্ডে-সেকেন্ডে নতুন নতুন ছবি ও ভিডিও ফূটেজ আপলোড হচ্চেছ। পরম কৌতুলহল নিয়ে ল্যাপটপের সম্মুখে বসে আছি। আমার চোখের পলক নড়ছেনা। হঠাত সফেদ পাজামা-পাঞ্জাবী পরিহিত একজন লোককে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার একটি ছবি চোখে পড়লো। পরিচিত মনে হলেও ছোট স্ত্র্নিনে চেনা যাচিছলোনা। ছবির উপরে ক্লিক করতেই ভেসে এলো অতি পরিচিত মানুষটির চেহারা। বিলেতে তিনি বেশ পরিচিত। মাওলানা নুরে আলম হামিদী।

হেফাজতে ইসলাম ইউকের সভাপতি ও সিলেটের বরম্ননা মাদ্রাসার নির্বাহী মুহতামিম। বুঝতে পারছিলাম না, কোথায় কিভাবে হামলার শিকার হয়েছেন। এরই মধ্যে ফেসবুক ওয়ালে একটি টেভি চ্যানেল থেকে আপলোডকৃত সংবাদে তাঁকে বক্তব্য দিতে দেখলাম। তিনি বলছেন- নাস্তিôক-মুরতাদরা আমাদের প্রিয় নবীকে (সাঃ) নিয়ে জঘন্য ভাষায় কটুক্তি করেছে। আমরাতো বসে থাকতে পারিনা। তাই সিলেট থেকে অন্যদের সাথে প্রতিবাদ করতে এসেছি। ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। পুলিশ আমার উপর আক্রমন করেছে। আমার কাপড় ছিড়ে ফেলেছে। আমাকে রক্তাক্ত করেছে। এটুকু বক্তব্যই আমার জন্য যথেষ্ট। বুঝতে আর অসুবিধা হলোনা। মাওলানা হামিদী সাহেবের গন্তôব্য আপততঃ থানা হাজতে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে খালাস, নতুবা পুলিশ এসলট মামলায় কোর্টে চালান। সেখান থেকে হয়তো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ভাগ্য বেশী খারাফ হলে জিজ্ঞাসাবাদের নামে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন। এই সরকারের আমলে কি ছাড়া পাবেন? নাকি এক বছরই থাকতে হবে। নিশ্চয় প্রবাসী পরিজনের চিন্তôার শেষ নেই। সে যাক এভাবেই সংবাদ দেখতে তাকলাম। আজকের ডায়েরীটি (লেখা) আপলোড পর্যন্তôই কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফেসবুকেই সর্বশেষ সংবাদটি দেখছিলাম। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী আমার হিসেবে দেশের বিভিন্ন জায়াগায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত ও গ্রেফতার শতশত। ইসলামী ব্যাংক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিপনী বিতানে হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটনা ঘটেছে শতশত। ব্যাপকভাবে ভাংচুর হয়েছে শহীদ মিনারে যুদ্ধাপরাধীদের দাবীতে নির্মিত জাগরণ মঞ্চ। সন্ধ্যায় নতুন দিন অফিসে বসে এক বন্ধুর সাথে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে কথা হচ্চিছলো। হঠাত সহযোগী দুটি সংবাদপত্রের দুজন সম্পাদক এলেন। সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক সৈয়দ মনুসর উদ্দিন ও সাপ্তাহিক বাংলাপোষ্ট সম্পাদক তারেক চৌধুরী। তাঁরাও একই বিষয়ে আলোচনায় যোগ দিলেন। বলছিলাম, দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ পরিবেশনে নিরপেড়্গতা নিয়ে।

একজন সম্পাদক আমাদের সাথে এভাবেই মত দিলেন- নিরপেড়্গতা বলে কিছু নেই। এখন আর নিরপেড়্গতারও সময় নেই। প্রতিটি মিডিয়ারই একটি পড়্গ নেয়া উচিত। সংবাদপত্র একটি পড়্গে স্ট্যান্ড নিতেই পারে। ঐ সংবাদপত্র হয়তো জামায়াতের সম্পুর্ণ পড়্গ নেবে, নতুবা পড়্গ নেবে সরকার ও আওয়ামীলীগের। তিনি তাঁর মতের পড়্গে যুক্তি উপস্থাপন করতে গিয়ে বললেন, দেখেন না বিলেতের মুলধারার সংবাদপত্রগুলোও নির্বাচন এলে একটি পড়্গ নিয়ে নেয়। তাঁর যুক্তি খন্ডন করতে গিয়ে বললাম, বৃটেনের সংবাদপত্র একেবারে অন্ধভাবে শতভাগ কারো পড়্গ নেয়না। পছন্দের পড়্গকে ৮০ ভাগ সমর্থন দিলেও অন্তôতঃ বিপড়্গকে ২০ ভাগ কাভারেজ দিয়ে সংবাদে ব্যালান্স আনার চেষ্টা করে। একেবারে একচেটিয়াভাবে নয়। তিনি আমার জবাব খন্ডন করতে গিয়ে বললেন, একটি সংবাদপত্রের আইডিওলজি যদি হয় জামাত বিরোধী তাহলে তারা জামায়াতের সংবাদ দিবে কেন? তার এই যুক্তির জবাবে আমার যুক্তিটি ছিলো এমন-সংবাদপত্র কিংবা মিডিয়ায় সংশিস্নষ্ট সম্পাদকের ব্যাক্তি আক্রোশ বা মতের প্রাধান্য পেতে পারে কিন্তু তা শতভাগ হওয়া কিছুতেই কাম্য নয়। কারন সংবাদপত্রকে বলা হয় জাতির দর্পন। অর্থাত আয়না বা দর্পনে তাকালে যেমন পূর্ণ মুখটি নিখঁুতভাবে দেখা যায়, তেমনী সংবাদপত্রে তাকালে দেশের চিত্রটি ভালোভাবে পর্যবেড়্গন করা যায়। কিন্তôু কোনো সংবাদপত্রে যদি সম্পাদকের ব্যাক্তি আদর্শ কিংবা মতের প্রভাবে ১০০ ভাগ সংবাদই একটি দল বা গোষ্ঠির পড়্গে পরিবেশিত হয় তাহলে এটি কিভাবে জাতির দর্পন হিসেবে বিবেচিত হবে। সংবাদপত্রের মাধ্যমে জাতি কিভাবে দেশকে দেখতে পারবে? একটি দেশের সর্বোচ্চ সম্মানীত ব্যাক্তি ঐদেশের রাষ্ট্রপতি। তিনি যেমন একটি পত্রিকার পাঠক, তেমনী রাস্তôার একজন মুচিও। তাঁরা হতে পারেন আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি কিংবা অন্য কোনো দলের সমর্থক। তাঁদের যেমন শাহবাগ স্ড়্গয়ারের নবপ্রজন্মের জাগরণের সংবাদটি দেখার আগ্রহ আছে, তেমনী নাস্তিôক বস্নগারদের বিচারের দাবীতে আলেম সমাজের সমাবেশ, মিছিল ও সংঘর্ষের সংবাটি পড়ার অধিকারও রয়েছে। তা না হলে ৫০ পেন্স দিয়ে একটি পত্রিকা কিনে তিনি তো প্রতারিতই হবে। তাহলে পয়সা দিয়ে পত্রিকা কেনার চেয়ে আমার মতো ঐ পাঠককে ফেসবুকে ভরসা করলেই বরং ভালো হয়। তখন পড়্গ-বিপেড়্গের অজস্র পোস্টিং যাচাই-বাচাই করে নিরপেড়্গ সংবাদটি বেছে নিতে অসুবিধা হবেনা।

লেখকঃ নির্বাহী সম্পাদক, সপ্তাহিক নতুন দিন, লন্ডন ।

বিষয়: বিবিধ

১০৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File