স্মৃতিচারণ থেকে কাল্পনিক রচনা : তাবু'র শহর মিনায় মিশে গেলাম হাজীদের ভীড়ে

লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ০৩ অক্টোবর, ২০১৪, ০৬:২৯:১৪ সকাল

সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে টিভিটি অন করে সরাসরি চলে যাই ইসলাম চ্যানেলে। কারণ মনটি পড়ে আছে পবিত্র মক্কায়। প্রতিবছর হজ্জের সময় এলেই মনটি কেমন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। বিশেষকের ২০১০ সালে হজ্জ থেকে ফেরার পর প্রতিবছর এমনটি হয়। টিভি পর্দায় মক্কায় হজ্জ পালনের দৃশ্য দেখলে মনে হয় আমিও যেনো সেখানেই আছি। হজ্জের দৃশ্য দেখতে দেখতে কল্পনার জগতে পৌঁছে যাই মক্কায়। মিশে যাই অগণিত মানুষের ভীড়ে।

কল্পনা করতেই থাকি। আমি এখন তাবু'র শহর মিনায় ২০ লাখ হাজির সাথে একটি তাবুতে আছি। আমাদের তাবুতে ৫০ জন হাজীর সহাবস্থান । মক্কার ইব্রাহিম খলিল রোডের হোটেল থেকে বাসে করে ৫০ জনের কাফেলাটি মিনায় পৌঁছেছে আসরের নামাজের ঘন্টা খানেক

আগে । এর আগে হাজীদের কাছে মিনা'র অনেক গল্প শুনেছি। কিন্তু জায়গাটি চোখে দেখিনি । তাই বেশ কৌতুহল নিয়ে মিনার দিকে এগুচ্ছিলাম। কাছাকাছি পৌঁছতেই চোখে পড়লো চারদিকে তাবু আর তাবু। এ যেনো তাবু'র শহর, তাবু'র রাজ্য। সাদা ছোট-ছোট ঘর। শহরের মানুষগুলো যেনো যাযাবর। তাবুতেই বসবাস করেন তাঁরা । বাহ কী চমৎকার তাবুগুলো । পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক পৃথক ব্যবস্থা। শহরের আবাসিক এলাকায় কয়েকটি বাসা নিয়ে একটি ব্লক বা পাড়া থাকে। এখানেও ঠিক তেমনী কয়েকটি তাবু নিয়ে ব্লক আছে। আছে রাস্তাও। ব্লকের প্রবেশ পথে গেইট আছে। গেইটে আছে আলোকসজ্জা। লাল-নীল-সবুজ বাতি মিটমিট করে জ্বলছে। মনোরম শহর এটি। সুষ্ক আবহাওয়া। মেঘ নেই, বৃষ্টি নেই। নীল আকাশ। ঝরঝরে দিন। আকাশের নিচে তাবু। যেদিকে চোখ যায় শুধু তাবু। যেদিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। শ্বেত-শুভ্র তাবু আর মানুষের একটি শহরে আমরা আছি।

কোচ থেকে নেমে একটি গেইট দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। ছোট ছিপছিপে একেবেকে রাস্তা। মিনিট পাঁচেক হাটার পর তাবুতে পৌছলাম। ভেতরে ঢুকে তো অবাক। এতো সুন্দর পরিবেশ। যেনো শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসা । তাবুর বাইরে একটি রুমে রাখা আছে ঠান্ডা পানিয়ের বোতল। কেটলিতে গরম পানি, চা চিনি ও বিস্কুট। আছে বেশ কিছু ফলমূলও। এসব দেখে মনটি ভরে উঠলো।

যাওয়ার সময় প্রয়োজনী কাঁথা বালিশ নিয়ে গেছি। দেখলাম প্রত্যেকের জন্য পৃথক পৃথক মার্টাস রয়েছে। মার্টাসে নিজনিজ বিছানা করে নিলাম।

কৌতুহলী মন। বেশীক্ষন তাবুর ভেতরে ধরে রাখা যায়না। বেরিয়ে পড়ি বাইরে । ৫দিন এখানে থাকবো। এতো সুন্দর এলাকা। মনে হয় একমাস থাকি। কিছু সময় এক তাবু থেকে অন্য তাবু ঘোরাঘুরি করে ফিরে এলাম। খানিক্ষন পরই রাতের খাবারের ডাক পড়লো। পাশেই ডাইনিং রুমের ব্যবস্থা। যথারীতি খাবার টেবিলে সবগুলো আইটেমই পেলাম। ফিরে দেখলাম কেউ মার্টাসে বসে কুরআন পড়ছেন। কেউ পড়ছেন নফল নামাজ। আবার কোথাও দুচারজন মিলে হজ্জের মাসআলা ও ফাজায়েল নিয়ে আলোচনা করছেন । কোথাও আবার কিছু গল্প গুজবও চলছে।

হঠাৎ মুয়াল্লিম এলেন। তিনি এলেই ধরে নিতে হবে কোনো একটি ঘোষণা আছে। তিনি আমাদেরকে ঘুমিয়ে পড়ার তাগিদ দিলেন । বললেন কাল আরাফা দিবস। হজ্জের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কাজ করতে হবে। সকালে ঘুম থেকে জেগে নাস্তা সেরে জোহরের আগে পৌঁছতে হবে আরাফায়। সারাদিন অবস্থান করে ফিরতে হবে সুর্যাস্তের পর। মুয়াল্লিমের কথা অনুযায়ী বেশীক্ষণ জাগলাম না। বাতি অফ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। (চলবে)

বিষয়: বিবিধ

১২৭৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

271073
০৩ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৯:৩৬
ফেরারী মন লিখেছেন : আহ ইচ্ছে করছে এখনই হজে যাই। চমৎকার বর্ণনা। শেয়ার করার ধন্যবাদ
271222
০৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১০:৫৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
আল্লাহতায়লা যেন একবারের জন্য হলেও নসিব করেন।
271381
০৪ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:১২
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File