এক্সেল সেন্টার ঃ ১৮ রাষ্ট্রপ্রধানের সম্মেলনে যেভাবে কেটে গেলো ৫ ঘন্টা

লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ৩০ অক্টোবর, ২০১৩, ০৭:০২:৫৯ সকাল



লন্ডনের এক্সেল সেন্টারে মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে তিনদিন ব্যাপী ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ইকোনমিক ফোরাম সম্মেলন। এতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনসহ বিশ্বের ১৮টি দেশের রাস্ট্রপ্রধান অংশগ্রহন করেছেন। বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আব্দুল হামিদও সাথে আছেন।

সপ্তাহ দিন আগে হাইকমিশন থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। সকাল পৌনে ৮টার আগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌছার তাগিদ দিয়েছিলেন হাই কমিশনের প্রেস মিনিষ্টার রাশেদ চৌধুরী। মনস্থির করেছিলাম গাড়ি না নিয়ে ডিএলআর ট্রেন ধরেই যাবো। কিন্তু সকালে কিছু শীত শীত ভাব হওয়ায় স্ত্রী গাড়ি নিয়ে যেতেই তাগিদ দিলেন।

ড্রাইভ করে এর আগে এক্সেল সেন্টারে যাওয়া হয়নি। তাই সেটেলাইট নেভিগেশনের আশ্রয় নিলাম। কিন্তু পথিমধ্যে দু'বার পথ হারিয়ে দীর্ঘক্ষণ ঘুরাঘুরি করে প্রায় আধঘন্টা বিলম্বে এক্সেল পৌঁছলাম । বিশাল এক্সেল সেন্টারের বেইজমেন্টে বিস্তৃত পার্কিং। গাড়ি পার্ক করতে গুণতে হলো ১৫টি পাউন্ড। পে এন্ড ডিজপ্লে থেকে পাকিং টিকিট নিতেও বেশ ঝামেলা পোহাতে হলো। তবে সবকিছু বিবেচনায় মনে হলো, এক্সেল সেন্টারে কোনো প্রোগ্রামে গেলে ড্রাইভ করে যাওয়ার চেয়ে ডিএলআর ট্রেন ধরে যাওয়াটা সবদিক থেকে নিরাপদ।

সে যাক। প্রোগ্রামটি বেশ ভালো লাগলো। একটি ব্যাতিক্রম অনুষ্ঠান। শুধু ১৮টি দেশের রাস্ট্রপ্রধানই আসেননি, এসেছেন প্রায় ১২৮টি দেশের প্রতিনিধি। অত্যন্ত সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ। সারাদিন থাকতে মন চেয়েছিলো। কিন্তু ব্যস্ততার কারনে হয়ে উঠেনি। সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর নামাজ ও মধ্যাহ্নভোজ শেষে আরো কিছুক্ষন বসি। এরপর চলে আসি।

সাংবাদিক হিসেবে এ ধরনের আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান কাভার করতে গেলে অনেক কিছু শেখাও যায় । আমাদের মহামান্য রাস্ট্রপতির আসনটি ছিলো ডায়াসের ঠিক ডান পাশে। তাই তিনি টিভি ক্যামেরায় ছিলেন সবসময়ই। তবে রাস্ট্রপতি সম্ভবত সাত সকালে ঘুম থেকে জেগে অনুষ্ঠানে যাওয়ায় সারাদিনই চোখে ঢুলুঢুলু ভাব পরিলক্ষিত হয়। তবে চোখে কালো রঙের চশমা থাকায় সেটা বেশ পরিলক্ষিত হয়নি। তবে অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানরাও যে ক্লান্ত ছিলেননা, তা নয়। দীর্ঘ প্রায় ৫ ঘন্টা একসারিতে এক ঠায় ১৭ রাষ্ট্রপ্রধানকে বসে থাকতে হয়েছে। কারণ প্রত্যেকেই দীর্ঘক্ষন বক্তব্য দিয়েছেন। সকলের কাছেই ছিলো সরকারী লিখিত বক্তব্য। ওটা দেখে দেখেই বক্তৃতা করেছেন। তবে একমাত্র জর্দানের প্রেসিডেন্টকেই আমি লিখিত বক্তব্য ছাড়া বক্তব্য দিতে দেখলাম। সুন্দর ইংরেজী উচ্চারনে সাহসী ভঙ্গিমায় বক্তৃতা করে তিনি অডিয়েন্সের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছেন। লিখিত বক্তব্যদাতাদের তালিকায় বারমুদার প্রেসিডেন্টোর বক্তৃতার স্টাইল ছিলো চমতকার। এ ক্ষেত্রে তাঁকে আমার কাছে সেরা মনে হয়েছে। বাকীদের অনেকেই মনে হয়েছে রচনা পাঠ করছেন।

প্রধানমন্ত্রি ডেভিড ক্যামেরুন স্টেইজে ছিলেননা। তিনি উপবিষ্ট ছিলেন সামনে সারিতে। ১২টায় তার বক্তৃতা করার কথা থাকলেও কিছুটা বিলম্বিত হয়। তিনি তাঁর বক্তৃতা শেষে সকলকে তাঁর সাথে গ্রুপ ফটোতে অংশ নিতে আহবান জানান। সকলেই এক লাইনে দাড়িয়ে যান। তিনি মধ্যখানে দাঁড়ান। ক্যামেরাম্যানরা টাসটাস কিছু ফটো তুলে নেন। ক্যামেরুন কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে করমর্দন ও কুশল বিনিময় করে স্টেইজ থেকে নেমে যান। সাথে মধ্যাহ্নভোজের ঘন্টা বাজে।

ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর বক্তৃতায় লন্ডন সিটি ইসলামিক ইকোনোমির বেস্ট বিনিয়োগ স্থল উল্লেখ করে মুসলিম বিশ্বকে সরকারী ও বেসরকারীভাবে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহবান জানান। আমাদের মহামান্য রাস্ট্রপতিও তাঁর লিখিতং বক্তব্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে ধরনে। তবে শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ২০১২ সালে আমাদের প্রধানমন্ত্রী মালোয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ইকোনোমিক ফোরামের সম্মলনে যোগদান করেন।

অনুষ্ঠানে সম্ভবত: বাহরাইনের প্রেসিডেন্ট আরবীতে বক্তৃতা করেছেন। আধুনিক শ্রবনযন্ত্রের (আগেই সরবরাহ করা হয়েছিলো) মাধ্যমে আমাদের তা ইংলিশেই শোনার সুযোগ হয় । তিনি অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলিল নিজের মাতৃভাষা আরবীতে বক্তৃতা করে অডিয়েন্সে একটি ভিন্ন আমেজ দেন। আমার শুধু মনে হয়েছিলো, আমাদের মহামান্য রাস্ট্রপতির লিখিত বক্তব্যটি বাংলা হলে ভালোই হতো। শ্রবনযন্ত্রের সাহায্যে নন বাঙালীরা তা ইংলিশে শুনতে তো পারতোই, উপরন্তু আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা বাংলার একটু আধটু ফ্লেবারও পেতো।

বিষয়: বিবিধ

১৪২৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

273044
১১ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৫:০৯
নোমান২৯ লিখেছেন : ভাল মুহূর্তগুলো তারাতারি কেটে যায় Tongue!ধন্যবাদ ভাইয়| Rose Rose Thumbs Up Applause

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File