সাংবাদিক আবদুল বাসিত
লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ৩০ জুলাই, ২০১৩, ০৯:৩৯:৪৭ রাত
সাংবাদিক আবদুল বাসিত আমার সাংবাদিকতা জীবনের গুরু। একাডেমিক শিক্ষা থাকলেই ভালো সাংবাদিক হওয়া যায় না। ভালো সাংবাদিক হতে হলে লেখার চেয়ে পড়তে হয় অনেক অনেক বেশী। আর এই শিক্ষাটিই দিয়েছিলেন সাংবাদিক আবদুল বাসিত। তাঁকে আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি। সিলেট শহরের অলিগলিতে দিনের পর দিন রাত-বিরাতে এক রিক্সায় ঘুরে বেড়িয়েছি। সংবাদপত্রের অফিসে রাতের আড্ডায় তাঁর সাথে শরীক সুযোগ পেয়েছি।
আজ ফেইসবুক সাইন ইন করতেই আমার ওয়ালে তাঁর এই ছবিটি ভেসে এলো। খুব সম্ভব ছবিটি তাঁর উপশহরের এ ব্লকের ৪নং রোডের বাসার ড্রয়িং রুমে তোলা। কবি বেলাল মোহাম্মদ এসেছিলেন তার সাথে দেখা করতে। ছবিটি আমার অনুমানে ২০০২ সালের হবে। তখন তিনি অসুস্থ। বাইরে বেরুতে পারেন না। সারাদিনই ঘরে এদিক সেদিক পায়চারি করতেন। কেউ তার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি বেজায় খুশী হতেন। আমিতো সপ্তাহে একদিন দেখা করতে যেতামই। না গেলে যেনো খাবারই হজম হতোনা। বাসায় পৌছে কলিংবেল টিপলে দরজা খুলে দেয়া হতো। সিটিং রুমে তার জন্য কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর তিনি হঠাত গলা খাকিয়ে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতেন। আসার সময় নিয়ে আসতে একটি নোট প্যাড। কখনো তিনি না নিয়ে এলে অপু কিংবা আপ্লুকে সেটি দিয়ে যেতে বলতেন। নোট প্যাডটি এলেই ব্যাস । কারণ তিনি কথা বলতে পারতেন না। লিখালিখি করেই ওনাকে বুঝাতে হতে। তবে তার বুদ্ধি শক্তি এতই প্রখর ছিলো যে, কলম কাগজ ছাড়া হাতের আঙুল দিয়ে টেবিল ক্লথের উপর আকিঁবুকি করলেই তিনি এক নিমিষে বুঝে নিতে পারতেন। তার সাথে যখন এক রিক্সায় চলতাম তখন আঙুল দিয়ে হাতের তালুতে আকি-বুকি করতাম। তিনি অনায়াসেই বুঝে ফেলতেন।
যে কজন মানুষের কথা তিনি বলতেন এর মধ্যে একজন হলেন কবি বেলাল মোহাম্মদ। আজ যার সাথে ছবিতে তাঁকে দেখছি। সবচেয়ে বেশী বলতেন সাংবাদিক আইনজীবী তবারক হোসেইনের কথা। একবার প্রসংগক্রমে বললেন, এখন তো সিলেটে সাংবাদিকের অভাব নেই। এক সময় সিলেটে আমরা হাতে গোনা কজন সাংবাদিক ছিলাম। আমাদেরকে শুধু মানুষই ছিনতনা, সিলেটের রাস্তাঘাটও আমাদের মনে হয় চিনতো। একদিন আমরা আমাদের জনপ্রিয়তা পরীক্ষা করলাম। ঢাকায় গেলাম আমি ও তবারক। ফেরার পথে আমরা দুইজনই দুজনার নামে দুটি চিঠি পোষ্ট বাক্সে ছেড়ে এলাম। ঠিকানা লেখলাম-মোহাম্মদ আবদুল বাসিত, সাংবাদিক, সিলেট আর তবরাক হোসেইন, সাংবাদিক, সিলেট। আর কিছুই নয়। সিলেট পৌছে দেখি আমাদের পৌছার আগে আগেই চিঠিগুলো আমাদের ঠিকানায় পৌছে গেছে। নাম দেখে ঠিকানা খোঁজে বের করতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়নি ডাক পিয়নের।
এভাবে কত গল্প আজ অবেলায় আমার মনে পড়ছে। তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে শেষ করার মতো নয়। তিনি ছিলেন খুব উদার ও বড় মনের মানুষ। দৈনিক এক প্যাকেট সিগারেট তাঁর লাগতোই। আর সেটি হতে হবে অবশ্যই উন্নমানের বেনসন এন্ড হ্যাজেজ। একদিন আমাকে রসিকতা করে বলেছিলেন, তুই কি সিগারেট খাস? বললাম, জ্বি-না। বললেন, খাবার চাইলে খাইবে। তবে মাস্ট বেনসন।
দৈনিক জালালাবাদ অফিসে আমি ও আমজাদ ভাই একদিন রাতের শিপটে কাজ করছি। হঠাত তিনি এলেন। কিছুক্ষন বসলেন। একসময় সিগারেট প্যাকেটটি পকেট থেকে বের করলেন। কিন্তু পকেট হাতড়ে ম্যাচটা খুজে পাচ্ছিলেন না। আমজাদ ভাইর কাছে ম্যাস আছে। তিনিও ধূমপান করেন। কিন্তু তিনি তাঁকে (আবদুল বাসিত) ম্যাচ অফার করতে সাহস পাচ্ছিলেন না। কিভাবে দেবেন, বেয়াদবী হবে। তিনি তো বুঝে ফেলবেন যে, আমজাদ ভাই সিগারেট খান। বিষয়টি বুঝে গেলে সাংবাদিক আবদুল বাসিত। বললেন, কারেন্ট চলে গেলে তোমরা কি মোমবাতি জ্বালাও না? আমজাদ ভাই বললেন জ্বি জ্বালাতেই তো হয়। তিনি প্রশ্ন করলেন, তাহলে ম্যাস রাখো না। জ্বি জ্বি এই তো আছে। বললেন ম্যাসটি দাওতো। এই সুযোগে আমজাদ ভাই ম্যাসটি তাকে দিলেন। তিনি সিগারেট ধরিয়ে একবার দম নেয়ার পর যেনো প্রশান্তি পেলেন।
এভাবে উপস্থিত বুদ্ধি ছিলো তার। মাঝে মধ্যে এমন নাটকীয় কিছু করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিতেন।
অনেক লেখার ছিলো। কিন্তু সময় নেই। আবারও কোনো সময় তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করবো। দোয়াকরি আল্লাহ যেনো তাকে জান্নাতের শ্রেষ্ঠতম স্থানে সমাসীন করেন। আমিন।
তাইছির মাহমুদ, নির্বাহী সম্পাদক, সাপ্তাহিক নতুন দিন, লন্ডন।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন