রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠছেন তারেক জিয়া : তত্ত্বাবধায়ক ইস্যূতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহবান

লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ২২ মে, ২০১৩, ০১:৫৭:০৬ রাত

তাইছির মাহমুদ :

রাজনীতিতে সক্রিয়া হয়ে উঠছেন বিএনপি নেতা তারেক জিয়া। ওমরাহ পালনে সৌদি আরব গিয়ে সেখানকার দলের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময়ের পর এবার লন্ডনে দলের নেতাকর্মীদের সাথে বসলেন। তাদের কথা শুনলেন। দিক নির্দেশনা দিলেন। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বললেন। তিনি বলেন, আমাদের এখন আর বসে থাকার সময় নেই। যদি আমরা সত্যিকার অর্থে দেশকে ভালোবাসি, দলকে ভালোবাসি। তাহলে যার যার অবস্থান থেকে একটি অবস্থা তৈরি করতে হবে যাতে করে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন করা সম্ভব হয়। কারণ এই সরকার দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে যাচ্চেছ এটা কারো বুঝতে বাকী নেই। দেশকে এই অবস্থা থেকে আমাদের বের করে আনতে হবে। দেশের নাগরিক হিসেবে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন নেতা বা কর্মী হিসেবে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে।

তিনি গত সোমবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের রমফোর্ড রোডস্থ পামট্রি রেস্টুরেন্টে যুক্তরাজ্য বিএনপির জোনাল কমিটির নেতাকর্মীদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় কথাগুলো বলেন। নিউহ্যাম বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস এর সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারী মোঃ আব্দুল কাইয়ুম ও ফেরদৌস আলমের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ সমাবেশ বিকেলে ৩টায় শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলতে থাকে। সমাবেশে শতাধিক নেতাকর্মী বক্তব্য শুনেন তারেক রহমান। এরপর তিনি বক্তব্য রাখেন প্রায় ৪৫ মিনিট। দীর্ঘ বক্তৃতাকালে তিনি কানাডিয়ান টেলিভিশনে প্রচারিত প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতকারের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাইনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর পরিবার পদ্মা সেতু দূর্নীতির সাথে জড়িত নয়। তাঁকে তো এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়নি। তাহলে তিনি কেন নিজ থেকে বলছেন তাঁর পরিবার জড়িত নয়। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী সংসদে খুব আনপার্লামেন্টারিয়ানের মতো একটি কথা বলেছিলেন- ডাল মে কুচ কালা হে। তার কথাটিই আজ উলটো তাঁকে বলতে হয় ডাল মে কুচ কালা হে।

তিনি বলেন, একটি দল দেশে কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করলো। সবাই দেখেছেন, সবাই শুনেছেন রাতের অন্ধকারে এতোগুলো মানুষকে কিভাবে মেরে ফেলা হলো। এটি কোন ধরনের দেশ হতে পারে। কোন ধরনের গণতন্ত্র হতে পারে। কোন ধরনের শাসন ব্যবস্থা হতে পারে। তাদের সাথে আমাদের আদর্শের মিল আছে কিনা সেটা পরের ব্যাপার। এজন্যই কি আমরা এতোগুলো মানুষকে মেরে ফেলবো। তিনি দলের নেতাকর্মীদেরকে এ ব্যাপারে বৃটিশ মন্ত্রী এমপিদের সাথে লবিং করে বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের বিষয়টি তুলে ধরার আহবান জানিয়ে বলেন, ধরে নিলাম আমাদের দেশের এ ধরনের দলগুলো দেখলে এই দেশের (বৃটেনের) রাজনীতিকরা ভয় পায়। কিন্তু তাদের বলেন, অন্যসব বাদ দাও। এই যে দেড়-দুই হাজার মানুষকে রাতে অন্ধকারে মেরে ফেললো এটা কোন ধরনের বিচার। তোমরা যে কিছু হলেই মানবাধিকারের কথা বলছো, মানুষের ন্যায্য অধিকারের কথা বলছো। মানুষকে মেরে ফেলা কোন ধরনের বিচার হতে পারে? এটা তোমরা দেখছ না কেন? এভাবেই তাদেরকে বিষয়গুলো জানাতে হবে। এদের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। তিনি বলেন, এই ঘরের মধ্যে ১০ ঘন্টা বক্তব্য দিলে তাতে কিছু যায় আসেনা। ৪২টি জোনাল কমিটি প্রতি সপ্তাহে যদি ৪২ জন এমপি-রাজনীতিককে বাংলাদেশের পরিস্থিতির আপডেট দিতে থাকেন, তাদেরকে বলেন, দেখো দেশে গণতন্ত্রের নামে কী হচ্চেছ। তোমরা গণতন্ত্রের কথা বলো কিন্তু বাংলাদেশে কী হচ্চেছ দেখোনা। তোমরা এক হাজার বছর ধরে গণতন্ত্রের চর্চা করে আসছো। তাহলে এটা দেখবেনা কেন? আমরা যতই এখানে বক্তব্য দেই তাতে তেমন কিছু হবেনা। কিছু আপনারা লবিংয়ের মাধ্যমে অনেক কিছু করতে পারেন।

সাংবাদিক নির্যাতন প্রসংগে তারেক জিয়া বলেন, এ সরকারের আমলে কমপক্ষে ২০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আর আহত কত তার হিসেব নেই। তিনি সাগর রুনি হত্যাকান্ড প্রসংগে বলেন, তারা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতির খবর পেয়ে গিয়েছিলো বলেই নিহত হতে হয়েছে।

ওয়ান এলেভেনে সময় দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের ভুমিকা সম্পর্কে তারেক জিয়া বলেন, ঐ সময় দলকে ধরে রাখতে তাদের ভূমিকা রাখার কথা ছিলো। কিন্তু তারা তখন অন্য ভুমিকায় অবতীর্ণ হন। তখন কিন্তু দলের তৃণমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাই দলকে ধরে রেখে প্রমাণ করেছিলো তারা দলতে ধরে রাখতে সক্ষম। তিনি যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীদেরকেও দলকে ধরে রাখতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, দেশে যদি তারা পারে তাহলে যুক্তরাজ্যে কেন পারবেন না? তিনি বলেন, দলের মধ্যে অভ্যন্তরিন কোন্দল থাকতে পারে। এটা স্বাভাবিক। এজন্য দলের ভেতরে কথা হবে। আপনাদের জন্য মাইকের আওয়াজ আরো বাড়িয়ে দেবো। এখানে কথা বলবেন। বাইরে নয়। বাইরে কথা বললে, দল ক্ষতিগ্রন্থ হবে। ক্ষতিগ্রস্থ হবেন আপনিও।

যুক্তরাজ্য বিএনপির কমিটি গঠন প্রসংগে তারেক জিয়া বলেন, ভালো মন্দের সংমিশ্রনে একটি কমিটি আসবে। ইয়াং ডায়ানমিক শিক্ষিত ছেলেরা রাজনীতিতে আসুক এটা আমি চাই। এক কমিটিতে সব কিছু পাওয়া সম্ভব নয়। ভালো মন্দের মিশ্রনে কমিটি আসবে। এই কমিটি কাজ করতে করতে নতুন নেতৃত্ব চলে আসবে। নেতৃত্ব গড়ে তোলার ব্যাপারে একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপুর্ণ। তা হচ্চেছ- একটি কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি হবে। এভাবে কমিটি গঠন করলে মাঠপর্যায়ের কর্মীরা যে কমিটি আশা করে সেই পর্যায়ের নেতৃত্ব বের করে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। তারেক জিয়া বলেন, যুক্তরাজ্য বিএনপির নতুন কমিটি আসার পর তিনি দলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়মিত বসার চেষ্টা করবেন।

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মহিদুর রহমান, সাবেক সেক্রেটারী এম এ মালিক, সাবেক সেক্রেটারী ব্যারিষ্টার এম এ সালাম, বিএনপি নেতা আব্দুল হামিদ, তৈমুছ আলী, শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপন, আখতার হোসেন টুটুল, নাসিম আহমদ চৌধুরী, লুতফুর রহমান, আতিকুর রহমান চৌধূরী পাপ্পু, এম কয়সর আহমদ প্রমুখ।



উল্লেখ্য, সোমবারের এই সমাবেশ প্রথমে ডকল্যান্ডের একটি অভিজাত হোটেলে শুরু হলেও কিছু নেতার ভেতরে প্রবেশ করা না করা নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে নিরাপত্তার কারণে সেটি বাতিল হয়ে যায়। পরে রমফোর্ড রোডের পামট্রি রেস্টুরেন্টে আয়োজন করা হয়। তারেক জিয়া মনোযোগ সহকারে প্রায় ৪২টি জোনাল কমিটির শতাধিক নেতাকর্মীর বক্তৃতা শুনেন। নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বলেন, এমন কাউকে নেতৃত্বে বসাতে হবে যাতে দলের সাংগঠনিক সক্রিয়তার পাশাপাশি মর্যাদাও বৃদ্ধি পায়। তবে অন্তত ৫/৬ জন নেতা পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে নিজ নিজ এলাকায় এমপি পদে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের যোগ্যতা তুলে ধরার চেষ্টা করেন। তাঁদের বক্তব্য শুনে তারেক রহমান মাঝে মধ্যে স্মিত হাসেন ও রসিকতা করে জানতে চান কোন দেশের পার্লামেন্টে---। ব্যারিস্টার সালামের জন্য দক্ষিণ সুরমায় মনোনয়নের দাবী উঠলে তারেক রহমান মাইক হাতে নিয়ে বলেন, তাহলেও তো তাঁকে ইউকে কমিটির শীর্ষ পদ থেকে বাদ দিতে বলছেন আপনারা। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মহিদুর রহমানও বক্তৃতাকালে তাঁর নির্বাচনী এলাকা মৌলভীবাজার থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। এ সময় তারেক জিয়াকে মাথা নেড়ে ইতিবাচক সম্মতি জ্ঞাপন করতে দেখা যায়।

বিষয়: বিবিধ

১৬৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File