কি বলবো লজ্জার কথা। আমিতো ভেবেছিলাম পাত্র আপনি !!!
লিখেছেন লিখেছেন হুদাই প্যাচাল বাক্স ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৬:০০:৫৬ সকাল
বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে গেলে পাত্রীকে কি ধরনের গ্যাড়াকলে পড়তে হয় নিজ চোখে দেখলাম।
আমার ফুফাতো ভাই মোরশেদ আলমের জন্য পাত্রী দেখতে যাওয়ার সময় আমাকে সাথে নিয়ে গেলো।
মোরশেদ ভাই একটু লাজুক টাইপের মানুষ। আমি ছাড়া তার সমবয়সী আর কেউ নাই।
আর তাই আমাকে সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগলো।
আমি তার চাইতেও বড় লাজুক এটা সে ভালো করেই জানে। জিদ করলো আমাকে যেতেই হবে সাথে।
কি আর করা !! বললাম চলো যাই।
আমার নিজেরও কৌতুহল ছিলো। অভিজ্ঞতার দরকার আছে।
আমাদের পাশের গ্রামেই পাত্রী পক্ষের বাড়ি। খুব কম সময়েই পৌঁছে গেলাম আমরা।
নাস্তাপানি জুস শরবত খাওয়ার পর্ব শেষে পাত্রীকে ডাকা হলো।
পাত্রীকে একজন ধরাধরি করে নিয়ে এলো। মনে হচ্ছে তার আগ্রহ নাই। জোর করেই সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে এসেছে। ঘোমটা পরা অবস্থায়ই সালাম দিলো। সমস্বরে সবাই সালামের জবাব দিলাম।
এবার মেয়ের বাবা মেয়ের নাম ধরে বললো, ঊনি তোমার শশুর হবেন, আর ঊনি শাশুড়ি। ঊনাদের পা ধরে সালাম দাও। মেয়ে পা ধরে সালাম দিলো। আর ঊনি তোমার আপু হবেন ঊনাকেও সালাম দাও। সালাম দেয়ার সময় ফুফা এক হাজার টাকার একটা নোট বের করে দিলেন।
ফুফা প্রথমেই মেয়ের পড়াশোনার স্ট্যাটাস জানতে চাইলেন। জানতে চাইলেন ক্লাস নাইনে থাকতে মেয়ের রোল নাম্বার কত ছিলো। মেয়ের হাতের লেখা চেক করলেন। আরো অনেক প্রশ্ন। সব প্রশ্নের উত্তর দিলো মেয়ে।
এবার ফুফুর ইন্টারভিউ শুরুঃ
আচ্ছা মা, একটু হাঁটো তো। হাঁটলো। বাহ্... বউমা তো লম্বা আছে মাশাআল্লাহ।
আচ্ছা ঘোমটা সরাও, তোমার মুখটা ভালো করে দেখিতো...
ঘোমটা সরালো। এবার মাথার চুল, হাতের নখ, পায়ের নখ সব চেক করা হলো।
এবার ফুফু আর ফুফাতো বোনের লাগাতার প্রশ্নঃ
আচ্ছা তুমি কি কি রান্না করতে জানো? কয়েক প্রকারের তরকারির নাম বলো।
তোমার প্রিয় তরকারি কি? খিচুড়ি রাঁধতে জানোতো?
মেয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
পাকঘরের অভিজ্ঞতার আরো কিছু প্রশ্ন করে ফুফু আর ফুফাতো বোন ক্ষ্যান্ত দিলেন।
এবার ফুফাতো ভাই মোরশেদ আলমের প্রশ্নের পালা।
মোরশেদ ভাইকে জিজ্ঞেস করা হলো তোমার কিছু জানার ইচ্ছা থাকলে পাত্রীকে প্রশ্ন করতে পারো।
গলা খ্যাকারি দিয়ে মোরশের ভাই সবার সামনে জিজ্ঞেস করলো,
আচ্ছা আপনার পছন্দের কোনো মানুষ আছে? থাকলে বিনা সঙ্কোচে বলতে পারেন আমার আপত্তি নাই।
মেয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো...
মেয়ের বান্ধবী পাশে থেকে আওয়াজ দিলো, না ভাইয়া তার কোনো পছন্দের মানুষ নাই। জীবনে কোনোদিন কোনো ছেলের দিকে তাকায়নাই। গ্যারান্টি আছে।
সবাই সমস্বরে বলে উঠলো আলহামদুলিল্লাহ্। আমি একটু দুষ্টুমি করে বললাম সুবহানআল্লাহ্।
ফুফা আর দেরী করলেন না, সবাইকে মিষ্টি মুখ করতে বললেন। পাত্রী আমাদের পছন্দ হয়েছে বলেই পাত্রীকে আংটি পরিয়ে দিলেন। ফুফু ঊঠে জড়িয়ে ধরলেন। ফুফাতো বোনও হবু ভাবীকে জড়িয়ে ধরে হাসাহাসি করলো কিছুক্ষন।
আমারও জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু তা সম্ভব না।
মোরশেদ ভাই অপলক নেত্রে তাকিয়ে আছে তার হবু বউয়ের দিকে। এসময়ে তাকে ডিস্টার্ব করা উচিত না।
হবু ভাবীকে জিজ্ঞেস করলাম ভাবীজান পত্রের প্রথমে সালাম নিবেন। আচ্ছা, আপনার বান্ধবীর ব্যাপারে কোনো ইনফরমেশন দেয়া যাবে?
ভাবী মুচকি হেসে উত্তর দিলো, আরে সে তো বিবাহিতা...
ধুর !!
পরে ভাবীকে জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা ভাবীজান, আজকের এই ইন্টারভিউ পর্ব কেমন লাগলো?
ভাবীজান মুচকি হেসে মাথায় হাত দিয়ে বললো ভাইয়া, আপনি মেয়ে হলে বুঝতেন।
আপনাকে আমি বোঝাতে পারবোনা। আমাদের সমাজে মেয়েদের ইচ্ছার স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই।
বললাম আমি মেয়ে হলে আজ আপনি যা করলেন, এই কাজগুলো বোধহয় আমার দ্বারা সম্ভব হতোনা !
ভাবীকে জিজ্ঞেস করলাম এখনো সময় আছে, পছন্দের কেউ থেকে থাকলে বলতে পারেন। বিবেচনা করা হবে। আমি সাহায্য করবো নো টেনশান। ভাবী মাথা নেড়ে বললো... নাহ্ কেউ নাই।
ও আচ্ছা, আমার ফুফাতো ভাইকে পছন্দ হয়েছে তো? আপত্তি থাকলে বলতে পারেন।
এখনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার সুযোগ আছে কিন্ত !
ভাবীর উত্তর শুনে আমি পুরাই মফিজ হয়ে গেলাম...
কি বলবো লজ্জার কথা। আমিতো ভেবেছিলাম পাত্র আপনি !!!
ফেসবুকে আমি
বিষয়: বিয়ের গল্প
৪৪৪২ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ কাহিনী কমন পড়েছে ।
অনেক ধন্যবাদ।
আপনি পাত্র হলে তো ভালই হত, আমরা একটা ব্লগীয় দাওয়াত খেতে পারতাম
মন্তব্য করতে লগইন করুন