২৫ নভেম্বর আমেরিকার কাছে যেভাবে বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশ.......
লিখেছেন লিখেছেন হুদাই প্যাচাল বাক্স ২৪ নভেম্বর, ২০১৩, ০৮:১৫:২৪ সকাল
২৫ নভেম্বর আমেরিকার সাথে ‘টিকফা’ নামক
চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ চুক্তির
শর্তগুলো একটু জটিল হওয়ায় সাধারণ মানুষের
কাছে তা সহজে বোধগম্য নয়। অনেকে জানেই না,
তাদের চোখের
সামনে কিভাবে বিক্রি করা হচ্ছে তারা মাতৃভূমিকে।
আসুন খুব সহজ ভাষায়
দেখি টিকফা হলে কি হবে........
১) গ্যাস: বাংলাদেশে বিনা শুল্কে শকুনের মত
প্রবেশ করবে শত শত মার্কিন কোম্পানি, দখল
করে নেবে পুরো গ্যাস সেক্টর। তাদের সাথে কখনই
প্রতিযোগীতায় পেরে উঠবে না সরকারী ও দেশীয়
কোম্পানিগুলো। একচ্ছত্র অধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর
গ্যাসের দাম এত পরিমাণ বৃদ্ধি করবে যে, তখন
বাঙালীরা গ্যাসের উপরে থেকেও রান্নার জন্য
সামান্য গ্যাস পাবে না, যেমনি হীরার
দেশে থেকেও দু’মুঠো খাবার পায়
না সম্রাজ্যবাদীদেরচক্রান্তে বিধ্বস্ত
সিয়েরা লিয়নবাসী।
২) বিদ্যুৎ: সরকারি কোম্পানিগুলো পেরে না ওঠায়
দেশীয় বিদ্যুৎ বিভাগ চলে যাবে মার্কিনীদের
হাতে। তখন আধুনিকায়নের নামে বিদ্যুতের দাম
বাড়বে কয়েকগুন। আওয়ামীলীগের
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়া,
কিন্তু এ চুক্তি হলে উল্টো উচ্চ বিলের
কারণে সুবিধা হারাবে শহুরে জনগণ। তখন
দেশে উৎপন্ন বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া হবে দেশের বাইরে।
৩) বন্দর: অবাধ বাণিজ্যের
নামে বন্দরগুলো অবাধভাবে ব্যবহার
করবে মার্কিনীরা। তখন এ বন্দর ব্যবহার
করে আমাদের দেশে মার্কিন
সেনাবাহিনী ঢুকালো না অস্ত্র ঢুকলো তার
কোনো হিসেব নেয়ার ক্ষমতা থাকবে না বাংলাদেশ
সরকারের ।
৪) টেলিযোগযোগ: টেলিযোগাযোগ খাত আগেই
বেসরকারিকরণ হওয়ায়, দেশের অনেক গোপন তথ্যই
হারিয়েছি আমারা। বিশেষকরে, কোন রাষ্ট্রেই কখন
পাশ্ববর্তী দেশের মোবাইল
কোম্পানিকে যায়গা দেয়া হয় না, সেখানে ভারতের
এয়ারটেল বাংলাদেশে প্রবেশ করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ
তথ্য ভারতের নিয়ন্ত্রণে রাখছে। যা আমাদের জন্য
খুবই পরিতাপের বিষয়।
তবে এ খাতে মার্কিনীরা প্রবেশ করলে তাদের
অধিকতর পোদ্দারিতে অতিষ্ঠ হয়ে ঊঠবে জনগণ, কারণ
মার্কিনীদের আড়িপাতার জঘন্য রেকর্ডের জন্য
তারা সারা বিশ্বেই কুখ্যাত ।
৫) শিক্ষা: শিক্ষাখাতে মার্কিনীদের প্রবেশ, আর
জাতির মেরুদণ্ডকে ড্রোন দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া একই
কথা। আধুনিকায়নের কথা বলে সিলেবাসসহ সর্বত্র
বাদ দেয়া হবে ইসলামকে, প্ররিষ্ঠানগুলোতে পশ্চিমের
মত ধর্ম চর্চা নিষিদ্ধ করা হবে । বিজাতীয়
অপসংস্কৃতি দিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হবে আমাদের
ভবিষ্যত প্রজন্মকে। অনেকে বলতে পারেন, এখনই
তো অনেকটা হয়ে গেছে, তাদের বলতে চাই: এখন
যদি ৫ টাকার ধ্বংস হয়, তবে তখন হবে ৫০ টাকার।
৬) স্বাস্থ্য: সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে স্বাস্থ্য
খাত। ঔষধের গুনগত মানের কথা বলে মার্কিন
নীতি চাপিয়ে দেয়া হবে দেশীয় কোম্পানিগুলোর
ঘাড়ে। কথিত নীতি বাস্তাবায়ন করতে মারাত্মক
বৃদ্ধি পাবে ঔষধের দাম। এখন
যদি একপাতা এন্টাসিড কিনতে যদি খরচ হয় ১৫
টাকা, তবে তখন খরচ হবে ১৫০ টাকা। মানুষ
সামান্য ঔধের অভাবে বিনা চিকিৎসায়
মারা যাবে। একই সাথে মার্কিন কোম্পানিগুলোর
সাথে প্রতিযোগীতায়
টিকতে না পেরে পথে বসে যাবে দেশীয়
কোম্পানিগুলো।
৭) পরিবহন সেক্টর: পরিবহণ খাত বাংলাদেশের
অন্যতম প্রধান সেক্টর। দেশের পরিবহন
সেবা না নিয়ে দেশের কোন নাগরিক
থাকতে পারে না। দেশের কোটি কোটি জনগণ এ
খাতের সাথে জড়িত, এ খাতের আয়ও প্রচুর। কিন্তু
মার্কিনীরা এ ছোট্ট দেশে প্রবেশ
করলে তারা বিনিয়োগের মাধ্যমে যেকোন
উপায়ে একচ্ছত্র অধিপত্র প্রতিষ্ঠা করবেই,
ফলে বাংলাদেশের সমস্ত পরিবহন মালিকদের
পথে বসা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। আর
আমাদের
টাকা নিজে দেশে নিয়ে যাবে মার্কিনীরা।
মনে রাখবেন এ চুক্তির সবচেয়ে ভয়াবহ ফলাফল
হচ্ছে, মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানির
কাছে পেরে না ওঠায় রাস্তায় বসে যাবে দেশীয়
ব্যবসায়ীরা। আর এই সুযোগে একচেটিয়া অধিকার
পেয়ে সবকিছুর দাম আকাশে উঠাবে মার্কিনীরা।
মূলত: এই কারনেই ভারত ও চীন যুক্তরাষ্ট্রের
সাথে টিকফা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়নি।
আমার এ লেখাটা অনেকের কাছে রুপকথার মত
মনে হতে পারে, কিন্তু আমি সহজ ভাষায়
যা বর্ণনা করতে চেয়েছি পরিস্থিতি তার থেকে অনেক
ভয়ঙ্কর হবে।
মূলতঃ এ
চুক্তি হচ্ছে বাংলাদেশকে চুষে খেয়ে ভিখারী বানানো একটা পন্থামাত্র।
যেমনটা ল্যাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে অবাধ
বানিজ্য চুক্তির নামে তাদের
পথে বসিয়েছে দিয়েছে আমেরিকা, কিংবা আফ্রিকান
দেশগুলোতে ব্যবসার নামে ঢুকে তাদের দুর্ভিক্ত
আক্রান্ত করে ছেড়েছে তারা।
তেমনি এই চুক্তির মাধ্যমেও
বাংলাদেশকে আফ্রিকা-ল্যাতিনআমেরিকার মত
শুষে খাবে আমেরিকা, বানিয়ে দিবে কঙ্কালসার।
সর্বশেষে বলতে চাই, বর্তমানে কথিত সর্বদলীয়
সরকার কোন গণতান্ত্রিক সরকার নয়। তাদের নেই
কোন সাংবিধানিক ভিত্তি। মূলত
অন্তবর্তীকালীন সরকার কখনই
ক্ষমতা রাখে না এতবড় একটা চুক্তি করার।
তাদের কাজ থাকে সরকারের রুটিন ওয়াইজ
কাজগুলো চালিয়ে যাওয়া এবং নির্বাচনের
আয়োজন করা, বৈদেশিক চুক্তি সম্পাদন করা নয়। নবম
জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনের
সমাপনী ভাষণে খোদ প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিল
নির্বাচনকালীন সরকার কেবল দৈনন্দিন কাজ
করবে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ি এ
চুক্তি করতে পারে না বর্তমান সরকার। তাই
অবিলম্বে এ চুক্তির সিদ্ধান্ত থেকে তাদের
ফিরে আসার কোনই বিকল্প নেই।
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন