কেন আমি হেফাজতে ইসলামের বিরোধিতা করছি ? ------------------------------------------------------
লিখেছেন লিখেছেন জাদুর কাঠি ১৯ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:৩০:৩২ রাত
আমি একজন সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমান। আমার জন্ম মদিনায়। আমার জন্মের পর ৭ টি বছর আমি কাটিয়েছি এই পুণ্যভূমিতে। এখনও আমার জমজম কূপের সেই শীতল পানি খাওয়ার কথা মনে পড়ে, সাফা মারওয়ায় দৌড়ানোর কথা মনে পড়ে, আব্বুর সাথে হেরেম শরিফে নামাজ পড়ার কথা মনে পড়ে, চার বছর বয়সেই কুরআন শরীফ পড়ার কথা মনে পড়ে। মাঝে নামাজে অনিয়মিত হয়ে পড়েছিলাম, তবে আল্লাহ্র রহমতে সম্প্রতি আবারও নিয়মিত নামাজ পড়ছি। আমি নিজেকে মুমিন বান্দা সার্টিফাইড করার জন্য এগুলো বলছিনা, তবে আল্লাহ্র ওয়াস্তে কেউ আমাকে নাস্তিক, মুরতাদ, ধর্ম ব্যবসায়ী বলে ট্যাগ দিয়েন না, আমি কাফির না মুমিন তা নির্ধারণ করবেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। নিশ্চিতভাবেই অনেকেই আমার এই পরিচয় নিয়ে তেনা পেচাবেন, তবে তেনা একসময় না এক সময় ফুরোবেই ইনশাল্লাহ
যাই হোক, এই মুহূর্তে হেফাজতে ইসলাম হচ্ছে টক অফ দ্যা কান্ট্রি। দেশব্যাপী বিরাজ করছে চরম উত্কণ্ঠা। দেশে কী ঘটতে যাচ্ছে—এ নিয়ে জনমনে শঙ্কার পাশাপাশি চলছে নানা বিশ্লেষণ ও আলোচনা-সমালোচনা। একজন মুসলমান হয়েও কেন আমি হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির বিপক্ষে তা ক্লিয়ার করতে চাচ্ছি।
# প্রসঙ্গঃ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং হেফাজতে ইসলাম
ইসলামের দৃষ্টিতে মাফ নেই যুদ্ধাপরাধীদের। পবিত্র কুরআনের সূরা মায়িদার ৪৫ নং আয়াতে এবং সূরা বাক্বারা আয়াত নম্বর ১৭৮, ১৭৯ থেকে জানা যায়, যতক্ষণ পর্যন্ত না ক্ষতিগ্রস্থের পরিবার অপরাধকারীকে ক্ষমা না করে ততক্ষণ পর্যন্ত অপরাধীর গুনাহ মাফ হচ্ছে না এবং অপরাধীর বিচার করতে হবে ক্ষতিগ্রস্হদের উপর কৃত অপরাধের ভিত্তিতেই। আর যারা এই বিচার মানবে না তারা গণ্য হবে জালিম হিসেবে।
কিন্তু দেখুন, ১৫ই মার্চ চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ থেকে যুদ্ধাপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবি উঠেছে। খোলসের উন্মোচন হয়ে গেছে তখনই, তাই নয় কি ?
এর পরও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাঁধাগ্রস্থকরার জন্যই যে হেফাজতে ইসলামের আগমন, সেটা নিয়ে কোন ধরণের সন্দেহ থাকার কথা নাহ।
তারা যদি সত্যিকারার্থে ইসলামের সেভিওর হয়ে থাকতেন, তাহলে তাদেরকে জামায়াতে ইসলামের ব্যাপারে তারা কঠোর হতেন। যিনি মনেপ্রাণে মুসলিম, তিনি কখনই জামায়াত শিবিরকে সাপোর্ট করতে পারেন না। জামায়াত শিবিরের মত উগ্র ধর্মান্ধ দলই পারে ধর্মের অপব্যবহার করতে, ধর্মকে পুঁজি করে ক্ষমতা আরোহণের নির্লজ্জ চেষ্টায় নিমজ্জিত হতে। হাতের রগ কাটা, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট থেকে এমন কোন লোমহর্ষক কাজ নেই যা তারা করেনি। ৭১ এ এমন কাজ তারা করেছে, যা কোনভাবেই ইসলামপন্থী হতে পারেনা।
হেফাজতে ইসলামেরসবচেয়ে বড় ধূর্ত পরিচয় পাওয়া যায় এই বিষয়টির মাঝে। তারা প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষেও কিছু বলেনা, বিপক্ষেও কিছু বলেনা। আপনাদের সমাবেশস্থল থেকে যদি বলা হত, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই, তাহলেই কিন্তু সকল ধরণের বিভ্রান্তির মোচন হত। কিন্তু আপনারা তা করবেন কেন ? আপনারা আদৌ কি তাদের শাশ্তি চান ? আপনাদের সমাবেশে, প্রেস কনফারেন্সে কি জামায়াত শিবিরের নেতাদের দেখা যায় নি ? আপনাদের আহূত হরতালে জামায়াত শিবিরেরকর্মীদের পিকেটিং করতে দেখা যায় নি ? সব গোমরই তো ফাঁস হয়ে গিয়েছে, এরপরও এই ইস্যু নিয়ে জোর গলায় কথা বলেন কিভাবে !
## প্রসঙ্গঃ কুরআনের আয়াতসমগ্র এবং হেফাজতে ইসলাম
“...যারা ধর্ম সম্পর্কে নানা মতের সৃষ্টি করেছে ও বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন কাজের দায়িত্ব তোমার নেই, তাদের বিষয় আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত।...” –আল কোরআন (সুরা আনআমঃ১৫৯)
“...ধর্মে কোন জবরদস্তি নেই। সৎ পথ ভ্রান্তপথ থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে।...” –আল কোরআন (সুরা বাকারাঃ২৫৬)
“...(ধর্ম সম্পর্কে) বিদ্রূপকারীদের বিরুদ্ধে আমিই (আল্লাহ) আপনার জন্য
যথেষ্ট...” –আল কোরআন (সুরা হিজরঃ৯৫)
“...যদি তারা আত্মসমর্পণ (আল্লাহর কাছে) করে তবে নিশ্চয়ই তারা পথ পাবে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তোমার কাজ তো কেবল প্রচার করা। আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে সকল বান্দা।”–আল কোরআন
(সুরা আল ইমরানঃ২০)
“...তারপর ওরা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তোমার কর্তব্য তো শুধুমাত্র স্পষ্ট বাণী পৌঁছে দেয়া...”–আল কোরআন (সুরা নাহলঃ৮২)
“...তুমি মানুষকে হিকমত ও সৎ উপদেশ দিয়ে তোমার প্রতিপালকের (আল্লাহর)পথে ডাক এবং তাদের সাথে ভালভাবে আলোচনা কর। তাঁর (আল্লাহর) পথ ছেড়ে যে বিপথে যায় তার সম্পর্কে আল্লাহ্ই ভাল জানেন, আর যে সৎ পথে আছে তা-ও তিনিই ভাল করে জানেন”
– আল কোরআন (সুরা নাহলঃ১২৫)
“...তোমাদের কাজ তো কেবল প্রচার করা, আর হিসাব-নিকাশ তো আমার কাজ...” –আল কোরআন (সুরা রাদঃ৪০)
“...আর তোমাদের এই যে জাতি (মানবজাতি), এ তো একই জাতি। আর আমিই (আল্লাহ্) তোমাদের প্রতিপালক। তাই আমাকেই ভয় কর। কিন্তু তারা (মানুষ) নিজেদের বহু ভাগে বিভক্ত করেছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে সন্তুষ্ট। সুতরাং ওদেরকে কিছু কালের জন্য বিভ্রান্তিতে থাকতে দাও।” –আল কোরআন (সুরা মুমিনুনঃ৫২-৫৪)
“...আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য এবাদতের নিয়ম কানুন নির্ধারিত করে দিয়েছি যা ওরা পালন করে... তুমি ওদেরকে তোমার প্রতিপালকের দিকে ডাক... ওরা যদি তোমার সাথে তর্ক করে তবে বল, ‘তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ্ ভাল করেই জানেন। তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছ আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন...” –আল কোরআন (সুরা হজঃ৬৭-৬৯)
হেফাজতে ইসলামের কি করা উচিত আর কি করছে তা এবার আপনাদের বিবেচনার দায়িত্ব আপনাদের হাতে ছেড়ে দিলাম। আমি শুধুমাত্র কিছু কুরআনের আয়াত আপনাদের দৃষ্টিগোচর করছি। আমি তো বানিয়ে বানিয়ে কিছু লিখিনি। উপরোক্ত কুরআনের আয়াত নিয়ে আমি কিন্তু কোন ব্যাখ্যা দিচ্ছিনা। কারণ সে ধরণের এলেম আমার নেই এবং এত বড় দুঃসাহস দেখানো আমার পক্ষে সম্ভব না। আপনারা যারা ইসলাম ধর্মবিশারদ, তারা এর ব্যাখ্যা করতে পারবেন বলে আশা রাখি।
১) মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা।
আমার বক্তব্য - কোনটি মূর্তি আর কোনটা ভাস্কর্য সেটা আগে বুঝতে হবে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের দেব-দেবীর মূর্তির পূজো করেন। কিন্তু অপরাজেয় বাঙলা’র মতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী ভাস্কর্যকে আমরা পূজো করিনা। এগুলো আমাদের দেশের সম্পদ, আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক। এগুলো ধ্বংস করতে চায় হেফাজত- কিসের ভিত্তিতে, কোন যুক্তিতে ?
তাহলে সৌদি আরবে অবস্থিত উটের 'মূর্তি'; ইসলামি রাষ্ট্র ইরানে অবস্থিত কবি শেখ সাদি, কবি ওমর খৈয়াম ও মহাকবি ফেরদৌসির 'মূর্তি' নিয়ে তারা কিছু বলে না কেন ?!? নাকি ওখানে আমাদের চেয়ে কেউ ইসলাম কম বুঝে ?
আমরা সবাই জানি, হজরত আয়েশা (রা.) নয় বছর বয়সে নবীজীর (সা.) সহধর্মিণী হন। তিনি পুতুল নিয়ে খেলতেন। নবীজীর তাতে কোনো আপত্তি ছিল না, বরং তিনিও মজা পেতেন এবং কৌতুহল প্রদর্শন করতেন। (মুহাম্মদ আলী আল-সাবুনী, রাওযাইউল বয়ন, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪১৩)
৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে হজরত ওমর (রা.) জেরুজালেম জয় করেন। প্রাণীর ছবিসহ একটি ধুপদানি তাঁর হাতে আসে। তিনি সেটি মসজিদ-ই-নব্বীতে ব্যবহারের জন্য আদেশ দেন। (আব্দুল বাছির, ‘ইসলাম ও ভাস্কর্য শিল্প: বিরোধ ও সমন্বয়’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদ পত্রিকা, জুলাই ২০০৫ জুন ২০০৬)
পারস্যের কবি শেখ সাদীকে কি পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু আছে? উনি হচ্ছেন সেই মানুষ যার ‘নাত’ এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা মিলাদে সব সময় পাঠ করে থাকেন।
‘বালাগাল উলা বি কামালিহি কাশাফাদ্দুজা বি জামালিহি…’
মাদ্রাসার উত্তেজিত বালকেরা শুনলে হয়তো মন খারাপ করবে যে, শেখ সাদীর মাজারের সামনেই তার একটি মর্মর পাথরের ভাস্কর্য আছে। সেখানকার মাদ্রাসার ছাত্ররা তা ভাঙেনি।
অনেকেই খোঁড়া যুক্তি দেখাবে, হেফাজতে ইসলাম তো বলেনি কোথাও আগের ভাস্কর্যগুলো ভাঙ্গতে হবে। আমার বক্তব্য হচ্ছে, নতুন কোন ভাস্কর্য স্থাপনে হেফাজতে ইসলামের আপত্তি থাকলে, আগের ভাস্কর্য নিয়ে তাদের আপত্তি থাকবে না কেন ?? এটা কেমন দ্বিচারিতা হয়ে গেল না ? হেফাজতে ইসলামের কাছে অনুরোধ, দয়া করে আপনারা আইওয়াশ করবেন না। আমরা বুঝি যে আপনারা চান বাংলাদেশ বাংলাস্থান হয়ে উঠুক আফগানিস্থানের মত। কিন্তু আপনাদের সেই আশা কোনদিনই পূরণ হবেনা ইনশালাহ।
আমি আমার নোটের কোথাও কি দাবি করছি, আমি ইসলাম বিশারদ ? আমি কি কোথাও বলেছি সৌদি আরব, ইরান, মিশর ইসলামের দলিল ? নাহ, কোথাও নাহ। কিন্তু আমি যাই উপস্থাপন করেছি, প্রত্যেকটি রেফারেন্স সহ। আমি আপনাদের শুধুমাত্র দৃষ্টিগোচর করছি। সিদ্ধান্ত নিবেন আপনারা।
২) ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।
আমার বক্তব্য- কোনটা বিজাতীয় সংস্কৃতি তা হেফাজতি নেতারা সঠিক ভাবে জানেন কি?আরব দেশের পোশাক ,খাবার,সংস্কৃতি কিভাবে বাঙ্গালির জাতীয় সংস্কৃতি হবে তার উত্তর তারা কিভাবে দিবেন?? এই উত্তর দিতে গেলেই তারা তাদের ধর্ম বিশ্বাস এর অবতারনা করবেন ! আর বিজাতীয় সংস্কৃতি ? তাহলে তো বাংলাদেশ থেকে মার্কিন নাস্তিক মার্ক জুকারবার্গের উদ্ভাবিত ফেসবুক নিষিদ্ধ করতে হবে এবং বাংলাদেশের যারা যারা নাস্তিক জুকারবার্গের ফেসবুক ব্যবহার করে, তাদেরও বিচার করতে হবে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে নারী পুরুষ সবাইকে সমান নাগরিক অধিকার দিতে বাধ্য। এদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের একটা বড় অংশই নারী, যারা পুরুষের পাশাপাশি কাজ করে এদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করছে। হেফাজতের দাবি মেনে নিলে তাদের ঘরে ফিরে যেতে হবে। হেফাজতের দাবি মেনে নিলে এদেশের নারীরা রাজনীতি করার অধিকার হাড়াবে। খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা, মতিয়া চৌধুরি, পাপিয়া এরা রাজনীতি করতে পারবেন না।
তেনা পেচায় যারা, তারা বলবেন "অবাধ মেলামেশা"র কথা। অবাধ মেলামেশা হয় সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে। কোন ধর্মই তো একে সমর্থন করেনা। এটা নিয়ে তো নতুন করে কিছু বলার নেই। কিন্তু আপনারা এই টার্ম ইউজ করছেন "শাহবাগে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা" নিয়ে। এই সংক্রান্ত লেখাগুলো লিখতো বাশেরকেল্লা পেজ। বাশেরকেল্লা যেন কাদের পেজ ? কেমন যেন খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে না ???
হেফাজতে ইসলামের দাবি মেনে নিলে আজ থেকে ২০ বছর পর শিশু বয়সের এই উচ্ছলতা আর থাকবেনা নিশ্চিতভাবেই। চিন্তা করলেই শিউরে উঠতে হয় !
৩) কথিত শাহবাগি আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর শানে জঘন্য কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা।
আমার বক্তব্য- শাহবাগে আস্তিক, নাস্তিক, হিন্দু, মুসলমান সকলেই এসেছিলেন। ঠিক যেমন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশগ্রহণ করেছিলেন সকল ধর্মের অনুসারীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। ধর্মের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ককে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। যার যার ধর্ম তার তার; কিন্তু রাষ্ট্র সকলের। আবার যারা ব্লগার সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখেন না, তারা ব্লগার রাজীবকেই শাহবাগ আন্দোলন হিসেবে বিবেচনা করছেন, কিন্তু এই অথর্ব দাবীর সাথে আমরা একমত নই। শুরুর দিকে শাহবাগে সমন্বয়হীনতার কারণে নানা সমস্যা হলেও, পরবর্তীতে কিন্তু ঠিকই আযানের সময় মাইক বন্ধ করে রাখা হত। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের প্রত্যেকটিতে। প্রতিটি সমাবেশেও কিন্তু ঠিক তাই করা হয়েছে। কিন্তু সেদিনও সুমিষ্ট ভাষায় গোলাপি বেগম বক্তৃতা দিয়েই চলেছিলেন আযানের সময়, কই হেফাজতে ইসলাম তো এই নিয়ে কিছু বলেনা !!
একজন মুসলমান হিসেবে আমি চাই আমার নবীকে নিয়ে যে কুৎসা রটনা করবে তার সর্বোচ্চ বিচার হউক। কিন্তু আমি এটাও বিশ্বাস করি, কি বোর্ডের জবাব হবে কিবোর্ডের মাধ্যমে, যুক্তির জবাব যুক্তিতে, আবেগের জবাব আবেগে। আমার ধর্মবিশ্বাস এতটা ঠুনকো না যে কেউ কিছু বললেই আমার ধর্মবিশ্বাস টলে যাবে।
প্রসঙ্গঃ লং মার্চ নিয়ে ভ্রান্তির সৃষ্টি
লং মার্চ নাস্তিকদের কর্মসুচি কিনা এই প্রশ্নের জবাবে ইসলামের হেফাজতকারী আল্লামা শফী বলেন-" হযরত মুহাম্মদ (সা।)মক্কা থেকে মদীনা পর্যন্ত লং মার্চ করেছিলেন। " নাউজিবুল্লাহ...
হিজরত শব্দের অর্থ-— দেশান্তর বা মাতৃভূমি ত্যাগ। উল্লেখ্য বিধর্মীদের অত্যাচারের কারণে মুসলমানরা ধীরে ধীরে মক্কা থেকে মদিনায় চলে যান। ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে আল্লাহ'র নির্দেশ আসার পর, তিনি হজরত আলী-কে ডেকে, তাঁরে শয্যার উপর চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে নির্দেশ দেন এবং রাতের অন্ধকারে হজরত আবু বকর সিদ্দিকী (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে মক্কা ত্যাগ করেন।
লং মার্চের প্রবর্তক নাস্তিক কমিউনিস্ট মাও সে তুং। হিজরতের সাথে মাও সে তুং এর লং মার্চ তুলনা করে ঈমাম শাফি আপনি নিজেই ইসলাম ধর্মানুসারী কয়েক কোটি মানুষের ধর্মানুভূতি তে আঘাত হানলেন। আপনি কিভাবে ইসলামের হেফাজাত এর দায়িত্ব নিলেন !
তারা বলছেন পৃথিবীর প্রথম লংমার্চ পরিচালিত হয় মহানবী (স.)-এর নেতৃত্বে। তারা বলছেন লং মার্চ মানে দীর্ঘ যাত্রা। তাহলে হযরত মুসা (আঃ) তার পুরা কওম নিয়ে যে নীল নদ পারি দিলেন সেই যাত্রা কে কি বলা হবে ? সেটা ও ত দীর্ঘ যাত্রা ছিল । তাই নয় কি ?
যতদূর জানি, হরতালের প্রবর্তক হলেন মহাত্মা গান্ধী। তাহলে এভাবে হরতালের ডাক দিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত করার মানে কি ? সব কিছু কেমন যেন গোলমেলে ঠেকছে !
প্রসঙ্গঃ ব্লগার নিয়ে ভ্রান্তি
প্রশ্নঃ ব্লগ কি?
উত্তরঃ ‘ব্লগ দিয়া ইন্টারনেট চালায়।'
উত্তরদাতাঃ মতিঝিল শাপলা চত্বরে মাওলানা মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ্।
প্রশ্নঃ ব্লগ কি ?
উত্তরঃ ইন্টারনেটে কোনও ‘নাফরমানি’ কাজই হচ্ছে ‘ব্লগ’।
উত্তরদাতাঃ ময়মনসিংহের জামিয়া মাদ্রাসার দাওরা হাদিসের (স্নাতকোত্তর) শিক্ষার্থী মো. আবদুল কাদের।
প্রশ্নঃ ব্লগ কি ?
উত্তরঃ ‘ব্লগ’ হচ্ছে বিজাতীয় পশ্চিমা সংস্কৃতি। এটা মুসলমানরা ব্যবহার করে না। ধর্ম অবমাননাকারীরা ব্লগ দিয়ে অপপ্রচার চালায়। এতে যোগ দিয়েছে এ দেশের নাস্তিকরা।
উত্তরদাতাঃ বরিশালের জামিয়া কাছেমুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আলহাজ তাইয়েবুল ইসলাম।
এরা জানে না, ব্লগ কি?? এরা জানে না ব্লগের বানান কিভাবে লিখতে হয়। এরা এদের নেতাদের দ্বারা ভুল পথে পরিচালিত হয়ে দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মাদ্রাসার ছাত্র ভাইয়েরা, আপনারা আগে জানুন, বুঝুন, তারপর আন্দোলনে নামুন। সতর্ক থাকুন আপনাদেরকে যেন কেউ ব্যবহার না করতে পারে।
অনেককেই বলতে শুনেছি যে, ওদের জন্য ব্লগ কি তা জানা খুব জরুরি কিনা !আপনারা বলছেন,যে যেটা জানেনা, তাকে তা জিজ্ঞেস করে হেয় করছি কেন আমরা ? আমাদেরকে যদি ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়, তাহলে কি আমরা উত্তর দিতে পারব ?
ইসলামের প্রথম বাণীই হল, ইকরা-পড়। পড় তোমার সেই প্রভুর নামে,যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানবজাতিকে সৃষ্টিকরেছেন জমাট রক্তপিণ্ড থেকে। পড়, তোমার রবসম্মানিত,যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।মানুষকে তিনি শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানত না।-সূরা আলাক : ১-৫.
আমার বক্তব্য হচ্ছে, যে জানে না ব্লগ কিংবা ব্লগার কি, সে এই বিষয়ে মন্তব্য করতে যাবে কেন ? আমি যা জানিনা কিংবা বুঝিনা, সেটা আগে বুঝবো, তারপর সেটা নিয়ে মন্তব্য করবো। আন্দোলন তোআরও পরের কথা। আপনারা ঢালাওভাবে ব্লগারদের গালি দিয়ে চলেছেন, মাদ্রাসার ছাত্ররা তাদের হুজুরদের নির্দেশেমাঠে নেমে এসেছে ব্লগারদের ফাঁসির দাবীতে, অথচ এই কোমল মনের মানুষগুলো জানেও না জাকিরনায়েকও একজন ব্লগার। তাহলে উনিও কি নাস্তিক ?
প্রসঙ্গঃ মুসলমানের সার্টিফিকেট
৭১ এ উলঙ্গ করে বাঙ্গালীর লিঙ্গ পরীক্ষা করে দেখতো পাকি হায়েনা; খৎনা থাকলেই মুসলমান, নাইলেই "বিধর্মী" অপবাদেই হত্যা। বর্তমান অবস্থা কিন্তু অনেকটা এইরকমই। মুসলমান হওয়ার লাইসেন্স পাওয়া যায় যত্রতত্র। কাউকে মুনাফিক, কাফির কিংবা নাস্তিক বলার এখতিয়ার হেফাজতে ইসলাম রাখে না। কে মুমিন আর কে কাফির তা নির্ধারণ করবেন স্বয়ং আলাহ তায়ালা। এভাবে তারাই তো ইসলামে ধর্মের অবমাননা করছেন, কিন্তু এই নিয়ে প্রশ্ন তোলার কেউ নেই ! আফসুস...
প্রসঙ্গঃ আপনাদের কাছে নারীর মূল্যায়ন; প্রমাণ মহিলা সাংবাদিক মারধর
আমার বক্তব্যঃ শাহবাগ গণজাগরণে শ্লোগানে, গানে, ছবি আঁকায়, সংগঠনে নারীর উপস্থিতি সজীব ও সক্রিয়। আরসেজন্যই এই গণজাগরণ নিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যে অপপ্রচার চলছে, তার অন্যতম টার্গেট হয়ে দাঁড়িয়েছে নারী।নানা বানোয়াট ছবি,গল্প, কুৎসিৎ ইঙ্গিত আর মন্তব্য ভরা এসব। এদেরকাছে নারী কেবলই একটি শরীর;তার কোনো আত্মা নাই, কোনো মেধা নাই, দেশ ও মানুষের প্রতি দায় নাই, যন্ত্রণা দু:খ নাই, দৃর্বত্তদের প্রতি ঘৃণা আর মানুষের প্রতি ভালোবাসার কোনো চেতনা নাই। এদের দৃষ্টিতেনারী কেবলই একটি যৌনবস্তু,আর পুরুষ মাত্রই তাদের মতো কামুক বর্বর।তাদের চোখভরা পর্ণোগ্রাফী। যারা এভাবে নারীকে দেখে, সন্দেহ নাই, এদের থেকেই তৈরি হয় যৌন নিপীড়ক, ধর্ষক। এরা নারীরই সন্তান, অথচ তাদের কাছে মায়ের যন্ত্রণা আকুতি, বোনের কান্না, তাদের চেতনা আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়েরঅন্তর্গত শক্তি কিছুই ধরা পড়ে না। এই নারীরাই তো যুগে যুগে ইতিহাস তৈরি করেছেনকখনো সামনে থেকে কখনো আড়াল থেকে।
একুশে টেলিভিশনের প্রতিবেদক নাদিয়া শারমিন হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের খবর সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় সমাবেশ থেকে প্রশ্ন তুলে বলা হয়, ‘পুরুষের সমাবেশে নারী সাংবাদিক কেন?’ এ নিয়ে নাদিয়ার সঙ্গে সমাবেশকারীদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়। একপর্যায়ে নাদিয়া শারমিনকে প্রচণ্ড মারধর করতে করতে সমাবেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গঃ হেফাজতে ইসলামের ইসলাম অবমাননার একটি ভিডিও
ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ), উনার পর আর কোন নবী আসতে পারেন না।
হেফাজতে ইসলাম মহাসচীব মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী এবার নবীদের সাথে তুলনা করলেন হেফাজতে ইসলাম আমীর শফিকে। (নাউজুবিল্লাহ!)
এটা ইসলাম অবমাননা নয় ?!!??
অবশ্যই দেখুন ভিডিওটি।
>>> ভিডিও লিংকঃ https://www.facebook.com/photo.php?v=10152710449440099&set=vb.648840098&type=2&theater
## সরকারের কাছে আমার দাবিঃ
একজন নাস্তিক যখন কোন ধর্মকে মানেনা, সেটা আমার কাছে খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে খুব নিকৃষ্টভাবে আক্রমণই যখন একজন নাস্তিকের কাজ হয়, তখন তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা উচিত। ইটজ ভেরি সিম্পল। উগ্র ধর্মবিদ্বেষী আর সাম্প্রদায়িকতার মাঝে কোন পার্থক্য নেই।
সরকারের কাছে আমার দাবী,
১) উগ্র নাস্তিকদের আইনের আওতায় আনুন, কোন চুনোপুঁটিকে ধরবেন না প্লিজ।
২) উগ্র ধর্মান্ধদেরও আইনের আওতায় আনুন।
৩) ব্লগার মানেই যে নাস্তিক নাহ, তা ক্লেয়ারিফাই করুন বিবৃতি দিয়ে।
উগ্র নাস্তিক এবং উগ্র ধর্মান্ধ > আই হেট বোথ দ্যা ক্লাসেস...!!
পরিশেষঃ
আমরা সাধারন মুসলমানরা বিশ্বাস করি আল্লাহর সেই বাণীতে, যেই বাণী বলে একজন মানুষকে হত্যা করা চরম অপরাধ। সে ধার্মিক হোক আর বিধর্মীই হোক। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় সকল ধর্মের উপর, সকল মতের উপর শ্রদ্ধাশীল হতে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) বিদায় হজের ভাষণে বলে গিয়েছিলেন, "তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা।"
হেফাজতে ইসলামের যত নেতা-কর্মী আছেন, তাদের সকলেই মাঠে নেমেছেন। তাদের লোকসমাগম দেখে অনেকেই অবাক হলেও আমি কিন্তু হইনি। আশার কথা হচ্ছে দেশে আরও কমপক্ষে ১৫ কোটি মানুষ আছেন যারা এখানে আসেননি, নিশ্চয়ই তারা হেফাজতে ইসলামের কর্মকাণ্ড নিয়ে সন্দিহান কিংবা বিপক্ষে।
এন্ড টু হেফাজতে ইসলাম, আপনারা আগে এই লংমার্চ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী তুলুন, আপনাদের বিতর্কিত দাবিগুলো উঠিয়ে ফেলুন দেখবেন আপনাদের মাঝে আমিও মিশে গেছি। ধর্ম আমার রক্তে, মুক্তিযুদ্ধ আমার চেতনায়। এরা কোনভাবেই সাংঘর্ষিক হতে পারেনা !
দুটো পয়েন্ট কোট করতে চাই।
১) হেফাজতে ইসলাম নাস্তিক ব্লগারদের বিচার চায়, আর আমি কোন নির্দিষ্ট ধর্মকে আক্রমণকারী নাস্তিক ব্লগারদের বিচার চাই।
২) হেফাজতে ইসলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়না, বরঞ্ছ বিচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে; আর আমি যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
At the end of the day, everything is crystal clear.
হেফাজতে ইসলাম সত্যিকারার্থেই ইসলামকে হেফাজত করুক, এই প্রত্যাশায়....
বিষয়: বিবিধ
৩৫২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন