আমরা সভ্য হচ্ছি না অসভ্যতার দিকে ধাবিত হচ্ছি
লিখেছেন লিখেছেন মাটির মানুষ ১২ মার্চ, ২০১৩, ০৮:১৬:৪৪ রাত
আমরা সভ্য হচ্ছি না অসভ্যতার দিকে ধাবিত হচ্ছি
অভিধান হতে সভ্যতার অর্থ হল সভ্য জাতির জীনযাত্রা নির্বাহের পদ্ধতি-সাহিত্য শিল্প, বিজ্ঞানের, দর্শন, ধর্ম ও বিবিধ বিদ্যার অনুশীলন হেতু মন ও মগজের উৎকর্ষ সাধন।মানুষ ধারাবাহিকভাবে তার নিজের মধ্যে নিহীত সামাজিকতা দ্বারা ধীরে ধীরে তার সভ্যতার উৎকর্ষ সাধন করে থাকে ।আমরা যদি আদিম যুগের কথা বিবেচনা করি তবে আমরা দেখবো তারা প্রথমে ছিল ভবঘুরে, এর পরে তাদের আপন প্রয়োজনে তারা এক হলো এবং সৃষ্টি হলো সমাজের এবং বিকশিত হল সভ্যতা।অনেক সমাজবিজ্ঞানী আদিম যুগকে বলেছেন অসভ্য সমাজ।কারন তাদের মাঝে অনেক ক্ষেত্রে অনুপস্থিত ছিল এমন সব গুনাবলী যা একটি সমাজকে সুন্দর সাবলীল করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে । এবং তাদের মাঝে সভ্যতার বিকাশ সাধন করেনি।তাদের মাঝে ছিল না সামাজিকতা ,মানবতা এবং আদব।ধীরে ধীরে তাদের মাঝে বিকশিত হয় এই সব গুনাবলী যার ফলে গড়ে উঠেছে আজকের সভ্যতা।প্রথম দিকে তাদের আমারা অসভ্য বলতে শুরু করি এবং তারা ধীরে ধীরে সভ্য হবার মাধ্যমে আজকের এই মানব সভ্যতার সৃষ্টি।এই হল আমাদের আদিম সভ্যতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
এখন আসি আমরা আমাদের আজকের সভ্যতায়।আজ আমার নিজেদের সভ্য জাতি বলে দাবি করি।হ্যাঁ আমরা আগে সভ্য ছিলাম কিন্তু এখন আছি কি না জানি না।নিজের বিবেকের কাছে আজ আমাদের এক প্রশ্ন ।আমারা দিন দিন হারিয়ে ফেলছি আমাদের সংস্কৃতি ও সভ্যতা।এখন আমারা অকাতরে গ্রহন করছি পাশ্চাত্য সভ্যতা।তারা কিন্তু আমাদের তাদের সভ্যতা চাপিয়ে দিচ্ছে এমনটা কিন্তু নয় আমারা সেচ্ছায় তা গ্রহন করছি।এই পাশ্চাত্য সভ্যতার হিংস্র থাবায় আজ আমরা জর্জরিত।আমাদের সমাজ ব্যবস্থার প্রতিটি কোনায় আজ এই পাশ্চাত্য সভ্যতার ছোয়া।যা আজ আমাদের এগিয়ে নয় বরং আরও পিচিয়ে দিচ্ছে।আমরা দুরে সরে যাচ্ছি মানবতা ,সামাজিকতা ,মমত্ববোধ, শ্রদ্ধাবোধ লজ্জাবোধ এবং সরে যাচ্ছি আমাদের হাজার বছরের সভ্যতা থেকে। আজ আমাদের চারদিকে এক কালো ধোয়ার ঘনঘটা।এই ধোয়া কেবল আমাদেরই তৈরী।এই ধোয়া থেকে আমারা নিজেরাই নিজেদের বের করতে পারে ।এবং মুক্তকরতে পারি আমাদের আগামী প্রজম্নকে। পাশ্চাত্য সভ্যতা অকাতরে গ্রহনের ফলে আমাদের সমাজে সৃষ্টি হচ্ছে ভাঙনের।এর ফলে শুরু হচ্ছে পরিবারে কলহ।এখন কোন পিতা যখন তার সন্তানকে কিছু বলতে যায় তখন তাকে বলা হয় সেকেলে।ছেলে মেয়েরা আবাধে মেলামেশা করছে।তারা বন্ধুত্বের নামে গড়ে তুলছে অবাদ সম্পর্ক এবং জড়িয়ে পড়ছে অনেক অনৈতিক কর্মকান্ডে এবং সর্বপরি তাদের অজান্তে এক অপরাধ জগতের সাথে।তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে পারবার হতে সমাজ হতে এবং সর্বপরি এই পৃথিবী হতে।তারা বন্ধুত্ব নামের এই পবিত্র সম্পর্কটিকে আজ করছে কলঙ্কিত যার অন্যতম কারন আজ এই পাশ্চাত্য সভ্যতা।
আজ আমাদের সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে উইপোকার মত পুরো সমাজব্যাবস্থাটিকে কামড়ে ধরেছে দুর্নীতি ও ঘুষ।তবে এগুলো কিন্তু সমাজের অশিক্ষিত লোকেরা করছে না বরংচ এগুলো করছে সমাজের কিছু নামকে ওয়াস্তে শিক্ষিত লোকেরা।যারা আসলেই কখনও শিক্ষিত নয় এবং ছিল না।তাদের শিক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল অর্থ উপার্যন।তারা এমন শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে যা আপাত দৃষ্টিতে দেখতে খুবই সভ্য কিন্তু তারা নৈতিকতা ও মানবতা বর্জিত ।যা সমাজকে গড়ার চেয়ে ভাংতে পারদর্শী বেশি।এই যদি হয় আমাদের আজকের সভ্যতা তা হলে আমি বলব আদিম যুগের মানুষ আমাদের চাইতে আরও সভ্য ছিল।
আজ আমাদের সমাজে মানবতা বলতে কিছুই নেই।আজ আমরা সবাই যান্ত্রিক হয়ে গিয়েছি।আমরা শুধু নিজেকে নিয়ে চিন্তা করি।কারন আমরা ভুলে গেছি নিজেকে নিয়ে জীবন নয়, জীবন তো সবাই কে নিয়ে।
আজ আমাদের সমাজে খুন রাহাজানি বিষয়গুলো ছেলে খেলার মত হয়ে গেছে।বাচ্চাদের খেলায় যেমন কোন দোষ হলে কোন বিচার নেই ঠিক তেমনটি আজ হচ্ছে।মানুষের মান মর্যাদা ও জীবনের মুল্য আজ এতই কমে গেছে যে সামান্য কয়েকটা কাগজের জন্য আজ ভাই ভাইকে, মানুষ মানুষকে হত্যা করছে।এর অন্যতম কারন আমারা খুব লোভি হয়ে গিয়েছি।আমাদের যা দরকার তার চাইতেও আরও বেশি আমারে প্রয়োজন আজ।একজন দোষী আজ আরও পশ্রয় পাচ্ছে আমাদের বর্তমান বিচার ব্যাবস্থাকে নিয়ে।
আজ আমাদের পোষাকের রুচি নেই বললেই চলে।ছেলেরা মাথার চুল হতে শুরু করে পায়ের জুতা পর্যন্ত এক উর্গতা।পোষাক মানুষকে প্রভাবিত করে যার ফলে সে লিপ্ত হয় সমাজ বর্হিবুত কর্মকান্ডে। মেয়েরা পড়ছে তথাকথিত ফ্যাশেনেবল পোষাক।যা তাদের নারিত্বের জন্য হুমকি সরুপ।এসব ক্ষেত্রে কোন পিতামাতা যদি কিছু বলে তবে তারা হচ্ছে আজ অবহেলিত।আবার অনেক ক্ষেত্রে এসবের অন্যতম কারনও পিতামাতা।
সামাজিকতা আজ নেই বললেই চলে।এক বাসার মানুষ তার পাশের বাসায় কি হচ্ছে তা জানে না।যার ফলে সমাজে অনৈকিত কর্মকান্ড ও অপরাধ প্রসার লাভ করছে।আগে মানুষ তার প্রতিবেশীর সুখ দুঃখে সবার আগে এগিয়ে আসত এখন প্রথমে চিন্তা করে আমার কি লাভ অথবা জানেই না যে তার আশেপাশে কি হচ্ছে।এর কারন তথাকথিত হিন্দি সিরিয়াল গুলো ।আমাদের পরিবারের মা বোনেরা দিনের সিংহভাগ কাটায় এই সব হিন্দি সিরিয়াল দেখে।যার ফলে তারা তার প্রতিবেশীর সাথে মিশতে পারছে না।
মানুষ আজ ধাবিত হচ্ছে কৃতিমতার দিকে।আমারা আজ পারিবারিক বিনোদেন হতে দুরে সরে যাচ্ছি মনের অযান্তে।পারবারের এক এক জন সদস্য একা একা।একে আমারা বলছি ব্যক্তি সাধীনতা।
এখানে আমি আমাদের সমাজের প্রচলিত কিছু অসংগতির কথা উল্লেভ করলাম এবং আমাদের গতি আজ সভ্যতার কোন দিকে তা তুলে ধরার একটি সল্প প্রয়াস মাত্র ।যা আজ আমার ও আপনাদের পুরো সমাজব্যাবস্থার জন্য হুমকি সরুপ।একটি সমাজ ব্যাবস্থাকে গড়ে তুলার প্রথম দায়িত্ব এর সভ্য লোকেদের যাদের আমারা বালি সুশিক্ষিত।তাই আজ আমাদের উচিত আমারা সকলে মিলে একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলি সুন্দর আগামীর জন্য।এই প্রত্যাশাই থাকলো।
আল মাহামুদ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বিষয়: বিবিধ
১৫২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন