লাখো পথিকের অভিশাপ-ধন্য অবরুদ্ধ শাহবাগ

লিখেছেন লিখেছেন শিক্ষানবিস ১৭ মার্চ, ২০১৩, ০৪:২০:৩৫ বিকাল

প্রায় প্রতিদিন বনানী থেকে মতিঝিল আর মাঝে মধ্যে ধানমন্ডি থেকে গুলিস্তান যেতে হয় পাবলিক বাসে। বাস যখন রুপসী বাংলা থেকে বামদিকে মোড় নেয়, আসার পথে মৎস ভবন থেকে বামে মোড় না নিয়ে সোজা চলে যাওয়ার জন্য বসে থাকে তখন বাস-যাত্রীরা তাদের ক্রুদ্ধ সব প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে থাকে। বাস চালকদের কথা শুনতে হয়, উত্তর দিতে হয়। তারাও ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। যাত্রী, হেলপার, চালক সবাই মিলে তখন নষ্ট-ভ্রষ্ট-নোংড়া শাহবাগী ও তাদের মুরব্বীদের চৌদ্দ গোষ্ঠি উদ্ধার করে। কিন্তু কেহ ওদের পক্ষে দু কথা বলে না। আজ পর্যন্ত দেখিনি। কিন্তু তাতে কি? এই সরকার তো বিরোধীদের বিক্ষোভ ঠেকাতে কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গাড়ী-ঘোড়া বন্ধ করেছিলো। তখন বিপদগ্রস্ত পথিকেরা, আটকে পড়া বৃদ্ধ, শিশু ও নারীরা কত অভিশাপ দিয়েছিল, তাতে সরকারের কিছু হয়নি। তাই অভিজ্ঞতার আলোকেই সরকার যাত্রী-পথিকদের অভিযোগ, ক্রোধ, অভিশাপকে ভয় করে না।

এভাবে চলছে আজ এক মাসেরও বেশী। শাহবাগে কোন ব্লগার না থাকলেও পুলিশ রাস্তা আটকে বসে থাকে চব্বিশ ঘন্টা।

প্রশ্ন করতে পারেন, অভিশাপ-ধন্য কথাটা কি রকম হলো? অভিশাপে কি কেহ ধন্য হয়?

আমি বলব, একেবারে সঠিক। মানে জনগণ কষ্টের কারণে যাদের অভিশাপ দিচ্ছে, সরকার বাহাদুর ও উচ্ছিষ্টভোগী বিক্রিত মস্তিষ্কের বুদ্ধিজীবি ও দালাল-দাজ্জাল মিডিয়া তাদের ধন্য ধন্য বলে গুণগান করছে।

শুধু পথিকেরাই অভিশাপ দিচ্ছে? না, পুলিশের নির্বিচার গুলিতে যারা খুন হয়েছে, তাদের স্বজনেরা, দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ, আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ, অলী-আওলিয়া সবাই তাদের নিপাত কামনা করে সম্মিলিতভাবে, কখনো একান্ত নির্ভৃতে নির্জনে আল্লাহর কাছে এ সকল জালেমদের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশ দিচ্ছে, ফরিয়াদ করছে।

আজ যদি এই রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার কাজটা নাস্তিক মুরতাদরা না করে জামাত-শিবির বা কোন ইসলামিস্টরা করত, তখন ঐ সকল বুদ্ধিবিক্রিত দালালেরা ও তাদের মিডিয়াগুলো কত হৈ চৈ করত। একটু কল্পনা যেতে পারে।

কেন, এমন হতে পারে না, পুলিশ এ সকল নাস্তিকদের বাধাও দেবে না আর সাহায্যও করবে না। ওরা নিজের পায়ে দাড়িয়ে, নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে, নিজেরটা খেয়ে পরে আন্দোলন করুক। যত খুশী ফাসি চাই! ফাসি চাই! বলে চেচাক। রাজাকার! রাজাকার! বলে জিকির করুক, যতখুশী পূজা-অর্চনা করুক।

কিন্তু না, পুলিশ যেন জোর-জবরদস্তি করে আটকে রেখে ওদের দ্বারা আন্দোলন করাচ্ছে।

সামু ব্লগের এক ব্লগার মন্তব্য করেছিলো, যদি পুলিশের পাহারা উঠাইয়া নেওয়া হয়, তাহা হইলে পাবলিক নিজ ইচ্ছায় এমনভাবে ইটা-পাথর কুড়াইবে, ঐ সকল নাস্তিক তখন পূজা-অর্জনা বাদ দিয়া, তবলা হারমোনিয়াম ফালাইয়া, ধুতি খুলিয়া, সিদুর মুছিয়া শুধু দক্ষিণ দিকে দৌড়াইবে। অনেকে পাপর বাজার গরম তেলে গঙ্গা স্নানও সারিয়া লইবে।

ব্যস, তখনই ঐ ব্লগারকে ব্যান করা হল। হায়, বাকস্বাধীনতা, সকল মতের মিলন মেলা ও মুক্ত চিন্তার চর্চা!

গত জুমায় খুতবায় এক ইমাম সাহেব বললেন, যারা চুপে চাপে এদের নিন্দা আর ঘৃণা করে, কিন্তু এদের বিরুদ্ধে সবকিছু নিয়ে রাজপথে ঝাপিয়ে পড়ে না, তারাও এদের দলভুক্ত মুনাফিক। এ কথা শুনে উপস্থিত মুসল্লীরা ঠিক, ঠিক বলে সায় দিল।

আমি সাধারণত কোন মিছিলে যাই না। রাজনীতি করি না। জুমার নামাজের সুন্নাত না পড়েই বাসায় এসে লুঙ্গি রেখে প্যান্ট পরা শুরু করলাম। আমার বউ বলল, কি, কোথায় যাও? এখন ভাত খাবে না?

বললাম, মিছিলে যাবো!

বউ বলল, না, আপনি দুর্বল মানুষ, মিছিলে যাবেন না। পুলিশ গুলি করতে পারে।

আমি বললাম, আজ কেহ আমাকে আটকাতে পারবে না। পুলিশ গুলি করে করুক।

নাস্তিকদের শাসনে জীবন যাপন করার চেয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হওয়া অনেক ভাল।

ভাবি, যখন যথাযথ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জিহাদের আহবান আসবে তখন তো এমনিভাবে সব নিষেধ আর মায়া-মমতা উপেক্ষা করে যেতে হবে লড়াই করতে। আজ না হয় তার একটু চর্চা করে ঈমানের পরিচয় দিই। হয়ত আল্লাহ এর উসীলায় মুনাফিকের খাতা থেকে নামটা কেটে দেবেন।

আজ এই অবিচারের জনপদে আমাদের একজন নেতার হাতে হাত দিয়ে দুশমনদের সর্বত্র ধাওয়া আর সব সময় দোয়া করতে হবে।

দুটো এক সাথে না করলে ঈমানের পরীক্ষায় পাশ করা যাবে না।

মনে রাখতে হবে আল্লাহর বানী : তুমি জালেমদের ব্যাপারে আল্লাহকে গাফেল ভেব না। আল্লাহ তাদের সময় দিচ্ছেন .....।

বিষয়: বিবিধ

১২২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File