প্রবৃত্তি যখন ইলাহ
লিখেছেন লিখেছেন শিক্ষানবিস ১৪ এপ্রিল, ২০১৫, ১২:০৬:৩৯ দুপুর
চাকুরীর সুবাদের কত মানুষের সাথে দেখা-সাক্ষাত হয়, কথা হয়। কত বিচিত্র তাদের ধ্যান-ধারনা, নীতি-আদর্শ, ধর্ম-জ্ঞান।
একজন উচ্চ শিক্ষিতা মহিলার সাথে কথা হয় প্রায়ই। যখন জানতে পারল, আমার পড়াশুনা, লেখা-লেখি ও গবেষণার একমাত্র বিষয় ইসলাম, তখন থেকে ইসলাম সম্পর্কে আমার কাছে তার যত প্রশ্ন। তার প্রশ্নের ধরণ দেখে বুঝতে কষ্ট হল না যে, সে কোন অরিয়েন্টালিষ্ট এর খপ্পরে পড়েছে।
প্রশ্নের উত্তর দিতে কার্পণ্য করি না। কখনো সন্তুষ্ট হয়, কখনো হয় না। কখনো বলে, শুধু এই কারণে অধিকারটা দিল না?
কিন্তু আমি উত্তরে এমন কোন কথা বলি না, যার কারণে প্রশ্ন করতে সে আগ্রহ হারাতে বসে।
তার শেষ দিকের প্রশ্ন ছিল, একজন মেয়েকে ইসলাম একাধিক স্বামী রাখার অধিকার কেন দিল না, যেমন দিয়েছে পুরুষকে? কয়েকটা উত্তর দিলাম। বললাম, দোষটা শুধু ইসলামের কেন? ইসলাম ছাড়া আপনার পছন্দের অন্য কোন ধর্ম বা আদর্শ যদি থাকে সে কি একাধিক স্বামী রাখার অধিকার দিয়েছে নারীকে? আরে! পুরুষকে একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতির ব্যাপারে তো ওরা রীতিমত সংকীর্ণতা দেখিয়েছে। অধিকার দেয়ার ক্ষেত্রে ইসলাম তো এক ধাপ এগিয়েছে, উদারতার পরিচয় দিয়েছে অন্যদের চেয়ে।
বলল, অন্য ধর্মের কথা বাদ। ওগুলোতে সব বাতিল। ইসলামের মত একটা মানবতাবাদী ধর্ম অধিকার দেয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য করে কিভাবে?
বললাম, ইসলামের অনেক বিষয় হয়তো আপনার প্রবৃত্তির অনুকুলে যাবে না। আপনার বিবেক গ্রহণ করবে না। তারপরও কি আপনি ইসলাম মানবেন? আল্লাহর কাছে তার সবগুলো বিধান মেনে নেয়ার জন্য কি আত্নসমর্পন করবেন? যদি করেন আপনি মুসলিম। না করলে ইসলামের কিছু যায় আসে না। মনে-প্রাণে ইসলাম অনুসরণ করার লোকের অভাব নেই আল্লাহর এই পৃথিবীতে।
আমরা অনেকেই মনে করি ইসলামের সবকিছু মানুষের মনের মত হতে হবে। বিজ্ঞান-সম্মত হতে হবে। ইসলাম যদি বলে পৃথিবী স্থির, তাহলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে, ইনিয়ে বিনিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করতে হবে, আসলে ইসলাম বলেছে পৃথিবী ঘোরে। এ মানসিকতা একটি চরম হীনমন্যতা। ইসলাম অনুসরণ করার ক্ষেত্রে একটি মানসিক ব্যধি।
এটার নাম কী করে হয় আত্নসমর্পণ যখন আমি ইসলামকে অনুসরণ করতে যেয়ে মানদন্ড মানি বিবেক বা প্রবৃত্তিকে, কখনো বিজ্ঞানকে?
বলতে হবে, আমাদের রাসূল এগারটা বিয়ে করেছেন। তিনি ঠিক কাজ করেছেন। কিসের জন্য করেছেন সে উত্তর খোঁজার আমার কোন দরকার নেই। আল-কুরআন যদি বলে থাকে পৃথিবী স্থির, তাহলে তা অবশ্যই স্থির। রোযা রাখলে শরীরের ক্ষতি হয় কি হয় না, আমার চিন্তা নেই। কি কি উপকার হয়, গবেষণার প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তাআলার হুকুম আমি পালন করবোই। বিজ্ঞানী নামের এক চোখা পন্ডিতেরা কী বলল, তাতে আমার মাথা ব্যথা নেই। ইসলাম যা বলেছে সেটা যদি বিজ্ঞান বা বর্তমান সভ্যতার সাথে খাপ না খায়, মানবতাবাদি ধ্যান-ধারনার অনুকুলে না যায়, কোন সমস্যা নেই। এভাবে ইসলাম অনুসরণ করতে পারলে সেটা হবে আসল ইসলাম। অন্যথায় হবে প্রবৃত্তি-তারিত বা প্রবৃত্তি-আশ্রিত ইসলাম।
ধর্ম মানার ব্যাপারে প্রবৃত্তিকে প্রশ্রয় দিতে আল্লাহ বার বার নিষেধ করেছেন। যদি আমার মনোভাব এমন হয় যে, ইসলামের সবকিছু আমার প্রবৃত্তির কাছে পছন্দনীয় হতে হবে। সব কিছু আমার বিবেকের আওতাভূক্ত হতে হবে, মানবধর্মীয় হতে হবে, তাহলে আল্লাহ ও রাসূলের কথা অনুসরণ করলাম কোথায়? আমি তো প্রবৃত্তিকেই ইলাহ হিসাবে নিলাম।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন: তবে তুমি কি তাকে লক্ষ্য করেছো যে তার প্রবৃত্তিকে নিজের ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? তার কাছে জ্ঞান আসার পর আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন। তিনি তার কান ও অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন। তার চোখের উপর দিয়েছেন আবরণ। অতএব আল্লাহর পর কে তাকে হেদায়াত করবে? তারপরও কি তোমরা বুঝবে না। (সূরা আল জাসিয়া: ২৩)
এই প্রবৃত্তি পূজা থেকেই যুগে যুগে মানুষ দীনে ইলাহী বানিয়েছে। বর্তমানে দীনে ইনসানী বানানো হচ্ছে। প্রশ্ন করা হলে বলে, আমি মানবধর্ম ফলো করি। আল-কুরআনের ভাষায় তাদের কাছে জ্ঞান আছে ঠিকই, কিন্তু সে জ্ঞান তাদের সঠিক পথ দেখায়নি। তাদের জ্ঞানের আলো সুপথকে আলোকিত করেনি, শুধু কুপথকে সুশোভিত করে দিয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১৩১৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
আশাকরি ব্লগে নিয়মিত হবেন এমন গুরুত্বপূর্ণ লেখা আরো উপহার দিবেন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন