সাংকেতিক বিছমিল্লাহ নয় : পুরো বিছমিল্লাহ ইসলামী সংস্কৃতি
লিখেছেন লিখেছেন শিক্ষানবিস ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১২:১৫:১৩ দুপুর
অনেকেই লক্ষ্য করে থাকবেন যে, অনেক মানুষ বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর পরিবর্তে তার বিকল্প হিসাবে বিসমিহী তায়ালা লিখে থাকে। আবার অনেকে বিছমিল্লাহর সংকেত হিসাবে ৭৮৬ ব্যবহার করে থাকে। এখন যারা বিসমিহী তায়ালা ব্যবহার করেন তারাই এক সময় এই সংখ্যা ব্যবহার করতেন। যখন বুঝেছেন, এটা ঠিক নয় তখনও সঠিক বিষয়টা গ্রহণ করলেন না। এটা যে শুধু সাধারণ মানুষেরা লিখে থাকে তা কিন্তু নয়। বড় বড় আলেম, মুফতী, ইসলামি চিন্তাবিদগনও লিখে থাকেন। আমি অনেক বড় বড় মাদরাসার পোষ্টার, চিঠি-পত্রে দেখেছি, সবার উপরে বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর পরিবর্তে বিসমিহী তায়ালা লেখা থাকে। অথচ এ সকল মাদরাসাগুলো দেশের নির্ভেজাল ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র হিসাবে সকলের কাছে স্বীকৃত।
আসলে এভাবে লেখা কতটা শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য তা আলোচনা করতে ইচ্ছা রাখি। আর এটা আলোচনা করতে বা বুঝতে খুব বড় গবেষক হওয়ার দরকার নেই।
বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর পরিবর্তে বিসমিহী তাআলা লেখা একটি বিদআত। এভাবে লেখা বা বলা জায়েয নয়।
যারা এ রকম লেখেন তাদের দু একজনকে আমি অবশ্য জিজ্ঞেস করেছি আপনারা এভাবে কেন লেখেন? তারা উত্তরে বলেছেন, বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পুরোটা লেখলে আল্লাহর মহান নাম ও রাহমান রাহীম কে অসম্মান বা বেহুরমতি করার সম্ভাবনা থেকে যায়। এ চিঠি বা পোষ্টার রাস্তায়, ড্রেনে পতিত হতে পারে। মানুষের দ্বারা পদপিষ্ট হতে পারে। তাই আমরা বিসমিহী তায়ালা লিখে থাকি।
তাদের এ জওয়াব আমার কাছে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি।
কারণ:
এক. বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়া বা লেখা একটি ইবাদত। ইবাদতের পদ্ধতি সেটাই অনুসরণ করতে হবে যা কুরআন ও সহীহ হাদীসে এসেছে। যেভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আদায় করেছেন ঠিক সে রকমভাবে আদায় করাটাই সুন্নাত। এর মধ্যে বাড়ানো বা কমানো কিংবা তার আকৃতি পরিবর্তন করা নি:সন্দেহে বিদআত। এটাই আমাদের আকীদা-বিশ্বাস।
দুই. আল কুরআনে সূরা আন নামলে এসেছে যে, নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম ইয়েমেনের সাবা রাজ্যের রাণীর কাছে চিঠি লিখেছিলেন। সে রাণী ছিল মুশরিক। সূর্যকে সেজদা করত। কিন্তু সুলাইমান আলাইহিস সালাম এটা চিন্তা করলেন না যে, আমি যদি চিঠিতে বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লিখি তাহলে হয়ত সেই অপবিত্র মুশরিক মানুষগুলো এর অসম্মান করতে পারে।
তিন. রাসূলুল্লাহ সা. বড় বড় কাফের রাজা-বাদশাদের কাছে যে সকল চিঠি-পত্র লিখেছেন তার সবগুলোতে তিনি বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লিখেছিলেন। তিনি এর বেহুরমতির সম্ভাবনার দিকটা বিবেচনা করেননি। তার বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লেখা চিঠিতো ইরানের সম্রাট ছিড়ে টুকরো টুকেরো করেও ফেলেছিল। তারপরও তিনি বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লেখা ত্যাগ করলেন না বা লিখতে নিষেধ করলেন না।
চার. এমনকি কাফেরদের সাথে চুক্তিপত্র লেখার বেলায়ও তিনি বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লেখায় কোন ছাড় দেননি। হুদায়বিয়ার সন্ধি লেখার সময়তো কাফের প্রতিনিধি দল বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লেখতে আপত্তি করে বসল। বলল, বিছমিল্লাহ লেখা যেতে পারে কিন্তু রাহমান ও রাহীম আবার কেন? কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন ছাড় দিলেন না। তিনি বললেন না, কাফেররা যখন পছন্দ করে না, তখন যদি আমরা বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লিখে দেই তাহলে ওরা এর বেহুরমতি করতে পারে।
পাচ. বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ইসলামের একটি শিআরে পরিণত হয়েছে। তাই আপনি দেখবেন একজন অমুসলিম কখনো কখনো আচ্ছালামু আলাইকুম বলে, কিন্তু ভুলেও কখনো বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে না। এমনকি মুসলিম সমাজে যারা ধর্ম সম্পর্কে উদাসীন তারাও বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সঠিকভাবে বলতে পারে না। বা বলাটা পছন্দ করে না।
ছয়. বিসমিহী তাআলা বললে, আল্লাহ শব্দটিকে এড়িয়ে যাওয়া হয়। রাহমান ও রাহীম আল্লাহ তাআলার দুটি সুন্দর নাম তা-ও অনুচ্চারিত থেকে যায়। আর এ ধরনের কাজ তাশাব্বুহ বিল কুফর বা কাফেরদের সাথে সাদৃশ্যতা গণ্য হতে পারে।
সাত. যদি এ ধরনের বেহুরমতির আশংকা লালন করা হয়, তাহলে তো কোথাও আল্লাহর নামটি লেখা বা তার গুণাবলি লেখার কোন জায়গা পাওয়া যাবে না।
আট. বেহুরমতির এ যুক্তি মেনে নিলে আল কুরআনের কপি ছাপানো, বিতরণ, বাজারজাত করণ ইত্যাদির ব্যাপারে প্রশ্ন করা যায়।
নয়. যে ধারনার উপর ভিত্তি করে বিসমিহী তায়ালা লেখা হয়, সে ধারনাটাও বিদআত। কারণ রাসূলুল্লাহ বা তার সাহাবায়ে কেরাম এ রকম ধারণা লালন করেননি। আর এ ধারনার উপর ভিত্তি করে যা করা হয় সেটাও বিদআত। কারণ এ সমর্থনে কোন দলীল নেই। তাই বিসমীহি তাআলা লিখতে যেয়ে দুটো বিদআতের আমল করা হয় একই সাথে।
দশ. বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আল কুরআনের একটি আয়াত। এটা লিখলে বা পড়লে প্রতিটি হরফে দশটি করে সওয়াব পাওয়া যাবে। কিন্তু এর পরিবর্তে বিসমিহী তাআলা বললে কি পাওয়া যাবে? বিসমিহী তায়ালা বললে কি বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলার সুন্নাত আদায় হবে? যখন কোনটাই হবে না, তখন আমরা কেন এ বিকৃতির দিকে যাবো?
বিছমিল্লাহ অনেকেরই পছন্দ না হওয়ায় যুগে যুগে এর বিকল্প চালুর চেষ্টা হয়েছে। যেমন ৭৮৬, এলাহী ভরসা, আল্লাহু আকবর। এলাহী ভরসা, আল্লাহু আকবর খারাপ কিছু নয়, কিন্তু তা যদি বিছমিল্লাহর স্থানে ব্যবহার করা হয়, তাহলে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
লিখেছেন : আব্দুল্লাহ শহীদ আ. রহমান
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন