ইয়াযীদি সম্প্রদায় : আমরা কতটুকু জানি

লিখেছেন লিখেছেন শিক্ষানবিস ১৭ আগস্ট, ২০১৪, ০২:৫৬:১৭ দুপুর

বিগত কয়েকদিনের সংবাদে আবার চলে এসেছে ইরাকের ইয়াযীদিদের আলোচনা। যাদের জন্য আমেরিকা-ই্উরোপ বেশ কান্নাকাটি করে। তাদের সম্পর্কে কিছু কথা লিখতে হল।

ইয়াযীদি সম্প্রদায়ের পরিচয় :

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত কুর্দি জাতিগোষ্ঠির একটি অংশ হল ইয়াযীদি সম্প্রদায়। ইরাকের মসুলসহ বিভিন্ন স্থানে এদের আবাস। এ ছাড়া সিরিয়া, ইরান, তুরস্ক, জর্জিয়া ও আর্মেনিয়ায় এদের অস্তিত্ব রয়েছে। অধিকাংশ গবেষকের মতে দ্বিতীয় উমাইয়া শাসক ইয়াযীদের আমলে এদের উৎপত্তি। এবং এরা ছিল তার একনিষ্ঠ সমর্থক ও রাজনৈতিক পোষ্য। এরা ইহুদী, খৃষ্টান, ইসলাম, পার্সিয়ান ও পৌত্তলিক ধর্মের বিভিন্ন আচারকে ধর্মীয় আচার হিসেবে গ্রহণ করেছে। এরা বলে আমরা আযাযিলের অনুসারী। আযাযিল হল ইবলীসের নাম। এদের ধর্মগ্রন্থের নাম হল আসওয়াদ বা কালো গ্রন্থ।

(সুত্র: উইকিপিডিয়া, এ্যারাবিক)

ইয়াযীদি সম্প্রদায় সম্পর্কে আরো জানা যায় :

উমাইয়া শাসন অবসানের সময় ১৩২ হিজরীতে তাদের গোড়াপত্তন হয়। উমাইয়া শাসন ফিরে আনার জন্য একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয় তাদের দিয়ে। এ কারণে তারা ইয়াযীদ বিন মুয়াবিয়াকে অত্যন্ত সম্মান করে ও আযাযিল (ইবলীস)কে মহান মনে করে। তারা মনে করে ইবলীস তওবা করেছে। আল্লাহর কাছে তার তওবা কবুল হওয়ার পর সে তার আগের মর্যাদায় ফিরে গেছে। সে এখন ফেরেশ্তাদের নেতা। আল্লাহর পরই তাকে উপাসনা করতে হয়। তাকে তারা তাউস ফেরেশ্তা বলেও জানে।

কোন গবেষকের ভিন্ন একটি মত রয়েছে তাদের সম্পর্কে। তা হল: ইয়াযিদী সম্প্রদায় মুলত পৌত্তলিক। তারা প্রাচীন ইরানের ইয়াযদ দেবতার পূজারী। সে কারণে তাদের ইয়াযিদী বলা হয়। পরবর্তীতে তারা খৃষ্টান, মুসলিমদের সংস্পর্ষে এসে তাদের কিছু ধর্মীয় আচার গ্রহণ করে নেয়।

ইয়াযীদি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা :

এ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হল আমীর ইবরাহীম বিন হরব বিন খালেদ বিন ইয়াযীদ। উমাইয়া রাজত্বের পতনের পর হিজরী ১৩২ সনে উত্তর ইরাকে সে একটি দল গঠন করে। উদ্দেশ্য ছিল উমাইয়া রাজত্ব পুনরুদ্ধার করে ইয়াযীদের বংশধরদের ক্ষমতায় বসানো। তারা এ আন্দোলনের জন্য কুর্দি অঞ্চলকে বেছে নেয়।

ইয়াযীদিদের ধর্ম বিশ্বাস :

তারা তামা দিয়ে ইবলীস (তাউসুল মালায়িকা) এর প্রতিকৃতি বানিয়ে সম্মান করে ও তওয়াফ করে। তাদের পবিত্রতম স্থান হল ইরাকের লালেশ উপত্যাকায় অবস্থিত মারজাহ নামক স্থান। তাদের ধর্মগ্রন্থের নাম রশ বা কিতাবুল আসওয়াদ (কালো গ্রন্থ)। তাদের কালেমা হল, আশহাদু ওয়াহিদাল্লাহ- সুলতান ইয়াযীদ হাবীবুল্লাহ’ অর্থাত স্বাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহর একত্বের ও রাজা ইয়াযীদ আল্লাহর বন্ধু।

তারা প্রতি বছর তিন দিন রোযা রাখে এবং এ তিন দিন ইয়াযীদের জন্ম দিন পালন করে। তারা জিলহজ্ব মাসের দশ তারিখে তাদের পবিত্র স্থান ইরাকের মারজাতে একত্র হয়ে হজ্ব করে। তারা শুধু মধ্য শাবানের (শবে বরাতে) রাতে নামাজ আদায় করে এবং মনে করে এ নামাজই তাদের সাড়া বছরের জন্য যথেষ্ট। তারা তাদের পীরদের কবর মাজার পুজা করে। তারা নীল রং কে সম্মান করে। গোফ কাটাকে নাজায়েয মনে করে। সুর্য উদয় ও অস্তের সময় তারা সুর্যের দিকে মুখ করে প্রার্থনা করে। তারা খৃষ্টানদের অত্যন্ত সম্মান করে। খৃষ্ট ধর্মের অনেক বিষয়কে নিজেদের ধর্মের অংশ বলে গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া তারা ইহুদী, অগ্নি উপাসক ও পৌত্তলিকদের অনেক আচার নিজেদের ধর্মের অংশ করে নিয়েছে।

ইয়াযীদিদের আবাসভুমি ও জনসংখ্যা :

সাড়া বিশ্বে তাদের জন সংখ্যা হল প্রায় পাঁচ লাখ। এদের প্রায় দেড় লাখ বসবাস করে ইরাকে। অন্যরা সিরিয়া, তুরস্ক, লেবানন, ইরান, রাশিয়া, জার্মানী, বেলজিয়াম ও আর্মেনিয়াতে বসবাস করছে। তাদের অধিকাংশ জাতিগত কুর্দি হলেও কিছু আরব জাতিগোষ্ঠির মানুষও আছে। তাদের ভাষা হল কুর্দি। এটাকে তারা তাদের ধর্মীয় ভাষা বলে বিশ্বাস করে। বাগদাদে রশীদ মহাসড়কে তাদের কেন্দ্রিয় অফিস রয়েছে। অফিসের নাম হল আল-মাকতাব আল-উমুভী লিদ দাওয়াতিল আরাবিয়্যা।” এ অফিস হল তাদের ধর্মের কেন্দ্র।

(সুত্র : আল-মাওসুআহ আল-মুয়াস সারাহ ফি আল আদইয়ান ওয়াল মাজাহেবিল মুআসিরাহ)

বিষয়: আন্তর্জাতিক

২০৮৮ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

255211
১৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৬
আবু জান্নাত লিখেছেন : অনেক কিছু জানতে পারলাম, ধন্যবাদ ভাই।
255213
১৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:৪০
আবু আশফাক লিখেছেন : ''উদ্দেশ্য ছিল উমাইয়া রাজত্ব পুনরুদ্ধার করে ইয়াযীদের বংশধরদের ক্ষমতায় বসানো।''
কথাটি ঠিক নয়। ইয়াজিদ বা উমাইয়া বংশের সাথে ইয়াযীদিদের কোনো কানেকশন নেই।
255219
১৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৬
কাহাফ লিখেছেন : দৈনিক নয়া দিগন্তে এদের নিয়ে একটা নিবন্দ্ব চেপে ছিল, আপনার পোস্টের ভিন্ন মতামত ওতে দেখা যায়,কোন টা সঠিক...........?
১৭ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৮
199036
শিক্ষানবিস লিখেছেন : আমি আমার লেখার সুত্র উল্লেখ করেছি। ওয়ামী প্রকাশিত গ্রন্থ সামসাময়িক ধর্ম ও মতাদর্শ বিষয়ক বিশ্বকোষ থেকে তথ্যগুলো নিয়েছি।
তাদের পরিচিতির ব্যাপারে গবেষকদের বিভিন্ন মত রয়েছে।
255222
১৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৯
মাসুদ রানা লিখেছেন : অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ ভাই।
255255
১৭ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৭
মাহফুজ আহমেদ লিখেছেন : অজানা বিষয় জানতে পারলাম।ধন্যবাদ।
255286
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:৩৪
আহমদ মুসা লিখেছেন : আপনার দেয়া কিছু কিছু তথ্যের সাথে হযরত আমীরে মোয়াবিয়া (রা)ছেলে অভিশপ্ত ফাসেক ইয়াজিদের সাথে এই সম্প্রদায়ের ক্রমবিকাশের বিষয়টি কোন নির্ভরযোগ্য তথ্যের সাথে মিলছে না। ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ প্রায় চার হাজার বছর পূর্বের। এই সম্প্রদায়ের ব্যাপারে ইদানিং মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে অকেনেই তাদের সম্পর্কে খোজ খবর নেয়া শুরু করেছে।
255287
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:৪৫
বুড়া মিয়া লিখেছেন : এ ব্যাপারে খুব একটা জানা নেই, আপনার থেকে জানলাম।
255291
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:০৭
একজন বীর লিখেছেন : তথ্যপূর্ণ পোষ্ট।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File