ঘরে না ফেরা সাথিরা তাদের কথা রেখেছে

লিখেছেন লিখেছেন শিক্ষানবিস ০৭ মে, ২০১৩, ০৯:৩৮:৩৩ রাত

মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা আল্লাহর সাথে তাদের দেয়া ওয়াদা সত্যে পরিণত করেছে। তাদের কেউ কেউ জীবন দিয়ে তাদের দায়িত্ব পূর্ণ করেছে আর অনেকে তাদের দায়িত্ব পূর্ণ করার প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা তাদের ওয়াদায় কোন পরিবর্তন করেনি। (সূরা আল আহযাব : ২৩)

হ্যা, যত হুমকি আর ধমকি এসেছিল, যত আগুন দেখেছিল, যত অন্ধকার তারা সয়েছিল, আর যত গুলি ও বোমার শব্দ তারা শুনেছিল, তাদের ওয়াদা পালনে তারা একটুও পিছপা হয়নি।

মতিঝিল গণহত্যার পর আমি এক আত্নীয়কে ফোন করলাম, যে মতিঝিলে ছিল। প্রশ্ন করলাম, আপনি এখন কোথায়? বলল, আমি শাপলা চত্বরে না গিয়ে অবরোধ শেষে বাড়ীতে এসেছি। একটু অসুস্থ ছিলাম, তাই।

আমি বললাম, আপনি ভাল করেছেন। সে রেগে গেল। বলল, কী বললেন? আমি ভাল করেছি? আমি তো মুনাফিক। মনে হয় যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করেছি। আমি এখন পাগলের মত হয়ে গেছি। দুনিয়াটা ভাল লাগে না আর। আক্ষেপ করছি, কেন চলে এলাম!

ঐ সাথীরা কিন্তু গিয়েছিল, আর ফেরবেনা বলে। তের দফা না মানা হলে ঘরে তারা ফিরবে না, এমন সংকল্পে ছিল অবিচল। তাই তারা সামনের সারিতে স্থান করে নিয়েছিল। আসন গেড়ে বসেছিল তপ্ত সড়কে। সারাদিনের ক্লান্তি, ক্ষুধা-পিপাসা তাদের সঙ্গী হয়েছিল। যে পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলাকে ও তার প্রিয় রাসূলকে কটাক্ষ করা হয়, যে দেশের সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম উচ্ছেদ করা হয়, সে পৃথিবীতে সে দেশে তারা থাকবে না। কথা রেখেছে তারা। তারা তাদের মহান প্রভূর কাছে হাজির হয়েছে। লাব্বাইক বলেছে রক্তমাখা কাপড় আর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন শরীর নিয়ে। অগ্রবর্তী চারজন সাথির লাশে কাফন পরিয়ে সাথে নিয়ে বসে পড়েছিল তারা। মনে মনে বলেছিল, তোমরা চার জন আমাদের আগে ওয়াদা বাস্তবায়ন করলে, আমরা তোমাদের কথা দিচ্ছি, আমরাও তোমাদের সাথে। শেষ পর্যন্ত এ কথাও তারা রাখল।

তাদের সম্পর্কে তাদের মহান প্রভূ বলেছেন, তারা তাদের কথা রেখেছে। তার সাথে দেয়া ওয়াদা তারা বাস্তবায়ন করেছে। এর চেয়ে বড় আর কী পাওয়ার আছে মুমিনের জীবনে। কত মানুষই তো গরু ছাগলের মত মরে। রাস্তা-ঘাটে, এখানে সেখানে। কয়জনের শহীদি মৃত্যু হয়?

ঐ চারজন কাফন পড়া সাথির লাশ আমরা দেখেছি। আর হাজার হাজার লাশের কথা আমরা শুনেছি। কিন্তু তাদের একজনকেও আমরা চিনি না। তাদের কারো নাম এখন পর্যন্ত জানি না। কোন মিডিয়ায় আসেনি। তাদের মা হয়ত অপেক্ষায় আছে খোকা আসবে ফিরে। তাদের সন্তানেরা অপেক্ষায় আছে, বাবা আসবে ফিরে। তাদের স্ত্রীরা অপেক্ষায় আছে, স্বামী আসবে ফিরে। কিন্তু লাশও তাদের কাছে যাবে না। কবরটা কোথায়, তারা কোনদিন জানবে না। তাতে কি!

পারস্য শক্তির বিরুদ্ধে অনেকগুলো যুদ্ধের মধ্যে একটি হল নেহাওয়ান্দের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে অনেক সাহাবী শহীদ হলেন নির্মম ভাবে।

দূত আসল যুদ্ধ বিপর্যয়ের খবর নিয়ে খলীফাতুল মুসলিমীন উমার ইবনুল খাত্তাবের কাছে।

এসে যুদ্ধের ঘটনা বয়ান করতে লাগলেন। বললেন, নাম ধরে ধরে, অমুক বিখ্যাত ব্যক্তি শহীদ হয়েছেন। অমুক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি শহীদ হয়েছেন। অমুক গোত্র-পতি শহীদ হয়েছেন। এভাবে বলতে বলতে এক পর্যায়ে বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আরো এমন হাজার হাজার শহীদ হয়েছেন তাদের নাম আমি জানি না, আপনিও তাদের চিনেন না।

উমার দূতের এ কথা শুনে কেদে উঠলেন। বললেন, যে মহান প্রভূকে সন্তুষ্ট করার জন্য তারা জীবন দিলেন, সেই মহান প্রভূ তাদের ভালমত চেনেন ও জানেন। উমার ইবনুল খাত্তাব যদি তাদের না চেনে, তাতে ক্ষতি নেই।

হে মহান সাথিরা! তোমরা তোমাদের কথা রেখেছো, আমরা পারিনি। তবে অপেক্ষায় আছি।

বিষয়: বিবিধ

১২৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File