উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে কিছু ভুল ধারনা
লিখেছেন লিখেছেন সাত সাগরের মাঝি ০২ মার্চ, ২০১৩, ০৬:৫০:০৬ সন্ধ্যা
ধ্মনীর মধ্য দিয়ে রক্ত সর্বদা তীব্র গতিতে চলাচল করে। ধ্মনীর ভিতর দিয়ে রক্ত চলাচলের সময় ধ্মনীর দেয়ালে যে চাপ প্রয়োগ করে তাকেই রক্তচাপ বলে। মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়াকে উচ্চরক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলে।
উচ্চ রক্তচাপের কারনঃ
কারন অনুযায়ী উচ্চ রক্তচাপকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। প্রাইমারী ও সেকেন্ডারী। প্রাইমারী কারন হলো, যে কারন এখনো অজানা। সিংহভাগ উচ্চরক্তচাপের কারন এখনো জানা যায় নি অর্থাৎ প্রাইমারী উচ্চ রক্তচাপ। অল্প কিছু রোগীর ক্ষেত্রে কারন জানা যায়। যেমন- কিডনীর কিছু সমস্যা, হরমনজনিত সমস্যা ইত্যাদি।
উচ্চরক্তচাপের উপসর্গঃ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের তেমন কোন উপসর্গ থাকে না। উচ্চরক্তচাপ জনিত জটিলতা দেখা দিলে কেবল তখনই কিছু উপসর্গ দেখা যায়। যেমন- মাথা ব্যথা, বুক ধড়পড় করা, কিছুটা শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা বা হঠাত করে টলে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি।
উচ্চরক্তচাপের আধুনিক চিকিতসাঃ
উচ্চরক্তচাপের চিকিৎসা সাধারণত দুই ভাগে করা হয়। ঔষুধ দিয়ে চিকিৎসা এবং জীবন যাপন পদ্ধতির পরিবর্তনের মাধ্যমে চিকিৎসা। বর্তমানে বাজারে বেশ কয়েক ধরনের ঔষুধ পাওয়া যায়। এর অনেকগুলোই সম্পূর্ন বাংলাদেশে তৈরী। তাই দাম অনেক কম। তাছাড়া প্রায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত হওয়ায় এসব ঔষুধ সারা জীবন গ্রহন করলেও কোন সমস্যা হয় না। একেক জনের শারীরিক অবস্থাভেদে একেক ধরনের ঔষুধ দেয়া হয়। তবে সবচেয়ে ভালো হলো জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করা। এর মধ্যে রয়েছে চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার, কায়িক পরিশ্রম বাড়ানো, অহেতুক টেনশন কমিয়ে ফেলা, ধূমপান পরিহার, প্রচুর শাক সবজি খাওয়া, প্রতি দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা ইত্যাদি। এসব কিছু করার পরও যদি হাইপারটেনশন না কমে তাহলে ঔষুধ ছাড়া আর বিকল্প থাকে না।
উচ্চ রক্তচাপ ও কিছু ভুল ধারনাঃ
১) অনেকে মনে করেন, উচ্চ রক্তচাপের ঔষুধ একবার খেলে সারা জীবন খেতে হবে, তাই ঔষুধ খেতে চান না। এটা ঠিক না। কারন, আপনার শরীর নিজে নিজে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হলে অবশ্যই আপনাকে ঔষুধের সাহায্য নিতে হবে। অন্যথায় আপনি বিলম্ব করলেও বাড়তি রক্তচাপ আপনার ক্ষতি সাধন করতে মোটেও বিলম্ব করবে না।
২) কাঁচা লবন খেলে প্রেশার বাড়ে, তাই লবন ভেজে খাওয়া ভালো। এটাও একদম ভুল কথা। লবণ ভেজে খান আর তরকারীতে খান না কেন, মাথাপিছু প্রতিদিন গৃহীত লবনের পরিমাণ যেন ৬ গ্রাম বা পূর্ন এক চামচের বেশি না হয়।
৩) প্রেশার কমে গেলে ঔষুধ ছেড়ে দেয়ায় কোন ক্ষতি নেই। এটাও একটা বিপদ জনক সিদ্ধান্ত। মনে রাখতে হবে, ঔষুধ খেয়েই প্রেশার নিয়ন্ত্রনে আছে। তাই ঔষুধ ছেড়ে দেয়া মানেই স্ট্রোক, হার্ট এটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়া।
৪)একবার প্রেশার বেশি পাওয়া মানেই প্রেশারের রোগী। মোটেই না। পরপর তিনদিন সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় যদি প্রেশার বেশি পাওয়া যায়, তবেই ধরে নিতে হবে আপনার প্রেশার বেশি। নানা কারনে হঠাত একটু আধটু প্রেসার বাড়তে পারে। তবে উচ্চ রক্তচাপের রোগী বলতে হলে প্রেশার পরপর তিন দিন মাপতে হবে।
৫)ঘাড়ে ব্যথা মানেই প্রেশার। কখনোই না। নানা কারনে ঘাড়ে ব্যথা হয়। খুবই কম ক্ষেত্রে প্রেশারের আধিক্যে ঘাড়ে ব্যথা হয়।
উচ্চরক্তচাপের জটিলতাঃ
উচ্চ রক্তচাপ নিজে যেহেতু কোন উপসর্গ তৈরী করে না, তাই নীরবে এটি অনেক জটিলতার সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপের ফলে স্ট্রোক, হার্ট এটাক, কিডনি ফেইলার, অন্ধত্বসহ রক্তনালীর অপূরনীয় ক্ষতিসাধন করে। এসব সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে যখন কেউ মুমূর্ষ অবস্থায় পতিত হন, তখন জানতে পারেন তিনি আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত।
বিষয়: বিবিধ
১১৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন