মাকে খুঁজি সারাবেলা।

লিখেছেন লিখেছেন মুহছিনা খাঁন ১৫ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৪৩:৪১ সকাল

মা ছোট্ব একটি শব্দ অথচ প্রান শীতল করে দেয় সেই মধু মাখা ডাকে।

প্রায় ৩টি বছর চলে যাচ্ছে সামনা সামনি ডাকতে পারিনি এমনকি টেলিফোনেও না।

পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পায়নি আমার হারিয়ে যাওয়া মাকে।

শুধু গভীর রাতে ঘুম ভেংগে যায় মায়ের ডাকে মা যেনো সব সময় নাম ধরে ডাকছে সেটা কানে ভাঁজে । ঘুম ভেংগে যখন দেখি আসলে আমার শুনার ভুল তখন মনটা খুব খারাপ হয়ে চোখের জলে বালিশ ভিজে যায়।

আচ্ছা মা তোমার মেয়ে যখন এত করে একটিবার তোমাকে দেখতে চায় তুমি কি তা বুঝতে পারোনা?

আমার এই করুন আকুতিটি কি তোমার কাছে কেউ পৌছে দেয়না।

তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে আমি বাহির থেকে এসে দেখলে কাঁদবো তাই আমার ঘরে ফিরার খবর শুনে তাড়া তাড়ি উঠে দেয়ালে ধরে ধরে এসে দরজায় দাড়িয়ে থাকতে হাসি মুখে।

আর এতোটি দিন রাত যে মা অতিবাহিত হয় তোমাকে দেখিনা, কথা বলিনা, তোমার হাতের মাখানো ভাত খাইনা, অসুস্থ হলে তোমার আদরমাখা হাতের স্পর্শ পাইনা তোমার কি মা একটু জানতে ইচ্ছে করেনা? খারাপ লাগেনা?

মা আমার সব আনন্দ সুখ হাসি কান্না সব যেন এক হয়ে আছে কোন কিছুতেই আলাদা স্বাদ পাইনা।

আমেরিকায় রেখে যাওয়া তোমার শাড়ি ব্যবহার করা জিনিস সব কিছু উপড়ের তলায় রেখে দিয়েছি ।

উপড়ে যখন অন্য কোন কাজে যাই তখন পা সমানে কাঁপতে থাকে, হাতটা ঠান্ডা হয়ে, ঠোট শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায় , মাথা ঝিম ঝিম করে পুরো শরীরটা যেনো নিস্তেজ হয়ে যায় । হাঠতে পারিনা।

যে লাগ্যাজে সাজিয়ে রেখে গিয়ে ছিলে তোমার হাতে সেই জিনিস গুলা এভাবেই আছে।

ভুলে ও খুলতে চাইনা একবার চেষ্টা করে ছিলাম দেখলাম তোমার কাপড় চোখে পড়তেই শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তাড়া তাড়ি করে বন্ধ না করেই নিচে নেমে আসলাম।

শুধু একবার এসেই মা তোমার মেয়ের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে গেলে সারা জীবনের জন্য।

তোমার মেয়ে সেই থেকে অনেক চুপ চাপ যেনো বাঁচতে হবে তাই খায় ।

কোন কতাইতো মা বলা হলোনা শুনাও হলোনা তোমার মনের আকুতি। সময় বড় দ্রুত চলে গেল. সেই সাথে সহজেই ফুরিয়ে গেলো মা মেয়ের হাসি কান্নার গল্প।

আমার হাতের রান্না , স্কুলে থাকতে বাংলাদেশের মানচিত্রের মত ময়দার বানানো রুটি সেটাও খুব মজা করে খেয়েছিলে।

ক্লাস টেনে পড়ার সময় সাদা একটি কাপড়ে রেশম দিয়ে ফুল তোলা একটি টেবল ক্লথ সেটাও বড় যতনে রেখেছিলে।

আমি আসার পর টেবল ক্লথটি নাকি নীল দিয়ে ধুয়ে আলমারিতে রেখে দিয়েছিলে কাউকে স্পর্শ করতে দাওনি যদি কেউ নষ্ট করে ফেলে । প্রতি বছর নাকি একবার রোদে শুকাতে আবার নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে দিতে।

আমারিকায় যখন আসলে সব নতুন কাপড়ের সাথে এটাকে ও নিয়ে আসলে । আমি অবাক হয়ে জিগ্যেস করেলাম একি মা! তুমি এত সুন্দর করে হাসলে সেটা হাতে নিয়ে যেন অনেক মুল্যবান জিনিস তুমি আগলে রেখেছো এবং বড় একটি কাজ করেছো।

আমার সব অসুন্দর কাজ গুলিকেও মা তুমি ভালোবেসে যতন করে রাখতে সে টা তার প্রমাণ।

আজ তোমার মেয়ে এত এত কাজ করে কেউ দেখার নেই বরং করতে হবে এটাই বাস্তব।

আমার সামান্য কাজে তোমার স্বীকৃতি যখন মনে হয় তখন চোখে এত বেশি জল আসে যে অজান্তেই ভেসে যায় যেনো সমস্ত পৃথিবী।

আর তখন গাছ পাতা আকাশ সব কিছুর রং বদলে যায় অতি চেনা মানুষগুলিকে অচেনা লাগে মুহুর্তের মধ্যে বুকটা ভারী হয়ে আসে শ্বাস নিতে বড় কষ্ট হয়।

তখন বন্ধ ঘরের এই পাশ থেকে ওপাশে হাটতে থাকি দরজা খুলে এক সময় বাইরে গিয়ে নি:শ্বাস নেই যখন খোলা আকাশের দিকে থাকাই ভিতরটা হালাকা হয়ে আসে তখন ঘরের ভিতর ঢুকে বাকি কাজ গুলো শেষ করি। এভাবেই প্রতদিন প্রতিটি রাত প্রতিটি মুহুর্ত কাটে তোমার মেয়ের।

আমি দোয়া করি মহান রব যেনো আমার প্রত্যেকটি ভালো কাজের বদলা আমার মা বাবাকে দেন । আর আমার কোন গুনাহ যেনো তোমাদের স্পর্শ না করে।

সেই দিনটির অপেক্ষায় আছি মা, যখন মহান মা'বুধ বলবেন আমাকে কাছে ডেকে, যাহ্ আজ এই কঠিন মুহুর্তে তোর মা বাবা ভাই বোন আত্মীয় স্বজন বন্ধু দের মাফ করে দিলাম। শামিল হয়ে যাহ্ আমার নেক বান্দাদের দলে আর প্রবেশ কর আমার জান্নাতে। আল্লাহ এই গুনাহগারের দোয়া কবুল করবেন সেই আশা আর বিশ্বাস নিয়ে আজকের মত বিদায়। সবাইকে শেয়ার করলাম কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ রহিলো।

বিষয়: Contest_mother

২৬৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File