শাশুড়ী মা
লিখেছেন লিখেছেন মুহছিনা খাঁন ২৮ মার্চ, ২০১৪, ০১:৩৬:৩৬ রাত
আজ দুই বছর হলো আমার মা (শাশুড়ী) এই দিনে বিদায় নিয়েছেন চিরতরে এই পৃথিবীতে থেকে।
কত সুন্দর সম্পর্ক ছিলো আমাদের দুজনের মধ্যে সেটা হয়তো পাশের মানুষরা ও কিছুটা বুঝতে পারতো।
এক সাথে ভিসা পেয়ে একই দিনে আসলাম আমেরিকাতে সেই থেকে এক সাথে ১২টি বছর কাটিয়ে দিয়েছি । কোনদিন মন খারাপ করে কথা বন্ধ করে থাকিনি আমরা। আমি বিকালে ঘুমিয়ে থাকলে মা'র ভালো লাগতোনা। এক সাথে দুজন হাটতে বের হতাম সামারে বিকালে। যার দরজার সামনে বাটা সেন্ডেল অথবা পিছনের উঠোনে শিম গাছ দেখতে পেতাম বাংগালী ঘর মনে উঠে তাদের সাথে কথা বলতাম।
শাশুড়ীকে নাকি বউমারা ভয় পায় আমি এত দুষ্ট ছিলাম যে ভয় পাওয়া দুরে থাক উনার সাথে সব সময় লেগেই থাকতাম হাসি খুশি করে। এত বেশি গল্প করতাম যে মাঝে মাঝে পুরো রাতটাই কাটিয়ে দিতাম তখন আমার স্বামী রাতে কাজ করতেন।
প্যারালাইস্ড হয়ে আমার কাছে দুই বছর থেকে একটু ভালো হতেই দেশে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে গেলেন আমার একা খুব কষ্ট হয় বলে। যাওয়ার পর সব সময় বলতেন মা কি ভুল করলাম তোমার কাছ থেকে এসে তোমার সাথে বারান্দায় থাকলেও শান্তি সুব হান আল্লাহ কি সুন্দর মন মানুষিকতা ছিলো মায়ের একজন শাশুড়ির কাছ এমন কথা শুনা বউমাদের সৌভাগ্যের ব্যাপার। অথচ আমেরিকার ব্যস্থতায় তেমন কিছুই করতে পারিনি । জায়নামাজ বিছিয়ে যখন দিতাম নামাজের জন্য বা হাত কাজ করতনা ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতটা ধরে বলতেন, আল্লাহ আমার মুহছিনাকে দুনিয়া আখেরাতে শান্তি রাখিও সন্তান দ্বারা ও খুশি করিও আর বলতেন আমি যদি ভালো হয়ে যাই তাহলে আমার ময়নাকে আর কিছু করতে দিবোনা। আমার হাত পায়ের নখ গুলাও কেটে দিতেন আমি কাটলে সমানে রক্ত ঝরতো দশ আংগুলে।ইদানিং কিছু ব্যাস্থতার ধরুন নিরবে বসে সময় নিয়ে মায়েদের জন্য দোয়া করতে পারিনি। স্বপ্নে দেখলাম সোফায় শোয়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বলছেন, মা তোমাকে দেখি আমি এখন আর খুঁজে পাইনা। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে বলছি এইতো মা আমি। দোয়া করি তোমার ছেলের বউকে মা যে আদর যত্ন আর ভালোবাসা দিয়েছো এর বিনিময়ে আল্লাহ তোমার সব গোনাহ মাফ করে জান্নাতের উচ্চ শিখড়ে স্থান দিন। হাশরের দিনে দুই মায়ের জন্য যেনো আল্লাহ সম্মানিত স্থান নির্ধারিত করে দেন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
২১১৩ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন