২৮ ফেব্রুয়ারির গনহত্যা: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যখন নষ্টদের হাতে
লিখেছেন লিখেছেন আহমদ জুনেদ ০৮ মার্চ, ২০১৩, ০২:১৩:০৪ রাত
কী নিসংস্রতা! কী বর্বরতা!! এ যেন সব হায়নাদের নিসংস্রতাকে ছাড়িয়ে গেল। অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় খুন করা হলো ৭০/৮০/৯০ জনকে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নিসংস্রতা পড়ে গা শিউরে উঠতো। দেশের জন্য মহান বে্ক্তিদের আত্মত্যাগের কাহিনী পড়ে আমাদের জাতীয় এ ঘটনার প্রতি যে শ্রদ্ধা চলে এসেছিল তা এখন আর নেই।মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা নষ্টদের হাতে চলে যাওয়ায় তা পবিত্রতার জায়গা থেকে অপবিত্র, শ্রদ্ধার আসন থেকে অশ্রদ্ধার আসনে স্তান করে নিয়েছে।
কতজন লোককে হত্যা করা হয়ছে তার প্রকৃত হিসাব কারো জানা নেই। দৈনিক আমাদের দেশ রিপোর্টে বলা হয়ছে ৫৬ জন। ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন ওয়েব সাইট থেকে জানা গেছে ৭০/ ৮০ কিংবা ৯০ জনকে সরকারী বাহিনী ও তার সন্ত্রাসীদের হাতে খুন করা হয়ছে। শুধু সাতক্ষীরায় অনেকে বলেছে ২৭/ ২৮ টি লাশ পড়ে থাকতে দেখেছে। আহত আরো অনেকে হয়ত মারা যাবে। মৃতের সংখা ১০০ কিংবা ১৫০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। টিভি পত্রপত্রিকা আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কল্যাণে সে নিসংস্র্ত প্রত্যক্ষ করেছে দেশবাসী। বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে, পশুর মত টেনে হিচড়ে মৃতদেহ নিয়ে আসার দৃশ্য বার বার চোখে ভাসছে। আর হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে পুলিশ যেভাবে মানুষদের গুলি করে হত্যা করছিল তা আদিম যুগের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। ভিনদেশী বর্বর হয়নাও এ আচরণ করে না। গত কয়েকদিনের সরকার ও তার অঙ্গসংঘটনগুলো বিরোধী দলের উপর যে নিসংস্রতা চালিয়েছে তা বাংলাদেশকে পৃথিবীর জাহান্নামে পরিনত করা হয়ছে। কিন্তু হু কেয়ারস? জামাত শিবিরের লোকজন মারা যাবে আর মুক্তিযুদ্ধের ঘটনায় গর্বিত একটা জাতি তা নিয়ে সময় অপচয় করার সময় কোথায়? এরা তো বিশ্বজিতের মত কপাল নিয়ে জন্মে নি। না জন্মেছে থাবা বাবার মত নাস্তিকের কপাল নিয়ে। এদের মৃত্যুতে এত শোকাতুর হওয়ার সময় নেই যে ঘাতকদের।
গতকালের ঘটনায় স্তম্বিত আংশিক খবর দেখেই আমার বন্ধু কানাডা থেকে লেখেছে No killing is justified, not in 1971 not today, 35 death is too much.কিন্তু কে কাকে বুজাবে। আমরা যে মধ্যযুগের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। মধ্যযুগের ক্রিস্টান নিসংস্র পাদ্রীদের প্রেতাত্থা মুনতাসির মামুন, শাহরিয়ার কবির, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু আর আওয়ামিলিগ ও তার অঙ্গসংঘটনের উপর ভর করেছে। মধ্যযুগে নিসংস্রতাকে ধর্ম দিয়ে জাস্টিফাই করা হত আর ২০১৩ সালের নিসংস্রতা বাংলাদেশের ভুখন্ডে জাস্টিফাই করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ দিয়ে। ধর্মের অপবেবহারে মানুষ ফুঁসে উঠেছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে একসময় মানুষ ফুসে উঠবে না তার নিশ্চয়তা কি? শান্তির জন্য ধর্মীয় অনুশাসনের নামে অপশাসন আর মুক্তিযুদ্ধের ক্রন্দনরোধের নামে নিসংস্রতায় বাংলাদেশের আকাশ প্রিয়জন হারানোর আর্তচিত্কারে ভারী করা হচ্ছে। কি অপূর্ব মিল চরমপন্তিদের! কি সাদৃস্য মানুষের সরল বিশ্বাস আর আদর্শের কেন্দ্রবিন্দুগুলো নিয়ে ঠান্ডা মাথার শিক্ষিত সমাজের উচুতলার খুনিদের রাজনীত।
সাম্প্রতিক রাজনীতি ঘটনা প্রবাহ বাংলাদেশের রাজনীতি দুটি ধারায় বিভক্ত। নাস্তিক আর রাজাকারে এ দুটি ধারায় বিভক্ত করে শাহবাগ নাটক বা ষড়যন্ত্র আমাদের জীবনে এক দগদগে লালচে ক্ষত হয়ে থাকবে। এক শাহবাগ সমর্থককে নাস্তিক বলতেই চেচিঁয়ে উঠল। তিনি বললেন তিনি নাস্তিক না, শুধু শাহবাগকে সমর্থন করার কারণে নাস্তিক হতে পারেন না। তিনি আরো বললেন নিয়মিত নামাজ পড়েন, কোরান হাদিসও পড়েন। তাকে কেউ নাস্তিক প্রমান করতে পারবে না। তাকে বললাম ভাই আমি বলি কি আমাকে যতই যুক্তি দেখান আপনি কিন্তু নাস্তিক। কারণ স্বাধীনতার কয়েক যুগ পরে জন্ম নিয়েও কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বেক্তিবর্গের স্সচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেয়ায়বিচারের দাবি করার কারণে যদি কেউ রাজাকার হতে পারে, এমন কি তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা ঠুকে দিতে পারেন, কুকুরের মত ঘেউ ঘেউ করতে তাকেন তুই রাজাকার তুই রাজাকার বলে তাহলে শাহবাগকে সমর্থন করার কারণে আপনি কেন নাস্তিক হবেন না?
আমরা এখন আওয়ামীলীগের মত কোনো যুক্তি মানি না......তুই নাস্তিক তুই নাস্তিক তুই নাস্তিক
কেমন লাগে ভাই? আমার কথা শুনে সেদিন লোকটি কোনো সদুত্তর দিতে পারে নি। যেভাবে আজ পর্যন্ত কেউ সদুত্তর দিতে পারে নি কিভাবে কাদের মোল্লার মত একজন এত বড় কসাই মুক্তিযুদ্ধাদের নাকের ডগায় বসে ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্ধালয় থেকে ডিগ্রী পাশ করলেন? কিভাবে তিনি দাবি করলেন ছাত্র ইউনিয়নের একসময় মতিয়া গ্রুপ করতেন? তিনি মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছেন বলে দাবি করার পরও চুপ করে তাকতে দেখে প্রতীয়মান হয় তোমাদের যে মানুষ খুনের নেশা। আমি জানতে চেয়েছিলাম কেন স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধারা এত বড় রাজাকার মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাইদীকে গার্ড অব অনার দিল? জানতে চাই কেন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাও এসে প্রমান করে গেলেন না সাইদী রাজাকার ছিলেন কিংবা তত্কালীন সেক্টর কমান্ডার বা সদস্যদের অনেকে তো জীবিত আছেন। তারা কেন আসলেন না? যে জাফর ইকবাল সাইদীর ফাঁসি জন্য ঘেউ ঘেউ করতে শুনি সে কেন আসল না আদালতে সাক্ষী দিতে? জানি এর উত্তর একটাই দেবে-----------ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই। খুনিরা তো যুক্তি মানে না শুধু খুন করতে জানে। শাহবাগের খুনিরা তার বেতিক্রম হবে কেন?
রাহাত ভাইয়ের সাথে আর দেখা হবে না। দেখা হলেই মুচকি হাসি দিতেন। সদা হাস্সজল বেক্তিটির প্রাণ কেড়ে নিল ঘাতক পুলিশের বুলেট। চলে গেছে না ফেরার দেশে আমার ভাইটি। আর দেখব না সেই চিরচেনা রাহাত ভাইয়ের হাসিটি। একদিক দিয়ে ভাগ্যবান বলতে হয় রাহাত ভাই বা যারা প্রাণ দিলেন সত্য প্রতিষ্টার আন্দোলেন। তাদের তো আর দেখতে হবে না তোমাদের মত নরপিশাচদের মানুষ হত্যার উল্লাস। দেখতে হবে না খুনিদের ভয়ংকর অট্টহাসি? তাদের দেখতে হবে না তোমাদের মত মানুষ রুপি হায়নাদের হাতে আরো ভাইদের জীবনদা। মুক্তিযুদ্ধ বেবসায়ীদের হাতে প্রিয় মাতৃভূমির অপমান আর তাদের সইতে হবে না। হায়নাদের বিভত্সতার আহাজারিতে ছেঁয়ে যাবে না আমার ভাইগুলোকে আর।
আমাদের জাতীয় জীবনে ২১, ২৫ আর ২৮ শে ফেব্রুয়ারী আর ২৮ শে অক্টোবর এক একটি ট্রাজিক দিন। এ দিন গুলোর নিমর্মতা একেকটি কে ছাড়িয়ে গেছে একেকটি। আর প্রতিটি নির্মমতায় আওয়ামিলিগ অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে জড়িত। ২১ শে ফেব্রুয়ারী তত্কালীন সরকার ১৪৪ ধারা জারি করলে সাধারণ ছাত্রজনতার ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্তের আওয়ামিলিগ প্রচন্ড বিরুধিতা করে। আর ২৫ শে ফেব্রুয়ারী পিলখানা ট্রাজেডির মূল নায়ক আওয়ামিলিগ। ২৮ শে ফেব্রুয়ারী আর ২৮ শে অক্টোবর আওয়ামিলিগ যে গনহত্যা চালিয়েছে তার জন্য ক্ষমা নেই আওয়ামীলীগের, ক্ষমা নেই শাহবাগ সন্ত্রাসীদের, ক্ষমা নেই মুনতাসির মামুন, শাহরিয়ার কবির, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ও আরো যারা তাদের। মুক্তিযুদ্ধের মত মহান যুদ্ধকে মানুষের হৃদয়ে পবিত্রতা থেকে অপবিত্র, শ্রদ্ধার থেকে অশ্রদ্ধার জায়গায় নিয়ে গিয়ে আওয়ামিলিগ, শাহবাগ সন্ত্রাসীরা আর শাহরিয়ার কবির গং রা যে অপরাধ করেছে তার জন্য ভবিষ্যতে হয়ত ১৫ ই আগস্টের চেয়ে নির্মম, কিংবা দাফন কাফন বিহীন রাস্তায় পড়ে থাকা নরপিশাচদের লাশগুলো যেন ক্ষুধার্ত কুকুর শিয়ালদের হয়..........নিপীড়িত এদেশের অসহায় মানুষগুলো সে অপেক্ষায়
বিষয়: রাজনীতি
১২৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন