মুসলিম ও ধর্ম নিরপেক্ষতা সাংঘর্ষিক নয় কি?
লিখেছেন লিখেছেন দৃপ্ত কন্ঠ ১৯ মার্চ, ২০১৩, ০৪:২৫:৫১ বিকাল
‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’ ইংরেজী ‘সেকিউলারিজম’ শব্দেরই বাংলা অনুবাদ। গত আড়াই শত বছর থেকে এটা দুনিয়ার সর্বত্র একটি আদর্শের মর্যাদা লাভ করেছে। মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম কামাল পাশাই তুরস্কে এই মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করেন।আর এ কামাল পাশা কি চিজ ছিলেন তা আমার থেকে পাঠক ই ভাল জানেন।
এ ধর্ম নিরেপেক্ষতা শব্দের প্রয়োগিক দিক থেকে অর্থ দাড়ায়“ধর্মকে দুনিয়ার সব কিছু থেকে দুরে রেখে ব্যাক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ রাখা’’। “ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার” এ
বর্তমান স্লোগান বিশ্লেষন করলে উপরোক্ত সঙ্গার যথার্থতা বুঝা যাবে আশা করি। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ধর্মকে পরিত্যাগ করাই যার একমাত্র লক্ষ্য ।
সে হিসাবে এ মতবাদকে ধর্মহীনতা বলাই যুক্তিযুক্ত। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মের বিধান মেনে চলার বিরুদ্ধে এর কোন বিশেষ আপত্তি নেই বলে এ মহান "উদারতার" স্বীকৃতি স্বরূপ এর নাম ধর্মনিরপেক্ষতা রাখা হয়েছে।যার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে আল্লাহ পৃথিবী ও আমাদের সৃষ্টি করেছেন ভাল কথা সে জন্য তার কিছু উপাসনা করে দিলেই মামলা খতম।অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় মুসলিম হিসাবে আমাদের একমাত্র কাজ হল নামাজ পড়া।বাকি সব কাজ মুসলমানিত্বের বাইরের। তো পাঠক চলুন একটু জেনে নেই এ মতবাদটার উৎপত্তি কথা..................
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের এ আধুনিক সংস্করণ প্রায় আড়াই শত বছর পূর্বে ইউরোপে প্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পনের শতাব্দীতে এর জন্ম হয় এবং আড়াইশত বছর সংগ্রামের পর আঠার শতাব্দীর প্রথমার্ধে তা বিজয়ী মতাদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পনের শতাব্দীতে ইউরোপে সবেমাত্র জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা শরু হয়েছে। সে সময় ইউরোপে খ্রিস্টান পাদ্রীদের শাসন ছিল। পাদ্রীরা ধর্মের নামে মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে একচ্ছত্র অধিপতি হিসাবে রাজত্ব করছিল। অথচ তাদের নিকট আল্লাহর বিশুদ্ধ বাণীর অস্তিত্ব নেই বলে ষষ্ঠ শতাব্দীতেই কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে। পাদ্রীরা খোদার নামে নিজেদের মত চালু করত। তারা মানুষের নিকট ধর্মের নামে নিরঙ্কুশ আনুগত্য দাবী করত এবং শাসন ক্ষমতা তাদের হাতে থাকায় তারা গায়ের জোরেই আনুগত্য করতে বাধ্য করত। ইউরোপে যখন নতুন জ্ঞান সাধনার উন্মেষ হলো তখন পাদ্রীদের মনগড়া গবেষণাহীন মতামত গবেষকদের নিকট ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হল। সৃষ্টিজগতের রহস্য যতই উদঘাটিত হতে লাগল, পাদ্রীদের সাথে জ্ঞান সাধকদের মতবৈষম্য ততই প্রকট হয়ে উঠল। বিজ্ঞানীদের প্রত্যেকটি নতুন মত ক্ষমতাসীন পাদ্রীদের ভ্রান্তি প্রমাণ করে চলল। পাদ্রীগণ তখন নিরুপায় হয়ে ধর্মের দোহাই পাড়তে শুরু করল এবং শাসন শক্তি প্রয়োগ করে বেত্রাঘাত থেকে মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত অমানুষিক শাস্তি দ্বারা গবেষকদের শায়েস্তা করতে লাগল। গ্যালিলিওর ন্যায় শত শত জ্ঞান পিপাসী পাদ্রীদের এ খোদায়ী অস্বীকার করার পাপে চরম দন্ড ভোগ করল। চিন্তা ও গবেষণাভিত্তিক জ্ঞানের অনুসন্ধানীদের উপর এ যুলুমের বিরুদ্ধে চিন্তাশীলদের মধ্যে বিদ্রোহ দানা বেঁধে উঠল।জম্ন হল নতুন এক সংগ্রামের”গীর্জা বনাম রাষ্ট্র”।
জীবনের সকল বিভাগ থেকে পাদ্রীদের উৎখাত করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে বিদ্রোহীরা অগ্রসর হল। দীর্ঘ দু’শ বছর (ষোল ও সতর শতাব্দী ) ধরে এই ঐতিহাসিক রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চলতে থাকে। এ সংগ্রাম ইতিহাসের ছাত্রদের নিকট ‘গীর্জা বনাম রাষ্ট্রের’ লড়াই নামে পরিচিত।অতঃপর সংস্কারবাদীদের নেতৃত্বে দু’পক্ষের মধ্যে আপোষ প্রচেষ্টা জোরদার হয়ে উঠে। মার্টিন লূথারের নেতৃত্বে পরিচালিত এ আন্দোলন ‘আপোষ আন্দোলন’ নামে খ্যাত। এ আন্দোলনের প্রস্তাব হল যে, ‘‘ধর্ম মানুষের ব্যক্তিতগত জীবনে সীমাবদ্ধ থাকুক এবং মানুষের ধর্মীয় দিকের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা চার্চের হাতে থাকুক। কিন্তু সমাজের পার্থিব জীবনের সকল দিকের কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব রাষ্ট্রের উপর ন্যস্ত থাকবে এবং পার্থিব কোন বিষয়েই চার্চের কোন প্রাধান্য থাকবে না । অবশ্য রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দকে চার্চের নিকটই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবার শপথ গ্রহণ করতে হবে।”সকল দিক বিবেচনা করে এ প্রস্তাব উভয় পক্ষই গ্রহণ করতে রাজী হল। পাদ্রীরা নিজেদের অবস্থা সমন্ধে সচেতন ছিল। সমাজের চিন্তাশীল ব্যক্তিদের সমর্থন ছাড়া শুধু ধর্মান্ধ জনতার সাহায্যে যে নেতৃত্ব চলে না, তাও তারা বুঝতে পারল। বিশেষতঃ দু’শ বছর সংগ্রাম পরিচালনার পর তারা জয়ের আশা সম্পূর্ণ ত্যাগ করল। বিশেষ করে রাষ্ট্র পরিচালকদের চার্চে শপথ গ্রহণ করার প্রস্তাবে পাদ্রীদের কিছুটা ইজ্জত রক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে বলে তারা সসম্মানে ক্ষমতাচ্যুত হতে রাযী হল। অপরদিকে বিদ্রোহীরা যদিও ধর্মকে উৎখাত করার ব্রত নিয়েই জয়ের পথে এগিয়ে চলছিল তবুও তারা এ চিন্তা করেই এ আপোষ সম্মত হল যে, পার্থিব জীবনের কোন ক্ষেত্রেই যদি ধর্ম ও গীর্জা কোন প্রাধান্য না পায় তাহলে বিষদাঁতহীন এ সাপকে ভয় করার কোন কারণ নেই। তাই তারা চার্চকে ধর্মীয় ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে প্রস্তুত হল । রাষ্ট্র পরিচালকদের চার্চের নিকট শপথ গ্রহণ করায়ও ধর্মাদ্রোহীদের আপত্তি হল না। ক্ষমতাচ্যুত পাদ্রীদের এ অসহায় অবস্থায় এটুকু অপার্থিব অথচ মূল্যহীন ঘুষ দিতে তারা কার্পণ্য করল না।আর এভাবেই উৎপত্তি হল ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদের।আমার প্রশ্ন হল আমরা মুসলিমরা তো বিশ্বাস করি ইসলাম ই একমাত্র সত্য ধর্ম নাকি?তাহলে কেন আমরা এ খ্রীষ্টান পাদ্রীদের স্বেচ্ছাচারিতার ফলে উৎপাদিত মতবাদকে আমরা নিজেদের জীবনে গ্রহন করব?যেখানে আমরা জানি এ খ্রীষ্টান ধর্মটাই সঠিক নয়।তাহলে আমরা কি এ প্রশ্ন করতে পারিনা যে যারা এই রকম একটা ভ্রান্ত মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাদের সত্যিকারের উদ্দেশ্য কি??????????একজন মুসলিম বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন রেখে গেলাম।।।
বিষয়: বিবিধ
১৬৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন