আমার মাতৃভূমি কি আজ বধ্যভূমি
লিখেছেন লিখেছেন দিকভ্রান্ত নাবিক ০৫ মার্চ, ২০১৩, ০২:০৪:১৫ রাত
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে সারাদেশের মানুষ এখন জিম্মি। দেশব্যাপী গণহত্যা, গণমামলা ও গণগ্রেফতার চলছেই। গতকালও গণহত্যার মিছিলে যুক্ত হয়েছে চারটি লাশ। এ নিয়ে পাঁচদিনে ৯৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ, বিজিবি ও শাসক দলের হাতে এভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে মানুষ যখন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে, তখনই বিক্ষোভ দমনে নির্যাতনের নানা হাতিয়ার প্রয়োগ করা হচ্ছে তাদের ওপর।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের নামে জেলা-উপজেলায় প্রতিনিয়ত জারি হচ্ছে ১৪৪ ধারা। বাড়ছে গণহারে আসামি ও অজ্ঞাত আসামির নামে মামলার সংখ্যা। চলছে গণহারে গ্রেফতার ও গ্রেফতার বাণিজ্য। একেকটি মামলায় আসামি করা হচ্ছে হাজার হাজার জনকে। এসব মামলায় আসামি গ্রেফতারের নামে পুলিশ ব্লকরেইড ও চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে। রাস্তাঘাট, হাটবাজার, বাসাবাড়ি থেকে নিরীহ লোকজনকে ধরে নিয়ে জামিন অযোগ্য ধারার এসব মামলায় চালান দিচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চলছে গ্রেফতার বাণিজ্য। এমনকি গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহত মুমূর্ষু রোগীদেরও হাসপাতাল থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। গত কয়েক দিনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সচেতন নাগরিকরা বলছেন, সরকার দেশজুড়ে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে দাঙ্গা-হাঙ্গামা নিয়ন্ত্রণের নামে অংশ নিচ্ছে সরকারি দল আশ্রিত মাস্তান ও ক্যাডাররা। ফলে দেশজুড়ে ভয়ানক গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই আগুনে পুড়ছে বাড়িঘর, অফিস আদালত, ব্যাংক বীমা, সরকারি বেসরকারি সম্পদ। চলছে প্রাণ ও সম্পদের হানি।
গতকাল সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বিজিবির গুলিতে দুই সহোদরসহ তিনজন ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় এক স্কুলছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ঢাকায় কমলাপুরে পুলিশের গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গেছে এক স্কুলছাত্র।
এর প্রতিবাদে একটি ট্রেনে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এছাড়া রোববার নিহত ২৫ জনের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এসব জানাজায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। কোনো কোনো এলাকায় জানাজা নামাজ বিক্ষোভে রূপ নেয়।
গত বৃহস্পতিবার আল্লামা সাঈদীর ফাঁসির আদেশের পরপরই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে রাস্তায় নেমে আসে লাখ লাখ মানুষ। তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুলিশের পাশাপাশি সারাদেশে মোতায়েন করা হয় র্যাব, দাঙ্গা পুলিশ ও বিজিবিসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের। জনতার বিক্ষোভ দমনে সরকার চলে যায় হার্ডলাইনে। জনতার মিছিলে চলতে থাকে গুলি, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ। এতে প্রাণহানির সংখ্যাও দিনে দিনে বাড়তে থাকে। প্রতিবাদী মানুষ হয়ে ওঠে আরও ক্ষুব্ধ বিক্ষুব্ধ। দেশের বিভিন্ন স্থনে আক্রান্ত হয় থানা, পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি দফতর। অবরোধ করা হয় সড়ক-মহাসড়ক। ভাংচুর অগ্নিসংযোগ চলতে থাকে বাস ট্রাক কভার্ডভ্যান, পিকআপ রেলগাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহন, এমনকি বাসাবাড়িতেও। উপড়ে ফেলা হয় রেললাইন ও সেতু। খোয়া যায় পুলিশের অস্ত্র। জনতার রোষানলে প্রাণহানি হয়েছে কয়েকজন পুলিশ সদস্যেরও। এসব ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় পুলিশ কিংবা সরকারি দলের নেতাকর্মী বাদী হয়ে মামলা করেন। একেকটি মামলায় আসামি তালিকা বিশাল। গত পাঁচ দিনের বিক্ষোভে কত মামলা হয়েছে, এসব মামলায় কত লাখ জনতাকে আসামি করা হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। আমার দেশ প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে দেখা গেছে, এসব মামলায় কমপক্ষে ১০ লাখেরও বেশি জ্ঞাত-অজ্ঞাত জনতাকে আসামি করা হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। ঢাকায় বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলি ও লাঠিচার্জের ঘটনায় উল্টো বিএনপির শীর্ষস্থানীয় ৩০ থেকে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে পল্টন, শাহজাহানপুর ও রমনা থানায় দায়ের করা পাঁচ মামলায় আসামি করা হয়েছে পাঁচ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে।
সাঈদীর রায়-পরবর্তী ঘটনায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানায় পিটিয়ে হত্যা, লুটতরাজ, সরকারি কর্তব্যে বাধা দেয়া, রেললাইন উপড়ানো, পুলিশ ফাঁসি ভাংচুরসহ জামিন-অযোগ্য বিভিন্ন অভিযোগ এনে তিনটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় দুই শতাধিক এজহারনামীও অজ্ঞাত ৩০ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি থানায় পৃথক দুই মামলায় ২১ ও ১৩৬ এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১১ হাজার ব্যক্তিকে। বগুড়ায় রোববারের হরতাল চলাকালে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, ভাংচুর ও হত্যার ঘটনায় পৃথক আটটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বেশ ক’জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ মোট পাঁচ হাজার অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার ঝিনাইদহের কোর্ট চাঁদপুর ও মহেশপুরে পুলিশের ওপর হামলা, অস্ত্র লুট ও সহিংসতার ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের পাঁচ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পৃথক তিন মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় দায়ের করা ১৫ মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৫ হাজার ব্যক্তিকে। রাজশাহীর গোদাগাড়িতে পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে রোববার দুই ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কর্তব্যে বাধা দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় আসামি করা হয়েছে চার হাজার ব্যক্তিকে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার জনতার সঙ্গে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ও র্যাব বাদী হয়ে আট হাজার জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী ও তাওহিদি জনতাকে আসামি করে দুটি মামলা করেছে।
এভাবেই দেশের যেখানেই সংঘর্ষ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়েছে, সেখানেই হাজার হাজার জনতাকে আসামি করে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা হয়েছে। আর এসব মামলার আসামি গ্রেফতারের নামে পুলিশ চালাচ্ছে চিরুনি অভিযান। গণহারে চলছে গ্রেফতার ও গ্রেফতার বাণিজ্য। ফলে বিরোধীদলীয় বহু নেতাকর্মী এখন ঘরছাড়া। আক্রান্ত এলাকাগুলোয় গ্রামের পর গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে বলে আমার দেশ-এর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
সাতক্ষীরার ২ সহোদরসহ নিহত ৩ : সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ওফাপুর এলাকায় পিকেটিংয়ের সময় পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে জামায়াত কর্মী দুই সহোদরসহ তিনজন নিহত হয়েছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে আরও সাতজন। নিহতরা হলো কলারোয়া উপজেলার কামারালি গ্রামের মৃত আবদুর রহিমের ছেলে আরিফ বিল্লাহ (৩০) ও রুহুল আমিন (২৮) এবং উপাপুর গ্রামের মৃত আবদুর রহিমের ছেলে শামসুর রহমান (৪০)। এ নিয়ে গত কয়েকদিনে সাতক্ষীরায় ১৮ জন নিহত হলো। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় কলারোয়া উপজেলার ওফাপুরের কেশবপুর সড়কের ওপর এ ঘটনা ঘটে। হরতালের সমর্থনে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় কাঠের গুঁড়ি ও বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে এবং রাস্তা কেটে পিকেটিং করেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও সাঈদীভক্তরা। এতে সাতক্ষীরার সঙ্গে সব জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে পুলিশ, বিজিবি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পিকেটারদের নির্বিচারে গুলি করলে ওই দুই সহোদর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। শহরে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করেই গতকাল সাঈদীভক্ত নারী-পুরুষরা মিছিল করছে। এদিকে জেলার বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে দামি জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যাচ্ছে সরকার সমর্থকরা।
উল্লাপাড়ায় স্কুলছাত্র নিহত : সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় পূর্বদেলুয়ায় জামায়াত-শিবির ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে শিবির কর্মী স্কুলছাত্র মাহফুজুল্লাহ নিহত হয়েছে। সে স্থানীয় পোলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র। এ সময় ৫ জন গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ ২৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের উল্লাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সকালে হরতাল সমর্থকরা বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্ব দেলোয়ায় গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করার সময় পুলিশ বাধা দিলে এ সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশের রাবার বুলেট ও টিয়ারশেলে ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়। আহতদের হাসপাতালে নেয়ার পথে মাহফুজুল্লাহ মারা যায়। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাঐতারায় একটি বেইলি ব্রিজের পাটাতন তুলে ফেলে হরতাল সমর্থকরা বিক্ষোভ করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চালিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
বগুড়ায় ৮ মামলায় আসামি ৫ সহস্রাধিক, ১৪৪ ধারা জারি : গত দু’দিনের সংঘর্ষে বগুড়ায় পৃথক ৮ মামলায় ৫ সহস্রাধিক মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের দফায় দফায় সংঘর্ষে গতকালও সাংবাদিকসহ অর্ধশত জন আহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে একের অধিক লোকজন দেখামাত্র সহস্রাধিক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেছে।
গতকাল সকাল থেকে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ শহরের সাতমাথায় অবস্থান নেয়। গণজাগরণ মঞ্চ, আওয়ামী লীগ, কমিউনিস্ট, জাসদ, উদীচী ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় রক্ষার্থে তারা নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে। সকাল ৭টার দিকে হরতালের সমর্থনে সরকারি আযিযুল হক কলেজের সামনের রাস্তায় শিবির কর্মীরা টায়ারে আগুন দিয়ে মিছিল করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ পিছু হটে আবার গুলি করতে করতে সেখানে প্রবেশ করে। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা এলাকার বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও বাসায় ঢুকে লোকজনকে টেনেহেঁছড়ে বের করে আনে। তারা কমপক্ষে ১৫ জনকে আটক করে নিয়ে যায়। ফুলবাড়ী এলাকায় পুলিশ পিকেটার সন্দেহে ২ জনকে আটক করেছে। পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা বলবত থাকা সত্ত্বেও গতকাল সকালে শহরের দ্বিতীয় বাইপাস সড়কের নিশ্চিন্তপুর এলাকায় বিপুল সংখ্যক মহিলা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে। এছাড়া সাবগ্রাম এলাকায় হরতালের সমর্থনে জামায়াত-শিবির কর্মীরা মিছিল করেছে। তারা রাস্তার ধারের গাছ কেটে রাস্তা অবরোধ করে। বেলা ১১টায় শহরতলীর পালশায় হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয় দৈনিক সাতমাথা পত্রিকার ফটো সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম সিরাজকে মারপিট ও তার মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম জানান, রোববার পুলিশের গুলিতে নিহত টিটুর জানাজা শেষে লোকজনের ওপর পুলিশ অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে। সাবগ্রামে উপড়ে ফেলা রেললাইন মেরামত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এ সময় আহত হয়েছে ১০ জন। অনির্দিষ্টকালের জন্য জারি করা ১৪৪ ধারার কারণে শহর হয়ে পড়ে জনশূন্য।
বগুড়ায় রোববারের হরতাল চলাকালে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, ভাংচুর ও হত্যার ঘটনায় পৃথক ৮টি মামলা মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ, নিহতের স্বজন এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এসব মামলা করা হয়। এসব মামলায় জামায়াত-শিবিরের বেশ ক’জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ মোট ৫ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। বগুড়া সদর থানার ওসি সৈয়দ শহীদ আলম জানান, শহরের শেরপুর রোডের এসএ পরিবহন ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ম্যানেজার হুমায়ন কবির বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। ২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি দেখিয়ে ১ হাজার ৬শ’ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া ফুলবাড়ি, উপশহর ও নারুলী পুলিশ ফাঁড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও দুটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। মোকামতলা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় এসআই সানোয়ার হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ৫শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় ১ হাজার জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বগুড়া সদরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় নিহত বাদলের আত্মীয় শহরের জয়পুরপাড়ার মামুনুর রশিদ, আলমগীর মারা যাওয়ার ঘটনায় তার বাবা আনছার আলী ও টিটু মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা আলম বাদী হয়ে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেছেন। এসব মামলায় আসামি ৪৫০ জন। সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের বাসায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ওই বাসার কেয়ারটেকার মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল। বাদী দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেছেন। এ নিয়ে রোববারের ঘটনায় এ পর্যন্ত বগুড়া জেলায় মামলা হলো ৮টি। দুপচাঁচিয়াতেও ১৪৪ ধারা অব্যাহত রয়েছে। হরতাল সমর্থকরা সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এখানেও পুলিশের সঙ্গে হরতাল সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। সোনাতলায় আইনশৃৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদ ভবন এখন শ্মশানে পরিণত হয়েছে। গত ৩ মার্চ থেকে নন্দীগ্রাম পৌর এলাকা, রনবাঘা, কুন্দার হাট এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। গাবতলী থানার ওসি আলী আহম্মেদ হাশমী এবং দুপচাঁচিয়া থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, সোমবার সকাল ৭টা থেকে পৌর এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। শিবগঞ্জ থানার ওসি ফজলুল করিম জানান, শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর, মোকামতলা ও দেউলী ইউনিয়নে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ ১৪৪ ধারা অব্যাহত থাকবে।
বগুড়ায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করায় বগুড়াবাসীকে শহর জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক অভিনন্দন জানিয়ে গতকাল এক বিবৃতিতে বগুড়ার আপামর সব জনতাকে মাওলানা সাইদীসহ সব জাতীয় নেতৃত্বের মুক্তির দাবিতে আহূত টানা ৪৮ ঘণ্টা হরতাল পালন করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বগুড়ার জনগণ ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে গত দু’দিনের হরতাল পালনে স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা করেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রেলের স্লিপারে আগুন, ভাংচুর : গতকাল সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে হরতাল সমর্থকরা কমপক্ষে ২০টি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। হরতাল সমর্থকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট রেলপথের শহরের নিয়াজ মোহাম্মদ হাই স্কুলের পেছনে রেললাইনের স্লিপারে আগুন দেয়। এতে কয়েকটি স্লিপার আগুনে পুড়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভায়। এর পরই শহরের টিএ রোড, কলেজ রোডসহ বেশ কয়েকটি স্থানে কমপক্ষে ২০টি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় হরতাল সমর্থকরা। এ সময় ২০টি অটোরিকশায় ভাংচুর চালানো হয়।
জয়পুরহাটে দুই মামলা আসামি ১০ হাজার : রোববারের হরতালে পুলিশ-জামায়াত শিবিরের সংঘর্ষ ঘটনায় সাড়ে ১০ হাজার জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। জয়পুরহাট ও পাঁচবিবি থানায় দায়ের করা দুটি পৃথক মামলায় তাদের আসামি করা হয়। জয়পুরহাট সদর থানায় ২১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত সাত থেকে আট হাজার জনকে এবং পাঁচবিবি থানায় ১৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দুই থেকে আড়াই হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। নিহতদের জানাজা পাঁচবিবির শালাইপুরে অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকেই সেখানে হাজার হাজার সাঈদীভক্ত মানুষ জড়ো হতে থাকে। তাদের গগনবিদারী কান্নার রোল যেন আকাশ-বাতাসকে প্রকম্পিত করতে থাকে। জানাজায় বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপি সভাপতি মোজাহার আলী প্রধান এমপি, জেলা জামায়াতের আমির ডা. ফজলুর রহমান সাঈদ, পাঁচবিবি বিএনপি সভাপতি আবদুল গফুর মণ্ডল, সম্পাদক আশরাফুল আলম ডালিম প্রমুখ নেতা। এদিকে জেলার সর্বত্র টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। জয়পুরহাট ও পাঁচবিবিতে ১৪৪ ধারা বলবত্ রয়েছে। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে দেশের চলমান রাজনৈতিক ঘটনার জের ধরে শহরসহ গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ছে সহিংসতা। এর ধারাবাহিকতায় জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়ন সদরে জামায়াত-আ.লীগ ও বিএনপির ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ মাত্রই ইউনিয়ন ভবনে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে জামায়াত এবং বিএনপি সমর্থকরা। স্থানীয় আ.লীগ নেতাকর্মী-সমর্থকদের চার-পাঁচটি দোকানপাটও ভাংচুর করে তারা।
কালাই থানার অফিসার ইনচার্জ তোরিকুল ইসলাম জানান, গতকাল মাত্রাইবাজারে হরতালবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে কয়েকজন আ.লীগ কর্মী-সমর্থক জামায়াত ও বিএনপির কর্মীদের লাঞ্ছিত করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলকারীরা শিবিরের আবু তাহের নামে এক কর্মীকে মারধর করে এবং ইউনিয়ন বিএনপি অফিসে ভাংচুরের চেষ্টা করে। খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে ইউনিয়ন জামায়াত ও বিএনপির নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে মাত্রাইবাজারে উপস্থিত হয়ে আ.লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি চড়াও হয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। হামলার সময় জামায়াত-শিবির ও বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা মাত্রাই বাজারে অবস্থিত আ.লীগের নেতাকর্মীদের দোকানপাট ও ইউনিয়ন পরিষদের সামনে রাখা একটি মোটরসাইকেল ও তিনটি বাইসাইকেল ভাংচুর করে ও অগ্নিসংযোগ ঘটায়। আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। সদরের দুর্গাদহ বাজারে হরতালবিরোধী মিছিল বের করলে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি যৌথভাবে তা পণ্ড করে দেয়।
গোদাগাড়ীতে দুই মামলায় আসামি চার হাজার : হরতালের প্রথম দিনে রোববার রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পুলিশের সঙ্গে হরতাল সমর্থকদের সংঘর্ষ ও দুই জামায়াত-শিবির কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও দু’জন হত্যার অভিযোগ এনে পৃথক দুই মামলায় চার হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করেছে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ। গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অহিদুল ইসলাম জানান, রোববার গোদাগাড়ীর ডাইংপাড়া, মহিশালবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের ওপর দফায় দফায় হামলা, সরকারি কাজে বাধাদান এবং দু’জন হত্যার অভিযোগে এ দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গোদাগাড়ী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান বাদী হয়ে গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র ও জামায়াত নেতা আমিনুল ইসলামসহ ৩৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আর দেড় থেকে দুই হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া একই ঘটনায় রোববার রাতে গোদাগাড়ী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূরুজ্জামান বাদী হয়ে আরও একটি মামলা করেছেন। ওই মামলাতেও গোদাগাড়ী পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি আমিনুল ইসলামসহ ৩৪ এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাত আরও দেড় থেকে দুই হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। পৃথক এ মামলায় এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি। ওসি অহিদুল ইসলাম আরও জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় জারি করা অনির্দিষ্টকালের ১৪৪ ধারা এখনও বলবত্ রয়েছে।
মামলার পর থেকে গ্রেফতার এড়াতে ওই এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। পুলিশ র্যাবের উপস্থিতিতে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রোববার বিকাল পর্যন্ত ১৪৪ ধারা পৌর এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকলেও সন্ধ্যার পর মাইকিং করে গোটা উপজেলায় বলবত্ করার ঘোষণা দেয়া হয়।
নীলফামারীতে ঝাড়ু মিছিল : জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মুক্তি দাবিতে নীলফামারীতে ঝাড়ু মিছিল করেছে মহিলারা। গতকাল সকালে জেলার সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের মোলের ডাঙ্গা থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ইটাখোলা চৌধুরী বাজারে এসে শেষ হয়। মিছিলে বিপুলসংখ্যক বিভিন্ন পেশার মহিলারা অংশ নেয়। এছাড়া বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির।
সিরাজগঞ্জে বিএনপির মিছিল-সমাবেশ : আজকের হরতালের সমর্থনে গতকাল দুপুরে সিরাজগঞ্জে জেলা বিএনপি সমাবেশ ও শহরে প্রচার মিছিল করেছে। স্থানীয় ভাসানী মিলনায়তন চত্বরে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান লেবুর সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট মোকাদ্দেছ আলী, সহ-সভাপতি ফখরুল ইসলাম তনু প্র্রমুখ। পরে বিএনপির ডাকা আজকের হরতালের সমর্থনে একটি বিশাল প্রচার মিছিল বের করা হয়।
ঝিনাইদহে সড়ক অবরোধ : ঝিনাইদহে গতকাল সকাল থেকে হরতালকারী ঝিনাইদহ-যশোর সড়কের তেঁতুলতলা ও বিষয়খালী, ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের নগরবাথান, হলিধানী, ডাকবাংলো ও সরোজগঞ্জে এবং কালীগঞ্জ-কোটচাঁদপুর সড়কের লাউতলা নামক স্থানে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। সড়ক অবরোধকারীরা লাঠিসোটা নিয়ে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ মিছিল করে।
বরিশালে আহত ১৭ : সাঈদী মুক্তি পরিষদের সঙ্গে গতকাল সকালে নগরীর বাঘিয়া এলাকায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ ১৭ জন আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাংচুর ছাড়াও ছাত্রলীগ-যুবলীগের ২টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হরতাল সমর্থকদের বেধড়ক মারধর ও তাড়া খেয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয় সেলিম নামের এক মিছিলকারীকে।
লক্ষ্মীপুরে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ, আহত ১৫ : গতকাল সকাল ১১টায় লক্ষ্মীপুর শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় হরতাল সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলা, বাড়িঘর ভাংচুর, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দু’পক্ষের অন্তত মহিলা শিশুসহ ১৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে যুবলীগকর্মী মাসুম ও মিন্টুকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল এবং জামায়াত ও শিবিরকর্মী আজাদ হোসেন, রাকিব, সালাউদ্দিন, রাবেয়া, তুষার, নিরবসহ ১২ জনকে স্থানীয় প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
কালাইয়ে আহত ১৫ : জয়পুরহাটের কালাইয়ে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল শেষে শিবির কর্মীকে মারধর ও বিএনপি কার্যালয় ভাংচুরের জেরে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা মাত্রাই বাজারে অবস্থিত আ.লীগের নেতাকর্মীদের দোকানপাট ও ইউনিয়ন পরিষদের সামনে রাখা একটি মোটরসাইকেল ও তিনটি বাইসাইকেল ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
খুলনায় অবরোধ ভাংচুর : গতকাল হরতালে খুলনার চুকনগর এলাকার দেয়াড়াতলা থেকে ১৮ মাইল পর্যন্ত গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে হরতাল সমর্থকরা। রূপসা উপজেলার কুদির বটতলা এলাকায় খুলনা-মংলা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। তেরখাদা উপজেলার নেবুদিয়া বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও খুলনা-তেরখাদা সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর চালায় হরতাল সমর্থকরা। পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে সুজন ও রাশেদ নামের দুই শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করে ব্যাপক নির্যাতন করে।
ফুলতলায় আসামি ৯৫০ : খুলনার ফুলতলায় পুলিশ-ছাত্রশিবির সংঘর্ষের ঘটনায় ৫০ জনের নাম উল্লেখসহ ৯৫০ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ফুলতলা থানার এসআই উজ্জ্বল বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ ১২ জামায়াত-শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল হরতাল চলাকালে ফুলতলা উপজেলার যুগ্নিপাশা থেকে ছাত্রশিবির মিছিলে পুলিশের বাধা দেয়ায় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে ফুলতলা থানার ওসি, এসআই, কনস্টেবলসহ শিবিরের ২০ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়।
দৌলতপুরে ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা : খুলনার দৌলতপুরে ২০টি বেবিট্যাক্সি ভাংচুরের ঘটনায় দৌলতপুর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনকে আসামি করে দৌলতপুর খুলনা বেবিট্যাক্সি ড্রাইভার্স ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক মো. মনির হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। ভাংচুরে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
বাঁশখালীতে ২ মামলায় ৮ হাজার আসামি : চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার সাঈদী সমর্থকদের সঙ্গে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সংঘর্েষর ঘটনায় পুলিশ ও র্যাব বাদী হয়ে ৮ হাজার জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী ও তৌহিদি জনতাকে আসামি করে ২টি মামলা করেছে। অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও জনৈক দয়াল হরিদাশকে হত্যার অভিযোগে আরও তিনটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। এতে সাধারণ ও নীরহ লোকজনদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুলিশি গ্রেফতার এড়াতে সন্ধ্যা নামলেই কয়েকটি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়ছে।
সীতাকুণ্ডে গুলিবিদ্ধ ২ : সীতাকুণ্ডে গতকাল সাঈদীকে নিয়ে কটূক্তির জেরে জামায়াত-শিবির ও যুবলীগ কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ২ শিবিরকর্মী গুলিবৃদ্ধসহ উভয়পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ আনোয়ার ও রেজাউল করিমকে হাসপাতারে ভর্তি করা হয়েছে। আরও কয়েকটি স্থানে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
ভুয়াপুরে বিএনপি কার্যালয় ভাংচুর : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে হরতালের সমর্থনে বিএনপির মিছিলে হামলা, স্থানীয় উপজেলা বিএনপি অফিস ভাংচুর ও এক সাংবাদিকের মোটরসাইকেলসহ ৮টি মোটরসাইকেলে ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থাকা দৈনিক কালের কণ্ঠের স্থানীয় প্রতিনিধি মোটরসাইকেলসহ ৮টি মোটরসাইকেল ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
বিষয়: রাজনীতি
১৩৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন