"আপনারা ঘৃণা করুণ আমার মতো অধমকে”

লিখেছেন লিখেছেন রক্তাভ সকাল ০১ মার্চ, ২০১৩, ১২:১৮:২৭ দুপুর

যদি স্মৃতিভ্রমাক্রান্ত না হই তাহলে সেটা হবে ১৯৯৭ সালের ২৭ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া ফুটবল মাঠে আল্লামা দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদী সাহেবের প্রোগ্রাম, আর আমি এক খুবই সাধারন ছেলে হিসেবে গেছি ওখানে কারণ এক বড় ভাইয়ের রিকুয়েস্ট ফেলতে পারিনি। আমি খুব খারাপ ছেলে ছিলাম না কিন্তু নামাজ কালাম ও নিয়মিত পড়তাম না। সাঈদী সাহেব উনার বক্তব্য শুরু করলেন, আমি বক্তব্য শুনছি আর লোকজন দেখছি কারণ আমি ঐ সময় পর্যন্ত সম্ভবত এতো লোকের সমাগম আর কখনও দেখিনি। নামাজের গুরুত্ব শীর্ষক বক্তব্যের মাঝে উনি হঠাৎ বললেন ‘আজ থেকে নামাজ ক্বাযা করবোনা এই প্রতিজ্ঞা কে কে করতে পারবেন, হাত উঠান’।

হাত উঠাতে চাচ্ছিলাম না কিন্তু ঐ বড় ভাইয়ের চেহারা দেখে হাত উঠাতে বাধ্য হয়েছিলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর হাত নামাতে বললে হাত নামালাম সবাই। উনি বলেছিলেন- এখন যদি আপনি নামাজ ক্বাযা করেন তাহলে আপনার নামাজ ক্বাযার সাথে সাথে ওয়াদা ভঙ্গকারী হিসেবে আরও একটি গুনাহ হবে।

সেই থেকে আমার নামাজ ক্বাযার ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া। আর তাইতো বারবার মনে হচ্ছে- আমাকে যিনি এই সুন্দর পথের দিশা দেখতে সাহায্য করলেন সেই মানুষটিকেই ফাঁসীতে ঝুলতে হবে???? আমার মতএরকম লাখ যুবক আজ হৃদয়ে অসহ্য ক্ষত নিয়ে ঘুরছে।

আজ আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের কিছু মানুষ আদর্শের সংগ্রামে পরাজিত হয়ে মিথ্যা কূট বুদ্ধিতে আর গায়ের জোরে সেই মানুষটিকে ফাঁসীর রায় শুনালো; হয়তো খুব দ্রুত কার্যকরও হবে। কিন্তু তার আগেই কি পশুর মত আচরণ করা হল তার সাথে???

এক ভাইয়ের নিজের মুখের কথা-

আজ শুধু চিনে রাখুন। এই অন্তিম মুহূর্তে শুধু জানার জন্য বলছি। আজ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর কিছু বলতে ছেয়েছিলেন মজলুম মাওলানা সাঈদী। কিন্তু ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এ মানুষটিকে তার শেষ কথাটাও বলতে দেয়নি আওয়ামী ক্যাডাররা! আপনারা ঘৃণা করুণ আমার মতো অধমকেও। যে সামনে থেকেও এ অনাচারের প্রতিবাদ করতে পারেনি?

কাঠগড়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মাওলানা বিচারকদের উদ্দেশে কিছু বলতে চাইলে ‘কুত্তার বাচ্চা চুপ, একদম চুপ’ বলে তার দিকে তেড়ে যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আনোয়ার হোসেন। তার সাথে যোগ দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসূফ বাচ্চু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুনতাসির মামুন, প্রসিকিউটর শাহিদুর রহমানসহ ঘাদানিক নেতারা। তারা মারতে উদ্যত হন এ বৃদ্ধ আলেমে দ্বীনকে। ইউসূফ বাচ্চু ও মুনতাসির মামুন ‘তুই রাজাকার চুপ কোন কথা বলবি না চুপ’ ‘রাজাকারের আবার কিসের কথা’ বলে চিল্লাতে থাকে। ‘ঐ রাজাকারের বাচ্চা চুপ কর' বলে বাচ্চু তার দিকে তেড়ে আসে। আমি বাচ্চুর সামনে গিয়ে দাঁড়াই। তার হাত দুটো ধরে রাখি। প্রসিকিউটর শাহিদুর 'ধর ধর' স্লোগান তুলে।

এরপর পুলিশ মাওলানা সাঈদীকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে হাজতখানায় নিয়ে যায়। যেখানে গিয়েই হাত থেকে কোরআন শরীফ রেখে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাঁড়ান মাওলানা। এর আগে ট্রাইব্যুনালে দাঁড়িয়ে তিনি মন্তব্য করেন ‘বিচারকরা নিজেদের শপথের নিকৃষ্ট অপব্যবহার করেছেন’।

গতকাল থেকে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর এক বিখ্যাত সাহাবী হযরত সায়িদ ইবনে আমের (রাঃ) বর্ণিত একটি ঘটনা বারবার মনে ধাক্কা দিচ্ছে। উনি বলছেন- আমি ঢেঁড়া পেটানো শুনে মক্কার তানঈম গোত্র থেকে এসে উপস্থিত হলাম এক বিশাল বধ্যভূমিতে, যেখানে হাজারো লোক উপস্থিত হয়েছে একজন কে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হবে সেই দৃশ্য দেখতে।

তিনি নিজের মুখে বর্ণনা করছেন-

তার ধমনীতে তখন যৌবনের টগবগে রক্ত। মানুষের ভিড় ঠেলে তিনিও চলেছেন সামনের দিকে। একসময় তিনি এসে দাঁড়ালেন কুরাইশদের শীর্ষ নেতা আবু সুফিয়ান আর সাফওয়ান দের পাশাপাশি। কুরাইশদের বন্দিকে তিনি দেখলেন বেড়ি লাগানো অবস্থায়। নারী পুরুষ আবাল বৃদ্ধ বনিতা ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে তাকে মৃত্যুর আঙিনার দিকে। বন্দিকে সংগে নিয়ে অগণিত মানুষ উপস্থিত হল বধ্যভূমিতে। বর্ণনাকারী বলেন- নারী ও শিশুদের চীৎকারের মাঝে তার কানে আসলো বন্দী খুবাইব (রাঃ) এর শান্ত ও দৃঢ় কণ্ঠস্বর। বলছেন- ‘আমাকে শূলীতে চড়াবার পূর্বে তোমরা যদি অনুমতি দাও তাহলে আমি দুই রাকাত নামাজ আদায় করব, অনুমতি পেলেন।

সাদ ইবন আমের দেখলেন- তিনি কাবার দিকে মুখ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। সে নামাজ কতইনা সুন্দর, কতইনা চমৎকার!! তারপর কুরাইশ নেতৃবৃন্দের দিকে ফিরে তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন- ‘আল্লাহর কসম তোমরা যদি মনে না করতে, আমি মরন ভয়ে নামাজ দীর্ঘ করছি তাহলে আমি নামাজ আরও দীর্ঘ করতাম’।

অতঃপর তার গোত্রের লোকেরা জীবিত অবস্থায় খুবাইবের (রাঃ) দেহ থেকে এক এক করে অঙ্গ কেটে ফেলছে.........আর এভাবেই তাকে শহীদ করে দেয়া হল।

বর্ণনাকারী সাদ ইবন আমের বলেন- খুবাইব (রাঃ) কে আমি দুয়া করতে দেখলাম এই বলে ‘আল্লাহুম্মা আহসিহিম আদাদা- ওয়াকতুলহুম বাদাদা ওয়ালা তুগাদির মিনহুম আহাদা।

যার অর্থ হল- ইয়া আল্লাহ, তাদের সংখ্যা তুমি গুনে গুনে রাখ আর এক এক করে হত্যা করো এবং কাউকে তুমি ছেড়ে দিওনা।

এটাই ছিল তার অন্তিম দুয়া...............

বিষয়: বিবিধ

১৩৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File