বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতীয় সেনাবাহিনী : পর্ব ১

লিখেছেন লিখেছেন আফরিন জারিন ইভা ০৬ মার্চ, ২০১৩, ১২:১১:২৫ রাত

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

বাংলাদেশ সেনা বাহিনী, বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর একটি শাখা। এই বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে ডিসেম্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বাঙালি সেনা ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয়। বর্তমানে এই বাহিনীর সামর্থ্য প্রায় ৩০০,০০০ সদস্য।

ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য সেনাবাহিনীর মতো ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর আদলে গঠিত হয়েছে এই বাহিনী সাতটি ডিভিশন নিয়ে। অবশ্য এই বাহিনী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা বাহিনীর কৌশলগত পরিকল্পনা কার্যপ্রণালী, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং নন-কমিশণ্ড অফিসার প্রশিক্ষণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে৷ এটি গোলন্দাজ, সাঁজোয়া ও পদাতিক ইউনিট দ্বারা সজ্জিত ৷

অধিকন্তু এই বাহিনী, শান্তি-রক্ষী বাহিনী হিসাবে তার সামর্থ্য উন্নত করতে উৎসাহী এবং সেই লক্ষে মার্কিন বাহিনীর সাথে একযোগে কাজ করছে ৷

গঠন/প্রতিষ্ঠা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাথমিকভাবে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট-এর বাঙালি সৈন্য ও অফিসার এবং পাকিস্তান সেনা বাহিনীর অন্যান্য অংশ হতে যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন তাদের সমন্বয়ে মুক্তিবাহিনী গঠিত হয়। ১১ এপ্রিল (১৯৭১)বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী(অস্থায়ী) তাজউদ্দীন আহমদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ভাষণ দেন৷ ঐ ভাষণে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবকাঠামো গঠনের কথা উল্লেখ করে এম. এ. জি. ওসমানীকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা দেন৷[১] উল্লেখ্য যে ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারী ও সরকার গঠন করা হয় এবং পরবর্তীকালে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করে। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ এপ্রিল গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার, ওসমানীকে করা হয় মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক। ওসমানীর নির্দেশনা অনুযায়ী সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। প্রতিটি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে এক একজন সেনাবাহিনীর অফিসারকে নিয়োগ দেয়া হয়। বিভিন্ন সেক্টর ও বাহিনীর মাঝে সমন্বয়সাধন করা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ রাখা, অস্ত্রের যোগান নিশ্চিত করা, গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা - প্রভৃতি কাজ সাফল্যের সাথে পালন করেন ওসমানী। ১২ এপ্রিল থেকে এম. এ. জি. ওসমানী মন্ত্রীর সমমর্যাদায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন৷ রণনীতির কৌশল হিসেবে প্রথমেই তিনি সমগ্র বাংলাদেশকে ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনা করে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে নেন এবং বিচক্ষণতার সাথে সেক্টরগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন৷ এই বাহিনীর গেরিলা যুদ্ধের জন্য নিয়জিত অংশকে বলা হতো গণবাহিনী যা সাধারণ জনগণ হতে বাছাইকৃত লোকবল নিয়ে গঠিত হয়। এবং নিয়মিত যুদ্ধের জন্য ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর ইত্যাদি বাহিনীর লোকবল নিয়ে একটি নিয়মিত বাহিনী গোড়ে তোলা হয়। এই নিয়মিত বাহিনীর জন্য তিনটি ব্রিগেড গঠন করা হয়। সেগুলো হল:

জেড ফোর্স - অধিনায়ক ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান এবং এটি গঠিত হয়েছিল ১ম, ৩য় এবং ৮ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই জুলাই।

কে ফোর্স - অধিনায়ক ছিলেন খালেদ মোশাররফ এবং এটি গঠিত হয়েছিল ৪র্থ, ৯ম এবং ১০ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের৩০শে আগস্ট।

এস ফোর্স - অধিনায়ক ছিলেন মেজর শফিউল্লাহ এবং এটি গঠিত হয়েছিল ২য় এবং ১১’শ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে সেপ্টেম্বর।

সেনাপ্রধানগণের তালিকা



১ম

মেজর জেনারেল (লেফট্যানেন্ট কর্নেল থেকে পদন্নতি প্রাপ্ত) এম আবদুর রব – বীর উত্তম, জুলাই ১৯৭১ - এপ্রিল ১৯৭২, (এছাড়া তিনি বাংলাদেশ বাহিনীর সহ সেনাপ্রধান ছিলেন, এখানে উল্লেখ্য যে বাংলাদেশ সামরিকবাহিনী এবং মুক্তি বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন এম এ জি ওসমানি)

বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর প্রথম চিফ অফ আর্মি স্টাফ

২য়

মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ – বীর উত্তম এপ্রিল ১৯৭২ - আগস্ট ১৯৭৫, (২য় আর্মি চিফ)

৩য়

মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান – বীর উত্তম জুলাই ১৯৭৫ - ১৯৭৭

৪র্থ

লেফট্যানেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান – বীর উত্তম জানুয়ারী ১৯৭৭- ডিসেম্বর ১৯৭৭

৫ম

লেফট্যানেন্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ডিসেম্বর ১৯৭৮ - আগস্ট ১৯৮৬‌

৬ষ্ঠ

লেফট্যানেন্ট জেনারেল আতিকুর রহমান ১ সেপ্টেম্বর ১৯৮৬ - আগস্ট ১৯৯০

৭ম

লেফট্যানেন্ট জেনারেল নুরুদ্দিন খান নভেম্বর ১৯৯০ - জুন ১৯৯৪

৮ম

লেফট্যানেন্ট জেনারেল আবু সালেহ মোহম্মদ নাসিম – বীর বিক্রম জুন ১৯৯৪ - জুন ১৯৯৬

৯ম

লেফট্যানেন্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান - জুন ১৯৯৬ - ডিসেম্বর ১৯৯৭

১০ম

লেফট্যানেন্ট জেনারেল (পরবর্তীতে জেনারেল) মোস্তাফিজুর রহমান - বীর প্রতীক - ২৪ ডিসেম্বর ১৯৯৭ থেকে ২৩ ডিসেম্বর ২০০০

১১তম

লেফট্যানেন্ট জেনারেল এম হারুন-অর-রশিদ ২৪ ডিসেম্বর ২০০০ থেকে ১৬ জুন ২০০২

১২তম

লেফট্যানেন্ট জেনারেল হাসান মাসুদ চৌধুরী - ১৬ জুন ২০০২ থেকে ১৫ জুন ২০০৫

১৩ তম

জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ ১৫ জুন ২০০৫ থেকে ১৫ জুন ২০০৯

১৪ তম

জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল মুবীন ১৫ জুন ২০০৯ থেকে ২৫ জুন ২০১২

১৫ তম

জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া ২৫ জুন ২০১২ থেকে বর্তমান

পদবিন্যাস

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদবিন্যাস কমন ওয়েলথ দেশসমূহের গঠন অনুযায়ি সাজানো। পদবিন্যাসটি নিচে উল্লেখ করা হল:

অফিসারগণ



ফিল্ড মার্শাল

জেনারেল

লেফটেনেন্ট জেনারেল

মেজর জেনারেল

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (ভূতপূর্ব ব্রিগেডিয়ার)

কর্নেল

লেফটেনেন্ট কর্নেল

মেজর

ক্যাপ্টেন

লেফটেনেন্ট

সেকেন্ড লেফটেনেন্ট

বিষয়: বিবিধ

২৭৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File