এইবার নাকে সরিষার তৈল দিয়ে ঘুমাও!!!
লিখেছেন লিখেছেন সাইদ ২০ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৭:৪০:৪৩ সকাল
করিম মিয়া বৃদ্ধ মানুষ।বয়স ৮০ বছর পার হয়ে গেছে।সারাদিন নাতি নাতিনীদের সাথে গল্প,নামাজ, আল্লাহর নাম জিকির করে তার ভালো ভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিলো।কিন্তু প্রতি পাঁচ বছর পরপর ভোটের সময় তাকে খুব অস্বস্তিতে পড়তে হয়।ভোটের দিনগুলোতে প্রতিদিনই কেউ না কেউ বাসায় আসে ভোটের জন্য দোয়া নিতে।সমাজের সন্মানিত সব মানুষেরা এসে যখন সালাম করে তখন ভালোই লাগে। কিন্তু পরক্ষণে তার মনটা খুব খারাপ লাগে।সবার অনুরোধ যদি সে রক্ষা করতে পারতো।ভোট চাওয়ার সময় এইসব লোকগুলোর মুখের দিকে তাকালে করিম মিয়ার খুব করুনা হয়।আহা রে এই অল্প বয়সেও এদের মুখের দিকে চাওয়া যায়না।দেশের জনগনের সেবা করার জন্য এরা কিনা অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। তাই সরকারের উপর করিম মিয়ার অভিমান।কেনো তার একটা মাত্র ভোট।একটা মাত্র ভোট দিয়ে একজনকে খুশী করা যায় কিন্তু সবাইকে তো আর খুশী করা যায়না।তার খুব ইচ্ছা হয় সবাইকেই একটা করে ভোট দিতে।কিন্তু নাতিরা তাকে বুঝিয়েছে একটা ভোট সবাইকে দিলে নাকি সেই ভোট নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ইচ্ছা থাকেলও একজনের বেশি ভোট দিতে পারেনা।
করিম মিয়া তাই ভাবে সবার মন রক্ষা করতে না পারলে সে ভোট দিতে যাবে না।কিন্তু ভোটের দিন সে তার সিদ্দ্বান্তে অটল থাকতে পারেনা।এই বয়সে হাটার অসুবিধার কথা বললেও গ্রামের যুবক ছেলেরা মানেনা। গ্রামের যুবক ছেলেরা রিক্সা নিয়ে এসে করিম মিয়াকে রিক্সায় করে নিয়ে যায় আবার রিক্সায় করে পৌছে দেয়।পাঁচ বছর পর পর একদিন ভোটের কল্যাণে করিম মিয়ার রিক্সা চড়া হয়।ভোটের দিনের আনন্দঘন পরিবেশ দেখে ভালই লাগে।তার মনে পড়ে আজ থেকে ৪৩ বছর আগের ভোটের দিনের কথা।সেই সময় করিম মিয়া মধ্যবয়সী ছিলো।গ্রামের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করতে করতে শেখ সাহেব কে সবাই ভোট দিয়ে ছিলো।ভোটের স্নৃতি মনে পড়লে ঐ দিনকার কথায় বেশী মনে পড়ে।তারপর মাঝে মাঝে ভোট দিতে গিয়ে দুই-একবার বিব্রত হতেও হয়েছে।একবার ভোটের সেন্টারে গিয়ে দেখে তার ভোট নাকি আগেই দেওয়া হয়ে গেছে।তারপর থেকে ভোট দিতে যেতে আর মন চেতো না।কিন্তু ৯০ সালের পরে আর এই রকম হয়নি।
তবে এখন বয়স হওয়ার কারণে আর ভোট দিতে যেতে তার ইচ্ছা করেনা।তবে গ্রামের যুবক ছেলেদের আগ্রহের কারণে প্রতিবারই তাকে ভোট দিতে যেতে হয়।এবার নাকি ৫ই জানুয়ারী ভোট হবে।করিম মিয়া অপেক্ষায় থাকে সন্মানিত সেইসব মানুষদের জন্য যারা তার কাছে ভোটের জন্য সালাম নিতে আসে।কিন্তু এবার কেউ না আসায় একদিন নাতিকে জিজ্ঞাসা করে এবার যে কেউ ভোটের জন্য সালাম নিতে আসলো না?নাতি দাদাকে বললো "দাদা শেখের বেটি এবার তোমাদের বুড়া মানুষদের জন্য একটা দারুন জিনিস আবিষ্কার করেছে।তোমাদের কাউকে যাতে কষ্ট করে ভোট কেন্দ্রে না যেতে হয় তাই সবার অগ্রিম ভোট নিয়ে নেওয়া হয়েছে।" টিভিতে দেখো নাই প্লট নিয়ে আর কোনো চিন্তা নেই।এবার নাকে সরিষার তৈল দিয়ে ঘুমাও বিজ্ঞাপন।নির্বাচন কমিশন থেকেও একটা বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে টিভিতে "আর কোনো ভোট দেওয়া লাগবে না এবার।আপনারা নাকে সরিষার তৈল দিয়ে ঘুমান।" দাদা নাতিকে বললো এই না হোলো শেখের বেটি।এতদিনে শেখের বেটি আমাদের কষ্টটা বুঝতে পেরেছে।শেখ সাহেব আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।আর শেখের বেটি আমাদের ভোট দেওয়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়েছে।দোকান থেকে খাঁটি একটু সরিষার তৈল নিয়ে আসিস।নাকে দিয়ে একটু ঘুমাবো। নাতি বললো দাদা অবরোধ/হরতালে তো দোকান বন্ধ। সরিষার তৈল পাবো কোথায়?বলিস কি? ভোটও নাই সরিষার তৈলও নাই?
বিষয়: বিবিধ
১৮৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন