মাতালদের সাথে কিছুক্ষণ !!!

লিখেছেন লিখেছেন সাইদ ১৪ নভেম্বর, ২০১৩, ০৬:৪৯:২৫ সকাল

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।আসসালামুআলাইকুম।

দেশে থাকার সময় মাতালদের সম্মন্ধে তেমন ভালো একটা ধারণা ছিলো না।তবে গুরুজনদের বলতে শুনেছি "পাগল আর মাতালদের কাছ থেকে ১০০হাত দুরে থাকতে ".দেশে থাকতে পাগলদের সম্মন্ধে নিজেই ধারনা পেয়েছিলাম।ছোটবেলায় একবার এক পাগলের বাড়ির পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম।হটাৎ করে এক পাগল কোথা থেকে দৌড়ে এসে আমাকে দুই হাত দিয়ে পাজা করে তুলে নিয়ে দিলো ভৌ দৌড়।পাগলের মা ঘটনাটা দেখে ফেলায় সেই যাত্রা রক্ষা পেয়েছিলাম। তারপর একা একা ঐ পথে আর পা মাড়াতাম না।তবে সেই পাগলের চেইন দিয়ে বেঁধে রাখার দৃশ্য মনে হলে খুব কস্ট লাগে।আল্লাহ চাইলে আমি,আপনারাও হতে পারতাম তাদেরই একজন।কতো অকৃতজ্ঞ আমরা!এই দৃশ্যও আমাদেরকে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ করে তোলেনা।

জাপানে আসার ফলে মাতালদের কিছু স্বরূপ দেখার সুযোগ হয়েছে দুই-একবার।এখানে ধর্মীয় কোনো বিধি নিষেধ না থাকায় ২০বছরের উপরের মানুষদের মদ খাওয়ার আইনত অধিকার আছে।মদ খাওয়ার ৮ঘন্টার মধ্যে গাড়ী চালানো দন্ডনীয় অপরাধ বলে জাপানীজরা সাধারনত রাতেই বেশী মদ পান করে।কর্মজীবিদের ছুটির আগের দিনের রাতে মদ খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।টিভিতে একটা প্রোগ্রাম হতো মদ খেয়ে মাতাল হবার পরে কে কিরকম আচরণ করে।মাতাল ব্যক্তিটিকে তার কোনো প্রিয়জনের কাছে টেলিফোনে লাইভ কথা বলতে দিতো।বউ কে মা বলে সন্মোধন, মাকে বউ বলে সন্মোধন ধরনের কথাবার্তা শুনে আমি তো হতবাক হয়ে যেতাম।আর যাইহোক এরা স্বাভাবিক আচরন করার মতো ক্ষমতা ঐ মুহুর্তে রাখেনা।আল্লাহ কেনো যে মদকে হারাম করেছেন তা মাতালদের আলাপ আলোচনা শুনলে আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন পড়েনা।

জাপানে আসার দুই বছরের মাথায় আমরা স্টাডি টুরে গেলাম।আমাদের ক্লাসে আমিই একমাত্র বিদেশী এবং মুসলমান।অর্ধেকেরও বেশী মেয়ে।তখন আমি সাধারনত আর পাঁচ জনের মতো নামে মাত্র মুসলিম ছিলাম।নামে মাত্র মুসলিম হলেও,আলহামদুলিল্লাহ হালাল হারাম খাবারের ব্যাপারে আমি প্রথম থেকেই বেশ সতর্ক ছিলাম।৫-৬জনের জন্য একটা রুম বরাদ্দ ছিলো। রাতের ডিনার শেষে আমরা রুমে বসে গল্প করছিলাম।অন্য রুমের কয়েকজন এসেও আমাদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।একটু রাত বাড়লেই কয়েকজন অনেক খাবার নিয়ে আসলো।তাদের খাবার দেখে আমার বুঝতে আর বাকী রইলো না।আমার জন্য কিছু কোকাকোলা,অরেঞ্জ জুস জাতীয় কিছু কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে এসেছে।এই রকম অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে বুঝে উঠতে পারিনি।সময়ের সাথে সাথে সবার কথা বলার ধরনের পরিবর্তন সহজেই বুঝতে পারলাম।তাদের অত্যন্ত গোপনীয় ব্যক্তিগত আলোচনাও তারা অকপটে বলে যাচ্ছে।শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদেরকেও সমালোচনা করে যাচ্ছে।দিনের বেলায় ক্লাসে তাদের সবাইকে একে অপরের ভালো বন্ধু বলে মনে হলেও অন্যর প্রতি আক্রোশ এই প্রথম বুঝতে পারলাম।সবচাইতে অবাক হলাম একটি মেয়ের কথায়।যাকে দেখে সবসময় শান্ত,ভদ্র বলে মনে করেছি।অথচ তার মুখের কথা আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো না।সে অবলীলায় তার ব্যাক্তিগত কথা বলে যাচ্ছিলো।কোন ছেলে বন্ধু,কোন শিক্ষককের সাথে বিছানায় সে কি আচরণ করেছে তার বর্ণনা।ভবিষ্যতে কাদের সাথে মেলামেশা করার ইচ্ছা সেই পরিকল্পনা।আলোচনা এমন পর্যায়ে যাচ্ছিল যে খুব ভয় পেয়ে গেলাম।এখানেই না কোনো অঘটন ঘটে যায়।নিজের খুব ঘুম আসছে বলে ওদের কাছ থেকে চলে গিয়ে নিজের রুম ছেড়ে অন্য রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।সকালে গতরাতের ঘটনা কয়্কজনকে জিজ্ঞাসা করলাম।কিন্তু গতরাতে মাতাল অবস্থায় কে কি বলেছিলো তার কিছুই তাদের কাছে মনে নেই।তারা যা বলেছিলো তা যদি সবার মনে থাকতো তাহলে তারা কখনোই অনেকের সামনে মুখ দেখাতে পারতোনা।

আজকে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা আগের ঘটনাটি মনে করিয়ে দিলো।ইদানীং কিছু তথাকথিত রাজনীতিবিদ, দেশের কর্ণধারদের কথা বার্তা শুনে মনে হয় আমার সেই জাপানীজ ক্লাসমেটদের মাতাল অবস্থায় কতাবার্তার সাথে তাদের কথাবর্তার খুব একটা অমিল নেই।পার্থক্য এইযে আমার সেই ক্লাসমেটরা মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় মাতলামীর মতো কথাবার্তা বলেছিল।আর এই তথাকথিত রাজনীতিবিদরা সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় তাদের মতো কথাবার্তা বলছে।তানাহলে কি করে তারা "তার বাসায় বিশেষ পানির ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে", "কেয়ামত হলেও নির্বাচন হবে " এই ধরনের কথাবার্তা বলতে পারে?সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় যদি তাদের মুখ থেকে এই ধরনের কথা বার্তা বের হয় তাহলে সত্যি সত্যি যদি তারা মদ খেয়ে মাতাল হোন তখন তাদের আচরণ কি মুখেই সীমাবদ্ধ থাকবে নাকি মুখ থেকে বিস্তৃত হয়ে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়বে?হে আল্লাহ তুমি আমাদের এমন নেতা দাও যাদের কথাতে থাকবে তোমার প্রতি ভালবাসা,মানুষের প্রতি ভালবাসা,দেশের প্রতি ভালবাসা।কোনো হিংসা নই,কোনো বিভেদ নই তাদের মুখে থাকবে মানুষকে কাছে টেনে নেওয়ার আকুল আবেদন।

আল্লাহ হাফেজ

বিষয়: বিবিধ

১৬০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File