মৃত্যর দুয়ার থেকে ফিরে আসা !!!

লিখেছেন লিখেছেন সাইদ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৬:৫০:১৭ সকাল



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।আসসালামুআলাইকুম।

দুনিয়ার প্রতি মোহ মানুষকে মৃত্যর কথা যেমন ভুলিয়ে রাখে ঠিক তেমনি মৃত্য ভয় মানুষকে দুনিয়ার মোহ থেকে দুরে সরিয়ে রাখে।মৃত্যর হাত থেকে কারোর পালাবার ক্ষমতা নেই।মৃত্যর সময় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত।একটুও এদিক-ওদিক হওয়ার সুযোগ নেই।যে নিয়মিত মৃত্যর ভয় করে তারপক্ষে ভুল পথে পরিচালিত হওয়া কঠিন।অতীত স্বরণ করলে হয়তো আমাদের সবার জীবনেই এমন কোনো না কোনো ঘটনা আছে যেখানে আমাদের মৃত্য হলেও হতে পারতো।বিপদ সংকুল ঘটনার সময় আমরা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি কিন্তু ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার পর আমরা খুব সহজেই ভুলে যাই আল্লাহর অসীম রহমতের কথা।জীবনে তিনবার মৃত্যর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি।ঘটনাগুলো যখনই মনে পড়ে তখনই মহান রবের প্রতি কৃতজ্ঞতা ক্রমেই বেড়ে যায়।অতীত আসলে সামনের দিনে সঠিক পথে চলার প্রেরণা দেয়।তাই বারবার ফিরে যেতে মন চায় অতীতের দিনগুলোতে।

আমার দুনিয়াতে আগমনের প্রথম দিন।নানা বাড়ির ঘরের এক কোনায় আমার জন্ম।মায়ের পেট থেকে বের করা হলো একটা গোলাকার পিন্ড।সবাই বাচ্চার সন্ধানে ব্যাস্ত।কিন্তু গোলাকার পিন্ড ছাড়া বাচ্চার কোনো খোজ নেই।গোলাকার পিন্ডটার উপর থেকে সবাই খুচিয়ে খুচিয়ে দেখেও কোনো বাচ্চার সন্ধান কেও পেলোনা।বাচ্চার কোনো কান্নার শব্দ নেই।সবার মুখে হতাশা।দশমাস দশ দিন ধরে এই গোলাকার পিন্ডটা এতদিন পেটের মধ্যে ধরে রাখার যন্ত্রণা এবং হতাশা মাকে পেয়ে বসলো।সবাই আশা ছেড়ে দিয়ে গোলাকার পিন্ডটা ফেলে দেওয়ার জন্য নিয়ে চলে গেলো।আমার মৃত্য তো সেদিনই হয়ে গিয়েছিলো।কিন্তু আল্লহর রহমতে পথিমধ্যে আমি কেঁদে উঠি।সবাই তড়িৎ ফিরে আসে গোলাকার পিন্ডটাকে নিয়ে।আমাকে খুঁজে পেয়ে সবার মুখে আনন্দের হাসি।অথচ কিছুক্ষণ আগে এরাই আমাকে ফেলে আসতে গিয়েছিলো।আল্লহই আমাকে মৃত্যর দুয়ার থেকে সেদিন ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন।

আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি।আমাকে নিয়ে আর কারো কোনো শংকা নাই।এখন আমাকে নিয়ে সবার শুধু স্বপ্ন।আত্বীয় স্বজনের মধ্যে ভালো ছাত্র হওয়াতে আমার প্রতি সবার ছিলো একটা আলাদা ভালবাসা।একদিন নানা বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছি।বিকালের দিকে বাড়ীতে আমরা কয়েকজন ছিলাম শুধু।আমার থেকে দুই বছরের বড় খালা দোতলাতে ছিলেন।মামার চাষাবাদে সাহায্য করার জন্য এক ছেলে আর আমি ছিলাম নিচ তলায়।গ্রিল দিয়ে ঘেরা বারান্দার পাশে দাড়িয়ে আমরা দুইজন গল্প করতে ছিলাম।গল্প শেষে ছেলেটা বারান্দার গ্রিলে হাত দেওয়া মাত্র "ওহ মা গো বাবা গো "বলেই চুপ হয়ে গেলো।গ্রিলে তার দুহাত দিয়ে ধরার দৃশ্য দেখে কিছু একটা মহা বিপদ হয়েছে বুঝতে পারি।আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হয়না।সামনে দেখতে পাই একটা বড় বাশ পড়ে আছে।বাশটার দিকে আমি এগিয়ে যাই।বাশটা তুলে নিয়ে আসি।ছেলেটার পেট এবং গ্রিলের মাঝখানের ফাকা জায়গা দিয়ে বাশটা ঢুকিয়ে গ্রিলের সাথে একপ্রান্ত লাগিয়ে দিই।তারপর উল্টা দিকে সজোরে একটা ধাক্কা দিই।ছেলটা মাটিতে পড়ে যায়।আমি তখন চিৎকার দিয়ে খালাকে ডাকি।পুরো ঘটনাটা ঘটে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডে।আশে-পাশের লোকজন ছুটে আসে।গ্রিলটা টেস্টার দিয়ে চেক করে দেখা হয়।গ্রীলটাতে কারেন্ট প্রবাহিত হচ্ছিলো।সেদিন সবাই আমাকে প্রশংসা করছিলো।কিন্তু আমি যতবারই এই ঘটনাটা ভেবেছি ততবারই কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর খোজার চেষ্টা করেছি।আমি তো জানতাম না যে গ্রীলটাতে কারেন্ট প্রবাহিত হচ্ছিলো।তাই স্বাভাবিক ভাবে ছেলেটার শরীর ধরে টানার কথা ছিলো আমার।চিৎকার করে কারোর সাহায্য চাওয়ার কথা ছিলো।আচ্ছা আমি যদি ছেলেটার শরীর ধরে টানতাম তাহলে কি হতো?আশে পাশে তো আর কেউ ছিলো না।ছেলেটার শরীর ধরে টানলে খুব সম্ভবত দুজনই মৃত্যর কোলে ঢলে পড়তাম।কিন্তু মহান আল্লাহ ইচ্ছায় ঘটনাটা ঘটে এত দ্রুত যার ব্যাখ্যা করা আমার পক্ষে সম্ভব না।আল্লাহ আমাকে শুধু এইবার মৃত্যর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসলেন না আমার মাধ্যমে আরোও একজনকে মৃত্যর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসলেন।সবই আল্লাহর ইচ্ছা।প্রশংসাও সব সেই মহান রবেরই জন্য।

আল্লাহ হাফেজ।

বিষয়: বিবিধ

২৩৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File