প্রবাস জীবনে প্রিয়জনদের সাথে টেলিফোনে কথা বলার অপেক্ষার প্রহর!!!
লিখেছেন লিখেছেন সাইদ ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৩:৫৭:৪২ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।আসসালামুআলাইকুম।
নতুন নতুন টেকনোলোজীর কারণে আজকে অনেকে প্রবাসে পা ফেলতে না ফেলতেই শুনতে পায় প্রিয়জনদের কন্ঠস্বর।যেটা ২০ বছর আগেও অনেকের কাছে ছিলো স্বপ্নের মতো।আগের দিনে কতোজনে প্রবাসে এসে দিনের পর দিন অপেক্ষার প্রহর গুনেছে প্রিয়জনদের সাথে কথা বলার জন্য।কারোর ভাগ্যে জুটেছে সপ্তাহে একবার মাসে একবার।আবার অনেকের হয়তো বছরের পর বছর গড়িয়েছে কিন্তু শোনা হয়নি প্রিয়জনদের কন্ঠস্বর।শোনা হয়নি সন্তানের মুখে"আব্বু" নামের ঐ মধুর ডাক।অনেককে আবার প্রিয়জনের কন্ঠস্বর শোনা ছাড়াই ফিরতে হয়েছে না ফেরার দেশে।মহান আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক শোকরিয়া যে আজকে সবাই চাইলে সহজেই প্রিয়জনদের সাথে কথা বলতে পারে।
ছোটবেলায় গ্রামের অনেককে দেখেছি মালেয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যে যেতে নিজের পরিবারের জন্য একটু উন্নত জীবন যাপনের আশায়।অনেককে খালি হাতে ফিরতে দেখেছি প্রতারিত হয়ে।কেউ কেউ প্রবাস জীবনের অমানুষিক পরিশ্রম সহ্য করতে না পেরে ফিরে আসলেও এদের সংখ্যা হাতে গোনা।নিজের পরিবারের সুখের জন্য রাত দিন অমানুষিক পরিশ্রম সহ্য করে যায় অধিকাংশই।আমার এক দুরসম্পর্কের আত্বীয়ও গিয়েছিলো মালেশিয়াতে তার পরিবার পরিজন ছেড়ে। হটাৎ অসুস্থ হয়ে সুচিকিৎসার অভাবে লাশ হয়ে দুই বছর পর তাকে ফিরতে হলো।মৃত্যর আগে নিজ ছেলেমেয়েদের সাথে দেখা সাক্ষাত তো দুরের কথা একটু কন্ঠস্বরও শোনার সৌভাগ্য তার হয়নি।প্রত্যেকটা মৃত্যই অনেক বেদনাদায়ক।কিন্তু প্রবাস জীবনের এই মৃত্য গুলো যে কতো বেদনাদায়ক তা লেখার ভাষা আমার জানা নেই।
১৫বছর আগে যখন প্রবাসে আসলাম।তখন চিঠিই ছিলো মূলত প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগের ভাষা। দেশের বাড়ীতে যাদের টেলিফোন ছিলো তারা মাঝে মাঝে ফোন করতো।তখন আমরা পাবলিক ফোন বুথ থেকে কার্ড ফোন ব্যবহার করে দেশে ফোন করতাম। আমরা অনেকেই ফোন বুথ এর চারিদিকে গোল হয়ে দাড়িয়ে দেশের কথা শুনতাম।বন্ধুর মা হলেও নিজের মা মনে করে মায়ের কন্ঠস্বর শোনার,বোঝার কি প্রানন্তকর ব্যার্থ প্রচেষ্ঠা।প্রিয়জনদের সাথে দিনের পর দিন কথা বলতে না পারার চাপা কষ্টটাকে বুকের মধ্যে সযত্নে লালন করে রাখতাম।তখন এক হাজার ইয়েনে মাত্র চার মিনিট কথা বলা যেতো।তাই দুই একজনের কথা বলার সুযোগ থাকেলও বেশিক্ষণ কথা বলা আর হয়ে উঠতো না।
একদিন এক পরিচিতের খোঁজ নেওয়ার জন্য তার পাশের বাসায় ফোন করে পরিচিত ব্যক্তিটিকে ডেকে দিতে বললাম।কিছুক্ষণ পর একটি মেয়ের কন্ঠস্বর শুনে আমি হতবাক।যার কন্ঠস্বর শোনার জন্য আমি এতোদিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম সেই কিনা টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে কথা বলতেছে।হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে কি বলতে না কি বলতেই একহাজার ইয়েন এর কার্ড শেষ।বন্ধুরা সব ফোন বুথ এর চারিদেকে গোল হয়ে দাড়িয়ে আছে।এক হাজার ইয়েন এর নোট ছাড়া আবার ফোন কার্ড কেনা যাবেনা। নিজের পকেটে যতগুলো এক হাজার ইয়েন এর নোট ছিলো সব এক সময় শেষ হয়ে গেলো।তখন বন্ধুদেরকে বললাম তাদের পকেট থেকে একহাজার ইয়েন এর নোট গুলো দিতে।আমার অবস্থা দেখে সবাই যেনো একটু ঘোরের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলো।কিন্তু স্বজনদের সাথে সযত্নে জমা রেখে দেওয়া কথাগুলোর মুল্য যে অসীম। আবার কবে মিলবে টেলিফোনের অপর প্রান্তে তাকে। তাইতো মন চায়না টেলিফোন ছাড়তে।পাশের লোকগুলো অনুভুতি বুঝলেও দেশে থাকা প্রিয়জনরা কন্ঠস্বর শুনে বুকের চাপা কষ্টটাকে পুরোপুরি ভাবে কখনই উপলদ্ধী করতে পারেনা।যার কাছে যতগুলো এক হাজার নোট ছিলো সবগুলো দিয়েও যখন আমার কথা বলা শেষ হচ্ছিলো না তখন একজন বললো আরতো এক হাজার এর নোট নাই !!! এক হাজার ইয়েনের নোটের অভাবে আমাকে অগত্য চাপা কষ্টটাকে বুকে রেখেই লাইন কেটে দিতে হলো।সময় এবং বয়স মানুষকে আসলেই অনেক পরিবর্তন করে তোলে।টিন এজ বয়সের কিছু কিছু ঘটনা যেমন বিব্রতকর তেমনি সামনের দিনগুলোতে সঠিক পথে চলার জন্য এক ধরনের টনিক হিসাবেও কাজ করে।
আল্লাহ হাফেজ
বিষয়: বিবিধ
২৭৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন