প্রবাস জীবনে হালাল/হারাম খাবারের বিড়ম্বনা!!!

লিখেছেন লিখেছেন সাইদ ২৭ আগস্ট, ২০১৩, ০২:৩২:৩১ দুপুর



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।আসসালামুআলাইকুম।

দেশে সনাতন ধর্মের এক ছেলেকে প্রাইভেট পড়াতাম। তাদের বাসাতে অনেক সময় খাওয়া দাওয়া করেছি।এক মুহুর্তের জন্য মনে হয়নি যে এই চিকেনটা কি হালাল?জবাই কি তারা নিজেরাই করেছে?৯০% মুসলিম দেশ হওয়াতে কোনো খাবার হারাম হতে পারে তা আসলে মাথাতেই কখনো আসতো না।কিন্তু নন মুসলিম দেশ জাপানে আসার আগে হালাল/হারাম খাবারের ব্যাপারে খুব সতর্ক হয়ে গেলাম।আমি যে তখন খুব একটা ইসলামী মাইন্ডেড ছিলাম তাও না।আর সাধারণ পাঁচটা ছেলের মতোই জীবন যাপন করতাম।কিন্তু কি কারণে হালাল/হারাম খাবারের ব্যাপারে এতো সতর্ক ছিলাম তা আমি নিজেও জানিনা।হয়তো আমার প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমতের কারণেই বেশী সতর্ক থাকতাম।

জাপানে বিভিন্ন ধরনের খাবারের প্যাকেটে জাপানীজে লেখা থাকায় কোন খাবার হালাল আর কোন খাবার হারাম তা বোঝা অনেকের জন্য কষ্টের হয়ে পড়ে। স্বাবাভিক ভাবেই মনে আসে ডিমের পুডিং তো হালাল। ডিমের পুডিং আবার হারাম হতে পারে নাকি? কিন্তু ডিমের পুডিং এর ম্যাটেরিয়ালস গুলো পড়ে দেখলে দেখা যায় পুডিং তৈরী করার সময় শর্টেনিং (ফ্যাট জাতীয়) জাতীয় এক ধরনের হারাম ম্যাটেরিয়ালস ব্যবহার করা হয়েছে।এভাবে জাপানের মার্কেটগুলোতে হালাল খাবারের সংখ্যা আসলেই সীমিত।জাপানীজ পড়তে না পারার কারণে অনেক ধর্মপ্রাণ ভাইকে অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।এমন অনেক ঘটনা আছে।হালাল মনে করে কিনে এনেছে। আমি ম্যাটেরিয়ালস গুলো পড়ে যখন দেখি এটা হারাম তখন বলতে কষ্ট হয়।তারপরও আমাকে বলতে হতো। যেসব মুসলিম ভাই আল্লাহর সব আদেশ/নিষেধ মেনে চলার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলো আলহামদুলিল্লাহ তারা ঠিকই হালাল খাবার বেছে বেছে খাওয়া দাওয়া করছেন।আল্লহর প্রতি ভয়ই তাদের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে।

সবচাইতে অবাক হই যখন দেখি কিছু মুসলিম ভাই এই ব্যাপারটা একেবারে ড্যাম কেয়ার করতে।আরোও বিস্নয় জাগে যখন দেখি দুই-একজন আবার এই হারাম খাবারের প্রতি নিজেদের মন গড়া যুক্তি দিয়ে অন্যদেরকে বিভ্রান্ত করতে।নন মুসলিম দেশে আছি।তাই আল্লাহ সব মাফ করে দিবেন।এমন একটা ভাব দেখান।তারা তো ভুল করছে সেটা স্বীকার না করে তাদের ভুলটাকে অন্যর কাছে জাস্টিফাই করে নিজের মতাদর্শের লোক বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা।

ধার্মিক মা,দুই ভাই,আর এক জাপানীজ বউ মিলে সুন্দর সাজানো গোছানো একটা সংসার।আমার স্ত্রীর সাথে আবার আন্টির বেশ ভালো সম্পর্ক ছিলো।আমরা যতই বিদেশী ভাষায় পারদর্শী হয়না কেনো বাংলা ভাষায় গল্প না করলে যেনো তৃপ্তি মেটেনা।তাই আন্টির সাথে আমর স্ত্রীর প্রায়ই ফোনে কথা হতো।একবার আন্টির সাথে সাক্ষাত করার জন্য তাদের বাসায় গেলাম।আমার স্ত্রীকে দেখে এতো খুশী যে তার অনুভুতিতে বুঝতে পারলাম।আমাদের জন্য নিজেই অনেক বাংলাদেশী রান্না করেছে।বিদেশের মাটিতে যেকোনো বাসাতেই পাওয়া যায় এই আথিতিয়তা।এক ভাইকে দেখলাম গরুর গোশত জাপানীজ স্টাইলে রান্না করছে।গরুর গোশত দেখেই আমি বুঝতে পারলাম এটা জাপানীজ স্টাইলে জবেহ করা গরুর গোশত।জাপানীজ গরুর গোশত গুলো আবার বেশ দামী।স্ত্রীকে ব্যাপারটি বললাম।তাদের আথিতিয়তা দেখে এই গোশত যে হারাম এই ব্যাপারটা বলতে খুব বিব্রতবোধ করলাম। কিন্তু নিজের চোখে দেখে জেনে শুনে কিভাবে হারাম খাই?হারাম কথাটা বলতে গেলে পুরো আনন্দময় পরিবেশটা যে বেশ ভারী হয়ে যাবে তাও উপলদ্ধী করলাম।তাই কথাটা একটু ঘুরিয়ে বললাম।মার্কেটে কি জাপানীজ গরুর হালাল গোশত পাওয়া যায় ভাই?বুদ্ধিমান ভাইটি ঠিকই আমার কথা বুঝলেন।তাদেরকে বললাম আমরা মার্কেটের জাপানীজ গরুর গোশত খাইনা।সবচাইতে কষ্ট হলো আন্টির কথা শুনে।তার কিইবা করার আছে?হালাল হারাম সম্মন্ধে তার তো তেমন কোনো ধারণাও নেই।ছেলেরা যা কিনে নিয়ে আসে তা তিনি হালাল মনে করে খান।

মাঝে মাঝে এখানকার প্রাইমারী/হাইস্কুলে বাংলাদেশের কালচার পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য দাওয়াত পড়তো।একবার এক স্কুলে বাংলাদেশী কারি রান্না করার জন্য অনুরোধ করা হলো।আমি আর আমার এক বন্ধুকে তারা নিমন্ত্রণ করলো।স্কুলের সব ছাত্র ছাত্রীদেরকে বাংলাদেশী চিকেন কারি রান্না করা শেখাতে হবে।রান্নার পর একসাথে সবাই লাঞ্চ।তারপর দেশের কালচার নিয়ে লেকচার।আমার এই বন্ধুটা আবার হালাল/হারাম নিয়ে খুব একটা সতর্ক ছিলো না।স্কুল কর্তপক্ষ সবকিছু ম্যানেজ করবে।সুতরাং জাপানীজ স্টাইলের চিকেন তারা ম্যানেজ করবে এটাই স্বাভাবিক। বন্ধুর সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম সে রান্না করা চিকেন কারি দিয়ে লাঞ্চ করবে।আমরা স্কুলে গেলাম রান্না করলাম।বন্ধুটি তাদের সাথে লাঞ্চ করলো।বন্ধুটির দিকে তাকিয়ে তাদেরকে বলতে পারলাম না যে এই পদ্ধতিতে জবেহ করা চিকেন আমাদের মুসলিমদের জন্য হারাম।আমি রোজায় আছি(এই মিথ্যার আশ্রয় আমাকে নিতে হয়ে ছিল।আল্লাহ যেনো আমাকে ক্ষমা করে দেন) বলে সবিনয়ে লাঞ্চ করা থেকে বিরত থাকলাম।প্রোগাম শেষে প্রিন্সিপালের রুমে বসে গল্প করতে ছিলাম। আমাদেরকে চা দেওয়া হলো।রোজায় না থাকলে যা হয়।আমি চা পান করলাম।প্রিন্সিপাল বললো "রোজায় থেকে কি চা পান করা যায়?" একটা মিথ্যা বলতে গিয়ে দশটা মিথ্যা বলার উপক্রম।একটু মুচকি হেসে বিষয়টা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলাম।

একবার এমনই এক প্রোগ্রামে একজন মুসলিম ভাই যখন দেখি এক জাপানীজকে ব্যাখ্যা করছে এইভাবে যে সাইদ সাহেব ইসলামের সবকিছু একটু বেশি বেশী মানে।তাই খাবার নিয়ে খুব খুত খুত করে।আমি একটু উদার টাইপের।স্থান কাল ভেদে তাল মিলিয়ে চলি। জাপানীজ তখন তাকে বলে বুঝেছি।তুমি হচ্ছে মডারেট মুসলিম।আর সাইদ সাহেব একটু বেশী মেনে চলা মুসলিম।ভাগ্য ভালো আমার।আমার সম্মন্ধে ভালো ধারণা থাকায় আমাকে কট্টরপন্থী শুনতে হয়নি। ইসলামের বেসিক নিয়ম গুলো মেনে চলার নাম কি কট্টরপন্থী?আর যারা ইসলামের বেসিক কোনো নিয়ম মানেনা।বিধর্মীদের সাথে পাল্লা দিয়ে হারাম খেয়ে যাচ্ছে, মদ খাচ্ছে তারা হচ্ছে মডারেট মুসলিম!!!

আল্লাহ হাফেজ

বিষয়: বিবিধ

২৪১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File