ঐক্যই পারে একটা পরিবার একটা জাতিকে সঠিক গন্তব্যে পৌছে দিতে।
লিখেছেন লিখেছেন সাইদ ১৮ জুলাই, ২০১৩, ০৭:৩৩:২৭ সকাল
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।আসসালামুআলাইকুম।
দশের লাঠি একের বোঝা।গল্পটি ছোটো বেলায় পড়েছিলাম।এক বৃদ্ধ বাবা তার পাঁচ সন্তানকে ডাকলো। অনেকগুলো বাশের লাঠি একসাথে বাধলো।তারপর এক এক সন্তানকে তা বহন করে একটা গন্তব্য স্থলে নিয়ে যেতে বললো।কোনো সন্তানের পক্ষেই বাশের লাঠি গুলোকে গন্তব্যে স্থলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলো না।বৃদ্ধ বাবা পরবর্তিতে বাশের লাঠিগুলো ভাগ করে দিয়ে পাঁচ সন্তানকে তা গন্তব্যে স্থলে নিয়ে যেতে বললো।বাশের লাঠিগুলো নিয়ে সবাই সঠিকভাবে গন্তব্য স্থলে পৌছালো।এই সহজ সরল সত্য কথাটি কোনো মানুষের পক্ষেই আসলে অস্বীকার করা সম্ভব না।তারপরও আমরা নিজেদের হীন স্বার্থের জন্য সার্বজনীন এই সত্য কথাটি ভুলে যায়।ইসলাম ধর্মেও ভাই-ভাইয়ের এই ঐক্যর কথা বলা হয়েছে বারবার।একজন ভাই-ভাই এর সম্পর্ক কেমন হবে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মদিনার আনসার ভাইয়েরা আমাদের জন্য রেখে গেছেন।দুর্ভাগ্য আমাদের যে আমরা খুব কমই তা থেকে শিক্ষা নিয়ে থাকি।
১৯৭১সালের স্বাধীনতার যুদ্ধের কথা সবারই অল্প বিস্তর জানা।আমার বাবা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। বাবার কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের অনেক গল্প আমি শুনেছি।পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ি।যুদ্ধে আমাদের ঐক্যতাই ছিল বিজয়ের মূল চাবিকাঠি।আজকের জামায়াত ইসলামী তখন অখন্ড পাকিস্থানের পক্ষে ছিলো।তবে স্বাধীনতার বিপক্ষে শুধু জামায়াত ইসলামীই নয় অনেক দল-মত-শ্রেনীর মানুষও ছিল।অনেকে নিজের পরিবার রক্ষার জন্য এক ভাই মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে আরেক ভাই রাজাকার হয়েছে।অনেকে নিজের গ্রামকে রক্ষার জন্য একদল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছে আরেকদল রাজাকার হয়ে গ্রাম পাহারা দিয়েছে।এগুলো ছিল একধরনের কৌশল।সবসময় সব দলে সুযোগ সন্ধানী কিছু মানুষ থাকে।এরা আগেও ছিলো।এখনও আছে।ভবিষ্যতেও থাকবে।সময়ের পরিবর্তনে এরা নিজেদের খোলস বদলায়।যুদ্ধের সময় এই ধরনের সুযোগ সন্ধানী মানুষ গুলো মেতে উঠে তাদের হীন স্বার্থ উদ্ধারের জন্য।পাকিস্তান বাহিনীর সহায়তায় এমন কোনো হীন কাজ নেই যে তারা করেনি।বিনিময়ে গড়ে তুলেছে টাকার পাহাড়।আবার যুদ্ধের পর সেই টাকা রক্ষা করার জন্য প্রভাবশালীদের সাথে রক্ষা করে চলেছে সুসম্পর্ক।প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এরা সবসময় থাকে ধরা ছোয়ার বাইরে।সময়ের সাথে খোলস বদলাতে এরা পটু।আর আমাদের প্রভাবশালীদের যে নৌতিক চরিত্র তাতে এদের ম্যানেজ করতেও তেমন কোনো বেগ পেতে হয়না।এই বাস্তবতা আমরা আজকের সমাজেও দেখতে পাই।সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এরা ভোল পাল্টে ফেলে।এদের আসলে কোনো নীতি নেই।অর্থ আছে যেখানে তারা আছে সেখানে।
যুদ্ধের পরপর নীতিহীন এই রাজাকারদের বিচারের জন্য ছিলো সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।এইসব নীতিহীন রাজাকারদের আসলে তখনকার সাধারণ জনগণ অনেকে নিজেরাই বিচার করেছে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান রাজাকারদের বিচার করতে গিয়ে বুঝতে পারলেন বাস্তবতা।সব রাজাকারই আসলে নীতিহীন ছিলেন না। অনেকে রাজাকার এর নাম নিয়ে পরোক্ষ ভাবে দেশের সাহায্য করেছেন।দেশের উন্নতির জন্য প্রয়োজন সবার ঐক্য।বিভেদ রেখে একটা জাতি কখনো সঠিক গন্তব্যে পৌছাতে পারেনা।ঐক্যর জন্য ক্ষমাকেই তিনি বেছে নিলেন।দেশ গড়ার কাজে যাতে সবাই মনোযোগী হতে পারে।ইসলামের ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই যে একসময় কট্টর ইসলাম বিরোধী কাফেররাও ইসলামের ছায়াতলে আসার পর ক্ষমা পেয়েছেন।ইসলাম রক্ষায় তাদের ভুমিকা অনুসরণীয়।উজ্জল উদাহরণ হজরত উমর(রা)।ইসলাম গ্রহনের পূর্বে যিনি নবী (সা) কে হত্যা করতে চেয়েছিলেন আর ইসলাম গ্রহনের পর তার অবদান কি?
আজকে বাংলাদেশের বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখা যায় সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে জামাত-ই- ইসলামীর অবদান কোনো অংশেই কম নয়।অন্যান্য দলগুলো যেখানে মুক্তিযোদ্ধার চেতনা বিক্রি করে দুর্নীতির আকন্ঠে নিমজ্জিত সেখানে জামাত-ই-ইসলামী কর্তক পরিচালিত ব্যাবসা বানিজ্য গুলো সফল ভাবে পরিচালিত হচ্ছে।শিবির কর্তক ছেলেমেয়েদেরকে যে নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে তার ধারে কাছেও নেই অনান্য ছাত্র সংগঠনগুলো।এরা আছে শুধু নারী ধর্ষণ আর টেন্ডার বানিজ্য নিয়ে।স্বাধীনতার পর সামাজিক উন্নয়নে,দেশের উন্নয়নে জামাত ই ইসলামীর ভুমিকা কি আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনপির থেকে কম?সামান্য ৫%জনসমর্থন নিয়ে এরা সামাজিক উন্নয়নে যে ভুমিকা রাখছে সেখানে ৪০% জনসমর্থন নিয়ে অন্য বড় দল গুলো কি করছে?সবাই তো আছে লুট পাটে ব্যাস্ত। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের লুটপাটের সুযোগ দেওয়ার জন্যই কি সাধারণ জনগণ দেশ স্বাধীন করেছিল?
কমপক্ষে এক কোটি জনসমর্থন আছে এমন একটা দলকে ধ্বংসাত্মক কাজের দিকে ঠেলে দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন কি সম্ভব? উন্নয়নের আদর্শে,নৈতিকতার আদর্শে পরাভূত হয়ে শুধুমাত্র নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধার জন্য দেশকে এভাবে বিভক্ত করবেন না।আমরা সবাই এই দেশেরই সন্তান।এই দেশকে আমরা ভালবাসি।এই দেশকে আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাড় করাতে চাই।আমাদের এখন প্রয়োজন দুর্নীতি মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়া।শোষণ মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়া। ১৬কোটি জনগনের ৩২কোটি হাত।আমাদের সামর্থ্য আছে কিন্তু কাজ করার পরিবেশ নাই।তাই আসুন আমরা সবাই সমবেত কন্ঠে বলি " আর নয় বিভেদ আসুন ঐক্যর পতাকাতলে আমরা সমবেত হয়ে দেশকে তার সঠিক গন্তব্যে পৌছে দিই।"
আল্লাহ হাফেজ
বিষয়: বিবিধ
১৭৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন