কোটা প্রথা=স্বজনপ্রীতি-দলপ্রীতি-দুর্নীতির মহা উৎসব!!!

লিখেছেন লিখেছেন সাইদ ১৬ জুলাই, ২০১৩, ০৮:৫৫:৪৯ সকাল



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।আসসালামুআলাইকুম।

সমাজে আজ স্বজনপ্রীতি-দলপ্রীতি-দুর্নীতি এমন মহামারী আকারে ধারণ করেছে যে স্বজনপ্রীতি-দলপ্রীতি-দুর্নীতি করাটাই এখন ফ্যাশান হয়ে দাড়িয়েছে।অনেকে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যখন দুর্নীতি করতে চান না তখন তাকে শুনতে হয় অনেকের কাছ থেকে তীর্যক মন্তব্য।চাকুরী দেওয়ার মুরোদ নেই তার আবার বড়ো বড়ো নীতি কথা।ঘটনাটা অনেক দিন আগে শুনে ছিলাম।একই পদে দুইজন চাকুরী করেন।একজনের চাকুরীর টাকা দিয়ে ঢাকাতে ফ্লাট গাড়ী সবই হয়েছে।ছেলে গাড়ী করে অফিসে যায়।নিজেদের ফ্লাটে থাকে।আরেকজন থাকেন ভাড়া বাড়ীতে।বাবা ছেলেকে স্কুলে পৌছে দিয়ে আসেন রিক্সায় করে।একই পদে চাকুরী করা সত্বেও কেনো তাদের এই দুরবস্থা।অবুঝ ছেলের প্রশ্নে বাবা নিরবে চোখের জল ফেলে আর আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে।এই সমাজে সততার সাথে বেঁচে থাকাটাই যেনো কাল হয়ে দাড়িয়েছে।

সমাজে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা এই ৩০ভাগ কোটার কয় ভাগ পায়?BCS পরীক্ষা দেওয়ার মতো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার ছেলেমেয়েরা কি এতোজন আছেন? সমাজের অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস নেই।কারণ অনেক প্রকৃত মুক্তি যোদ্ধারা নিজেদের ছেলেমেয়েদের জন্য ঠিকমতো দুই বেলা খাবার যোগাড় করতে হিমশিম খেয়ে যান। ছেলে মেয়েদেরকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার সুযোগ কোথায়?একজন পিতা তার সন্তানের সব ভুল ক্ষমা করে দিতে পারেন।কিন্তু সন্তান যখন আরেকজন কে পিতা হিসাবে স্বীকৃতি দেয় তখন আর তাকে ক্ষমা করতে পারে না।পিতার এই স্বীকৃতি সে অন্য কাউকে ভাগ দিতে চায়না।কারন এতে তার নিজের পিতৃত্বের সাথে অপমান করা হয়।সন্তানের জন্য তার ত্যাগ কে অস্বীকার করে অন্যে আরেকজনকে তার ভাগ দেওয়া হয়।এটা আল্লহ প্রদত্ত্ব মানুষের সহজাত মানবীয় গুন। মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের প্রানপ্রিয় সন্তান, স্ত্রী,বাবা-মা আত্বীয় স্বজনের মায়া,দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছেন।অথচ আজ সমাজের আনাচে কানাচে যাকে তাকে ধরে ধরে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।আজ পর্যন্ত কোনো শাসক দল আমাদেরকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একটা তালিকা দিতে পারেনি।সব দলই এসে নিজদের সুবিধামত তালিকা বানায়।ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধাদের কে দেখে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা মুখ লুকিয়ে রাখে।নিজের পরিচয় সে আর সমাজের কাছে প্রকাশ করতে চায়না।এই বুঝি তাকেও আজ সমাজের কাছে প্রশ্নের সন্মুখীন হতে হয় সত্যি কি আপনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন?আর ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধারা বীরদর্পে মানুষের কাছে বলে বেড়াচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকালীন তাদের বীরত্বের কাহিনী।স্বয়ং রাষ্ট্র যখন এর পৃষ্ঠপোষকতা করে তখন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা থাকেনা। এটা কি সন্তান কতৃক পিতার জায়গায় অন্য আরেক জনকে পিতার মর্যাদা দেওয়ার মত গর্হিত অপরাধ নয়?মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সাথে কি এটা বেইমানী নয়?প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে আপনারা আর কতো রাজনীতি করবেন?আল্লাহর দোহায় লাগে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আপনাদের কিছু করা লাগবে না। শুধু আপনারা তাদের স্বীকৃতি দিন।আমার বাবা-চাচারা শুধু স্বীকৃতি চায়।আমার বাবা-চাচারা না খেয়ে থাকবে তবুও সমাজের লোকদের কাছে তাদের পরিচয় নিয়ে যেনো প্রশ্নের সন্মুখীন না হতে হয়।সমাজের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের চেনার জন্য প্রয়োজন দল মত নির্বিশেষে সবার আন্তরকিতা এবং সততা।একবার এক সন্তানের জন্য দুই মহিলা মা বলে দাবী করলো।বিজ্ঞ বিচারক তথ্য উপাত্ত দিয়ে যখন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না তখন তিনি সন্তানকে দ্বিখন্ডিত করে দুই মহিলাকে ভাগ করে দিতে চাইলেন।যখনই তিনি সন্তানকে দ্বিখন্ডিত করতে উদ্যত হলেন তখন এক মহিলা সন্তানের দাবী ছেড়ে দিল।বিজ্ঞ বিচারকের বুঝতে বাকি রইলো না সন্তানের প্রকৃত মা কে।আজ আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এই রকম কিছু বিজ্ঞ বিচারককে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরী করার জন্য।

৩০ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নয়।শাসক দলের সুবিধাবাদী ধ্বজা ধরা ব্যঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য।আজকের বিরোধী দল সরকারে গেলেও এই কোটা বাতিল করবে বলে মনে হয়না।কারন এই কোটার আড়ালে চলবে স্বজনপ্রীতি-দলপ্রীতি আর দুর্নীতি।তখন নতুন শাসক দলের সুবিধাবাদী ধ্বজা ধারীদের গলায় একেকটা মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট ঝুলিয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তাদেরকে চাকুরী দেওয়া হবে।এভাবেই চলতে থাকবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার আড়ালে ভাড়াটে মুক্তিযোদ্ধাদের রমরমা চাকুরী বানিজ্য আর প্রশাসন দলীয়করন।সৎ এবং মেধাবীদেরকে প্রশাসন থেকে দুরে সরিয়ে রাখার এ এক ঘৃণ্য কৌশল।দিনের পর দিন প্রশাসনে এই দুই দলের ভাড়াটে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অশুভ প্রতিযোগীতা বাড়তেই থাকবে।প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আর সৎ মেধাবী ছাত্ররা এইসব ভাড়াটে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের হাতে দিনের পর দিন নির্যাতীত হবে।তাই আজ মেধা চত্ত্বর আন্দোলন দলীয় পুলিশ বাহিনী দিয়ে প্রখর গরমের মধ্যে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে দেওয়া হচ্ছে।অন্যদিকে ভাড়াটে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের সুবিধা জিইয়ে রাখার জন্য তাদেরকে ঠান্ডা পানি দিয়ে আপ্যায়ন করা হচ্ছে।এতো কিছুর পরেও যদি সাধারণ জনগনের টনক না পড়ে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে তাদের সৎ মেধাবী ছাত্রদেরকে ঐ সব ভাড়াটে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পায়ের স্যান্ডেল টানতে হবে।

পিএসসি নতুন রেজাল্ট ঘোষণা করেছে।এইসব মাথা মোটারা জনগনকে এতো মুর্খ ভাবতে পারে বিশ্বাস করতেই কস্ট হয়।সুবিধাবাদীদের কে লিখিত পরীক্ষায় সুযোগ করে দেওয়ার জন্য পারলে পারে প্রিলিতে সবাইকে পাশ করিয়ে দিলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।এখন তো মনে হয় নতুন করে পাশ করাদের নিয়েও চলবে রমরমা চাকুরী বানিজ্য।প্রথম দিককার মেধাবী দেরকেও চাকুরী মেলে কিনা সন্দেহ?যতো বেশী মৌখিক পরীক্ষার্থী চাকুরী বানিজ্যে লাভও ততো বেশী। সুবিধাবাদীরা মুচকি মুচকি হাসছে এ যেনো "মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি"।এতো প্রিলি,লিখিত পরীক্ষারই বা কি দরকার?সরাসরি মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে পছন্দমত নিয়োগ দিলেই তো হয়।আপনাদের দৃষ্টিতে তো জনগণ অন্ধ।সুতরাং ঘোমটা দিয়ে নাচার (দুর্নীতি করার)কি দরকার?ঘোমটা খুলেই নাচুন(দুর্নীতি করুন) ।

আল্লাহ হাফেজ

বিষয়: বিবিধ

২১০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File