টাকা/সুপারিশ ছাড়া সরকারী চাকুরী! এ যেন সোনার হরিণ !!

লিখেছেন লিখেছেন সাইদ ১২ জুলাই, ২০১৩, ০৮:৩৮:৩৯ সকাল



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।আসসালামুআলাইকুম।

ছোটবেলাতে মুরব্বীদের কাছ থেকে শুনতাম মামা-চাচা- খালুর জোর না থাকলে সরকারী চাকুরী পাওয়া অনেক কঠিন।ব্যাপারটি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ আমারও হয়েছে।একবার আমার এক মামা (ছোট নানার ছেলে)আমাকে আক্ষেপ করে বললেন নিজের প্রচেষ্টায় এতো উপরে উঠলাম।আজকে চাকুরীর চাপের থেকে আত্বীয় স্বজনের চাপে তিনি অতিষ্ঠ।অনেককে চাকুরী করার ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন।তবে যাদের চাকুরীর ব্যবস্থা করতে পারেননি তাদের চাপ এবং তির্যক মন্তব্যে তিনি অতিষ্ঠ।প্রবাস থেকে একদিন তার বাসায় ফোন করলাম।ফোন ধরলো মামার শাশুড়ি।মামা কে চাইলাম কিন্তু পেলাম না।প্রবাসে থাকা সত্বেও নানি অন্যর ঝাল আমার উপর ঝেড়ে নিলেন।মামা গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমেরিকাতে পাড়ি জমিয়েছেন।পাড়ি জমানোর অনেক কারনই শোনা যায় তবে প্রবাসে থাকায় প্রকৃত কারণ আমার পক্ষে জানা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।আমাদের সমাজে মেধার চেয়ে স্বজনপ্রীতি আসলে যে কোন পর্যায়ে গেছে তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।ক্ষমতা থাকা সত্বেও স্বজনপ্রীতি না করে আত্বীয় স্বজনের চাপ সহ্য করে টিকে থাকা খুব সহজ কাজ না।আগে স্বজনপ্রীতি থাকলেও মোটামুটি যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে তার যোগ্য কাজের জন্য সুপারিশ করা হতো।খুব বেশী একটা চোখে পড়ার মতো ছিলো না।

দিনবদল হয়েছে।১৯৯১সাল থেকে জনগনের সরকার দেশ শাসন করছে।এখন আর শুধু মামা খালুর জোরে চাকুরী হয়না।মামা খালুর জোরের সাথে লাগে টাকারও জোর।অনেক সময় আবার এতেও কাজ হয়না। প্রভাবশালীদের নেক নজর এবং তাদের সুপারিশও লাগে।আগেরকার মামা খালুদের যদিও একটা চক্ষু লজ্জা ছিলো এখন অবশ্য আর তাও নেই।যাদের সামর্থ্য আছে তারা কোমর বেধে নেমে পড়ে মামা-খালু,টাকা, প্রভাবশালীর নেকনজর সব কিছুর বিনিময়ে হলেও তার সরকারী চাকুরিজীবি নামের সোনার হরিন চাই ই চাই।সরকারী চাকুরী যে কি অমূল্য সেটা বোঝার জন্য ছোটকালে একটা গল্প শুনেছিলাম।এক প্রভাবশালী লোক তার এক আত্বীয়ের পীড়াপীড়িতে পদবিহীন,বেতন ছাড়া একটা চাকুরী দিলেন।সরকারী কর্মকর্তা হিসাবে সে গড়াই নদীর ঢেউ গুনবে।লোকটি গড়াই নদীর ঢেউ গোনা শুরু করলো সকাল থেকে।তার সামনে দিয়ে একজন অতিক্রম করলে সে লোকটিকে দাড় করায়। দেখতে পাচ্ছোনা আমি নদীর ঢেউ গুনছি?সরকারী কাজে বাধা?এতো বড়ো সাহস তোমার?লোকটি মানে মানে কিছু টাকা দিয়ে মাফ চেয়ে চলে যায়।কয়েক বছর পর বেতনবিহীন সরকারী কর্মকর্তা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যান।আর যারা সরকারী চাকুরীতে সততার পরিচয় দিয়ে যান প্রতিনিয়ত তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।পরিবারের লোকজনের যদি আল্লাহ ভীতি কাজ না করে তবে তার জন্য কতদিন সততার পরিচয় বহন করে চলা সম্ভব আল্লহই ভালো জানেন।

টাকা/সুপারিশ ছাড়া যে সরকারী চাকুরী হয়না ব্যাপারটা কিন্তু তাওনা।এ ব্যাপারে কয়েকটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ আমার হয়েছে।আমার এক খুব নিকটের এক বন্ধু একবার BCS পরীক্ষায় লিখিত পরীক্ষায় পাস করলো।সে আমাকে বললো কয়েক লাখ টাকা দিতে পারলেই তার চাকুরীটা হয়ে যাবে।চাকুরী না হলে টাকা ফেরত দেবে।আমি তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম।সবই বৃথা হলো।টাকা দেওয়ার পরও তার চাকুরী হয়নি।টাকা ফেরত পেতে যদিও অনেক কাঠ খড়ি পোহাতে হয়েছে তার। পরেরবার টাকা ছাড়াই তার চাকুরী হলো।এক নিকট আত্বীয় সরকারী প্রাথমিক স্কুলের লিখিত পরীক্ষায় পাস করলো।তৎকালীন শাসক দলের কিছু দালাল বললো লাখ খানিক টাকা দিতে পারলে সে চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিতে পারবে।আত্বীয়-স্বজনের মাথায় এমন ভাবে ঢুকানো হলো যে টাকা দিলে তাদের চাকুরী হবেই হবে।আমার কোনো কথায় তাদের মনোপুত হলো না।আমাকে শুনতে হলো দেশের বাস্তবতা প্রবাস জীবনে বসে বোঝা সম্ভব না।সবচাইতে অবাক হলাম যখন আমার কিছু পরিচিত হুজুর মত দেন এই বলে যে দেশের বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে টাকা দিয়ে চাকুরী নেওয়া যাবে।মা আমাকে পরামর্শ দিলো টাকা না দেওয়ার জন্যে যদি চাকুরী না হয় তাহলে সবসময় তোকে কথা শুনতে হবে।আমি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কিছু সময় চাইলাম।নিজের স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করলাম।আত্বীয়কে বললাম আমি তোমাকে কিছু সাহায্য করতে চাই।আমি আশা করি তুমি সঠিক পথে ব্যায় করবে। বাকীটা আমি তোমার বিবেচনার উপর ছেড়ে দিলাম।এই ছাড়া ভালো সমাধান আমার মাথায় সেই মুহুর্তে ছিলো না।

টাকা দিয়েও যে চাকুরী হয়না তার উদাহারণও অনেক আছে।আবার টাকা ছাড়াও যে চাকুরী হয় তারও উদাহারণ অনেক আছে।তবে সমাজের কাছে বাস্তবতা এই যে টাকা ছাড়া চাকুরী পাওয়া সম্ভব না।এই ধারণা তৈরীর পিছনে কর্তৃপক্ষ যেমন দায়ী তেমনি ধারনাটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদের সমাজের কিছু অসাধু মানুষের পাশাপাশি আমরাও কম দায়ী নই।সমাজের লোকজন যখন দেখে অনেক মেধাবী ছাত্ররা সরকারী চাকুরীর জন্য পায়ের তলা ক্ষয় করে ফেলে আর এতদিন যারা কখনো ভালোমত পড়াশোনা করেনি সেই ছাত্ররা টাকা/সুপারিশের জোরে চাকুরী পায় তখন "টাকা ছাড়া সরকারী চাকুরী !!" এই ব্যাধি সমাজের সর্বত্ত ছড়িয়ে পড়ে এবং সমাজের জনগণ তা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়।টাকা ছাড়াও অনেকে যে চাকুরী পাচ্ছে সেই ধারনাটা গৌণ হয়ে দাড়ায় তখন।শুরু হয়ে যায় তখন টাকা দিয়ে চাকুরী নেওয়ার প্রতিযোগীতা।যে মেধাবী ছাত্রর হয়তো টাকা ছাড়াও চাকুরী হওয়ার সম্ভবনা ছিলো সেও তার নিজের মেধার উপর বিশ্বাস হারিয়ে টাকার প্রতিযোগীতায় নেমে পড়ে।মাঝখানে কিছু অসাধু মানুষের পকেট ভারী হয়।হয়ত মেধাবী ছাত্রটির চাকুরীর জন্য অসাধু লোকটির কোনো সুপারিশই ছিলো না।

সমাজের ভিতরে একটা ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে তা সহজে দূরীভূত হওয়ার নই।শাসক দল এই ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্ট না থাকলেও সমাজের বাস্তব অবস্থা যতক্ষণ মেনে না নিয়ে পদক্ষেপ নেবে ততক্ষণ কোনো পদক্ষেপ কাজে আসবে বলে মনে হয় না।আর শাসক দল নিজেই যদি এর পৃষ্ঠপোষকতা করে তাহলে এই ব্যাধি মহামারী আকারে ধারণ করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য যতটুকু না পড়লেই নই তার থেকে বেশী পড়ালেখা করার আগ্রহ হয়তো অনেকে হারিয়ে ফেলবে।সার্টিফিকেট আর টাকা দিয়ে যদি মেলে চাকুরী তাহলে শীতের রাতে রাত জেগে পড়ালেখা কে করবে?কিসের আশায় করবে?

আল্লাহ হাফেজ

বিষয়: বিবিধ

২৬৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File