প্রবাস জীবনে জন্ম তারিখ নিয়ে বিভ্রাট !!!!

লিখেছেন লিখেছেন সাইদ ১৮ জুন, ২০১৩, ০১:২৯:২৫ দুপুর



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।আসসালামুআলাইকুম।

জাপানে জন্মের ১৫দিনের মধ্যে সরকারী অফিসে জন্ম নিবন্ধন করতে হয় এবং এইক্ষেত্রে যে ক্লিনিকে বাচ্চাটি জন্ম গ্রহণ করেছে সেই ক্লিনিকের ডাক্তারের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়।ফলে নিজের জন্ম তারিখ পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ এখানে নেই।আমাদের দেশে জন্ম তারিখ নিয়ে অনেক মজাদার মুখরোচক গল্প প্রচলিত আছে,যা আমরা অনেকেই অল্প বিস্তর জানি।দেশের মধ্যে এগুলোকে আমরা খুবই সাধারণ ঘটনা বলে মনে করলেও বাইরের দেশে এসে অনেককে বিব্রতকর পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়।তার আগে নিজের জন্ম তারিখ এর ঘটনাটি বলে নিই।ক্লাস ফাইভ পাশ করার পর হেড স্যার একটা সার্টিফিকেট লিখলো।আমাকে বললো তোর জন্ম তারিখ কতো?আমার জন্ম তারিখ আমি কি করে জানবো?হেড স্যার হিসাব করে দেখলো ১৬বছরে আমার S.S.C পাশ করতে হলে আমার জন্ম তারিখ কতো হওয়া উচিত?সুতরাং হিসেব কষে একটা দিন বের করে আমার জন্ম তারিখ বানিয়ে দিলেন। জন্ম তারিখ যখন হিসেব করেই বের করবো তখন আর দুই,তিন, চার সংখাগুলো ইউজ করবো কেন?সংখা গুলো কেমন বেমানান লাগে।শূন্য,এক ,পাঁচ সংখা গুলো যেমন রাউন্ড ফিগার তেমনি শুনতেও আবার ভালো লাগে।হিসেবের মার প্যাচে আমার জন্ম তারিখ হয়ে গেলো ১৫ই অক্টোবর।লিখতেও ১৫/১০ কতো না রাউন্ড ফিগার!

জন্ম তারিখ নিয়ে সংখ্যার এই মার প্যাচ আমাকে প্রথম মনে করিয়ে দেই এক জাপানীজ শিক্ষক।আমার নিজের কাছে কখনো এটাকে অস্বাভাবিক মনে হয়নি। একদিন আমাকে বলে আচ্ছা তোমাদের দেশের মানুষ কি এক,পাঁচ,দশ,এগারো,পনেরো,বিশ,একুশ,পঁচিশ এইরকম তারিখে বেশি জন্ম গ্রহণ করে?আমি বললাম তা হবে কেনো?এমন মনে করার কারন?স্যার তখন বললো কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশী অনেক ছাত্রকে আমি পড়াচ্ছি।খেয়াল করে দেখেছি তাদের জন্ম তারিখ গুলো কেনো যেনো একটু রাউন্ড ফিগারের।দুই,তিন,চার তারিখ,বারো,তেরো,চৈদ্দ তারিখ কিংবা বাইশ,তেইশ, চব্বিশ তারিখ এর জন্ম তারিখ কাউকে দেখলাম না। আমার আর বুঝতে বাকি থাকেনা কাহিনী।বললাম আপনার কাছে হয়তো সেরকম ছাত্র এখনো আসেনি। সবচেয়ে ধাক্কা খেলাম যখন বললো একজনের জন্ম তারিখ ২৯এ ফেব্রুয়ারী কিন্তু ওই বছর কোনো লিপইয়ার ছিলো না!!সাংঘাতিক কথা যে বছরে ২৯এ ফেব্রুয়ারী নেই সেই বছরে ২৯ই ফেব্রুয়ারী জন্ম তারিখ!!বেশী কথা না বাড়িয়ে অন্য প্রসঙ্গ টেনে আনলাম।

সবচাইতে বিড়ম্বনার শিকার হলাম নিজের পরিবারের কাছ থেকে।এখানকার সরকারী অফিসে একটা কাজের জন্য আমার বড়ো দুই ভাইয়ের জন্ম সনদ দরকার হলো।বড়ভাইয়ের কাছে ফোনে তাদের দুইজনের জন্ম সনদ পাঠাতে বললাম।তাদের জন্ম সনদ নিয়ে অফিসে যাওয়ার আগে আমি একটু চেক করে নিলাম।সনদ চেক করতে গিয়ে তো আমার চোখ ছানাবড়া।এ কি করে সম্ভব!!আমার আপন দুই ভাইয়ের জন্মতারিখ এর মধ্যে পার্থক্য মাত্র পাঁচ-ছয় মাস!আমি এর কিছুই জানিনা!সব সম্ভবের দেশ সে যে আমার সোনার বাংলাদেশ!কারোর চোখে এই অসংগতি চোখে পড়লোনা। বাংলাদেশ হলে না হয় ব্যাখ্যা করা যেতো কিন্তু জাপানীজ সরকারী কর্মকর্তা যদি আমাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে তাহলে আমি কিভাবে ব্যাখ্যা করবো?একটা মিথ্যাকে প্রমান করতে হলে তো আমাকে কতোটা মিথ্যা বলতে হয় কে জানে?বড়ভাইয়ের কাছে ফোন দিয়ে বললাম এই সনদ তো আমি এখানে সাবমিট করতে পারবনা।যেভাবে পারেন দুইজনের জন্মতারিখ এর মধ্যে পার্থক্য যেনো একবছর এর বেশী হয় এইভাবে দুইজনের জন্ম সনদ পাঠাতে।

আল্লাহ হাফেজ

বিষয়: বিবিধ

২৬৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File