বাবারা বোধ হয় এমনই হয় !!!!!!
লিখেছেন লিখেছেন সাইদ ১৭ জুন, ২০১৩, ০৭:৫৩:৫৪ সকাল
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।আসসালামুআলাইকুম।
জীবনের স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা লিখতে গেলে মানসপটে সর্বাজ্ঞে ভেসে উঠে যে স্নৃতি তা হচ্ছে শৈশবে বাবা মার আদর ,ভালবাসা আর শাসন। এইগুলোকে বাদ দিয়ে শৈশব আর শৈশব থাকেনা,হয়ে উঠে বিষাদময় স্মৃতি যে স্মৃতির কথা আমরা ভুলে যেতে চাই,ভুলে থাকতে চাই।আজকে বাবাকে কেন্দ্র করেই কিছুসময় ফিরেযাব সেই দিনগুলোতে যা কখনই ফিরে আসবে না,কিন্তু ফিরে আসবে স্মৃতির পাতায় বারে বারে।
আমাদের পরিবার ছিল মাতৃকেন্দ্রিক।উপার্জন করার দায়িত্ব আব্বার আর সংসার পরিচালনা করার দায়িত্ব ছিল মায়ের উপর।তাই টাকা পয়সার জন্য আমাদের তিন ভাইকে মায়ের কাছেই শরণাপন্ন হতে হতো।গ্রামের বেশীরভাগ মায়েরা চাবি শাড়ির আচলে বেধে রাখে। আমার মাও তার ব্যাতিক্রম ছিলো না।চাবির পাশাপাশি টাকাও আচলে বেধে রাখতো।মার আচল থেকে মাঝে মাঝে কিছু টাকা উধাও হয়ে যেতো।এই কাজে বেশ পটু ছিলো মেজো ভাই।আমার অবশ্য মার আচল খুলে টাকা মেরে দেবার মতো দুঃসাহস ছিলো না।আব্বার পকেট হাতড়ানোই ছিলো একমাত্র সম্বোল।পকেটে আধুলী,এক টাকার নোট্ই ছিলো আমার শিকার।বড়ো নোট শিকার করলে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা বেশি, তাই ছোটো শিকারই ছিলো আমার টার্গেট।একটা বিস্কুট,একটা আইসক্রীম খাওয়ার জন্য ছোটো শিকার ছিলো আমার প্রিয়।আব্বার অভ্যাস ছিলো স্কুলে যাওয়ার আগে আমাকে ডেকে একটু আদর করে দেওয়া।আমি যেন স্কুলে গিয়ে ভালোভাবে পড়ালেখা করি।তখন আব্বা তার পকেটে হাত দিয়ে বলতো আমার পকেট থেকে আধুলিটা কোথায় যে পড়ে গেলো বলে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতো।এই ছোটো খাটো শিকার আব্বা ঠিকই বুঝতে পারতো। বলতে গেলে আব্বার সম্মতিতে চলতো আমার শিকার। এ যেনো এক বাবা আর সন্তানের মধ্যে অলিখিত সন্ধীচুক্তি।মাঝে মাঝে যখন এই ছোটো শিকারী গুলো আব্বার পকেটে থাকতো না,তখন শিকার করতে না পারার জন্য মন খারাপ করে থাকতাম।আব্বা সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারতো।তারপর থেকে দেখি প্রতিদিন আব্বার পকেটে থাকতো আমার শিকারী গুলো।অনেকদিন পরে আব্বার সাথে ছোটোবেলার গল্প নিয়ে মেতে উঠার সময়,আব্বা বললো যখন স্কুল থেকে বাসায় ফিরার সময় দেখতাম আমার পকেটে আজ তোমার শিকারী নাই,তখন তোমার মনমরা মুখটা আমার সামনে ভেসে উঠতো।তাই স্কুল শেষে তোমার শিকারীর সন্ধানে আমাকে বাজারে যেতে হতো।তোমার শিকারীর জন্য এক কাপ চা আর একটা পানও আমার খাওয়া হতো। আব্বা যখন কথাগুলো বলছিল তখন তার চোখগুলো ছলছল করছিল,আর তখন আমার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল চোখের জল।আজকে যখন লিখতে বসেছি, আজকেও আমার সেদিনকার মতো অবস্থা।পার্থক্য সেদিন আমার সামনে বসেছিলেন তিনি আর আজ তিনি পড়ে আছেন বাংলাদেশে আর আমি এই সুদুর প্রবাসে।
এরই নাম হয়তো ভালবাসা,এরই নাম প্রেম যেখানে এক বাবা তার সন্তানের মুখে হাসি দেখতে চেয়েছে,মার কাছ থেকে গোপন করে ভালবাসায় সিক্ত করে দিয়েছে তার সন্তানকে।হ্যা,তার ছিলো না হয়তোবা বিত্তশীল বাবার মতো দামী কোনো জিনিস কিনে দেয়ার সামর্থ্য।কিন্তু সন্তানের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য ছিলো তার প্রানন্তকর প্রচেষ্টা।হে আমার রব আজ তাদেরকে তুমি বার্ধক্যে পরিনত করেছো,ছোটোবেলায় তোমারই সন্তষ্টির জন্য তারা যেমন আমাদেরকে তাদের ভালবাসায় সিক্ত করেছে,তার প্রতিদান দেয়ার ক্ষমতা যে আমাদের নেই তা তো তুমি ভালোভাবেই জানো,তাই আমদেরকে করো তোমার করনা।যেনো বাকীটা জীবন আমাদের ভালবাসায় সিক্ত করতে পারি তাদের জীবনক যেমন করেছিল আমাদের কে তারা ছোটবেলায়।
আল্লাহ হাফেজ
বিষয়: বিবিধ
২০১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন