প্রবাস জীবনে দেশে টাকা পাঠানোর বিড়ম্বনা !!!!!

লিখেছেন লিখেছেন সাইদ ১৫ জুন, ২০১৩, ০৬:৪৮:৩১ সকাল



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।আসসালামুআলাইকুম।

আমাদের দেশের অনেক ভাইবোন আজ জীবিকার তাগিদে অথবা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশের মাটিতে বসবাস করছেন।তাদের কষ্টার্জিত উপার্জনের সিংহভাগই তারা দেশে পাঠিয়ে দেন।এই টাকা পাঠাতে মাঝে মাঝে যেমন কিছু মানুষ কে প্রতারিত হতে হয় এজেন্সীর মাধ্যমে তেমনি আবার বিদেশে অবস্থানরত নিজের প্রিয় বন্ধুদের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়ার কথাও মাঝে মাঝে শোনা যায়।এমনকি কিছু কিছু হতভাগাদের নিজের দেশের খুবই প্রিয়জনের মাধ্যমেও প্রতারিত হওয়ার ঘটনা শুনে নিজের আবেগকে সংবরণ করে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।যে মানুষটি তাদের সব প্রিয়জনকে ছেড়ে এই দুরদুরান্তে এসে তাদেরই একটু উন্নত জীবন যাপনের জন্য সারাদিন অমানুষিক হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যখন বুঝতে পারে তার কষ্টার্জিত উপার্জন অন্যর আমোদ ফুর্তিতে ব্যায়িত হয় তখন আল্লহর কাছে নীরবে ফরিয়াদ করা ছাড়া আর কিই বা করার আছে তার।

তবে আজকে এতো কষ্টের কোনো ঘটনা এখানে উল্লেখ করবোনা।প্রবাস জীবনে টাকা পাঠাতে গিয়ে একটা মজার(আপনাদের কাছে মজার কিনা জানিনা)বিড়ম্বনার ঘটনা শেয়ার করব।ঘটনাটি বেশ কয়েকবছর আগের।তখন টাকা পাঠানোর এজেন্সী না থাকায় সাধারণত ব্যাংক এর মাধ্যমেই দেশে টাকা পাঠাতাম।দেশে টাকা পৌছাতে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ সময় লাগতো।বড়ো ভাইয়ের ব্যাংক একাউন্ট এ টাকা পাঠিয়ে তাকে ফোনে জানিয়ে দিলাম টাকা পৌছালে আমাকে জানাতে।এক সপ্তাহ পর জানতে পারলাম টাকা এখনো পৌছায়নি।আরো এক সপ্তাহ অপেক্ষা করলাম হয়তো কোনো কারণে বিলম্ব হতে পারে এই জন্য।দুই সপ্তাহ পরও যখন টাকা পৌছালো না,তখন বাধ্য হয়ে খোজ নিলাম।জাপানের ব্যাংকে খোজ নিয়ে নিশ্চিত হলাম যে জাপান থেকে টাকা পাঠানোর দিনই বাংলাদেশে তারা টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে।বাংলাদেশে খোজ নেওয়ার জন্য তারা একটা রেফারেন্স নাম্বার দিলো।আমি বাংলাদেশের অত্র ব্যাংকের হেড অফিসে ফোন করলাম।একজন মহিলা ফোন রিসিভ করলো।প্রত্যাশার চেয়ে একটু বেশী ভালো ব্যাবহার পেলাম।কম্পিউটারে খোজ নিতে কয়েকঘন্টা সময় লাগবে শুনে কিছুটা বিরক্ত বোধ করলেও চেপে রাখলাম। কয়েকঘন্টা পরে ফোন করলাম।হেড অফিস থেকে বলা হলো টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।অত্র ব্যাংকে যোগাযোগ করতে।খুব অবাক হলাম!হেড অফিস থেকে কি অত্র ব্যাংকে খোজ নিয়ে আমাকে জানানো যেতো না?এ কেমন কাস্টমার সার্ভিস !!! এই বিদেশ থেকে আবার আমাকে অত্র ব্যাংকে ফোন করে খোজ নিয়ে জানতে হবে টাকা পৌছিয়েছে কিনা?আমি তো খোজ নিয়েই ফোন করছি হেড অফিসে।আমাকে অগত্য অত্র ব্যাংকের ম্যানেজারের ফোন নম্বর কালেক্ট করে ফোন করতে হলো। ম্যানেজারের কথায় বুঝতে পারলাম টাকা পৌছায়নি।অবাক কান্ড!! জাপান থেকে বলে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি,বাংলাদেশের অত্র সরকারী ব্যাংকের হেড অফিস বলে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি।তাহলে কি টাকা হেড অফিস থেকে শাখা অফিসে যেতে যেতে হাওয়া হয়ে গেলো?হেড অফিস যদি এর কুলকিনারা করতে না পারে তাহলে এই জাপানে বসে আমি কুলকিনারা করবো কিভাবে?অগত্য বাধ্য হয়ে আবার হেড অফিসে ফোন করলাম।কম্পিউটারে একটা ডাটা খুজতে যেখানে কয়েকঘন্টা সময় লাগে,সেখানে এইটা খুজতে কতদিন লাগে আল্লহই ভালো জানেন।আমাকে কয়েকদিন পর ফোন করতে বলা হলো।ফোন করলাম,ভদ্র মহিলাকে চাইলাম,তিনি ফোন ধরে এক গাল হেসে বললেন "স্যার আমরা কুষ্টিয়া মিরপুর এর পরিবর্তে ঢাকার মিরপুর ব্রাঞ্চে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিলাম,মাঝে মাঝে আমাদের এমন ভুল হয়ে থাকে।আমরা কুরিয়ার করে কুষ্টিয়া মিরপুরে ড্রাফটটা পাঠিয়ে দিচ্ছি " কি সাংঘাতিক কথা মাঝে মাঝে এমন ভুল হয়ে থাকে কিন্তু এর কোনো সমাধান নেই।আর কতো অবলীলায় এবং সহাস্যে নিজের ভুলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।এইনা হলো আমাদের দেশের সরকারী অফিসের কাস্টমার সার্ভিস!!! টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে শুনে একটু স্বস্তি ফেললাম।কয়েকদিন পর টাকা প্রসঙ্গে আবার ভাইয়ের ফোন পেয়ে একটু বিরক্তই হলাম।এখনোও টাকা আসেনি।কুরিয়ার সার্ভিসে এতদেরী হওয়ার কথা না।আবার হেড অফিসে ফোন।সবই ঠিক আছে।কুরিয়ার সার্ভিসে সময়মতো ড্রাফট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।মনে হচ্ছিলো টাকা পাঠিয়ে আমি নিজে মস্ত বড়ো একটা অন্যায় করে ফেলেছি।কুরিয়ার সার্ভিস গায়েব হয়ে গেছে কিনা আল্লাহই ভালো জানে।কুষ্টিয়া মিরপুরে কুরিয়ার সার্ভিস অফিসে খোজ নিয়ে কোনো চিঠি পাওয়া গেলো না।অনেক খোজাখুজির পর অনেক চিঠির নিচে পাওয়া গেলো।কুরিয়ার সার্ভিসের লোকজন আবার ঢাকার মিরপুরের চিঠি মনে করে নিচে ফেলে রেখেছিলো কিনা কে জানে?তারপর থেকে কান ধরলাম আর মিরপুরে টাকা পাঠানো যাবে না !!!

আল্লাহ হাফেজ

বিষয়: বিবিধ

১৯১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File