এক জাপানীজ পরিবারে আমার খাবার বিড়ম্বনা !!!!!!!
লিখেছেন লিখেছেন সাইদ ১৩ জুন, ২০১৩, ০৮:৩৩:৫৩ সকাল
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।আসসালামুআলাইকুম।
প্রথম পর্ব
আজকে ছুটির দিন।সকাল থেকেই আমরা রেডি হয়ে বসে আছি ওকাসান(হোস্ট ফ্যামিলি এর মা) এর অপেক্ষায়।আজকে আমাদের জাপানীজ খাওয়ার উদ্বোধন হবে তাই আমাদের সবার মাঝে এক ধরনের খুশী খুশী ভাব।ওকাসান আমাদের নিতে এসেছে।আমরা তার সাথে ট্রেন চড়ে বাসায় গেলাম।আমাদের একটা রুমে বসানো হলো।রুমে একটা টেবিল দেখলাম। উচ্চতায় ছোটো(৩০-৪০cm এর মতো হবে) কিন্তু লম্বা এবং প্রসস্তে বেশ বড়ো মনে হলো।কোনো চেয়ার নেই। টেবিল ভরা শুধু খাবার আর খাবার দেখলাম।এতো খাবার আমরা কিভাবে খাবো?মনে মনে ভাবলাম গরীব দেশের ছেলে বলে কি আমাদের খাদক মনে করেছে?যাই মনে করুক আর না করুক খাবার দেখে আমরা খুব খুশী।দুই একটা খাবার আমাদের দেশীয় খাবারের সাথে একটু মিল থাকলেও অধিকাংশ খাবারই আমাদের দেশীয় খাবারের সাথে মিল নেই।আমাদের টেবিলের চার ধার ধরে বসতে বললে আমার সবাই কুটুম বাড়ীর মতো করে বসে পড়লাম।আগের দিনকার জাপানীজরা এভাবেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাওয়া দাওয়া করতো।আজকাল ডাইনিং টেবিলেই বেশীর ভাগ খাওয়া দাওয়া করে।তবে ৫০বসরের উপরের বয়সের লোকেরা অনেকে এখনো তাদের সেই প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।আমাদের কে একটা একটা করে খাবারের নাম বলে আর খেতে বলে।এত নাম শুনে তো আর এখন মনে রাখতে পারব না।তাই নাম মুখস্ত করার চেয়ে আমরা খাওয়ার দিকে বেশি মনোনিবেশ করলাম প্রথমে আমদের দেশীয় খাবারের সাথে মিল আছে এমন খাবার দিয়ে শুরু করলাম।আর বড়ো ভাইদের পরামর্শ মতো তোতাপাখির মতো বলতে থাকলাম ঐশী ঐশী(খুব সুস্বাদু)আর ওকাসান ও খুশীতে গদোগদ হয়ে বলতে থাকলো আরিগাতো আরিগাতো (ধন্যবাদ ধন্যবাদ).ওকাসান এর কাছে খাবারের নাম জানতে
চাইলে বললো এটার নাম তেনপুরা।
জাপানীজ স্টাইলে ফ্রাই করা খাবার।বিভিন্ন ভেজিটেবল,মাছ জাপানীজ স্টাইলে ফ্রাই করা।আমাদের দেশীয় ফ্রাই করার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে আমরা দেশীয় মসলা ইউজ করি আর এরা জাপানীজ মসলা ইউজ করে।অনেক বিদেশীর কাছে তেনপুরা খুবই প্রিয় খাবার।প্রথম প্রথম এই খাবারটা বেশি ভালো লাগে কারণ অন্য খাবার একটু আলাদা টেস্ট হওয়ায় অন্য খাবারে অভ্যস্থ হতে একটু সময় লাগে।তাই তেনপুরা প্রথম থেকেই আমাদের কাছে খুব প্রিয় খাবার হয়ে উঠে।ঘরের মধ্যে আমাদের ৯জনের ঐশী ঐশী,ওকাসান এর আরিগাতো আরিগাতো আর খাবারের শব্দে বেশ ছন্দময় হয়ে উঠলো পরিবেশটা।এরই মধ্যে আরেকটা খাবার আমাদেরকে খেতে বলা হলো।খাবার দেখে বুঝতে পারলাম এটা মাছ।কিন্তু রান্নাকরা মাছ না,কাঁচা মাছ।
কাঁচা মাছ দেখেই তো আমরা এদিক ওদিক মুখ চাওয়া চাওয়ী শুরু করলাম।এই কাঁচা মাছ সমন্ধে যেহেতু আমাদের কোনো ধারনা নেই তাই আমাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে দেশীয় কাঁচা মাছের কথা আর ভাবতেছি এই কাঁচা মাছ খেয়েও আমাদেরকে বলতে হবে ঐশী ঐশী।বড়ো ভাইরা যে আমাদেরকে কি জাপানীজ আদব শিখিয়ে দিলো আজকে?ওকাসান খেতে বললো।বললো এটার নাম সাসিমি।সহজ ইংরাজীতে বললো জাপানীজ দের কাছে খুব প্রিয় খাবার এবং বেশ দামী খাবার। আমরা একটু অল্প অল্প করে খেয়ে বলতে থাকি ঐশী ঐশী।আর বড়ো ভাইদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছি।কি দরকার ছিল আমাদের জাপানীজ এই আদব শিক্ষা দেবার।ঐশী না হলেও আমাকে বলতে হবে ঐশী।তবে আগেরবার থেকে আমাদের ঐশী বলার টোনটা একটু চেঞ্জ হয়ে গেলো। একজন মুখের মধ্যে নিয়ে মুখটা বন্ধ করে বলতেছে ঐশী।ছোটো ছেলেমেয়রা যেমন মুখের মধ্যে খাবার নিয়ে বকবক করে বেড়ায় আমাদের অবস্থাও হলো তাই মুখের মধ্যে কাঁচা মাছ নিয়ে না খেয়ে বলতেছি ঐশী ঐশী।আমার আবার ঐশী বলার শব্দটা একটু জোরে হয়ে গিয়েছিলো অন্যদের তুলনায়।যা হবার তাই হলো।এক প্লেট আমার সামনে দিয়ে বলে খাও খাও। আমর তো উপায় নেই এখন।মুখের ভিতরে রাখা খাবার তো আল্লাহর নাম নিয়ে গিলে ফেললাম।আবার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসলো ঐশী।okasan আমার সামনে হাত দিয়ে প্লেট ধরে রেখেছে কখন আরেকটা নিবো।সব ফোকাস এখন আমার দিকে আর বন্ধুরা এই সুযোগে আবার তেনপুরা খাবার খেতে শুরু করেছে।এই ভাবে কতটুকু গেছে আমার মনে নেই।তবে একসময় আমার পেটে মোচড় দেয়া শুরু করে,চোখে পানি ছলছল করতে থাকে,ঐশী বলার টোনও ক্ষীনও হতে থাকে।আমার কাঁদোকাঁদো অবস্থা দেখে পাশের বন্ধু পরামর্শ দিলো তুই টয়লেট থেকে একটু ঘুরে আয়।একটু দেরী করে আসিস।আমি টয়লেটে গেলাম।অটোমেটিক কেঁদে ফেললাম।রুমাল দিয়ে চোখ মুছে অনেকক্ষণ পর আবার বসলাম।দেখলাম খাবারের মেনু অন্য দিকে ঘুরে গেছে।বললাম আর যদি কখনো এই কাঁচা মাছ খাই?আর জাপানীজদের কে জাপানীজ আদব শিখিয়ে ছাড়বো।আমাদের দেশীয় খাবারে এক গাদা লবন দিয়ে খেতে দিয়ে দেখবো মুখ দিয়ে ঐশী কেমনে বের হয়?
আল্লাহ হাফেজ
বিষয়: বিবিধ
৩২৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন