জাপানের মাটিতে প্রথম দিনে পুলিশের ভয়ে চুপসে গেলাম।

লিখেছেন লিখেছেন সাইদ ১২ জুন, ২০১৩, ০৮:০২:৪২ সকাল



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

আসসালামুআলাইকুম wrwb.

১৯৯৮সালের পহেলা এপ্রিল সব আত্বীয় স্বজন ছেড়ে পরেরদিন টোকিও তে সকালে পৌছালাম।দিনটা ছিলো বেশ ঠান্ডা।চার ডিগ্রী এর মতো তাপমাত্রা ছিলো।এতো ঠান্ডা হবে কেউই বুঝতে পারেনি।শীতের পোশাক সব লাগেজে থাকায় সবাই একটু আফসোস করতে ছিলাম। যাইহোক বিকালের মধ্যে আমাদের থাকার জায়গা Komaba-Tōdaimae (পাশেই টোকিও ইউনিভার্সিটির কমাবা কাম্পাস)এর ইন্টারন্যাশনাল ডরমিটোরি উঠলাম।আমাদের এক সিনিয়র ভাই সব কিছুই হেল্প করলো।রাতে খাবারের জন্য সিনিয়র ভাইটি আমাদেরকে রেস্টুরেন্ট নিয়ে গেল।আমাদের ট্রেন স্টেশন (Komaba-Tōdaimae) থেকে দুই স্টেশন দুরে shibuya তে গেলাম।টিকেট কাটলাম ১৩০ ইয়েন এর মতো হবে।ভাবলাম অনেকদুর হবে হইতো।একটু মজা করে ট্রেন ভ্রমন করা হবে।নতুন এসেছি তাই মাথার মধ্যে সবময় দেশের জিনিসের দাম গিজগিজ করছে। কিছু একটা খরচ করতে গেলে প্রথমেই ভেসে উঠে দেশের জিনিসের দামের কথা।এটা অবশ্য আমার একার নই।প্রথম প্রথম সবারই এই সমস্যা দুই এক মাস ফেস করতে হয়।এখন দেশের জিনেসের যা দাম, নুতন যারা আসছে তাদের আমাদের মতো অবস্থা হইতো হয়না।যাইহোক আমরা ট্রেন এ উঠলাম।ট্রেনে বসার জন্য সিট খুজতে না খুজতেই ভাই বললো পৌছে গেছি সবাই নামো।এতো দেখি মগের মুল্লক এর দেশে এসে পড়লাম।ট্রেনে উঠতেই পারলাম না আর ১৩০ ইয়েন কেটে নিল।আর বড়ো ভাইয়ের আক্কেল ই বা কি?এতো নিকট হওয়া সত্বেও উনি আমাদের ১৩০ ইয়েন খসিয়ে নিলেন।কেবল ১৯বসর বয়স মাত্র।একটা দৌড় দিতে বললেই তো আমরা মনে হয় ট্রেন এর আগে পৌছে যেতাম।যাইহোক স্টেশন এ নামার পর রাস্তায় নামলাম।সিগনাল রেড থাকায় আমরা রাস্তা পারের জন্য wait করছিলাম।পথচারীর সিগনাল সবুজ হওয়ার পর আমরা হাটতে শুরু করলাম।হাটার সময় বুঝতে পারলাম,পিপড়ার মতো করে চারদিক থেকে লোকজন হাটতেছে।সিগনালে wait করার সময় কাউকে তেমন চোখে পড়লো না আর এখন দেখি লোকে লোকারণ্য। shibuya crossing পার হয়ে আমরা আবার ভাইয়ের পিছপিছ হাটতে শুরু করলাম।সবারই বাড়ীর জন্য একটু মন খারাপ করছিলো,তাই একটু হালকা হওয়ার জন্য আমরা সবাই একটু একটু করে গল্প করতে ছিলাম।বাঙালি দুইজন হাটলেই তার পাশ দিয়ে গেলে বোঝা যায় আমাদের কণ্ঠনালীর জোর।সেখানে আমরা আজ ১০জন গল্প করতেছি।

হটাৎ করে বড় ভাই বলে উঠলো চুপ! আস্তেআস্তে কথা বলতে তানাহলে পুলিস এসে ধরে নিয়ে যাবে।কথা শুনে আমরা তো চুপ হয়ে গেলাম।চুপিচুপি তো আর গল্প হয়না।সনাতন ধর্মের হয়েও আমাদের ধর্মকে সম্মান করে তিনি হালাল খাবার এর রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে গেলেন।রেস্টুরেন্ট এর খাবার এর দাম দেখেই তো চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেছে আমাদের।কম দামের টা খেলেও এক হাজার ইয়েন।কম দামের টাই আমরা খেলাম।খাওয়া শেষে টাকা দেওয়ার সময় ভাই দেখি কি একটা কার্ড বের করে দিলো।তারপর আমাদের কে বললো চলো ফিরে যাই।আমরা বললাম টাকা? বললো এই কার্ডে অনেক টাকা আছে,ওখান থেকে দিয়ে দিলাম।ভাইকে বললাম ভাই একটু কার্ড টা দেখান না? ভাই আমাদের হাতে দিলো আর আমরা উলট পালট করে কার্ড দেখতেছি কিন্তু টাকা কথাও খুঁজে পেলাম না।আচ্ছা আপনি আমাদের যখন খাওয়াবেন তখন আমাদের আগের থেকে একটু বলবেন না?আর একটু ভালো মন্দ খেতে পারতাম এই আর কি।পুলিসের ভয়ে আমরা চুপি চুপি ডরমিটোরি তে ফিরলাম তারপর দেখি ভাই অন্য কয়েক ভাইয়ের সাথে রাস্তায় পুলিসের ভয়ের ঘটনা বলছে আর সবাই হো হো করে হাসতেছে।বুঝলাম নতুন পেয়ে ভাই আমাদের কে রাস্তায় আবুল বানিয়ে ছেড়েছে।

বাংলাদেশে বাবা মাকে রেখে এসেছি তাই আমাদের জন্য এখানে হোস্ট ফ্যামিলি ঠিক করে রাখা হয়েছে।এই ফ্যামিলির প্রধান কে আমরা otosan (বাবা) এবং দ্বিতীয় প্রধান কে okasan (মা )বলে ডাকি।এদের বয়স আমাদের বাবা মার বয়সের মতো।তবে okasan ই মূলত আমাদের অনেক কাজে সাহায্য সহযোগিতা করতেন।এক বড়ো ভাই বললো তোমাদের সবাইকে হোস্ট ফ্যামিলি থেকে দাওয়াত করা হয়েছে।হোস্ট ফ্যামিলি তে গিয়ে কি করবো না করবো তার আদব কায়দা আমাদের শিখিয়ে দিচ্ছেলেন।বয়স ১৯হলে হবে কি জাপান এ তো আমাদের বয়স মাত্র কয়েকদিন হচ্ছে।আমাদের কাজ হচ্ছে বড়ো ভাইদের পরামর্শ শোনা আর সেইমতো কাজ করা।এক বড়ো ভাই বললো জাপানীজদের একটা আদব হচ্ছে কোনো কিছু একটু খেয়েই ঐশী (খুব স্বাদ লাগছে,খেতে খুব মজা লাগছে )বলা।তোমাদের ভালো লাগুক আর না লাগুক খাবার সময় ঐশী বলতে তোমরা যেনো ভুল করবা না।খাবা আর মাঝে মাঝে ঐশী বলবা।তাহলে okasan খুব খুশী হয়ে যাবে।আর মুখে সব সময় একটা হাসি হাসি ভাব নিয়ে রাখবে।okasan আমাদের নিতে এসেছে। আমরা তার সাথে বাসায় গেলাম।আজকে আমাদের জাপানীজ খাওয়ার উদ্বোধন হবে তাই আমাদের সবার মাঝে এক ধরনের খুশী খুশী ভাব---------পরবর্তী পর্বে জাপানীজ খেতে গিয়ে আমার হাসি হাসি মুখ কেমন করে কেঁদো কেঁদো মুখ হয়ে গেলো

বিষয়: বিবিধ

১৭৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File