জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী স্টুডেন্টদের পড়ালেখার সুযোগ সুবিধা এবং প্রতিবন্ধকতা

লিখেছেন লিখেছেন সাইদ ১০ জুন, ২০১৩, ০১:৫৫:১৩ দুপুর



গত পর্বে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্মন্ধে বর্ণনা করেছিলাম।এই পর্বে জাপানের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ইনশাল্লাহ কিছু বর্ণনা করব।

জাপানেরর বিশ্ববিদ্যালয়:সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়,মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশেষ কিছু বিষয়(যেমন:ইকোনমিক্স,ডেন্টাল ইত্যাদি)ভিত্তিক ছোটো বড়ো সব মিলিয়ে প্রায় ৭৮০টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে।পাবলিক এবং স্থানীয় সরকারী মিলে ১৮০টি বাকীগুলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়।এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩০ লাখ স্টুডেন্ট আছে যাদের মধ্যে বিদেশীদের সংখা ১লাখ ৪০হাজারের মত।এদের মধ্যে চায়না,কোরিয়া এবং তাইওয়ান মিলে ৭৮%,১৪%এশিয়ার অন্যান্য দেশ এবং বাকী ৮%বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে।আমাদের দেশের প্রায় ১০৫২ভাইবোন পড়াশোনা করছেন।সংখায় কম হলেও পাশের কয়েকটি দেশ।ভারত,পাকিস্থান,শ্রীলংকার তুলোনায় আমরা প্রায় ডাবল।

জাপানের বিশ্ববিদ্যালয় এবং ছাত্রদের পরিসংখ্যান

বিদেশী ছাত্রদের পরিসংখ্যান

বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে জাপানীজ ছাত্রদের সম্মন্ধে এক কথায় বললে "এরা theoretical ক্লাসে যতটা অমনোযোগী ঠিক প্রাকটিক্যাল ক্লাস অথবা রিসার্চে ততোটাই মনোযোগী।আবার ছাত্র জীবনে যতটা পড়াশোনার প্রতি অমনোযোগী ঠিক ততোটা কর্মজীবনে মনোযোগী।"

বিদেশী স্টুডেন্টদের জন্য প্রধান প্রতিবন্ধকতা: শিক্ষার মাধ্যম জাপানীজ হওয়ার কারণে,পশ্চিমা কিংবা আমাদের মতো দেশের ভাইবোনেরা জাপানে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখায়না।বিশেষ করে অনার্স এবং মাস্টার্স কোর্সে theoretical ক্লাস বেশী থাকার কারণে এইসকল কোর্সে এদের উপস্থিতি খুবই নগন্য।রিসার্চ(মূলত পিএইচডি) কোর্সে জাপানীজ ভাষা খুব একটা বাধা হয়ে না দাড়ানোর কারণে,এই কোর্সে অনেক ভাইবোনদেরকে আসতে দেখা যায়।জাপানীজ ভাষা শিক্ষার জটিলতার এই সুযোগটি চায়না এতদিন এক চেটিয়াভাবে নিয়ে আসছিল।যারফলে অনার্স,মাস্টার্স কোর্সে এদের পদচারণা অনেক বেশী।মুলত জাপানীজ বর্ণমালা (কানজি)চাইনীজ বর্ণমালা থেকে এসেছে।যার ফলে চাইনীজদের জাপানীজ ভাষায় কথা বলা,লেখা,পড়া কোনো কিছুতেই বেগ পেতে হয়না।মজার ব্যাপার হলো ক্ষেত্র বিশেষ জাপানীজদের থেকেও চাইনীজরা ভালোভাবে পড়তে এবং লিখতে জানে।পশ্চিমা দেশ অথবা আমাদের দেশের মতো ভাইবোনরা কষ্ট করে কথা বলাটা রপ্ত করতে পারলেও পড়া এবং লেখাটা রপ্ত করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।এটা রপ্ত করতে হলে সব কিছু বাদ দিয়ে এক থেকে দুই বছর শুধু জাপানীজ ভাষায় মনোযোগদিতে হবে এবং পুরোপুরি নিজের অর্থায়নে (স্বল্প সংখ্যক MEXT স্কলারশীপ আছে) শিখতে হবে।এতসব প্রতিকুলতার কারণে অনার্স এবং মাস্টার্স কোর্সে বাংলাদেশী এবং পশিমা দেশের ভাইবোনদের

সংখা খুব কম।তবে মালয়েশিয়া ভাইবোনদের সংখা অনেক বেশি। মালয়েশিয়া সরকার তাদের নিজ দেশের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য জাপানীজ ভাষা শিক্ষা থেকে শুরু করে জাপানে পড়ালেখার জন্য যাবতীয় খরচ বহন করে।

বিদেশী স্টুডেন্টদের জন্য জাপান সরকারের পদক্ষেপ: সরকারও বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের ভাষাগত সমস্যার কারণে জাপানে পড়ালেখার প্রতি অনাগ্রহ বুঝতে পারছে।তাই বিদেশী শিক্ষার্থীদের কাছে জাপানকে আগ্রহী করে তোলার জন্য আস্তে আস্তে হলেও সরকার অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।তারই একটা পদক্ষেপ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংলিশ মাধ্যমের কোর্স চালু করা।২০০০ সালের দিক থেকে হাতে গোনা কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংলিশ মাধ্যমে সীমিত আকারে বিদেশীদের জন্য মাস্টার্স কোর্স চালু করে।যার ফলে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং বাংলাদেশী ভাই বোনেরা মাস্টার্স কোর্সে পড়াশোনা করতে আসছে।জাপানীজদের জনসংখা দিনদিন (বিয়ের প্রতি অনাসক্তি,বাচ্চা নেয়ার প্রতি অনাসক্তি,শিশুদের তুলনায় বৃদ্ধদের সংখা বেড়ে যাওয়ার কারণে) যেভাবে কমে যাচ্ছে তাতে সামনে ২০-৩০বছরের মধ্যে এদেরকে দক্ষ শ্রমিক এর অভাববোধ শুরু করতে হবে।জাপান সরকারও বুঝতে পারছে তাদেরকে গ্লোবাল মার্কেটে টিকে থাকতে হলে বিদেশী দক্ষ শ্রমিকদেরকে জাপানের প্রতি আকৃষ্ট করাতে হবে।এই কারণেই ২০০৮সালে গ্লোবাল ৩০ নামে একটা প্রোগ্রাম চালু করে।উদ্দেশ্য বর্তমানের ১লাখ ৪০হাজার বিদেশী স্টুডেন্ট এর সংখা ২০২০সালের মধ্যে তিন লাখে উপনীত করা।এই প্রোগ্রাম এর প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে অনার্স,মাস্টার্স,পিএইচডি সকল কোর্স ইংরাজী মাধ্যমে পড়াশোনা করানো হবে। বর্তমানে বেশ নাম করা ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমিত বিভাগে G -৩০ প্রোগ্রাম চালু থাকলেও আস্তে অস্তে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও চালু হওয়ার সম্ভবনা বেশী এবং পড়ালেখা করার বিভাগও দিন দিন বৃদ্ধি পাবে ধারণা করা যায়।গ্লোবাল-৩০প্রোগ্রাম সম্মন্ধে নিচের লিংকে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

বিদেশীদের জন্য ইংরাজী মাধ্যমে ডিগ্রী প্রদানকৃত বিশ্ববিদ্যালয়

এখানে শুধু সামারিটা উল্লেখ করব।

অনার্স কোর্স:পড়ালেখার মাধ্যম ইংলিশ হওয়ায় অন্যান্য পশ্চিমা দেশের মতো ইংলিশ এর প্রতি দক্ষতা প্রমানের certificate (TOFEL,TOEIC etc)লাগবে।দেশে ইংলিশ মিডিয়াম এর ভাইবোনদের এটার প্রয়োজন নেই।admission ফি,tution ফি ফ্রি ছাড়াও প্রতি বছর পাঁচ লাখ ইয়েন সমমানের এককালীন একটা স্কলারশীপ দেওয়া হয়ে থাকে।একটু হিসেবী হলে৭০%-৮০% এর মতো খরচ স্কলারশীপ এর টাকা দিয়েই মেটানো সম্ভব।

বাকী ২০%-৩০%এর মতো খরচের জন্য প্রথম দিকে একটু কষ্ট হলেও ইনশাআল্লাহ পরবর্তিতে ব্যাবস্থা করে নেওয়া সম্ভব।সপ্তাহে ১০ঘন্টা(সপ্তাহে ২৮ঘন্টার অনুমতি পাওয়া যায়)করে পার্ট টাইম ম্যানেজ করতে পারলে আল্লাহর রহমতে সমস্যা হওয়ার কথা না।

মাস্টার্স এবং পিএইচডি কোর্স:admission ফি,tution ফি ফ্রি ছাড়াও প্রতি বছর দশ লাখ ইয়েন সমমানের এককালীন একটা স্কলারশীপ দেওয়া হয়ে থাকে যাতে মোটামুটি স্বাচ্ছন্দে চলে যওয়ার কথা। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে আসার জন্য এয়ার টিকেট দেওয়া হয়।আগ্রহী ভাইবোনদের জন্য উপরেরে লিংকে প্রতিটি G -৩০প্রোগ্রামের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লিংক দেওয়া আছে,সেখান থেকে ভর্তি সিস্টেম,কোন বিভাগে ডিগ্রী নেওয়া যাবে সহ বিভিন্ন ধরনের ইনফরমেশন দেওয়া আছে।এতদিন যেসব প্রাইভেট সংস্থা জাপানের মধ্যে পড়াশোনারত স্টুডেন্টদের স্কলারশীপ অফার করতো তাদের মধ্যে কিছু কিছু সংস্থা জাপানে আসার আগেই স্টুডেন্টদের স্কলারশীপ অফার করছে।যেমন সাম্প্রতিক রোটারী ক্লাব জাপানে পড়াশোনা করতে আসার আগেই স্কলারশীপ এর অফার করতেছে।সংখায় সীমিত হলেও সামনে হয়তো এই ধরনের সংখা যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি স্কলারশীপের সংখাও বৃদ্ধী পাবে বলে আশা করা যায়।রোটারি ক্লাব এর স্কলারশীপ সম্মন্ধে বিস্তারিত নিচের লিঙ্কে জানতে পারবেন।

রোটারি ক্লাব এর স্কলারশীপ

বিদেশী ছাত্ররা পড়ালেখা শেষ করে জাপানে যাতে সহজে কর্মজীবন শুরু করতে পারে তারজন্যও সরকার অনেক পদক্ষেপ নিচ্ছে।তারই অংশ হিসাবে সরকার গতবছর থেকে বিদেশীদের ভিসা সিস্টেমও সহজীকরণ করেছে।সর্বোচ্চ ভিসার মেয়াদ তিন বছর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করেছে।ক্রমান্বয়ে সুযোগ সুবিধা বাড়বে বলেই ধারণা করা যায়।তবে অবৈধদের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল।

বিষয়: বিবিধ

৩৫৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File