জাপানের শিক্ষা ব্যাবস্থা-পর্ব ১(কিন্ডার গার্ডেন থেকে উচ্চমাধ্যমিক)

লিখেছেন লিখেছেন সাইদ ০৩ জুন, ২০১৩, ১১:২৫:৩৭ সকাল



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

আসসালামুআলাইকুম wrwb.

অনেকদিন ধরে জাপানে থাকার কারণে জাপানের সমাজ ব্যাবস্থা সম্মন্ধে আল্লাহর রহমতে কিছুটা হলেও জানার সুযোগ হয়েছে।আলহামদুলিল্লাহ,গত এক বছর ধরে জাপানে ইসলাম প্রচারে (আমাদের এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ) কিছুটা সময় ব্যায় করার সুযোগ আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন।এইদেশে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে আপনাদের কাছ থেকে মুল্যবান পরামর্শ যাতে পেতে পারি তার জন্য আপনাদের সাথে জাপানের সমাজ ব্যাবস্থা সম্মন্ধে কিছুটা শেয়ার করতে চাই।সঠিক তথ্য সহজ ভাবে উপস্থাপন করার জন্য আল্লাহ যেনো আমাকে তৌফিক দেন।আজকের পর্বে জাপানের শিক্ষা ব্যাবস্থার প্রথম স্টেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সংক্ষেপে কিছু বিষয় উল্লেখ করব।

ডে কেয়ার স্কুল এবং কিন্ডার গার্ডেন স্কুল: ডে কেয়ার স্কুলে দুই মাস বয়স থেকে এবং কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে তিন বছর বয়স থেকে ভর্তি করানো যায়।ডে কেয়ার স্কুলগুলো শুধুমাত্র কর্মজীবী মায়েদের বাচ্চাদের জন্য হলেও কিন্ডার গার্ডেন স্কুল সবার জন্য উন্মুক্ত।এখানে বাচ্চাদের খেলাধুলো,গান,ছবি অঙ্কন থেকে শুরু করে রাস্তা পারাপারের নিয়ম কানুনের ন্যায় অনেক সামাজিক আচার আচরনেরও শিক্ষা দেওয়া হয়।তিন বছরের মধ্যেই অধিকাংশ বাচ্চা একা একাই খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে জামা কাপড়,জুতো চেঞ্জ করাতে বেশ পটু হয়ে ওঠে।আমাদের দেশের বাচ্চা গুলোও সবই শিখে কিন্তু কেনো যেনো একা একা খাওয়া শিখতে পারেনা। স্কুলে চাতক পাখীর মতো বসে থাকে মা কখন খাইয়ে দিবে।।দুই মাসের বাচ্চাকে ডে কেয়ারে দিতে দেখলে নিজের কাছে ব্যাপারটা অমানবিক মনে হলেও, যান্ত্রিক জীবনে আমাদের অনেক কেও এই ব্যাপারটা মেনে নিতে হয়।

প্রাইমারী এবং মাধ্যমিক স্কুল:ডে কেয়ার এবং কিন্ডার গার্ডেন এর গন্ডি পেরিয়ে সবাই এপ্রিল মাসে প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হয়।প্রাইমারি স্কুল ছয় বছরের কোর্স এবং মাধ্যমিক স্কুল তিন বছরের কোর্স।এই মোট নয় বছরের কোর্স বাধ্যতামুলক শিক্ষা ব্যবস্থা।যে, যে এলাকায় বাস করে তাকে সেই এলাকার জন্য নির্ধারীত প্রাইমারী এবং মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হতে হয়।তাই অনেকে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার কথা মাথায় রেখে বাড়ি ভাড়া কিংবা বাড়ি তৈরীর জন্য নামী দামী স্কুল আছে ঐ সব এলাকাকে প্রাধান্য দেয়।এলাকা ভাগ করে সবাইকে দল বেধে স্কুলে যেতে হয়।প্রাইমারী স্কুলের ক্ষেত্রে পদব্রজে। প্রতিটি পথচারী পারাপারি পয়েন্টে এলাকার দুই একজন অভিবাবক পালা করে ছেলে মেয়দের কে রাস্তা পার করিয়ে দেয়।উপরের ক্লাসের ছেলে মেয়েদেরকে ফ্লাগ উঠিয়ে নিচের ক্লাসের ছেলে মেয়েদের কে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

মাঝে মাঝে অফিস এ যাওয়ার পথে তাদেরকে পথ পারাপারের জন্য দাড়িয়ে থাকতে দেখলে, পারাপারের জন্য রাস্তা ছেড়ে দিই,তখন রাস্তা পার হয়ে তারা মাথা নিচু করে আরিগাতো (ধন্যবাদ)বলে।ছোটকাল থেকেই এদের মধ্যে যে শৃঙ্খলতা বেড়ে উঠে,বড়ো হয়ে আর কতোই বা ভুলে যাবে।মাধ্যমিক,উচ্চমাধ্যমিক স্কুল গুলো একটু দুরে হওয়াতে বাইসাইকেল,বাসে তারা স্কুলে যায়।আমার কাছে যেটা সবচেয়ে বেশ অবাক লাগে, বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া বাবা মার ইচ্ছা থাকলেও নিজেদের গাড়ীতে করে তারা সন্তানদেরকে স্কুলে দিয়ে আসা এবং নিয়ে আসা করতে পারেনা।আমাদের চোখে যে পার্থক্য গুলো চোখে পড়ার মতো তারমধ্যে ক্লাস নাইন পর্যন্ত কোনো ফেল সিস্টেম নাই।কেউ স্কুলে নিয়মিত গেলেই তরতর করে ক্লাস নাইন এ উঠে যাবে।ইংরাজী শিক্ষা ক্লাস সেভেন থেকে শুরু আর এদের প্রচুর খেলাধুলা,গান, চিত্রাংকন জাতীয় কালচারাল ক্লাস বেশী।প্রাইমারি স্কুল এবং মাধ্যমিক স্কুলে সেন্টার পরীক্ষা দিতে হয় না।নিজের স্কুল এর পরীক্ষাতে পাস করতে পারলে কোনো সমস্যা নেই।

উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল:পড়ালেখার পরিবেশ,পদ্ধতি অনেক কিছু ভালো হলেও স্কুলে অনেকে পড়ালেখার প্রতি বেশ অমনোযোগী।আমার সুযোগ হয়েছিল ছয়মাস মতো ইংলিশ ক্লাসে এদের সাথে সময় কাটানোর।টিচার লেকচার দিচ্ছে,আর অনেক ছাত্র ছাত্রী বেঞ্চের উপরে মাথা দিয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছে।

কোনো মেয়ে আবার সাজুগুজো নিয়ে ব্যাস্ত।আমাদের দেশের মতো ছাত্রদের কল্যাণের জন্য ছাত্র রাজনীতি এখানে নেই!! ছাত্র রাজনীতির চেয়ে ক্লাসে ঘুমিয়ে থাকাটা আমার কাছে খুব একটা খারপ লাগে না।আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই না এখানকার কোনো ক্লাসে ধর্মীয় শিক্ষার কোনো সুযোগ নেই।বিশ্ব ইতিহাস এর মাধ্যমে ধর্মের সাধারন ধারণা ছাড়া এরা বিশেষ কিছু জানেনা।এর কারন জাপানীজরা বিশেষ কোনো ধর্মে বিশ্বাসী না।এরা ধর্ম বলতে প্রকৃতিকে বোঝে।তাই সূর্যকেও এরা প্রভু ভাবে যার কাজ আলো দেওয়া। এইভাবে টাকার জন্য তারা আরেকজনকে প্রভু ভাবে।এদের যে কতজন প্রভু আছে তা এরা নিজেরাও জানেনা।তাই এইদেশে নেই কোনো ধর্মীয় ছুটি।এরা বিয়ের সময় খৃষ্টান রীতি, আবার মৃতের সময় বৌদ্ধ রীতি পালন করে।উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল এর শেষের দিকে আমাদের দেশের মত একটা সেন্টার পরীক্ষা হয়।তবে পাস কিংবা ফেল এর জন্য না।বিশ্ববিদ্যালয় গুলো যাতে ভর্তিচ্ছু ছাত্রদের সংখ্যাকে সীমিত করতে পারে সেই জন্য এই সেন্টার পরীক্ষার রেজাল্ট কে তারা একটা মানদন্ড হিসাবে বিবেচনা করে।

পরবর্তী পর্বে জাপান এর বিশ্ববিদ্যালযে পড়ালেখা নিয়ে লিখবো ইনশাআল্লাহ।

বিষয়: বিবিধ

৩৫৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File