শৈশব এবং কৈশোরের সেই অম্লমধুর দিনগুলো - হাইস্কুলপর্ব -১
লিখেছেন লিখেছেন সাইদ ২২ মে, ২০১৩, ১২:৩৮:০৫ দুপুর
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
আসসালামুআলাইকুম wrwb.
জারা আপুর শৈশবের এর কাহিনী পড়ে অনুপ্রানীত হয়ে লিখতে চেয়েছিলাম শৈশব এবং কৈশোরের সেই অম্লমধুর দিনগুলো।ইচ্ছা ছিলো প্রাইমারী স্কুল থেকে শুরু করা।কিন্তু সময়ের ধারাবাহিকতা রেখে লেখাটা একটু জটিল মনে হওয়ায়,যখন যে ঘটনা মনে হয় তাই লিখব ইনশাআল্লাহ।হাইস্কুল এর পাঁচ বছরে পড়ালেখার সময় স্যারের হাতে বেতের মাইর খায়নি এমন ছাত্র/ছাত্রী খুঁজে পাওয়া হয়তো দুরূহ।শহরের স্কুল এর অবস্থা আমার জানা নেই,তবে গ্রাম্য এলাকার সব স্কুলের স্যারদের কাহিনী মোটামুটি একই রকমের।আজ থেকেআমারই উপরে ঘটে যাওয়া স্যারদের বেত মারার কিছু ঘটনা উল্লেখ করব।তবে স্যারদের বেত মারা অনেক সময় ভালবাসার কারণে ঘটেছে,পড়ালেখা না পারার জন্যও ঘটেছে আবার দুষ্টামীর জন্যও ঘটেছে।
আমার কপালে অবশ্য ভালবাসার কারণে বেতের মার বেশী খেতে হয়েছে।একেক স্যারের মাইরের ধরন ছিল একেক রকম।কোনো স্যার নিজের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে মাইর দিত।মারতে মারতে এক সময় নিজেই হাফিয়ে যেতো।কেউ আবার আস্তে আস্তে সময় নিয়ে মারতো,হয়ত গায়ে শক্তি ছিলো না অথব হাফিয়ে যাওয়ার ভয়ে আস্তে আস্তে মারতো।আরেক শ্রেনীর স্যার ছিলো এরা ডাস্টার দিয়ে মারতো।একেক স্যারের মাইর এর জায়গাও আবার একেক জায়গায়। সব ঘটনাগুলোই উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ প্রতিটি পর্বে।
হাইস্কুল এর প্রথম দিনের ঘটনা।আমরা সবাই নতুন। তাই ক্লাস এর ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক একে অপরের সাথে পরিচিত হচ্ছিলাম।কার কি নাম,কোন গ্রাম থেকে,কোন প্রাইমারী থেকে এসেছি এইসব।সকালে সবগুলো ক্লাস ভালয় ভালয় শেষ হলো।টিফিন শেষে বিকালের ক্লাস শুরু হবে।ক্লাস এর সময় হয়ে গেলেও স্যার ক্লাসে আসছে না দেখে আমরা চুপিচুপি সবার সাথে কুশল বিনিময় করছিলাম।স্যার এর আসতে যতো দেরী হচ্ছিলো ততোই আমাদের মৃদুমন্দ গুঞ্জন বাড়তে ছিলো। এমন সময় হটাৎকরে এক স্যারের রুমে ঢোকা দেখে আমরা সবাই চুপ হয়ে দাড়িয়ে পড়লাম।স্যার কোনো কথা না বলে সামনের বেঞ্চ থেকে শুরু করে শেষ বেঞ্চ পর্যন্ত বেত মেরে চললো।একটার বেশী কাউকে মারলো না।ঐ একটার ঘায়েই অনেকে উহ আহ শব্দ শুরু করে দিলো।মারে একজনকে আর শব্দ করে পাশের জন।রুমের শেষের দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো।ভয়ে ছিলাম আবার প্রথম দরজা দিয়ে ঢুকে শুরু করে কিনা।কিছুক্ষণ পর নতুন এক স্যার আসলো।বুঝতে পারলাম আগের স্যার পাশের রুমে ক্লাস নিচ্ছিল।আমরা তো সবাই আগের ঘটনায় চুপ মেরে বসে আছি।স্যার প্রথমে তার পরিচয় দিলো।
স্যার বললো তোমরা তো দেখি খুব ভালো,তোমাদের রুমে আসার সময় করিডোর থেকে কোনো শব্দই পেলাম না।স্যারের হাতে বেত না দেখে মনে মনে খুব খুশী হলাম।প্রথম থেকেই স্যারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার এক ধরনের চেষ্টা আমার ছিলো।স্যার এর হাতে বেত না দেখে সাহস করে বললাম স্যার পাশের ক্লাস রুমের
স্যার কিছক্ষণ আগে আমাদের সবাইকে প্যাদানী দিয়ে গেছে তাই আমরা সব চুপ করে বসে আছি।আমার কথা বলার পরই স্যার বলে তুমি দাড়াও।আমি দাড়ালাম।স্যার আমার নাম,গ্রামের নাম, আব্বার নাম, স্কুলের নাম জানতে চাইলো।আমি তো খুশী স্যার এর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারার জন্য।স্যার এর সব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পর স্যার বললো তুমি কিছুক্ষণ আগে কি বললা যেনো?এইবার স্যারের টোন দেখে তো ভয় পেয়ে গেলাম।বললাম স্যার আমাদের কে পাশের রুমের
স্যার মাইর দিছে। স্যার বললো তুমি মাইরের বদলে কি যেনো বলতেছিলে?বললাম স্যার ভুল হয়ে গেছে আর বলবো না।না তুমি আর একবার বলো আমরা সবাই তোমার কথা আর একবার শুনতে চাই।পিছনের বেঞ্চের অনেকে তোমার কথা শুনতে পারেনি।বারবার বললাম স্যার মাফ করে দেন।এই কান ধরে বলছি এই
রকম ভুল আর হবে না।স্যার বললো বেশী যদি মাইর না খেতে চাও আরেক বার বলো তোমার ঐ মধুর বাণী।মাইর খাওয়ার ভয়ে আস্তে আস্তে বললাম স্যার
প্যাদানী।তোমাদের প্রাইমারী স্কুলে স্যাররা এই শিক্ষা দিয়েছে?স্যারদের সাথে কোন ভাষায় কথা বলতে হবে সেটা কি এখন শিখাতে হবে তোমাদের?এই স্যার আবার আমার আব্বাকেও চেনে।বলে তোমার আব্বা কে আমি বলবো।আমার এই ঘটনাতে ক্লাস এর পরিবেশটা ভারী হয়ে গেলো।স্যার পিছনের বেঞ্চ থেকে একজন স্বাস্থ্যবান ছেলেকে সামনে আসার জন্য ডাক দিলো।তাকে বললো এর দুই কান ধরে দশ বার ডলে দাও।ভালো করে শক্ত করে ডলে দিবা তা নাহলে তোমার কান ওকে দিয়ে ডলিয়ে নিব।আর আমাকে বললো প্রত্যেক বার কান ডলার সময় জোরে জোরে বলবা আমি স্যারদের সাথে ভালো ভাষায় কথা বলবো।স্যারের যেমন কথা তেমন কাজ শুরু হলো।ক্লাস শেষে পিছনের ছেলেটা এসে বললো।দোস্ত কিছু মনে করিসনা।সবাই আমাকে সান্তনা দিতে
আসে।এ তো সান্তনা না আমার কাছে মনে হচ্ছিল সবাই আমাকে নিয়ে হাসি তামাসা করছে। তবে ক্লাস সেভেন এ আমি যখন ফার্স্ট হলাম,তখন এই স্যারই
আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে বলে তুই যখন তোর আব্বার নাম আর গ্রামের নাম বললি,তখন আমি তোকে চিনতে পারলাম।আমার খুব রাগ উঠে
গিয়েছিলো।একজন মুক্তিযোদ্ধার ছেলে হিসাবে আমি তোর ভালো চেয়েছিলাম।তোর আব্বা আমার খুব ভালো বন্ধু।গ্রামের স্যাররা যখন কোনো ছাত্রকে খুব ভালবাসে তখন তাকে তুই বলে ডাকে।
যাইহোক স্কুল শেষে যখন বাড়ি ফিরে শার্ট খুললাম, তখন মা পিঠ দেখে বলে তোর পিঠে দাগ কিসের।
আমি বলি কোথায় দাগ?মা কাছে গিয়ে দেখে বেতের দাগ বসে আছে আর জায়গাটা লাল হয়ে গেছে।বললাম আজকে এক স্যার সবাইকে মাইর দিছে।আমরা একটু জোরে জোরে কথা বলছিলাম তাই।মা বললো স্যাররা তো তোদের ভালোর জন্যই মারে।ভালো করে পড়ালেখা করলে দেখবি এই স্যাররাই কতো আদর করবে।আসলে তাই,মার কথায় ঠিক ছিলো।একবছর পরই মায়ের কথার ফল দেখতে পেলাম।তবে এখনকার বাবা মা আর আগেকার বাবা মার মতো কথা বলে কিনা জানিনা।তবে একশ্রেনীর লোকদের ছেলে মেয়েদেরকে যদি স্যাররা মারে,তবে তাদের আত্বীয় স্বজনেরা এসে ঐ স্যারের বারোটা বাজিয়ে দেয়।আগে প্রবাদ ছিল পড়ালেখা করে যে গাড়ী ঘোড়া চড়ে সে।দিন বদলের বাংলাদেশে প্রবাদও পালটিয়ে গেছে।এখন মারামারি কাটাকাটি করে যে গাড়ী ঘোড়া চড়ে সে।তাই এখনকার এক শ্রেনীর ছেলেমেয়ারা ভাবে শুধু শুধু টিচারদের হাতে মাইর খেতে যাবো কেনো?যে ছেলে মেয়েরা শিক্ষদের সন্মান দিতে জানে না বা দেই না তাদের কাছ থেকে জাতি কিই বা আশা করতে পারে? জাতির দুর্ভাগ্য যে এক শ্রেনীর কিছু ছেলেমেয়ে এবং তার আত্ত্বীয় স্বজনদের কাছে পুরো জাতিটা বন্দী হয়ে আছে।তাইতো দেখি একদল নামধারী ছাত্রর তাড়া খেয়ে আজ কলেজ এর টিচার প্রাণভয়ে দৌড়াচ্ছে প্রাণ বাঁচানোর জন্য।আর আমাদের দেশের প্রভাবশালীরা বলে দৌড়ের প্রতিযোগীতা হচ্ছিলো আর আমাদের ছেলেরা স্যার কে সন্মান করে ফার্স্ট বানিয়ে দিচ্ছে।স্যারকে কিভাবে সন্মান করতে হয় আমাদের ছেলেদের কাছে তোমরা শিক্ষা নিতে পারো।আর যারা স্যারকে সন্মান করে আগের দিনকার প্রবাদ মেনে অনেক কষ্টে নিজেকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলছে, তাদের শুনতে হচ্ছে you are not fit for the society আমরাও বলতে চাই yes we are not fit for this dirty society, we are trying to build a good society.
ইনশাআল্লাহ সামনের পর্বে আর কয়েকটা স্যারের মাইরের ঘটনা নিয়ে লিখবো
বিষয়: বিবিধ
২১১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন