আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্তা এবং ইসলাম।

লিখেছেন লিখেছেন সাইদ ১০ মে, ২০১৩, ০৯:০০:০২ সকাল



বাংলাদেশের উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর পাঠ শেষ করে আমি জাপানে আসি পড়ালেখা করার জন্য।এরই মধ্যে হইতো শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হযেছে ।আমি আমার প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্তা থেকে কতটুকু ইসলাম শিক্ষা অর্জন করতে পেরেছি তারই আলোকে কিছু একান্তই নিজের কথা বলতে চাই।জাপান এ না আসলে হইতো আমার এ উপলদ্ধি আসতো না।একান্তই নিজের ব্যক্তিগত জীবন থেকে নেয়া তাই অনেকে দ্বীমত হতে পারেন।প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্তা থেকে ইসলাম শিখতে না পারার জন্য হইতো আমিই দায়ী ,সেটা হলে আমি খুশি হব।তবে আমার মত সব ভাইবোনদের যদি একই অবস্তা হয় তাহলে আল্লাহ এর কাছে সাহায্য চাই ,আল্লহ যেন আমাদের এমন শাসকদল নিযুক্ত করার তৌফিক দান করেন যাতে আমরা ইসলাম এর সঠিক শিক্ষা অর্জন এবং বাস্তব জীবনে তার প্রতিফলন ঘটাতে পারি।

ছাত্র হিসাবে ভালই ছিলাম তাই

শিক্ষকরা খুব আদর করত।তৃতীয় শ্রেণী থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম পড়ালেখা করেছি।বাংলা,ইংরাজি এর মত পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাবার জন্য ইসলাম ধর্ম শুধু মুখুস্তই করতাম।ইসলাম যে একটা পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান তা শিখলাম প্রচলিত সকল ডিগ্রী অর্জন করার পরে চাকুরী জীবনে এসে।তাও আবার বিধর্মীদের প্রশ্নের বাণে জর্জরিত হয়ে।এই বিষযে ইনশাআল্লাহ নতুন একটা লেখার ইচ্ছা আছে। ছোটো বেলায় বাবা মা বলতো নামাজ না পড়লে আল্লাহ রাগ করবে।আল্লাহ রাগ করলে তাতে আমার কি?এই প্রশ্ন করলে বলতো ওই কথা মুখে আনতে নেই বাবা।বাবা মাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।তাদের বাবা মাও হইতো তাই বলতো।মনের ভিতরে অনেক প্রশ্নের উত্তর পেতাম না।আজকে আমার তিন বছরের বাচ্চার হাজার প্রশ্ন শুনে বুঝতে পারি,ছোটদের জানার কি তীব্র আগ্রহ।যে সময় আমাদের শিক্ষার তীব্র আগ্রহ থাকে,সেই সময়টাকে ইসলাম শিক্ষায় আমাদের শাসকরা কতটুকু শিক্ষা দিতে পেরেছে?আমরা কেন নামাজ পড়ি তা জানিনা ,নামাজ পড়লে পূণ্য ছাড়া আর কি হয় জানিনা।মাধ্যমিক বিদ্যালয় এ ৫বছর কাটালাম।শুধু মুখস্ত করে গেলাম নামাজ পড়া ফরজ কিন্তু জোহরের নামাজ তো বিদ্যালয় এ কোনো একজন ছাত্র কে পড়তে দেখলাম না।নিজেও কখনো পড়লাম না।নামাজ পড়ার জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্তা নেই।হে আমার রব তুমি তো ক্ষমাশীল ,তুমি আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিও।

বিজ্ঞান ক্লাস এ এসো নিজে করি বলে কত প্রাক্টিকাল করলাম, কিন্তু আমাদের কখনো করা হলো না এসো নামাজ পড়ি ,এসো কুরআন পড়ি ,এসো হাদিছ পড়ি।আল্লাহ মানুষকে তার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন।নামজ পড়তে তো দিনে ১ঘন্টাও লাগেনা।তাহলে বাকি ২৩ঘন্টা কি নিজের মতো চললেই হবে?২৪ঘন্টা কিভাবে আল্লাহ এর ইবাদত করতে হবে এই শিক্ষা কি আমরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় এ অর্জন করার অনুপুযুক্ত ছিলাম?আমাদের শাসকরা কি আমাদের স্কুল এর ছেলেমেয়েদের কি এতই গাধা মনে করে যে আমরা এই গুলো অর্জন করতে পারব না।নাকি এই শিক্ষা শুধু মাদ্রাসা এর ছেলেমেয়েরা শিখবে আর আমাদের ইংরাজি,সাহিত্য,বিজ্ঞান শিখলেই হবে?আজ হাজারো প্রশ্ন জাগে ?কেন প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্তায় আমাদের ইসলাম এর সঠিক শিক্ষা এবং জীবনে তার প্রতিফলন ঘটানোর শিক্ষা ব্যবস্তা নাই?নাকি আমাদের শাসকরা মনে করে এই গুলো শিখলে বিজ্ঞান,গণিত,ইংরাজী তে আমাদের ছেলেমেয়েরা দুর্বল হয়ে যাবে? জাপানীজ রা নিজের মাতৃভাষা ক্লাস নাইন পর্যন্ত শিখেও শেষ করতে পারেনা।এত জটিল একটা ভাষা যা লিখতে বা বুঝতে সারাজীবন তাদেরকে মাঝেমাঝে ডিকশনারী এর সাহায্য নিতে হয়।তারা যদি মাতৃভাষা এত সময় ধরে শিখেও ,বিজ্ঞান,ইংরাজি,গণিত এ আমাদের থেকে দুর্বল?আল্লাহ এর অশেষ করুনায় আমরা ক্লাস টু এর মধ্যেই বাংলা ভাষা বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করে ফেলি।ইসলাম শিক্ষা এর জন্য কি আমাদের শাসকরা আর একটু সময় এবং ইসলাম ভিত্তিক জীবন ব্যবস্তা শিক্ষা দিতে পারেনা?ইসলাম এর শিক্ষা সঠিক ভাবে শিখলেই তো সেই ছেলেমেয়েরা আল্লাহ এর সন্তষ্টি লাভের জন্য ভালো ছাত্র হবার চেষ্টা করবে, বাবামাকে সন্মান করবে,শিক্ষককে সন্মান করবে,একে অপরকে ভালবাসবে,কোনো হিংসা থাকবেনা,আল্লাহ যাকে যতটুকু নিয়ামত দিয়েছে তাই নিয়ে খুশি থাকবে,আল্লাহ কে খুশি করার জন্য ভালো কাজের প্রতিযোগিতা করবে।এই সব শিক্ষা পায় নি বলেই তো ছোটবেলায় আমাদের অনেকের মনে উদয় হয় আল্লাহ বলেছেন তিনি ন্যায় বিচারক,কিন্তু কিভাবে তিনি ন্যায় বিচারক?আমি জন্মের সময় কেন এই গরীব ঘরে জন্মালাম ?আমি যদি আজ কোনো ধনীর ঘরে জন্মাতাম তাহলে তো জন্মের পরে আমাকে এত কষ্ট করতে হতো না?বড়ো হয়ে আল্লাহ এর সন্তষ্টি এর জন্য নিশ্চই দূর্নীতি করতাম না,আল্লহ এর সন্তষ্টি এর জন্য ভাই ভাই মারামারী করতাম না,নিজের শিক্ষা থেকে সে তো এমনিতেই করতো না।দুর্ভাগ্য আমাদের যে,আমরা ইসলাম শুধু মুখোস্তই করে গেলাম, পড়ালেখা শেষ , ইসলাম এর শিক্ষা অর্জন ও শেষ।বাস্তব জীবনে ইসলাম এর কোনো প্রতিফলন তো করলাম ই না, যেটুকু শিখেছিলাম তাও আস্তেআস্তে ভুলে যেতে বসেছি।প্রচিলত শিক্ষা ব্যবস্তাই আমার মত কতো অভাগার যে কোরআন শিখা ,বুঝা হয়না,একমাত্র আল্লাহ ই ভালো জানেন?অনেকে হইতো আমার (ছোটো কালে বলতাম)মত বলবেন ইসলামে কি কোরআন আরবীতে পড়া খুবই দরকার?এত কষ্ট করে আরবী পড়বো?আল্লাহ যে কেন আরবীতে কোরআন নাজিল করলো? আমার ইসলাম এর জ্ঞান খুবই কম।বলতে পারেন আমি ক্লাস ওয়ান এ পড়তেছি।তাই বাস্তব জীবন থেকে আমার উপলদ্ধি নিয়ে এই বিষয়ে লেখার ইচ্ছা আছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর নিকট ইসলামভিত্তিক জীবন এর শিক্ষা অর্জন করার সুযোগ কিংবা বোঝার তৌফিক আমার মতো অধম বান্দাদের যেন বেশি বেশি দান করেন।

আজকে যখন এই প্রবাসে অন্য মুসলিম দেশের ৫বছরের মেয়েকে দেখি মাথায় হিজাব পরে চলাফেরা করতেছে,আর আমাদের দেশের অনেক মেয়েরা আধুনিকতার টানে পোশাক ছোটো করতে করতে কবে না জানি পথে চোখ বন্ধ করে চলাফেরা করতে হবে।হিজাব পরা এই ৫বছরের মেয়েকে আমার কাছে কখনই মনে হইনাই সে আমাদের আধুনিক মেয়েদের থেকেও কম আধুনিক।এই হিজাব পরা ৫বছরের মেয়েটাকে আমি যখন দেখি তখন নিজের কাছে এক রকম প্রশান্তি আর তার জন্য নিজের অজান্তেই মুখ ফুটে বের হয়ে আসে হে আমার রব

তুমি এই ছোট মেয়েটাকে হেফাজত কর যে শুধু তোমারি সন্তষ্টি এর জন্য তোমার নির্দেশ মত চলার চেষ্টা করছে।এই প্রবাসে স্কুল এ হাজারো মেয়ের মধ্য সে একজন তোমর প্রতিনিধী করে।ছোটবেলা থেকে এই মেয়েটা যে শিক্ষা পাচ্ছে তার পরিবার থেকে,যা তাকে বড়ো হওয়ার পরও সঠিক পথে চলতে অনুপ্রেরণা যোগাবে ।আর যে মেয়েটিকে আমরা আধুনিকতার টানে বড়ো করতেছি ,তারপক্ষে বড়ো হয়ে খোলামেলা পোশাক ছেড়ে হটাৎ করে শালীন পোশাক পড়া কতই না কষ্টের?তারপর খোলামেলা পোশাক ছেড়ে শালীন পোশাক পরলেও শুনতে হয় এতদিনকার পুরনো বন্ধু বান্ধবী দের কাছ থেকে কতই না তীর্যক মন্তব্য।আমার পরিবার কে দেখেছি খোলামেলা পোশাক ছেড়ে শালীন পোশাক পরার পর তার একাকিত্ব এবং অসহায়ত্ব।আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমাদের উপর করুনাময়।নিশ্চই তিনি তার বান্দার মঙ্গল চান।

পরিশেষে আল্লাহ এর কাছে ফরিয়াদ জানায় ,হে আমার রব তুমি আমাদের বাংলাদেশ সহ সকল মুসলিম জাতিকে শৈসব কাল থেকে তোমার দীনের শিক্ষায় আলোকিত করে দাও ,শিক্ষা ব্যবস্তা কে তোমার পছন্দনীয় শাসকদের মাধ্যমে তোমার পছন্দমত শিক্ষা ব্যবস্তা করে দাও।আমাদের ছেলেমেয়দের কে তোমার দীনের শিক্ষা যাতে সহজে গ্রহণ করতে পারে সে তৌফিক তাদেরকে দাও।সারাজীবন আমাদের সকল ভাইবোনদেরকে আপনার পছন্দনীয় পথে পরিচালিত করুন।আমরা তোমাকে দেখিনাই ,তোমার নবী (সা Happy কে দেখিনাই কিন্তু তোমার কুরআন কে আমরা বিনা শর্তে বিশ্বাস করি, নবী (সা Happy কে বিশ্বাস করি। তুমি যা যা বলেছো আমরা সব বিনা শর্তে বিশ্বাস করি।শয়তানের প্ররোচনায়,পার্থীব জীবনের লোভ লালসার মোহে জীবনে তোমার ইসলাম কে পরিপূর্ণ ভাবে আমরা প্রতিফলন ঘটাতে পারিনি।আমাদের দুর্বলতা তুমি জানো ,ইসলামকে নিজেদের জীবনে পরিপূর্ণ ভাবে প্রতিফলন করার জন্য সকল প্রতিকুলতা যেনো আমরা সবর এর সাথে মোকাবিলা করতে পারি এবং তোমার দীন কে মানব এর কল্যাণ এর জন্য প্রতিষ্ঠা করতে পারি সেই তৌফিক আমাদের সকল সংগ্রামী মুসলিম ভাইবোনদের কে দান করো।

আমীন

(ভুলত্রুটি হলে সংশোধন করার জন্য উপদেশ দিবেন।মানুষ মাত্রই ভুল করে।)

আল্লাহ হাফেজ

বিষয়: বিবিধ

১৪৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File