জাতিসঙ্ঘ নারীজাতির এত বড় অমর্যাদা করলো, অথচ কোনো নারী সংগঠন একটু আওয়াজও তুললো না!

লিখেছেন লিখেছেন FM97 ২৪ মার্চ, ২০১৩, ০৪:১২:৫২ বিকাল





চলতি বছরের ১৫ই মার্চ, বিভিন্ন দেশের আপত্তি স্বত্ত্বেও জাতিসঙ্ঘ, তার নারী মর্যাদাবিষয়ক কমিশনের ৫৭ তম অধিবেশনে একটি প্রস্তাব পাস করে। নারী ও মেয়ে শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধের দাবি করে প্রস্তাবটিতে যেসব বিষয়কে অনুমোদন দেয়া হয় তাহল-

১/ বিয়ের বয়স বাড়ানো

২/ সমকামিতা নিরপরাধ সাবস্ত করা

৩/ জন্মনিরোধক সামগ্রী সহজলভ্য করা

৪/ অবিবাহিত ও বিবাহিত মেয়েদের সমান অধিকার দেয়া।


এদিকে ইরান, মিসর, লিবিয়া, নাইজেরিয়া, ভ্যাটিকান, হন্ডুরাসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আপত্তিকে নাকোচ করে দিয়ে যে প্রস্তাব পাস হলো তার তাৎপর্য বিবেচনা করে সহিংসতা বন্ধ নয়, বরং সমাজে যেন নতুন কোনো বিশৃংখলার আশংকা অনুভব করা যাচ্ছে। শুরুতেই আসি- বিয়ে ও সমকামিতা প্রসঙ্গে। এই দুটো জিনিস যেনো ভালো-মন্দের দুটি মেরু। বিয়ে সমাজকে নৈতিকতার দিকে ঠেলে দেয় আর সমকামিতা সমাজকে ধংসের পথে নিয়ে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে- বিয়ের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ানো আর সমকামিতাকে বৈধতা দেয়ার উদ্দেশ্য কি? এটা কি এ কারণে যে, বিয়ের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তাকে ঝামেলা স্বরূপ প্রকাশ করে, নারী-পুরুষ সবাইকে দায়িত্বহীনতার পাঠ দেয়া? আর প্রতিবন্ধকার বেড়াজাল থেকে বাঁচতে নিজের যৌন চাহিদা পূরণে ছেলে-মেয়েরা যাতে সমকামিতায় লিপ্ত হয়ে জীবনের মানদন্ড খুইয়ে পশুর চেয়েও অধম হয়ে যায়? যেখানে মানুষের জীবনে ধ্বংসের আলামত দেখা যাচ্ছে, সেখানে অধিকারের প্রসঙ্গ কিভাবে উঠে?

এদিকে বিয়ের ক্ষেত্রে বয়সের সীমাবদ্ধতা একটা বিতর্কিত বিষয়। এটা ঠিক অনেক মা-বাবা তার মেয়ের জীবনে শুধু বিয়ে হওয়াটাকে মূখ্য মনে করেন। মেয়েদেরকে নিয়ে তেমন উচ্চ আশা বা তার সুপ্ত প্রতিভাকে, তার স্বপ্নকে বিকশিত করার প্রতি আগ্রহী হন না। ‘আজ না হয় কাল- অন্যের বাসায় চলে যাবি- তোর এত কিছু জেনে কি হবে’?- এই বলে মেয়েকে থামিয়ে দেয়া হয়। মেয়ের অনিচ্ছ্বা স্বত্ত্বেও অবিভাবকেরা অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন। অপরদিকে- আজকাল টিভিতে কুসংস্কৃতির পাঠ নিয়ে সপ্তম- অষ্টম শ্রেণির ছেলেমেয়েরা ভালোবাসায় লিপ্ত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে দেখা যায় তারা বিয়ে করতে রাজি থাকলেও তাদের বিয়েকে আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ ধরা হচ্ছে। তাই বিয়ের রেজিস্ট্রিতে বয়সের ক্ষেত্রে মিথ্যার আশয় নিতে হচ্ছে। তাই আমার প্রশ্ন হলো এমন বিধান রাখার কি দরকার, যেটা নিয়ে বিতর্ক হয়? এর চেয়ে ভালো শহরে-গ্রামে সরকারি হোক কিংবা বেসরকারি, নারী সংগঠনগুলোর ক্যাম্প তৈরি করা উচিত। বিয়েতে প্রতিবন্ধকতা নয়, বরং অল্প বয়সে সন্তান গ্রহণের ফলে কি কি শারীরিক সমস্যা হতে পারে- তা বুঝিয়ে বলা। তাছাড়া যেসব পরিবার মেয়েদের পড়ানোকে অহেতুক মনে করেন তাদের এটা জানা উচিত- একটা মেয়ে বাবার বাড়িতে থাকুক আর স্বামীর বাড়িতে- তার মেধা সকল পরিবারের জন্যই মঙ্গলজনক। এই সমাজে একজন শিক্ষিত মেয়ে, নারী অতঃপর মায়ের গুরুত্ব অপরিহার্য। আমরা কি ভুলে গেছি, কিভাবে কার্টুনের ‘মিনা’ নামতা শিখতে পারায় ‘মুরগি চোর’কে ধরতে পেরেছিলো? এদিকে প্রতিবন্ধকতা দূর করলে বিয়ে করতে আগ্রহী ছেলে-মেয়েরা একদিকে রেজিষ্ট্রি খাতায় মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়া থেকে বিরত থাকবে, অপরদিকে সামাজিক অনাচারের ধারে কাছেও যাবে না। অপরদিকে সমকামিতা প্রসঙ্গে বলতে- এটি মূলত প্রাকৃতিক নিয়ম বহির্ভূত কাজ। আল্লাহ তা’য়ালা পরিবার তথা পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে ঠিক রাখার জন্য নারী-পুরুষ উভয়কেই সৃষ্টি করেছেন, তাদের মধ্যাকার দাম্পত্য জীবনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের আবির্ভাবের যে ধারা বজায় রেখেছেন, সমকামিতা তাকেই ধ্বংস করে। যৌন চাহিদা পূরণের জন্য আল্লাহ বিপরীত লিঙ্গ সৃষ্টি করেছেন- এ কাজে পুরুষকে পুরুষের জন্য বা নারীকে নারীর জন্য মনোনয়ন করা হয় নি। অথচ সমকামিতা যেন সেটাকেই বৈধতা দেয়। এটা সমাজের স্বাভাবিক জীবন-ব্যবস্থা তো ধ্বংস করেই তার পাশাপাশি এটা যেন নিজ হাতেই নিজেকে ধ্বংস করার সামিল। চিকিৎসাশাস্ত্র মতে, সমকামিতার ফলে শারিরিক-মানসিক দূর্বলতা, আয়ু হ্রাস, বিষন্নতা, আত্নহত্যার প্রবণতা, এইডসসহ ইত্যাদি বিভিন্ন যৌন রোগ দেখা যায়- যা জীবনকে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যায়। তাহলে সমকামিতার মত নোংরা ও জঘন্য পাপকে নিরপরাধ সাবস্ত করার যায় কিভাবে? এদিকে আমরা কি ভুলে গেছি হযরত লুত আঃ এর সম্প্রদায়ের উপর এই সমকামিতার জন্যই শাস্তিস্বরূপ পাথর বৃষ্টি হয়েছিলো? বুদ্ধি-বিবেকবান এই পৃথিবীর মানুষেরা কি তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে না? নাকি আমরা সমাজব্যবস্থা ধ্বংস করে স্রষ্টার শাস্তির অপেক্ষায় আছি? সুতরাং, জাতিসঙ্ঘ বিয়েতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সমকামিতার অনুমোদন দিয়ে নিঃসন্দেহে সহিংসতা কমানোর নামে তা আরো বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছে।

এদিকে, জন্মনিরোধক সামগ্রী সহজলভ্য করার অভিপ্রায় কি? সমাজে যাতে ব্যভিচার তথা লিভ টুগেদিং বেড়ে যায়? জন্মনিরোধক পিল খাও আর লিভ টুগেদিং করো? বাহ! এটাই তাহলে বিশ্ব সংস্থার দৃষ্টিতে নারীর সম্মান? এ যেনো প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হচ্ছে- মেয়েরা পণ্যের মতো, ইচ্ছা হলো সাথে রাখলাম, তারপর জন্মনিরোধক খাইয়ে দিলাম, ব্যস। আর কোনো চিন্তা নেই। আর চিন্তা থাকবেই বা কেনো? সে তো আর কারো দায়িত্বে থাকছে না! আর কেউ যাতে তাদের দায়িত্ব না নেয়-সেই ব্যবস্থাই তো করা হচ্ছে। এদিকে জাতিসংঘ খাদ্য-সংকটের প্রসঙ্গ তুলে প্রায়ই এক নম্বর সমস্যা হিসাবে জনসংখ্যাকে চিহ্নিত করে। অথচ আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন-..... ‘আমি তাদেরকেও রিযিক দেবো এবং তোমাদেরকেও......(সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত-৩১)। তাছাড়া এই পৃথিবীতে মানুষ শুধু খেতে আসে না। এ প্রসঙ্গে চীনের বিপ্লবী নেতা মাও জে দং তার ‘রেড বুক’ এ যথার্থই বলেছেন- ‘মানুষ এই পৃথিবীতে শুধু একটা মুখ নিয়ে আসে না, সে দুটা হাত, দুটা পা আর সবচেয়ে মূল্যবান একটা ব্রেন নিয়ে আসে’। সুতরাং, জনসংখ্যা সমস্যা নয়, বরং পৃথিবীর সম্পদ। দোষ তাদের যারা এই সম্পদকে কাজে লাগাতে পারেন না। যাই হোক, সবশেষে জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাবে বিবাহিত ও অবিবাহিত মেয়েদের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এটা কি উত্তরাধিকারের দিকে ইঙ্গিত করছে না? আমরা জানি, বিবাহিত মুসলিম নারীর উত্তরাধিকার স্বামী ও বাবার সম্পত্তি থেকে। অপরদিকে অবিবাহিত মেয়েদের উত্তরাধিকার শুধু বাবা থেকে। এখন কেউ যদি জোড় করে বাবার উপর অতিরিক্ত উত্তরাধিকারের প্রস্তাব দেয় তাহলে দেখা যাবে অধিনস্ত ভাইয়েরা বঞ্চিত হবে। যে ভাইদের কাঁধে পরিবারের আর্থিক দায়িত্ব থাকে (যেটা থেকে নারী মুক্ত) সেই ভাইদের বঞ্চিত করে মনগড়া আইন বাস্তবায়ন করে আমরা কোথাকার মানবতা ও সামতা দেখাচ্ছি?

পরিশেষে, আজ যেসব প্রস্তাবকে নারীর মুক্তি, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের মন্ত্র মনে করা হচ্ছে, সার্বিক বিবেচনা করলে আমরা দেখি এ যেন নারীর উপর অত্যাচারকেই অনুমোদন দেয়া হলো। এদিকে বেশ অবাক হই, মাঝে মধ্যেই দেখি নারীরা তাদের প্রকৃত অধিকার নিয়ে মুখ খোলেন না। অনেক নারী নেত্রী, নারী সংগঠন শুধু এটাই বলে যান যে- সব জায়গায় নারীর পদচারণা নিশ্চিত করতে হবে, নারীকে মানুষ মনে করতে হবে- কিন্তু সেটা কিভাবে? তার যুক্তিযুক্ত সমাধান আমরা পাই না। এদিকে নারী সমাজের এত বড় অমর্যাদা করে, অপমান করে জাতিসঙ্ঘ এক জঘন্য প্রস্তাব অনুমোদন করে ফেললো, অথচ তার বিরুদ্ধে দেশের কোনো নারী সংগঠন একটা আওয়াজও তুললো না। আমি বেশ অবাক ও হতাশ।

বিষয়: বিবিধ

১৩৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File