বিয়ের বয়স ১৬, ১৮ না ২০?
লিখেছেন লিখেছেন FM97 ২৪ মার্চ, ২০১৫, ০৮:৩৭:৫৪ রাত
সম্প্রতি ‘ওমেন এনভয়’ নামে এক সংগঠন- নারীদের বিয়ের বয়স ২০ করার দাবি জানিয়েছে, তবে আমি মনে করি- বিয়ের ক্ষেত্রে মানুষ রচিত বয়সের কোনো সীমা নির্ণয় করা উচিত নয়। একটা ছেলে/মেয়ে যখন সবালক হবে, ছেলে-মেয়েদের মধ্যকার সম্পর্ক বুঝবে- তখনই সে বিয়ের যোগ্য। এখানে একটা চমৎকার ব্যাপার হলো- শারীরিক বা মানসিকতার ভিত্তিতে ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন বয়সে সবালক হয়। তবে আমাদের সমাজে মারাত্মক যে জিনিসটা হচ্ছে এবং যে ব্যাপারটা পুরো বিশ্বব্যাপিই হচ্ছে- যা নিয়ন্ত্রণ করা ছেলে-মেয়েটির পরিবারের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে তাহলো- ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা টিভিতে বড়দের সিরিয়াল দেখে, নেটে নিষিদ্ধ সাইটে গিয়ে, খারাপ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে অল্প বয়সেই প্রেম-ভালোবাসা কি বুঝে যাচ্ছে, ফলে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে বটে, তবে বিয়ে জিনিসটা কি, একে-অপরের দায়িত্ব কি সেটা বুঝতে পারছে না। আর এসব না বুঝায়, তাদের পরিপক্ক সম্পর্কে বড়রা বাঁধ সাধলে- তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। সুতরাং- এটা থেকে বাঁচার দুটি পথ আছেঃ
১/ পরিবারকে নিজের সন্তানদের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। তাদেরকে তাদের বয়স অনুযায়ী সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করা, সেই সাথে নৈতিকতা তথা ধর্মীয় জ্ঞান দেয়া।
২/ আপনার অনেক চেষ্টা, অনেক সংগ্রাম স্বত্বেও, আপনার সন্তান ১৬/১৭ বয়সে কাউকে পছন্দ করে বসলে (যে বিষয়গুলো অনেকেটা কো-এডুকেশনে হয়ে থাকে), সেক্ষেত্রে নিজেদের অহেতুক শর্ত লাগিয়ে, অহেতুক কারণ দর্শিয়ে তাদের পছন্দকে নাকোচ না করে, বিবেচনা করুন। নৈতিকতা ভালো দেখলে দুই পরিবার একত্রে তাদের সম্পর্ককে স্থায়িত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসুন, পারলে কাবিন করে রাখুন। যাতে তারা একান্তে কথা বললে বা মেলামেশা করলেও সেটা বৈধ হয়। পরবর্তীতে না হয় মেয়েকে উঠিয়ে দেয়া হবে।
একটা বিষয় লক্ষ্য করে দেখবেন- আমরা বিয়েকে পড়াশুনা/ ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসাবে দেখি, অথচ একটা ছেলে/মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলে কিংবা কর্মক্ষেত্রে কারো সাথে সম্পর্ক রাখলে সেটা জায়েজ করে ফেলি? অথচ আমাদের সহপাঠি যদি আমাদেরই জীবনসঙ্গী হতো, আমাদের কর্ম জীবনে যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষাভাবে সে যদি সহায়ক হতো- তাহলে কি সেটা উত্তম হতো না? যদিও অনেক পরিবারেই শুনি- “না… আমার ছেলের বয়সই না কি? সবে ভার্সিটিতে পড়ে, এখন বিয়ে দিলে, বৌ তারে পড়তে দিবে না” আবার মেয়েদের ক্ষেত্রেও একই কথা-“বিয়ের পরে পড়া হবে না”। হ্যা, অনেক মেয়েরাও যাদের পড়ার আগ্রহ থাকে, তারা এইচএসসি বা অনার্সে থাকতে বিয়ে করতে চায় না। কারণ তারা জানে- শ্বশুর বাড়িতে নিজের মেয়েদের তারা পড়াশুনা করতে দিলেও নিজের বৌকে তারা পড়তে দিবে না। নিজের মেয়ে বসে বসে থাকলেও বাসার সবার কাজ বৌকে দিয়ে করাবে। যে কাজ তার দায়িত্বে না সেটাও করাবে। বৌকে মেয়ে হিসাবে দেখা হবে না। তাছাড়া বাসার বড় বৌ হলে তো কথা নেই! সেক্ষেত্রে বৌ এর বয়স কম হলেও তাকে বয়সের ভিত্তিতে নয়, বড় বৌ এর ভিত্তিতে দেখা হবে। কারণ, অনেক পরিবারেই দেখা যায়- বড় ভাই আর বড় ভাবি মানেই হলো- পরিবারের সকল দায়িত্বের বাহক। সকল বোঝা তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। যেটা হয়ত পরিবারের ছোটরা নিজ নিজ দিক থেকে দায়িত্ব বুঝে করতে পারে- সেটাও দেখা যায় পরিবারের মুরুব্বিরা বড় ছেলেকে বা বৌকে ডেকে বলে- “তুই বড়, তুই করবি”। বড় হওয়াটাই কি তাহলে দোষ!! যাই হোক এভাবে পরিবারের মুরুব্বিরা বয়সে ছোটদের অলস করে তোলেন। সুতরাং, বয়স দিয়ে বিবেচনা করে নয়- বরং সমাজের এসব উটকো ঝামেলাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিজ থেকে বুঝতে হবে। যাতে বিয়েটা সহজ হয়। নিজের কাজ নিজে করার মানসিকতা গড়তে হবে। আর রইলো পরিবারের বয়ষ্কদের সাহায্যের কথা- সেটা অবশ্যই পরিবারের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। আরেকটা বিষয়- মেয়েরা বাপের বাসায় থাকলে পড়াশুনার যেমন পরিবেশ পায় তেমনি মা’কেও সংসারের কাজে সাহায্য করে, তেমনি স্বামীর ঘরেও তার মা-বাবাকে নিজের মা-বাবার মতো স্নেহ-যত্ন করতে হবে আর তাদেরও কর্তব্য বৌ এর প্রয়োজনটা বুঝা, তাকে সেই রকম পরিবেশ দেয়া।
হ্যা, এটা ঠিক বৌকে চালানো তথা পরিবারের আর্থিক দায়িত্ব যেখানে ছেলের ওপর- যেখানে একটা ছেলেকে বিয়ের আগে উপার্জনক্ষম হওয়া জরুরি। তবে আমি এমনও দেখেছি, বাবা ধনী; ছেলে (বয়স-২৫) বিয়ের জন্য একপায়ে খাড়া, অথচ বাবার উক্তি- “নিজে কামাই কইরা বিয়া কর, আমি তোর বৌরে চালামু ক্যান”? অথচ পরিবারে এক জন সদস্য আসলে উনার কি এমন ক্ষতি হবে? আবার বিবাহে আগ্রহী এই ছেলেটা যখন কোনো আকাম-কুকাম করে বসবে তখন এই বাবারাই নিজের দোষ না দিয়ে ছেলেকেই দোষ দিবে। যাই হোক সাব্বাশি জানাই আমার এক দূরসম্পর্কের মামাকে যিনি নিজ খরচে ছেলেকে (বয়স-২৩) বিয়ে দিয়েছেন। আর বিয়ের আগে ছেলেটা বেকার থাকলেও এখন সে ব্যবসা পরিচালনা করে। এটাই সত্য- মাথায় দায়িত্ব আসলেই মানুষ বুঝতে শেখে। মা-বাবারা সন্তানদের অবুঝ ভাবে আসলে তারা অবুঝ না। তাই, বিয়েতে ঝামেলা না বাঁধিয়ে যদি বাবার সামর্থ্যও থাকে তাহলেও বিয়ে দিয়ে দেয়া উচিত।
হ্যা, একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়, গ্রামাঞ্চলে মেয়েরা বিয়ে করতে না চাইলেও তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। কারণ পরিবার আশঙ্কায় থাকেন। যদিও আমি মনে করি- আশঙ্কার জায়গাটা দূর করে, সমাধান করা উচিত, জোর করে মেয়েদের বিয়ে দেয়ার কথা ইসলাম বলে না। কারণ বিয়ের পূর্ব শর্ত হলো- ছেলে-মেয়ের রাজি থাকতে হবে। অথচ আমাদের সমাজে বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ের পছন্দকে মূল্যায়নই করা হয় না।
অবশেষে আমরা জানি, বিয়ের ক্ষেত্রে বয়সের সীমা উল্লেখ করা হয় সন্তান নেয়ার সক্ষমতা ও নারীর সুস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে। তাই আমি আগেই উল্লেখ করেছি- কাবিন হলেও মেয়েকে পরবর্তীতে স্বামীর বাসায় তুলে দেয়া হোক। যদিও বাস্তবে দেখা যায়- অনেক মেয়েরা ১৮ বয়সের আগেই সন্তান নেয়ার মতো স্বাস্থ্যবতী হয়ে উঠেন। এদিকে আরেকটা বিষয় যা না বললেই নয়- অনেকেই বয়সের প্রতিবন্ধকতা দেখিয়ে কিংবা ক্যারিয়ারের কথা বলে বিয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন- যারা মূলত সন্তানকে জীবনের সবচেয়ে বড় বোঝা মনে করেন। হ্যা, তথাকথিত আধুনিক সমাজে সন্তানকেই একটা মেয়ের বোঝা হিসাবে প্রচার করা হচ্ছে- “বিয়ে হলে, সন্তান নিলে ক্যারিয়ার শেষ” এমনই প্রচার প্রচারণা। যদিও বন্ধাত্ব কি জিনিস এটা আমার আত্মীয়ের মধ্যেই দেখেছি। চিকিৎসা করেও কোনো লাভ হয় নি। সূরা শূরা’র ৫০ নং আয়াত সত্য। আল্লাহ কাউকে কন্যা সন্তান দেন, কাউকে পুত্র, কাউকে উভয়ই, কাউকে বা বন্ধ্যাত্ব দান করেন। আর বাস্তবেও দেখা যায়, স্বামীর সাথে রক্তের গ্রুপের সমন্বয় না হওয়ার কারণে অনেক নারী মা হতে পারে না। আবার সন্তান হলেও পর পর মৃত জন্ম নেয়। তাছাড়া দেখুন বর্তমানে নারীরা অধিক হারে জরায়ু ক্যানসারে ভুগছে। অনেক নারীকেই জরায়ু ফেলে দিতে হচ্ছে। এমনও এক মেয়ের ব্যাপারে শুনেছে- বিয়ের আগেই তার জরায়ু ফেলে দিতে হয়- তাই এখন তার ভাবনা- কোনো ছেলে তার হাত ধরবে কি? …
সুতরাং, যারা সন্তানকে বোঝা ভাবেন তাদের জন্য এগুলো হয়ত সুখবর। আর তাদের জন্য আরেকটা সুখবর হচ্ছে ১৯৭৫ সালে যেখানে আমাদের দেশে প্রজনন রেট ছিলো ৬.৩, সেখানে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে অর্ধেকেরও কম ২.৩ এ।
তাই বলবো- যারা বিয়ের ক্ষেত্রে বয়সের সীমা টেনে দিচ্ছে, নিত্য-নতুন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তারাই মূলত সুন্দর সমাজ ও পরিবার গঠনের শত্রু।
বিষয়: বিবিধ
১৭৯৭ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ছেলেদের জন্য ব্যাপারটা এতটা সোজা না , কারণ তাকে সেজন্য আর্থিকভাবে সাবলম্বী হতে হয় । সেটা ৩০-৩২ বছরের আগে খুব একটা সম্ভব হয় না ।
২০ এর আগে বিয়ে না হওয়ার জন্য আন্দোলন করা হয়, কিন্তু ২০ এর প্রেম নয় বা অবৈধ মেলামেশা নয় এমন দাবী করে না কেন? ২০ এর আগে বিয়ে হলে সন্তান গর্ভধারনে অনেক ঝুঁকি হাবি জাবি আছে, কিন্তু ২০ এর আগে যে অবৈধ সম্পর্কের মাধ্যমে ভ্রুণ হত্যা করে তাতে মনে হচ্ছে শরীরের ভালই উপকার হচ্ছে। আচ্ছা ২০ এর পূর্বে বিয়ে হলে তাদের কি ক্ষতি? ২০ এর পর বিয়ে হলে তাদের কি লাভ? বিষয় গুলো আমার বুঝতে কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় এরা কোন বিধর্মীদের এজেন্ট। হযরত মূসা আঃ এর যুগে এক যুদ্ধের ময়দানে যখন কাফেররা হকপন্থিদের হারাতে পারছিলনা তখন সেখানে তারা যিনা শুরু করে দিয়েছিল। তখন ফেরেস্তারা চলে গেল আর হকপন্থিরা পরাজয় বরণ করলেন। হযরত ইবরাহীম আঃ কে আগুনে নিক্ষেপের সময়ও কিছু ব্যাভিচারিনী দ্বারা এই কুকর্ম শুরু করা হয়েছিল, যাতে করে আগুনে নিক্ষেপ করা যায়। পরবর্তীতে সেই বেশ্যগুলোকে লাল তিলক দ্বারা সম্মানিত করা হয়েছিল। এ সকল প্রমাণাদি দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, মুসলমানদেরকে যিনার মধ্যে ঠেলে দিতে পারলেই মুসলমানদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। এসকল সংগঠনগুলো চেষ্টা করে বিয়েকে ঠেকাতে বা দীর্ঘায়ীত করতে পারলেই যিনার বাজার সহজ হবে আর মুসলমানরা পরাজয় বরণ করবে। বিধর্মীরাতো এটাই চায়।
সুন্দর পোষ্টটির জন্য জাযাকাল্লাহ খাইর।
বিয়ের বয়স দিয়ে নিষেধ কিন্তু বিয়ে বহির্ভুত সম্পর্ক এখন বৈধ। এইভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে সমাজ কে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন