প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রচলিত ধ্যান-ধারণাঃ(প্রসঙ্গ ডাক্তার)
লিখেছেন লিখেছেন FM97 ০২ মার্চ, ২০১৫, ০৪:৪১:৩৬ বিকাল
পত্রিকায় একটি সাহায্যের আবেদন- হতদরিদ্র পিতা। বহু কষ্টে সন্তানদের পড়াশুনা করিয়েছেন। এখন ওনার স্বপ্ন সন্তান দুজনকে (এক ছেলে, এক মেয়ে) ডাক্তার বানাবেন। এইচএসসি শেষে মেডিক্যালে সুযোগ পাওয়ার পরও এখন তাদের খরচ চালাতে পারছেন না। তাই সবার উদ্দেশ্যে সাহায্যের আবেদন করেছেন।
এই আবেদনটা আমার কাছে অবাক লেগেছে। মানুষ নিজেকে নিয়ে কিংবা সন্তানদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতেই পারে, শখ থাকতেই পারে- কিন্তু পূরণ হওয়ার ক্ষেত্রে নিজের সামর্থ্য কিংবা সম্পদের ধারণা রাখাও কি আমাদের উচিত নয়? আমরা জানি, আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের aim in life বলতেই থাকে ডাক্তার হওয়া। কিন্তু ডাক্তারি পড়াটা গরিবের জন্য অনেক কষ্টকর। যেটা অনেক গরিবদের বুঝালেও বুঝতে চান না, বরং উল্টো বুঝেন। “ও! আমার সন্তানেরা প্রতিষ্ঠিত হোক-এটা চায় না”!
এবার কথা যেহেতু প্রতিষ্ঠিত হওয়ার তাই দেখুন, প্রতিবছর হাজার হাজার এমবিবিএস ডাক্তার বের হচ্ছে-এরা যাচ্ছে কোথায়? কয়জন রোগী এদের কাছে আসছে? আপনি যদি মানবশরীরের কোনো অঙ্গের বিশেষজ্ঞ না হন, তখন রোগীরাও দাম দেয় না। বলে- “আরে! এই কি বিশেষজ্ঞ নাকি? চল! আরেকজনকে দেখাই!” আর বিশেষজ্ঞ হওয়াটা সহজ না যদি আপনার কাছে টাকা না থাকে।
ধরে নিলাম, ভাগ্যের জোরে সরকারি মেডিক্যালে ভর্তি হওয়া গেলো, কিন্তু পরবর্তী পাঁচ বছর এমবিবিএস পড়তে বইপত্র, হাড়গোড় সহ আরো আনুসাঙ্গিক খরচ চালানো চারটিখানি কথা নয়। অনেকে ভাবেন- শুধু পাঁচ বছরের পড়া শেষে নামের আগে ‘ডা.’ লাগিয়ে দিলেই বুঝি হয়। কিন্তু না, নামের পরে ডিগ্রির লাইন না লাগালে এ যেনো ডাক্তারি পড়েও মূল্য নেই। হয়- একটা ঔষধের দোকানে ‘এখানে ডাক্তার বসেন’ লিখে পার্ট টাইম জব করতে হবে বা কোনো হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল অ্যাসিস্টেন্ট হিসাবে থাকতে হবে বা রাত জেগে Roster করতে হবে। না, আমি কোনো পেশাকেই ছোট করে দেখছি না। তবে যারা ডাক্তার হিসাবে বিখ্যাত হওয়ার চিন্তায় আছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে- প্রচুর টাকা খরচ করে বিদেশী ডিগ্রি না এনে উপায় নেই। এদিকে আমাদের দেশে দুই পর্বের FCPS-Part 1 & 2 ডিগ্রি নিতে পাগলের মতো পড়তে হয়। কিন্তু তারপরও কোনো নিশ্চয়তা নেই এটা পাওয়ার। কারণ- যেমন High Competition তেমনি শুধু পাস মার্কস তুলতেই খবর হয়ে যায়। সেই সাথে এই পরীক্ষার ব্যবস্থাপনার গাফলতি দেখে অনেক পরীক্ষার্থীরাই বলেন- ‘পাস না করানোর জন্যই যেনো এ পরীক্ষা’! সুতরাং, ইচ্ছা আছে ‘ডাক্তার হবো’ এটা ভাবা ও হওয়াটা এতো সহজ নয়।
যেহেতু প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের চিন্তা-ভাবনা নিয়েই আজকের লেখা, তাই হয়ত নিচের প্রসঙ্গটা অহেতুক হবে না। সম্প্রতি এক চ্যানেলে কারিগরি বিদ্যা খাতে এদেশের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও অবস্থা নিয়ে একটা রিপোর্ট দেখি। যেখানে জরিপ দেখিয়ে বলা হয়- বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর প্রায় ৫০% শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষায় অধ্যায়ন করে, আর আমাদের দেশে মাত্র ৭% শিক্ষার্থীরা এ খাতে যায়। হ্যা, বাস্তবেও দেখা যায়- একটা উন্নয়নশীল দেশ হলেও উন্নয়নমূলক খাতে আমাদের অনীহা। প্রযুক্তি আসে বিদেশ থেকে…
তাছাড়া, এ খাতে মানুষের অনেক নেতিবাচক ধারণা, এমনকি মা-বাবারাও তাদের সন্তানদের মধ্যে যাদের মেধা কম বা পড়াশুনায় মন নেই তাদেরকে কারিগরিতে ভর্তি করিয়ে দেন। অথচ, টেলেন্টেড শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে।
সুতরাং, আমি মনে করি- প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গদবাধা চিন্তা থেকে বেরিয়ে, কে কি করলো, কে কি হলো- সেটা দেখার আগে, নিজেকে আগে বুঝতে হবে, নিজের অবস্থানকে বুঝতে হবে। লক্ষ্য কিংবা শখ পূরণে প্রশান্তি আসে- ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম, পরিস্থিতি, শারিরিক সক্ষমতা ও সেই সাথে আর্থিক সামর্থ্যের কথা মাথায় রেখে।
বিষয়: বিবিধ
১০৩২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন