ফেসবুকীয় সচেতনতা...

লিখেছেন লিখেছেন FM97 ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৪:৩৩:৪৫ বিকাল



এ বিষয়ে আলোচনা করাটা আমি জরুরি মনে করেছি কারণ- আজকাল ফেসবুকে অপরাধ ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে মনের অপরাধ। আর এই অপরাধে জর্জরিত হয়ে ছেলে-মেয়েরা হতাশ, ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চিত। এদিকে মেয়েদের মধ্যে যে সমস্যাটা হচ্ছে-“নেটে কোনো ঝামেলায় পড়লে, কাকে বলবে, কোথায় ভালো উপদেশ পাওয়া যাবে, আমার কি কোনো দোষ ছিলো? কাউকে বললে- সে যদি উল্টো আমাকেই খারাপ বলে”? – ইত্যাদি প্রশ্নের বেড়াজালে মেয়েরা চুপ থাকে। আর কখনো খারাপ বান্ধবীর পাল্লায় পড়ে কুমন্ত্রণার শিকার হয়ে বিপথে গমন করে।

তাই এক বাস্তব উদাহরণ দিয়ে বলি (সংক্ষেপে)-মেয়েটা আমার চেয়ে তিন বছরের জুনিয়র। ধার্মিক এবং সহজ-সরল। নতুন নতুন ফেসবুক শুরু করেছে। তবে মেয়েটি খুব একটা ব্যক্তিগত স্ট্যাটাস দিতো না। অধিকাংশ সময় কু’রআনের কোনো আয়াত বা হাদিস বা ইসলামিক কোনো পেইজ থেকে কোনো শিক্ষণীয় লেখা শেয়ার দিতো। অপরিচিত ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসলে info দেখে ভালো লাগলে accept করতো। এরই মধ্যে তার ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা এক ছেলে সালাম দিয়ে, কেমন আছো, না আছো, কি করো, কোথায় পড়ো, কোথায় থাকো- ইত্যাদি জিজ্ঞাস করে। ছেলেটা যা যা জিজ্ঞাস করে মেয়েটা উত্তর দিয়ে যায়- এদিকে মেয়েটা ছেলেটার টাইমলাইনে গিয়ে দেখে- ছেলেও হাদিস-কু’রআন সম্বলিত ছবি শেয়ার দেয়। তাই মনে মনে ছেলেটাকে ভালো লাগে। তবে মুখে বলে না। এদিকে ভালো লাগার বিষয়টা একদিন ছেলেটাই মেয়েকে জানায়। স্বাভাবিকভাবে মেয়ে অনেক খুশি। যদিও বুঝতে পারছে না পরিবারকে কি করে জানাবে। এদিকে সিরিয়ালে বিবাহযোগ্য এক বোনও আছে। যাই হোক- একদিন ছেলেটা তাকে কোথাও দেখা করতে বলে। কিন্তু মেয়েটা অভিভাবকের প্রসঙ্গ টেনে ছেলেটার বায়োডাটা চায়। তারপর…

তারপরের ঘটনা বলছি-আগে কিছু টিপস দেই- (ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্যই)ঃ

# আত্মীয়-পরিচিত ফ্রেন্ডদের সাথে মজা করুন- তাতে সমস্যা নেই, তবে অপরিচিত ছেলে (মেয়েদের ক্ষেত্রে)ও অপরিচিত মেয়েদের (ছেলেদের ক্ষেত্রে)থেকে সাবধানে থাকুন। প্রয়োজন ছাড়া কথা এড়িয়ে চলুন।

# অনলাইনে দুটি বিষয় খেয়াল রাখবেন- ক) নিজেকে নিরাপদ রাখা, খ) নিজের অনিষ্টতা থেকে অন্যকে নিরাপত্তা দেয়া। ক নং পয়েন্টটা অনেকেই হয়ত বুঝতে পেরেছেন , তবে খ পয়েন্টে হয়ত অনেকেই ভাবছেন- আমার অনিষ্টতা মানে? আমি তো ভালোই!- হ্যা, আমরা সবাই ভালো, তবে আমরা খারাপ হয়ে যাই- শয়তানের প্ররোচনায়। যেমন দেখুন- আপনার একটা মন্তব্যে কোনো ছেলে যদি পাল্টা ফাজলামী করার সুযোগ পায় (যদিও সেই ছেলেটি অপরিচিত) এবং সে তেমনটা করেও বসে, তো সেক্ষেত্রে আপনি যদি শুধু তাকে দোষ দেন- তাহলে বলবো প্রথমে উসকানী দিয়েছে কে? আপনি যদি তেমন কথা না বলতেন- ছেলেটাকে উসকানি না দিতেন, তাহলে কি সে আপনাকে পাল্টা এভাবে বলার সুযোগ পেতো? তাহলে আপনিও কি দায়ী নন? মনে রাখতে হবে- তালি এক হাতে বাজে না। আমি নিজেকে সম্মান করলে অপর ব্যক্তি আমাকে সম্মান করবে। তাই আপনি চেনেন না এমন ছেলেদের অহেতুক ব্যক্তিগত স্ট্যাটাসে, ছবিতে- মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন। ভালো কোনো স্ট্যাটাসে বা যেখানে আপনার মন্তব্য করাটা প্রয়োজন মনে করছেন- শুধু সেখানে মন্তব্য/ লাইক দিন। এই একই কথাটা ছেলেদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মেয়েদের ছবি দেখে চোখ নিচু করুন, অহেতুক- সুবহানাল্লাহ, মাশাআল্লাহ, হা হা হি হি এড়িয়ে চলুন। সেফ সাইডে থাকুন।

# নিজের ব্যক্তিগত ছবি কাস্টম করে দিন-যাতে আপনি যাদের দেখাতে চাচ্ছেন হতে পারে আপনার আত্মীয়/ বান্ধবী- শুধু তারাই যাতে দেখে। তেমনি স্ট্যাটাস ব্যক্তিগত হলে সেটিং করে দিন বা যদি মনে করেন- এটা পাবলিক দেখলে সমস্যা নাই। তবে পাবলিক রাখুন।

# যেকোনো ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট নির্বাচনের আগে তার প্রফাইলটা দেখে নিন। তবে, আপনি যদি ফেসবুকিং করছেন- শুধু নিজের আপনজনের মধ্যে সে ক্ষেত্রে অপরিচিতদের এড়িয়ে চলতে পারেন। এদিকে, আপনি যদি সমাজের মধ্যে সচেতনতার লক্ষ্যে লেখালেখি করেন- তবে অপরিচিতদের রিকুয়েস্ট accept করার আগেও দেখে নিন। just নিরাপত্তার খাতিরে।

# অপরাধের জগতে ছেলে-মেয়ে উভয়ই সমান। কিছু মেয়ে আছে যারা ইনবক্সে মায়াবী কথার জালে ছেলেদের হাত করতে চায়।এসব মেয়েদের লিঙ্ক থাকে কুচক্রি মহলদের সাথে। আবার এমনও আছে ভালোবাসার কথা বলে- একদিন একাকী কোথাও দেখা করতে বলে, এরপর লোকটার সর্বস্ব লুট করে। এমনই এক ঘটনা কয়েকদিন আগে পত্রিকায় পড়ি। তাই ছেলেদের বলবো- অপরিচিত মেয়েদের থেকে সাবধানে থাকুন। একই বার্তা মেয়েদের ক্ষেত্রেও।

# অনেক মেয়েরা আছে যারা নিজেদের স্বামীর বদনাম অন্য পুরুষের সাথে ইনবক্সে কিংবা ফেসবুকে সবার সামনে শেয়ার দেয়- একই কাজ অনেক বিবাহিত পুরুষও করে- এরূপ অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকুন। এতে আপনাদের দুইয়ের মাঝে তৃতীয় কোনো ষড়যন্ত্রকারীর আবির্ভাব ঘটতে পারে।

# উদ্দেশ্যহীনভাবে ফ্রেন্ড লিস্ট বাড়ানোর জন্য গণহারে সবাইকে রিকুয়েস্ট পাঠানো বা accept না করা ভালো।

# ফেসবুকে অনেকেই আছেন- যারা অনেক ভালো ভালো লেখা লিখেন। আমাদের মনে তাদেরকে ফ্রেন্ড লিস্টে রাখার আগ্রহ জাগতেই পারে। ছেলে হোক বা মেয়ে তাদেরকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতে পারেন। কিংবা শুধু ‘ফলো’ করেও রাখতে পারেন। কারণ- অনেকে বলে- অপরিচিত ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বিপদ এড়াতে তাদেরকে ফেসবুকে বন্ধু না বানিয়ে follow করে রাখলেও ভালো। তাই সেই মতে, বললাম- তাও করতে পারেন। তবে ভালো লেখালেখির যেখানে কথা উঠেছে তাই দুঃখের সাথে বলি-সচেতন পোষ্ট দেয়ার ক্ষেত্রে মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা অনেক এগিয়ে গেছে। এর কারণ মেয়েরা প্রতিষ্ঠানিক বই ছাড়া বিভিন্ন ধারার বই থেকে দূরে। অনেকটা আমাদের অনাগ্রহতার কারণে, অনেকটা সুযোগের অভাবে। তবে বাস্তবতা থেকে বলছি- আপনার মধ্যে যদি চেষ্টা সেই সাথে আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা কাজ করে- ভালো কিছু অর্জনের, ভালো জিনিস প্রচারের- তবে, ইনশাল্লাহ আপনি সুযোগ পাবেন।

# প্রয়োজন হলে ভিন্ন নামে নিরাপত্তার জন্য অন্য আইডি খুলতে পারেন। তবে এটা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়।

# ফেসবুকে পরিচিত হোক বা অপরিচিত- কারো সাথে রুঢ় আচরণ, অভদ্রতা, গালিগালাজ, ঠেস মেরে কথা বলা, ঢং করে কথা বলা, উসকানী দেয়া, ভুল বুঝে ভুল করা- থেকে দূরে থাকুন। যেমনটি আমি আগেও বলেছি- অপ্রয়োজনীয় কথা এড়িয়ে চলুন। সেই সাথে বলবো- অপরপক্ষ আপনার সাথে তেমন কথা বললে- উত্তেজিত না হয়ে ‘চুপ’ থাকুন। কারো সাথে ঝগড়া করার দরকার নেই। আপনি ছদ্মনামে আইডি চালান বা স্বনামে- নিজেকে নিরাপদ রাখুন।

# স্কুল পড়ুয়া ছোট ভাইবোনদের ফেসবুক থেকে দূরে রাখুন। অনেকেই দেখা যায়- বয়স ১৩ অথচ মিথ্যা কথা লিখে নিজের বয়স ১৬/ ১৮ করে ফেসবুক চালায়। অথচ তারা বুঝেই না কিভাবে সঠিক পথে এটা ব্যবহার করতে হয়।

# এবারের পয়েন্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার আগে সেই ঘটনাটা শেষ করি- প্রায় একমাস পড়ে তার সাথে দেখা। সেই বিষয়টা জিজ্ঞাস করতেই বলে- “আমাকে আনফ্রেন্ড করে দিয়েছে। “মা-বাবা’র প্রসঙ্গ আসলেই বলে- আমরা সব ঠিক করে নেই। বায়োডাটা চাইলেই হয়ে গেলো অপরাধ? এ কেমন মানুষ!”। যে বিষয়টা তাকে অনেক প্রভাবিত করে, পড়ায় তেমন মনোযোগ তো নেই পরবর্তীতে মেয়েটার রেজাল্ট খারাপ হয়। পুনরায় সেকেন্ড ইয়ারে পড়তে হয়। এদিকে পরে জানা যায়- সেই ছেলেটা নাকি অন্য মেয়ের সাথেও এভাবে ইনবক্সে কথা বলে বেড়ায়। সুতরাং-কিছু মানুষ আছে (সব মানুষ এক নয়)-মূলত অন্যকে ধোঁকা দেয়ার জন্য কু’রআন- হাদিসের আশ্রয় নেয়। যারা মূলত ইসলামের কাজ তো করেই না বরং ধর্মটাকে বিকৃত করে ছাড়ে। তাই, নেটে বসে অপরিচিত কাউকে বিশ্বাস করা, ভালোলাগা- খুবই বিপদজ্জনক। তবে বিচিত্র এই পৃথিবীতে অনেক কিছুই ঘটে- যেখানে নিজেদের সাবধানতা প্রয়োজন। কোনো ছেলে/ মেয়ে আপনাকে আহ্বান করলে একাকী যাবেন না। যতই আপনার তাকে ভালো লাগুক। ধরে নিলাম- আপনারা উভয়ই ভালো, তবে শয়তান তো ভালো না। তারা ভালো মানুষ দিয়েই পাপ করাতে চায়। তাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবিভাবকদের সহায়তা নিন। নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিবেন না। তাদের সম্মতিতে কাজ হলে পরবর্তীতে কোনো সমস্যা হলেও আপনার অভিভাবক আপনাকে একা ছাড়বে না, তবে আপনি যদি তাদের মনে আঘাত দিয়ে উল্টা- পাল্টা কিছু করেন- তাহলে জেনে নিন- অভিভাবরা আপনার সাহায্যে আর আসবে না।

জীবন একটাই, তাই একে ভালো কাজে অতিবাহিত করা উচিত। সময়কে মূল্য দিয়ে যেই কাজে সন্দেহ লাগে তা থেকে দূরে থাকা ভালো। হতাশা ও অনিশ্চয়তা যেখানে- সেটা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে, সন্তুষ্ট থেকে নিজের মনটাকে কাজ দেয়া উত্তম। ফেসবুকিং ভালো, যদি এটা ভালো কিছু ছড়ায়। তবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে-আমরা যাতে একেবারে অ্যাডিক্টেড না হয়ে পড়ি। হ্যা, আমাদের ভালো লেখা অন্যের উপকার করতে পারে, তবে এমন যাতে না হয়- ফেসবুকের বাইরে আমরা আমাদের দায়িত্বকে এড়িয়ে যাচ্ছি…

বিষয়: বিবিধ

১৭৪৭ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

298329
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫০
হতভাগা লিখেছেন : চমতকার সচেতনতা মূলক পোস্ট ।

স্টিকি হবে বলে মনে হচ্ছে।
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৬
241509
FM97 লিখেছেন : মডু ভাইয়ের পছন্দ হলে তো...
298337
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কোন বিষয়েই কি আমরা সচেতন??
তাইতো আমরা সব হারাচ্ছি।
০১ জানুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৪:২৯
241741
FM97 লিখেছেন : :Thinking :Thinking
298487
০১ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৬:০৮
কাহাফ লিখেছেন :

Rose Rose Roseব্লগ ওপেন করে প্রথমেই এই সুন্দর সচেতনতামুলক পোস্ট পড়লাম!
নান্দনিক কথামালার জন্যে জাযাকাল্লাহু খাইরান আপনাকে!!!
০১ জানুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৪:২৭
241738
FM97 লিখেছেন : Happy
298498
০১ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:৩১
কাঁচের বালি লিখেছেন : খুব সুন্দর একটা পোস্ট , জন সচেতনতা ।
০১ জানুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৪:২৭
241739
FM97 লিখেছেন : আমরা সচেতন হলেই লেখা সার্থক...
০১ জানুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৪:২৮
241740
FM97 লিখেছেন : আমরা সচেতন হলেই লেখা স্বার্থক...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File