শেষ ভরসা বাসার প্রাইভেট টিউটর!
লিখেছেন লিখেছেন FM97 ২২ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:৪১:৩৯ দুপুর
ছোট ভাইঃ আপু, ওহমের সূত্র পড়া নাও।
পড়া নিলাম, অতঃপর সূত্রের শেষে যেখানে বলা হয়েছে- তড়িৎ প্রবাহের মান বিভব পার্থক্যের সমানুপাতিক, সেখানে ভাইকে জিজ্ঞাস করলাম- বলোঃ ‘সমানুপাতিক’ কি?
ভাইঃ জানি না।
-তাহলে ‘সমানুপাতিক ধ্রুবক’ কি এটাও জানো না!
ভাইঃ ও ধ্রুবক? হ্যা, ওটা মহাকর্ষ অধ্যায়ে পড়েছি। মহাকর্ষীয় ধ্রুবক।
- ‘বিদ্যুৎ’ অধ্যায়ে পড়ো নাই? তাহলে সমানুপাতিক ধ্রুবক ছাড়া ওহমের সুত্র লিখলে কিভাবে?
ভাইঃ কেনো? I=V/R এভাবে। বইতে এভাবেই আছে।
- হু, ঠিক আছে, বুঝেছি। (মনে মনে বললাম, সমান আর সমানুপাতিক জিনিসটা এক না। তাই এই সমীকরণের আগে সূত্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, সমানুপাতিক চিহ্ন দিয়ে যে সমীকরণটা দেয়া উচিত ছিলো সেটা দেয়া হয় নি। তাছাড়া রোধ, R কিভাবে এলো সেটা না উল্লেখ করেই হুট করে R ব্যস্তানুপাতিক বলে দেয়াটাও ঠিক হয় নি। যেকারণে শিক্ষার্থীরা না বুঝে সূত্রটি মুখস্ত করছে আর যখনই সূত্রের সমানুপাতিকের কথা জিজ্ঞাস করা হচ্ছে সেখানে হয় উত্তর দিতে পারছে না অথবা ওহমের সূত্রের ধ্রুবকের সাথে মহাকর্ষীয় ধ্রুবকের তুলনা করছে। যেটা মূলত এক না। সুতরাং, শিক্ষার্থীর বুঝা incomplete.)
এদিকে মহাকর্ষ অধ্যায়ে অভিকর্ষ পড়ানোর সময় অভিকর্ষজ ত্বরণ এর সংজ্ঞা দেয়া থাকলেও, শুধুমাত্র ‘ত্বরণ’ (Acceleration) জিনিসটা কি, সেটা পুরো বই এর কোথাও নেই। সুতরাং, একটা ছাত্র ত্বরণের সংজ্ঞা না জানলে অভিকর্ষজ ত্বরণ বুঝবে কি করে?
তাছাড়া আলোর প্রতিসরণ (Refraction) অধ্যায়ের আগে পরে কোথাও আলোর প্রতিফলন (Reflection) জিনিসটা কি সেটার কোনো ব্যাখ্যা না পাওয়া গেলেও প্রতিসরণ অধ্যায়ে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন (Total internal reflection) জিনিসটা ঠিকই একটা শিক্ষার্থীকে পড়ানো হচ্ছে। প্রশ্ন হলো- আলোর প্রতিফলন না বুঝলে পূর্ন অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন বুঝবে কি করে? সুতরাং, কাদেরকে দিয়ে বই রচনা করানো হচ্ছে?
এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনায় বসতে ইচ্ছে হয়- যিনি বাংলাদেশে এত প্রেস থাকতে ভারত থেকে বিগত দুই বছর যাবত প্রিন্ট করাচ্ছেন, প্রয়োজনীয় তথ্যহীন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়ে বাড়ন্ত জিপিএ-৫ ও পাসের হার নিয়ে গর্ব করছেন। শিক্ষার্থিরা বুঝে পড়ছে নাকি মুখস্ত করছে, আদৌ সৃজন করছে কিনা- এসব তিনি মনিটরিং করছেন কি? চিন্তিত হই ছোট ভাইবোনদের শিক্ষাব্যবস্থা ও আগামী ভবিষ্যৎ নিয়ে, যেখানে মানসম্মত বই নেই, স্কুল শুধুমাত্র পরীক্ষাকেন্দ্র এবং শেষ ভরসা বাসার প্রাইভেট টিউটর।
বিষয়: বিবিধ
১৬৯১ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ভাবতিছি এই পড়ে যদি সবাই সৃজনশিল হয় তাহলে ওহম কে রেজিষ্টেন্স এর মান না বলে ট্রান্সকন্ডাকটেন্স এর মান বলে কেউ যদি সৃজন করে তবে সে নোবেল পাবে কিনা!!!
বেশ কিছু রাইটার এর ক্যালকুলাস বই দেখেছিলাম খুবই ভালো, আপনার ভাইয়ের জন্য দিতে পারেনঃ
Thomas calculus
Hughes (single-multi variable)
Michael Spivak
Tom Apostol
Thompson – Calculus made easy
Paul Dawkins (Calculus I, II, III)
এগুলোর সাথে সাথে Mathematica, Matlab, Mapple, GeoGebra ইত্যাদী সফটওয়্যার দিয়ে পড়ালে বেশ ভালো কাজে আসবে ঐসব বিষয়ে। অন্যান্য অনেক বিষয়ের জিনিসও আছে ওইসব বইগুলায়।
এগুলোর সামারী করে আমাদের দেশে ক্লাস ৮ থেকে ১০ এর মধ্যেই পড়িয়ে শেষ করতে পারে।
আপনিও লাগে এখানে আমাদের টিচার হয়ে যান ঐসব বিষয়ের, ভালই হবে কিছু শেখার জন্য।
বই গুলোর নাম দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন