ইচ্ছে করছে বলে দিই-“থাক! যায়েন না”!
লিখেছেন লিখেছেন FM97 ১০ অক্টোবর, ২০১৪, ০৮:১৬:৩৯ রাত
ঈদের তৃতীয় দিন। ট্রেনের সিডিউল মতো আপনার চলে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। শহর ছেড়ে গ্রামে আপনাকে যেতেই হবে। সেখানে আপনার আপনজন বিগত দেড় বছর যাবত অপেক্ষা করছে। কিন্তু আমি কি স্বার্থপর হয়ে গেলাম? ইচ্ছে করছে বলে দিই-“থাক! যায়েন না”। কিন্তু এটা কিভাবে বলতে পারি? ঢাকায় কি আপনি খুব আনন্দে ছিলেন?—কথাগুলো বলছি আমাদের কাজের বুয়াকে কেন্দ্র করে।
এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের নারী, যিনি কখনো অন্যের বাসা-বাড়িতে বুয়ার কাজ করেন নি। অথচ পরিস্থিতি তাকে এ কাজে এনেছে। পঞ্চগড় থেকে সোজা ঢাকা। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালোই ছিলো। স্বামী মাঠে কাজ করে। তিন মেয়ে এক ছেলে। তার মধ্যে ছেলে ও দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বাসায় এখন একটা মেয়ে। তবে মেজো মেয়ের বিয়ে হওয়ার পরই যেনো এক অশান্তি, মানসিক ও আর্থিক চাপ, প্রতিনিয়ত টাকার তাগাদা। গ্রামে যৌতুক ছাড়া বিয়ে হয় না। তাই মেয়েকে বিয়ে দেয়ার সময় প্রায় ৭০,০০০টাকা যৌতুক দিতে হয়। আর এই টাকা ধার নিতে হয় আরেক আত্মীয়’র কাছ থেকে। তবে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে শর্ত জুড়ে দেয়া হয় কয়েক শতাংশ সুদের। যা প্রতিমাসে ৭০০০ টাকা করে পড়ে। তাছাড়া চক্রবৃদ্ধি হারে এই সুদের পরিমাণ বাড়ছেই। তাই ঋণ + চক্রবৃদ্ধি সুদের টাকা জোগাড় দেয়া মেয়ের বাবা’র একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাই আরেকটি নারীর হাত ধরে গ্রামের মায়া ত্যাগ করে চলে আসে ঢাকায়। নিজের ওপর কোনো পয়সা খরচ করে না। অসুখ হলেও ঔষুধ কিনে না। লক্ষ্য একটাই- ঋণমুক্ত হতে হবে। তিনটা বাসায় কাজ করে অন্যের বাসায় মাথা গুঁজার ঠাই নিয়ে কোনো মতে ৩০,০০০ টাকা পূরণ করেছে। এবার বাকিটা পূরণ করাই লাগবে।
সমাজের বাস্তবতা এবং তার ওপর টিকে থাকতে আমাদের কাজের বুয়াকে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় পৃথিবীর কষ্টকর কাজগুলোর মধ্যে অন্যের বাসায় কাজ করাও যেনো একটা। রোদ-বৃষ্টি কোনো কিছু যাতে বাঁধ না সাধে। তার ওপর গৃহকর্ত্রীর বকাঝকা তো আছেই। হ্যা, বুয়াদের মধ্যেও কোয়ালিটি আছে। কিছু বুয়া থাকে একে তো ঠিকমতো কাজ করে না, তার ওপর কারো কথা শুনে না। সেই সাথে বেয়াদবী, মুখের ওপর কথা। কিন্তু আমাদের বুয়াটা তার সুন্দর ব্যবহার দিয়ে মন জয় করেছে। তাই তো তাকে যেতে দিতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না। মাঝে মাঝে ভাবি- তার যদি ঋণ পূরণ হয়ে যায় তারপর সে কি চলে যাবে? এমন ভালো বুয়া আবার পাবো কোথায়? যদিও আবেগ ছেড়ে বিবেক দিয়ে চিন্তা করলে আমি নিজেই বলি- এটা কি এসি রুমে বসে থেকে আরামের কোনো চাকরি- যে, মনের সুখে করে যাবে? আর কত দিন? ঋণ পূরণ হলে অবশ্যই বলবো- আপনি নিজ মাটিতে ফিরে যান, সেখানে আপনার আপনজনের সাথে থাকুন। ঘরে আরাম করুন, ইচ্ছে হলে স্বামীর মাঠের কাজে সাহায্য করুন, যেমনটি আগে সুন্দর জীবন যাপন করতেন- সেটাই উপভোগ করুন। কষ্ট করে ঢাকায় আসার কি দরকার? আর আমরাই বা কেনো আপনাকে টাকার লোভ দেখাবো? যে লোভের কোনো শেষ নেই! মাঝে মাঝে এও মনে হয়- আমাদের যতসম্ভব নিজের কাজ নিজ হাতে করা ভালো। কারণ নিজের চোখের সামনে নিজে যখন সোফায় বসে থাকি আর আমার মতো আরেকটি মানুষ ঘর মুছতে থাকে- তখন খারাপ লাগে। একেবারে অসুবিধা হলে কাজের বুয়া রাখা যায়। জানি, পৃথিবীতে অর্থ, সৌন্দর্য, সম্পদের বৈষম্য আছে থাকবে-সেটাও সমাজের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য। তবে আমাদের উচিত- নিজ থেকে বৈষম্য জিইয়ে না রাখা, দারিদ্রতাকে পুঁজি না করা।
শেষ করছি দুটি শিক্ষণীয় বিষয় দিয়ে সেটা আমাদের কাজের বুয়া তথা খালার (বুয়া না ডেকে ‘খালা’ বলাটাই ভালো মনে করি) কাছ থেকে শিখেছি- ধৈর্যশীলতা এবং রাগহীনতা তথা নম্রতা। সমাজের মানুষের মধ্যে যে স্বভাবটার অনেক ঘাটতি রয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১০৭০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমরা শৈশবে এবং আমাদের পরিবারে এখনো কাজের মহিলাকে যার যার অবস্থান থেকে খালা, ফুফু, আপা, চাচী এবং অমুকের মা ডাকা হয়,
সৌজন্য বা আদবের সামান্যতম বিচ্যূতি এখনো অনুমোদন পায়না!
কিন্তু সমাজ যেভাবে বদলাচ্ছে তাতে পরবর্তী প্রজন্ম এসব ঠিকমত ধরে রাখতে পারবে কিনা ভেবে আতঙ্কিত হই
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন