চাঁদাবাজির আরেকনাম বকশিস- প্রসঙ্গঃ মোবাইলে টাকা রিচার্জ

লিখেছেন লিখেছেন FM97 ০৪ আগস্ট, ২০১৪, ০৫:৫৯:৫৮ বিকাল

পুলিশ কিংবা সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি সহজে বুঝা যায়, এমনকি দেখাও মেলে। তবে আজকাল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ঈদ বকশিসের নামে ভালোই চাঁদাবাজি শুরু করলেন! মোবাইলে ১০০ টাকা ভরতে চাইলে ৯৫ টাকা দিয়ে বলবে- “৫ টাকা ঈদের বকশিস”। শুধু তাই না- মুখ দিয়ে যাতে এই কথাও উচ্চারণ করতে না হয়, তাই দোকানের বাইরে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়েছে- “রিচার্জে ৫ টাকা বেশি দিতে হবে” কিংবা লেখা- “২ টাকা বেশি দিতে হবে”। তাছাড়া কোনো কোনো দোকানে বিভিন্ন অঙ্কের টাকার পিছনে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদাবাজি চলছেই। মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো এসব জানে কিন্তু “আমাদের কি?”- এমন মনোভাবে কিছু বলে না। এদিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দোকানের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সাধারণ গ্রাহকের ভোগান্তি হচ্ছে।

অনেকের হয়ত মনে থাকার কথা, বেশ কয়েকমাস আগে গণহারে সব দোকানীরা প্রত্যেক রিচার্জ বাবদ নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা কেটে নেয়ার রীতি চালু করেছিলো। যেটা আগে কখনো দেখা যায় নি। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী এসোসিয়েশনের (গভঃ রেজিঃ টিও নং ৮১৮/১২ এবং লাইসেন্স নং ৩৯/২০১২) যুক্তি ছিলো-“বর্তমান বাজার দর হিসাবে অপারেটরগুলো রিচার্জ বাবদ তাদের নায্য কমিশন দেয় না। প্রতি হাজার টাকা রিচার্জে তাদের ২৭ টাকা কমিশন দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের দাবি- হাজার টাকায় ১০০ টাকা কমিশন দিতে হবে”( সেই হিসাবে ১০০টাকায় ১০ টাকা কমিশন)। এ ব্যাপারে বাংলালিংক কোম্পানীর এক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাস করায় তিনি বলেন-“তাদের যত দেয়ার ঠিকই দেয়া হয়, শুধু তাই না- আমরা যখন বিভিন্ন অফার ছাড়ি- সেই বাবদও তারা টাকা পায়, তাহলে তাদের এতো অভিযোগ কিসের”? সুতরাং সবাই সবার বক্তব্য অটল, বিপদে সাধারণ গ্রাহক। এক্ষেত্রে আমার যুক্তি হলো- অপারেটরের সাথে রিচার্জ এসোসিয়েশনের দ্বন্দ থাকলে সেটা তারা পারষ্পারিক আলোচনায় সমাধান করবে কিংবা একটা সমঝোতায় আসবে, কিন্তু তাই বলে-সাধারণ গ্রাহকদের হয়রানি করা হবে কেনো?

দ্বিতীয়ত, একটা মানুষ যখন ২০/৩০/৫০ কিংবা ১০০টাকা মোবাইলে ভরার জন্য দোকানীকে বলে, তখন সে মানুষটি এটাই কামনা করে যে পুরো ২০/৩০/৫০ বা ১০০ টাকা তার মোবাইলে আসবে। সে ১৯/২৯/৪৮ বা ৯৫ টাকা পাওয়ার কামনা করে না। সুতরাং গ্রাহকদের কাছ থেকে এক অঙ্কের টাকা নিয়ে তার মোবাইলে আরেক অঙ্কের টাকা রিচার্জ করে ব্যবসায়ী কি ধোঁকা দিচ্ছে না? তাও ঘোষণার মাধ্যমে! মানুষের প্রয়োজনকে পুঁজি করে!

হঠাৎ করে রিচার্জ দোকানীদের এমন অপতৎপরতা সহ্য করতে না পেরে স্বেচ্ছায় রিপোর্টিং করতে এলাকার কিছু দোকানীকে এমন প্রশ্ন করি- আমার প্রশ্নে তাদের পাল্টা কিছু বলার ছিলো না। মুখে তালা লেগে গিয়েছিলো। ফলে পরবর্তীতে টাকা কাটে নি।

কারণ অনেক সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে আমাদের মধ্যে অহেতুক ভয় কাজ করে, এমনকি নিজেও সেই অন্যায়কে মেনে নেই। যদিও একটু সাহস করে বললেই হয়। অপরপক্ষের টনক নাড়ানো দরকার। জানি, অনেকে হয়ত বলতে পারেন- “মাত্র ২ টাকা/ ৫ টাকার জন্য এতো কাহিনী করার কি দরকার? সামান্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা একটু টাকা নিলো তো কি হয়েছে”? আসলে আমাদের এমন মানসিকতা মানুষকে ছোট থেকে বড় দূর্নীতির দিকে ঠেলে দেয়। উদারতা কিংবা দানশীলতা যদি দেখাতেই হয় তবে উপযুক্ত খাতে দেখানো উচিত। এ ক্ষেত্রে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আ’ব্দুল্লাহ ইবনে ঊ’মার রাঃ এর ঘটনাটা বললে বোধ হয় যথার্থ হবে। তিরমিজি ও ইবনে মাজা হাদিস গ্রন্থে বর্ণিত, বাজারে গিয়ে আ’ব্দুল্লাহ ইবনে ঊ’মর রাঃকে মাত্র চল্লিশ পয়সার জন্য দরকষাকষি করতে দেখে জনৈক সাহাবী ওনার এমন কৃপণতা মেনে নিতে পারলেন না। পরে তিনি ঊনার পিছু নিয়ে বাসা পর্যন্ত গিয়ে দেখলেন- ইবনে ঊ’মর দুই জন দরিদ্র ব্যক্তিকে একটি করে স্বর্ণমুদ্রা দান করলেন। ঊনার বাজার নীতি আর বাড়িতে এসে এরূপ দান করার নীতি জনৈক সাহাবীকে ভাবিয়ে তোলায় তিনি ইবনে ঊ’মারকে এরূপ আচরণের কথা জিজ্ঞেস করেন। এবং ইবনে ঊ’মর বেশ চমৎকার জবাব দেন। তিনি বলেনঃ “বাজারের ঐ আচরণের কারণ ছিলো ব্যবসা-বাণিজ্যের মৌলিক ভিত্তি তথা আস্থা ও সততার সংরক্ষণ, মিতব্যয়িতা সাধন ও বিচক্ষণতার বাস্তবায়ন। এটা কৃপণতা বা নীচুতা ছিলো না। আর বাড়িতে যা ঘটেছে তা ছিলো অন্তরের মমত্ববোধ, রূহের পরিপূর্ণতার প্রতিফলন। ওটা যেমন কৃপণতা নয় এটাও তেমন অপচয় নয়”।

সুতরাং, দান করতে হলেও উপযুক্ত খাতে দিতে হবে। পরোক্ষভাবে কারো হাত কেটে ফেলা দানশীলতা নয়। এদিকে অর্থনীতির বইতে কিংবা পত্রিকার অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে আমরা প্রায় পড়ে থাকি- চলমান বাজারের নীতি হচ্ছে- পণ্যের ঘাটতি স্বত্ত্বেও যখন চাহিদা প্রচুর থাকে তখন জিনিসের দাম বেড়ে যায়। তথা ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া জাতীয় কিংবা ধর্মীয় কোনো অনুষ্ঠান হলে তো কথাই নাই। যদিও এটা কোনো সৎ ব্যবসায়িক নীতি নয়, বরং বলবো- এটা মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে পকেট পূর্ণ করা- যেটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। সুতরাং, অনৈতিক কাজে আমরা যাতে অভ্যস্ত না হয়ে পড়ি- সেই লক্ষ্যে নিজেকে পরিবর্তনের পাশাপাশি চাঁদাবাজির নামে বকশিসের নীতিও প্রতিবাদ করে নির্মূল করতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১১২৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

250858
০৪ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১০
দিশারি লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ Good Luck Good Luck
০৪ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩১
195058
FM97 লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ...
250877
০৪ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৫
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ওনেক দিন আসলেন আপু I Don't Want To See I Don't Want To See
০৫ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪
195352
FM97 লিখেছেন : কি কইতে গিয়া কি কইলেন? অনেক দিন কই? ঈদের আগেই তো পোষ্ট গিয়া গেলাম! Tongue
250995
০৪ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:১৮
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : তারা কি এটা বুঝতে পারছে না, অর্থের বিনিময়ে অর্থ হারাম! অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট মানের মুদ্রার বিনিময়ে ভিন্ন মানের মুদ্রা বা তৎসদৃশ পণ্য (প্রাইজবন্ড, মানি অর্ডার, মোবাইল ব্যালেন্স ইত্যাদি) লেনদেন হারাম। মোবইলে আমরা যে ব্যালেন্স পেয়ে থাকি তা প্রচলিত টাকারই প্রতিরূপ। এমতাবস্থায় যদি কেউ ২০ টাকা নিয়ে ১৯ টাকার ব্যালেন্স দেয় তাহলে উক্ত ১ টাকা সূদ হিসেবে গৃহীত হবে, আর এক পয়সা সূদের শাস্তি কত ভয়াবহ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আমি নিজেরও একসময় এই ব্যবসায় জড়িত ছিলাম। প্রকৃতপক্ষেই ১০০০টাকায় ২৭ টাকা লাভ পরিশ্রম ও বিনিয়োগ অনুযায়ী কম। কিন্তু সিম বিক্রয়, টার্গেট বোনাস, প্যাকেজ অফার ইত্যাদি বাবদ যে কমিশন পাওয়া যায় তাতে এই ক্ষতি কাটিয়েও বেশি হয়ে যায়। সুতরাং, এই যুক্তিও এখানে ধাতে পড়ে না।

আমার মনে হয় এই বিষয়টি দোকানি ভাইদের জানানো প্রয়োজন। হয়তো আল্লাহর ভয় মনে ঢুকলে তারা এহেন কর্মকান্ড হতে বিরত থাকবে।
০৫ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৪৬
195353
FM97 লিখেছেন : তথ্য দেয়ার জন্য ধন্যবাদ, যেহেতু আপনি এটার সাথে জড়িত ছিলেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File