“থাক! সম্পদ ২ কোটির নিচেই রাখি, অতিরিক্ত কর দেয়া থেকে মুক্ত থাকবো”...
লিখেছেন লিখেছেন FM97 ০৪ জুন, ২০১৪, ০৭:৩৩:৫৭ সন্ধ্যা
আগামীকাল ২ লাখ ৫০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার বাজেট পেশ হতে যাচ্ছে। এতে এও সংযোজন করা হচ্ছে যে- ২ কোটি টাকার অধিক সম্পদের মালিককে বিদ্যমান প্রদেয় করের চেয়ে অতিরিক্ত কর দিতে হবে। উদ্দেশ্য-ধনী গরিবের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনা।
হ্যা, ‘ধনী-গরিবের মধ্যাকার বৈষম্য কমিয়ে আনা’—কথাটি শুনতে ভালো লাগলেও অতিরিক্ত কর প্রদানের নতুন এই নিয়ম ধনীদের মধ্যে উপার্জনের প্রতি অনীহা সৃষ্টি করবে। যখনই তারা দেখবে ২ কোটির অধিক সম্পদের জন্য তাদের অতিরিক্ত কর গুনতে হচ্ছে, কাজেই তারা কর্মদক্ষতা থাকা স্বত্ত্বেও অলস হতে চাইবে। তাদের মনোভাব সৃষ্টি হবে এমন যে- “থাক! সম্পদ ২ কোটির নিচেই রাখি, অতিরিক্ত কর দেয়া থেকে মুক্ত থাকবো”। যদিও সেই ধনী ব্যক্তিটি তার প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ স্বাভাবিকভাবেই দেশের বিভিন্ন খাতে কাজে লাগাতে পারতো। ফলে বিভিন্ন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো, দেশের অর্থনীতির উন্নয়ণ ঘটতো। অথচ, সেই মানুষটি এবার আয় গুটিয়ে নেয়ার চিন্তায় থাকবে। ধনী-গরিবের পার্থক্যের সুষ্ঠ সমাধান তো হবেই না, বরং দেশের অর্থনীতি সমাজতান্ত্রিকতার দিকে ঝুঁকে পড়বে।
এমনিতেই এদেশের মানুষ সরকারকে আয়কর দিতে চায় না। কারণ- তারা নাগরিক সুবিধা পায় না। আয়কর নেয়া যেমন সরকারের অধিকার তেমন নাগরিক সুবিধা পাওয়া জনগণের অধিকার। অথচ যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেনো আজ পর্যন্ত তারা নাগরিক অধিকার সুনিশ্চিত করতে পারে নি। সহজ উদাহরণ দিয়েই যদি বলি- দেশে একটা দোকান নিয়ে বসলেও চাঁদাবাজির দৌরাত্ম, জান-মালের নিরাপত্তা নেই, যানজটের পুরোনো দৃশ্য, ভাঙ্গাচোরা রাস্তা-ঝাক্কি খেতে খেতে মেজাজ গরম হয়ে যায়, লক্কড়-ঝক্কড় ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম, রিকশা-সিএনজি’র মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া, মনিটারিংয়ের ব্যবস্থা নেই—অতঃপর অভিযোগের লম্বা ফিরিস্তি। তাই সুবিধাবঞ্চিত মানুষ কর দিতে চায় না। কেউ কেউ ফাঁকফোকর থেকে বেঁচে যায়- কেউ বা কর্মকর্তাকে টেবিলের নিচ থেকে উপঢৌকন (!) দিয়ে মেনেজ করে নেয়। সুতরাং, যেখানে বিদ্যমান কর আদায় হচ্ছে না, আর তার বিপরীতে জনগণকে সুবিধা দেয়া হচ্ছে না, সেখানে ধনী-গরিবের বৈষম্যের অহেতুক যুক্তি দেখিয়ে অতিরিক্ত কর আরোপ করা যেন সরকারি দূর্নীতির আরেকটি ফন্দি।
সুতরাং, যদি কিছু করতেই হয় তাহলে সরকারকে স্বাভাবিক কর দেয়া হবে আর এর বিপরীতে সরকার নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করবে। আর ধনী-গরিবের বৈষম্য কমাতে সম্পদশালীদেরকে তাদের গচ্ছিত সম্পদের সঠিক যাকাত প্রদানে বাধ্য করতে হবে। আর এই যাকাত প্রদানের অনুশীলন আমরা নিজ থেকেই শুরু করতে পারি।
বিষয়: বিবিধ
৯৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন